স্কুলে প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে, এদিকে ওদিকে চরম ব্যস্ততা এত কিছুর মধ্যেই প্রেস থেকে ইনভিটেসন কার্ড গুলো নিয়ে চলে এসেছে বিক্রম। স্কুলের কিছু ছেলে মানে সদ্য মাধ্যমিক দিয়ে দাদা হয়েছে তারা, তাই সব দায়িত্ব তাদের। সামনের গার্লস স্কুলে কে যাবে কার্ড দিতে সেটা ঠিক করার আলোচনা চলছে।
রাজা বলে ওঠে আমি তো যাবোই ভাই! পাশে থেকে দীপ বলে হ্যাঁ ভাই তুই তো যাবিই আমাদের বৌদি আছে যে ওখানে!! সবাই মিলে বেশ হাসিঠাট্টা শুরু করে দেয় কিন্তু তাতে কি অবশেষে দীপ আর রাজা একটু ফিট ফাট হয়ে মনে মনে ‘সূরাজ হুয়া মধ্যম’ গান চালিয়ে চলে এলো গার্লস স্কুলে। এদিকে রাজা খুঁজে চলেছে তার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যাকে আর দীপের চোখ তো সবার মধ্যেই গল্প তৈরি করে নিচ্ছে।
রাজা দিদিমণিদের কার্ড দিয়ে আসার সময়ে দেখে স্কুলের বারান্দায় চারটে মেয়ে দাঁড়িয়ে তার মধ্যেই আছে রিয়া।
দীপ চিৎকার করতে লাগে ভাই ওই দেখ বৌদি বৌদি! রাজা কি আর করবে একদিকে খুশি একদিকে ভয়, এর মধ্যেই রিয়া একটা হাসি দিয়ে দিয়েছে। ব্যাস!! আর রাজা কে দেখে কে, আনন্দে মেতে স্কুলে ফিরে আসা, সবাইকে বলে ভাই ও আমায় দেখে হেসেছে! কি খাবি বল!, আজ যেনো রাজা সত্যিই রাজা হয়ে উঠেছে। সবাই মিলে ফুচকা ঘুগনি খাওয়া, আর রাজার প্রজারা যেনো বাহবা দিচ্ছে তার জয়ের। একটা মুক্ত হাসিই যেনো তখন চরম প্রাপ্তি, হয়তো এটাকেই ভালোবাসা বলে। রাজা দুই বছর ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসে রিয়াকে, একটা খুব বিশুদ্ধ ভালোবাসা যেনো তিল তিল করে বেড়ে উঠছে।
এই করতে করতে সরস্বতী পুজোর দিন এগিয়ে আসছে, রাজা স্কুলের পুজো নিয়ে খুব ব্যস্ত তার মধ্যেই তার মনে আছে রিয়ার পছন্দের রং হলুদ, বাড়িতে জেদ করে সে টাকা নিয়েছে, দীপ আর রাজা হলুদ পাঞ্জাবি কিনতে গিয়েছে, পাঞ্জাবী কেনার পর, যেনো দীপ জ্যোতিষী হয়ে ওঠে আর বলে, আরে ভাই এটা পড়ে কি লাগবে রে তোকে! রিয়া তো পুরো প্রেমে হাবুডুবু খাবে। রাজা একদিকে, আরে কি যে বলিস বলে নিজের উৎসাহ ডেকে রাখার চেষ্টা করছে আর একদিকে মনে ‘তুমসে পেয়ার হে অলরেডি’ বেজে চলেছে। সেই অনুভূতির বিবরণ দেওয়া যায় না। রিয়া কোন কোন স্কুলে যাবে কি করবে সব আগে থেকে গোয়েন্দা তলব করে খবর নেওয়া চলছে, সেখানে প্ল্যান করা হচ্ছে কি করে যাওয়া যায় রিয়ার সাথে সাথে, যেনো মনে হবে হঠাৎ করেই দেখা। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা আলোচনা সেরে ফেলছে রাজা দীপ আর বাকি বন্ধুরা।
তার সাথে সাথে রিয়ার এক বান্ধবীকে হাতে রাখার একটা প্রচেষ্টা চলছে যাতে যথাযথ সময়ে সে কাজে লাগতে পারে।
দীপ ক্রমাগত উৎসাহিত করেই চলেছে রাজাকে, সে বলছে যে ভাই এই পুজোতে তোকে রিয়া কে তোর মনের কথা বলতেই হবে নইলে হবে না। রাজা বারে বারে উৎসাহিত হয়ে উঠলেও ভয়ে পিছিয়ে আসছে যদি ভুল বুঝে সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়। এরকম করতে করতেই খবর আসে রিয়া নাকি রাজার বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করেছে, জানতে চেয়েছে রাজার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি। রাজা সেই শুনে চরম উৎসাহিত এবং কৌতূহলী হয়ে পড়েছে। এদিকে রাজার বন্ধুরা বোঝাতে শুরু করে দিলো, দেখ দেখ তোকে নিয়ে খোঁজ নিচ্ছে, তার মানে ও তোকে ভালোবাসে ও চাইছে তুই ওকে বলে দে। এই সব শুনে খুশির একটা আমেজ ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজার মন জুড়ে। নতুন পাঞ্জাবি নতুন উৎসাহ নতুন উন্মাদনা সব নিয়ে রাজা তৈরি সরস্বতী পুজোর জন্য।
সরস্বতী পুজোর দিনে স্কুলের পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া চলছে, মন্ত্র হচ্ছে ‘তুমি নাও মা পুষ্পের ভার, আমাকে দাও মা বিদ্যার ভার’ তার সাথেই যেনো রাজা মনে মনে চেয়ে নিলো মা দেখো আজ যেনো রিয়া আমাকে হ্যাঁ বলে দেয়। দিয়ে পুজো সেরে তাড়াতাড়ি করে সেজে গুজে রিয়াদের স্কুলের পাশে এসে হাজির রাজা, দীপ সবাই। হলুদ শাড়ি খোলা চুল সেই দেখেই রাজা কুপকাত, এদিকে দীপ বলে আরে ভাই ‘রব নে বানাদি জোরি তো’, দুজনেই হলুদ জিও জিও!!
রাজা নিজের মনের অনুভূতি যেনো আর ধরে রাখতে পারছে না, কিন্তু কি করবে কি করে বলবে! , সেই ক্লাস নাইন থেকে একই রকম করে পেছনে পেছনে ঘোরা, নানান ভঙ্গীতে ভালোবাসি বোঝানো, যা যা পছন্দ সব কিছুই করা, বান্ধবী দের থেকে খবর নিয়ে নিয়ে সব কিছু লক্ষ রাখা, ভালোবাসার এক তরফা লালন পালনে দুটো বছর পেরিয়ে গেলো এবার না বলতে পারলে যে আর কোনো মতেই হয়ে উঠবে না কিছু!! দীপ ক্রমাগত উৎসাহিত করেই চলেছে ভাই বলে দে বলে দে।
সেই রিয়াদের পেছন পেছন রাজা যাচ্ছে, মুখ ঘোরালেই ঘুরে যাচ্ছে রাজা, এরই মধ্যে রিয়ার আলতো হাসি ব্যাস! বারে বারে বুকের ভেতর ধুকপুক করে উঠছে রাজার। প্রায় একই ভাবে তিনটি স্কুলের ঠাকুর দেখা হয়ে গেলো। অবশেষে রাজা জীবনের যতোটা সাহস আছে সব নিয়ে রিয়ার একটা বান্ধবী কে দিয়ে রিয়াকে একটা গলিতে ডেকে আনা করালো। রাজা রিয়া মুখোমুখি, একটু দূরে সবাই কৌতূহলে চিন্তা করছে রাজা পারবে তো আজ? রাজা বারে বারে এদিকে ওদিকে করছে উপর নিচে দেখে অস্থির হচ্ছে কিন্তু কোনো মতেই আর কথা শুরু করতে পারছে না, অবশেষে রিয়া বলে ওঠে কি রে কিছু বলবি? রাজা কাপা গলাতে বলে হ্যাঁ মানে তুই কি কেমন আছিস!!
রিয়া: আরে! এটা কেমন কথা? কি হয়েছে তোর বলবি কিছু? এখানে ডেকে পাঠালি কেনো!!!
রাজা : না মানে এমনি!
রিয়া: বেশ তাহলে আসি!!
রাজা :না না! শোন না মানে অনেকদিন ধরে তোকে বলবো আর কি!
রিয়া: হ্যাঁ কি বল
রাজা : আরে ধুর তুই চুপ কর আমাকে বলতে দে,
চোখ বন্ধ করে রাজা বলতে শুরু করে, দেখ রিয়া আজ হলুদ পড়েছি, দুই বছর ধরে কোনো উৎসবে হলুদ ছাড়া আমি কিছু পড়িনি সেটা কি এমনি এমনি, আরে তোর পছন্দ বলে আমি পড়ি। যেখানেই যাবি পেছনে তাকালে আমাকেই দেখতে পাবি আমি কি শুধু শুধু তোর পেছনে ঘুরি ! সেই ক্লাস নাইন থেকে আজ পর্যন্ত তোর সব কিছুর খবর আমি রেখেছি, তোকে একবার দেখতে কত কত জায়গা ছুটে গিয়েছি সে সব কি অকারণে! আরে না না আসলে আমি তোকে ভালোবাসি খুব খুব ভালোবাসি। একটা দীর্ঘশ্বাস। চোখ খুলে দেখে সামনে দীপ। রাজা :আরে একি ও কই?? যা এত কিছু যে বললাম!!! পেছন থেকে রাজাকে জড়িয়ে ধরে দুটি হাত, রাজাকে কানে কানে বলে দেয় আমিও ভালোবাসি। দিয়ে ছুটে চলে যায় রিয়া।
রাজা তো ফ্রিজ, চিৎকার করবে নাকি নাচ করবে কি অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করবে কিছুই যেনো বুঝতে পারছে না। দীপ তো নাচতে লেগেছে ভাই কে হ্যাঁ বলেছে হ্যাঁ বলেছে বলে, আর এক মুখ হাসি রাজার। এটাই মনে হয় ছাত্রছীবনের সরলতা। এরকম করেই সরস্বতী পুজো একটা নতুন ভালোবাসাকে রূপ দিয়ে দিলো। এরকম করে কত শত ভালোবাসা রূপ পেয়ে যায় সরস্বতী পুজোর দিনে। কি তোমার আছে নাকি এরকম কোনো অভিজ্ঞতা??