কেমনডা লাগে বলেন তো সেই সুদূর সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় বই মেলায় এসেছি তিথির সাথে দেখা করার জন্য আর সে কিনা আমাকে নিয়ে গেম খেলছে। কিছুক্ষণ পরপর বলে বাবু ৩৩৩ নম্বর স্টলে এসো আবার সেখানে যাওয়ার পরে বলে বাবু ২৬৫ নম্বর স্টলে এসো। টানা দুই ঘন্টা খুঁজতে খুঁজতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি তবুও মেয়েটার মায়া হচ্ছে না। অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছি তাকে এক নজর দেখার জন্য। শতশত মেয়ে আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু তিথির দেখা মিলছে না।
হঠাৎ করে একটা মেয়ে এসে বলল এই আপনি তুহিন ভাইয়া নাহ্! ফেইসবুকে আপনার কত্ত গল্প পড়েছি। আপনার গল্প আমার খুব ভালো লাগে ভাইয়া। আচ্ছা আপনার কি বই প্রকাশ হয়েছে এবার? আমি মুখটা নাড়িয়ে বললাম না। মেয়েটা বলল আমার জানা মতে আপনার বাসা সাতক্ষীরাতে, তা এত দূর থেকে বই মেলায় এসেছেন! আমি মনেমনে ভাবছি মেয়েটা কী আমাকে বোকা বানাচ্ছে নাকি! মেয়েটাকে সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি যে আমার গল্প পড়েন তা আপনার নাম কি! আমার সাথে আপনার অ্যাড আছে নাকি ফলোয়ার হিসেবে পড়েন? সে বলল আরে আমি আপনার ফ্রেন্ড লিস্টেই আছি তো। নীলাবতী আইডি থেকে যে মেয়েটা লাইক, কমেন্ট করে ঐ মেয়েটা আমিই। এবার চিনতে পারছেন? ও হ্যাঁ বুঝতে পারছি, তাহলে আপনিই নীলাবতী! জ্বি আমিই সেই নীলাবতী।
মাশাল্লাহ মেয়েটার চেহারা ভালোই, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তা আপনি বই কিনতে এসেছেন বুঝি? সে বলল জ্বি বই কেনার জন্যই এসেছি আরও একটা উদ্দেশ্যে ছিলো অবশ্য। আমি কারণ জিজ্ঞাস করার আগেই সে বলল আপনার গল্প তো আমি সবসময় পড়ি তাই আপনাকে সরাসরি একবার দেখার ইচ্ছা ছিল খুব। আর যখন আপনি পোস্ট দিলেন আগামী ৯ তারিখ বই মেলায় আসছি তখন হাত ছাড়া করি কেমনে! তাই আমিও ৯ তারিখে চলে আসলাম। তবে কি জানেন সকাল থেকে আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি শেষমেশ এখন দেখা পেলাম। আমি বললাম আরে এতো খোঁজার কি দরকার ছিল!
একটা নক দিয়েই বলতে পারতেন। সে বলল আসেন নাহ্ একসাথে একটা সেলফি উঠাই। তারপর দু’জন স্মাইল দিয়ে একটা সেলফি তুললাম। একটা বাচ্চা মেয়ে গুড়গুড় করে এসে তাকে বলল আম্মু ওই যে আব্বু তোমাকে ডাকছে। আমি বাচ্চাটির কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এই বাচ্চাটা কি আপনার বেবী! তিনি বললেন জ্বি এটা আমার মামণি আর ঐ যে দেখছেন নীল টিশার্ট পরা ভদ্র লোকটা আমার হাজবেন্ড। আচ্ছা ভাইয়া ভালো থাকবে আমি আসি। বাম হাতটি নাড়িয়ে তিনি স্থান ত্যাগ করলেন।
উদাসীন মনে ভাবছি এই মেয়ের কী সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে নাকি আমার সাথে ঢপ দিয়ে গেল! ধূর আমার সাথে ঢপ দিবে কেন! ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি তিথির সাতটা মিসকল। আমি কল ব্যাক করাতেই আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো যে মেয়েটার সাথে এত সময় সেলফি তোলাতুলি করছিলে ঐ মেয়েটা তোমার কে হয়! সত্যি বলবা”
ওহ উনি! উনিতো আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড। আমাকে নাকি চিনে, আমার গল্প পড়ে তাই একটা সেলফি তোলার আবদার করল। কি আর করব! তুললাম একটা সেলফি। আচ্ছা তুমি কোথায় তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি তো হয়রান হয়ে গেলাম। এহ্ আমি ঐ মেয়েটার সাথে সেলফি নিলাম সেটা তুমি কেমনে দেখলে! তারমানে তুমি তো আমার আশপাশে আছো। আচ্ছা তুমি কই একটু বল দেখি।
“আমাকে আর খোঁজা লাগবে না তুমি মেয়েদের সাথে সেলফি নিয়ে বেড়াও। আমি চললাম” আমি তিথিকে বললাম কাজটা কিন্তু ঠিক করছো না। তুমি পাঁচ ঘন্টার রাস্তা পাড়ি দিয়ে আমাকে ঢাকায় আসতে বাধ্য করেছো। আবার আমাকেই ইগনোর করছো, এর কোন মানে হয়না তিথি। জাস্ট একটা সেলফি নিয়েছি তার হাত ধরে তো পালিয়ে যাইনি। তারপরও মেয়েটার হাজবেন্ড ডটার আছে। এরপরও তোমার সন্দেহ হয়। আমি কি এতো কিছু জানি! ছাফ ছাফ বলে দিচ্ছি এরপরে কখনো কোন মেয়ের সাথে সেলফি নিতে যেন না দেখি। আচ্ছা তুমি ৪৬২ নম্বর স্টলে এসো।”আবার ৪৬২ নম্বর! দেখ এই গেম বন্ধ কর। এসব আর ভালো লাগছে না কিন্তু। আমি হাঁটতে হাঁটতে এখন ক্লান্ত, আমি আর কোন স্টলে যেতে পারবো না। তুমি আমার এখানে এসো। সে বলল আচ্ছা তুমি বসো আমি আসছি। আমি সাথে সাথেই প্রশ্ন করলাম আমি কোথায় আছি সেটা না জানতে চেয়ে তুমি কেমনে আসছো! তারমানে তুমি আবারও নিশ্চয়ই আমাকে ফলো করছো। তুমি আসলে নাহ একটা ইয়ে ইয়ে ~~
ফলো না করেও তো উপায় নেই যেমনি ভাবে মেয়েদের সাথে সেলফি তোলাতুলি করছো। যাই হোক তুমি যেখানে আছো সেখানেই বসো আমি তিন মিনিটের মধ্যে আসছি। তিন মিনিট হওয়ার আগেই পেত্নী আমার সামনে এসে হাজির হলো। আপনারা মনে মনে হয়তো ভাবছেন কেন পেত্নী বললাম! হ্যাঁ অবশ্যই পেত্নী বলার একটা কারণ আছে। কারণ সে শহরের মেয়ে হয়েও মর্ডান ড্রেস না পরে শাড়ি পরে আমার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। যার কারণে তাকে এত এত পরিমাণে সুন্দর লাগছে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না বলেই পেত্নী বলে তুলোনা করেছি।
“এত সময় ফোনে যে মেয়েটার মুখ দিয়ে খৈ ফুটছিল সেই মেয়েটা লাজুক ভঙ্গিতে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রিলেশনটা ভার্চুয়ালে হলেও ভালোবাসাটা যেন সেই নব্বই দশকের। যাই হোক আমাকে তো আর মেউ মেউ করলে হবে না, আমাকে পুরুষের মতোই থাকতে হবে। তাই তিথির হাতটা ধরে চলতে শুরু করলাম বই মেলা নামক অন্তহীন পথে।