“ভালবাসা দিবসে প্রেমিকের সাথে ঘুরতে গিয়ে,লাশ হয়ে ফিরেছে শায়লা।” সকাল থেকে ফেসবুকে ডুকলে একই নিউজ দেখতে পায় নীরা। আর সকলে মিলে কমেন্ট করছে,মেয়েটা বাজে ছিল। কেন ঘুরতে গেলো। মরছে ভালো হইছে। মেয়েটা জাহান্নামে যাবে।
এরকম কমেন্ট দেখে নীরার খুব খারাপ লাগছে। যেখানে একটা মানুৃষ মারা যাওয়ার পর, তার জন্য দুআ করতে হয়। সেখানে শায়লাকে নিয়ে কিরকম বাজে কমেন্ট। এখানে যারা কমেন্ট করছে,তাদের অনেকেও কাল তাদের প্রিয় মানুৃষটির সাথে ঘুরছে। শায়লার ভাগ্য খারাপ তাই সে দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এটার নামই সমাজ, তারা বেঁচে আছে। তাই তারা ভালো। আর শায়লা মারা যাওয়াতে,সে খারাপ। নীরা নতুন ফেসবুক ইউজ করে। কিছুই বুঝেনা ফেসবুক সম্পর্কে। ও ফেসবুক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। ওর সামনে কোনো পোস্ট চোখে পড়লে,ও ভাবে লাইক না দিলে তারা খারাপ ভাববে। তাই প্রতিটা পোস্টেই লাইক দিতো সে।
একদিন সাইফ হাসান নামক একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। প্রোফাইল পিকচার দেখে চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। তাই সাইফের টাইমলাইনে ডুকে বিস্তারিত দেখল। কিন্তু না,নীরা চিনতে পারছে না। নীরা ভাবলো, যদি এখন আমি ওর আইডিটা এক্সেপ্ট না করি,ও হয়তো আমাকে খারাপ ভাববে। ও যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে,এতক্ষণ ওর আইডিতে ঘুরলাম কেন। তখন কি বলবো? তাই সাইফের রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। পরে অবশ্য ফ্রেন্ডদের থেকে নীরা জানতে পারছে,ও ফেসবুক নিয়ে যেমনটা ভাবে,তা ভুল ধারণা। সাইফের রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার সাথে সাথেই,ও মেসেজ দেয়-
— এখন থেকে প্রতিদিন আমার সাথে কথা বলবা। মিস ইউ।
— আপনি কি আমাকে চিনেন?
— যাকে নিয়ে সারাজীবন কাটাবো,তাকে চিনবো না তো কাকে চিনবো।
— অদ্ভূত!! আমি তো আপনাকে চিনতে পারিনি।
— তোমার চিনতে হবে না আমাকে। অনেক খুঁজে তোমাকে পেলাম। তুমি শুধু প্রতিদিন আমার সাথে কথা বলবা,প্লিজ।
নীরার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এই লোকটা এমন কেন? এখন আর নীরা মেসেজের রিপ্লাই দেয় না। কিন্তু সাইফের মেসেজগুলো দেখলে ওর খুব হাঁসি পায়। “কী অদ্ভূত মানুৃষ। মনে হচ্ছে অনেক দিনের পরিচিত আমি। প্রতিদিন তিন টাইম জিজ্ঞাসা করে খেঁয়েছি কিনা। না খেলে শরীর খারাপ করবে। মিস ইউ শব্দটা লিখে পাঠায় অসংখ্যবার। যদিও সে জানে,কখনোই রিপ্লাই দিবো না।” নীরাকে মেসেজ দেওয়া সাইফের অভ্যাসে পরিনিত হয়েছে। আর নীরারও ওর মেসেজ দেখা অভ্যাসে পরিণিত হয়ে গেছে।
একদিন সাইফের কোনো মেসেজ আসে নি। নীরার আজ কিছু ভালো লাগছে না। ও মেসেজ দিলো না কেন। সাইফের কি কিছু হয়েছে। ও বুঝতে পারছে না,এটা সাইফের প্রতি দূর্বলতা,নাকি অভ্যাস। যেটাই হোক সাইফের মেসেজ না দেখে ওর খুব খারাপ লাগছে। পরের দিন আগের মতোই সাইফ মেসেজ দিলো। আর বললো, কাল খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই তোমাকে টেক্সট করতে পারিনি। জানি তুমি অনেক চিন্তা করছো আমার জন্য। নীরা হাঁসছে আর ভাবছে,ছেলেটা অসাধারণ মাইন্ডের। আমার মনের খবরও বুঝে সে।
হঠাৎ একদিন সাইফ মেসেজ দিলো, হয়তো তোমাকে অনেক ডিস্টার্ব করছি। ক্ষমা করে দিও। আসলে অনেক ভালবাসি তোমায়। তুমি যখন কলেজে পড়তে,তখন থেকেই ভালবাসতাম। হঠাত একদিন খবর পেলাম, তুমি ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছো। অনেক খুঁজে তোমার আইডি খুঁজে পেলাম। জানো,মা মারা গেছে যখন,তখন আমি অনেক ছোটো। বাবার আদরও পাইনি। ঘরে আমার সৎ মা। ভাবলাম তোমাকে পেলে আমি ধন্য হবো। কিন্তু তুমিও আমাকে বুঝলানা। আসলে “অভাগা যেদিকে যায়,সেদিকেই সাগর শুকিয়ে যায়।”
তুমি আমাকে ভালবাসতে পারোনি,তাতে আমার দুঃখ নেই। আমিতো তোমাকে ভালবাসতে পেরেছি। তোমাকে হয়তো আর বিরক্ত করবো না। তবে তুমি যখনই আমাকে চাইবে,তখনই আমাকে পাবে। ভালবাসি প্রিয়। তারপর থেকে আর কখনো সাইফ নীরাকে মেসেজ করেনি। নীরারও খুব খারাপ লাগছে,ওর জন্য। ছেলেটা হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে। মা নেই। একটু কথা বললে কি আর হতো। এইসব ভেবে,নীরা সাইফকে মেসেজ করলো,
— এতো কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন কি করে?
— শুধু তোমার জন্য বেঁচে আছি।
— বেশিঁ নাটকীয় হয়ে যাচ্ছে।
— না। আজ ভাবছিলাম মরেই যাবো। যার জন্য বেঁচে থাকা,তাকে না পেলে বেঁচে থেকে কি লাভ?
— পেতেও তো পারেন।
— একবার ভালবাসি বললে,বুঝতাম পেতেও পারি।
— সময় হোক..
ধীরে ধীরে সাইফ আর নীরার কথা বাড়ছে,বাড়ছে ভালবাসা। সাইফ তার মোবাইল নাম্বার নীরাকে দিয়ে বলছে,যদি কখনো ভালো লাগে কল দিও। সাইফ আর নীরা ফেসবুকেই কথা বলে। সাইফ অসংখ্য বার ভালবাসি বললেও,নীরার কখনো বলা হয়নি। এর মধ্য সাইফ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। নীরাকে সাইফ বললো, কখনো হয়তো তোমার কন্ঠ শোনা হবে না,হবে না ভালবাসি কথাটাও শোনা। হয়তো মরে যাবো আমি।
নীরার খুব খারাপ লাগছে সাইফের কথা শুনে। সাইফের কাছে কল দেয় নীরা। কল দিয়েই বলে, বড্ড ভালবাসি তোমায়। তোমার কিছু হবে না। আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে দিবে। বলেই কলটা কেটে দেয়। এখন ফেসবুকে কথা কম হয়।ফোনেই কথা হয় বেশি। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়, ওদের কথা শেষ হয় না। শত ব্যাস্ততার মাঝেও কল দিয়ে নীরাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেওয়া,নামাজের সময়,খাওয়ার সময় কল দিয়ে বলে দেওয়া সাইফের অভ্যাস হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে নীরার খেতে দেরী হলে, সাইফও খায়না। নীরার খাওয়ার পর সাইফ খায়। মাঝে মাঝে সাইফ বলে,
— আমরা দ্বিতীয় লাইলি- মজনুর প্রেম উপাখ্যান রচনা করবো।
— আমিতো লাইলির মতো সুন্দরী না।
— তুমি আমার কাছে তার চেয়েও বেশি সুন্দরী। আমাদের প্রেম হবে পবিত্র প্রেম।
নীরা সাইফকে নিয়ে যতই ভাবে,ততোই অবাক হয়। কতোটা কেয়ারফুল সে। ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে নীরা শুনছে,তাদের প্রেমিকরা হাত ধরে হাটতে চায়,কিস করতে চায়,কয়দিন পরপর ঘুরতে যেতে চায়। আর সাইফ কতো ভালো। আজ পর্যন্ত নীরার সাথে এসব করা দূরে থাক,একটা ছবিও চায় নি। ও ভাবে, সত্যিই আমি ভাগ্যবতী। ধীরে ধীরে ওদের সম্পর্ক আরো গভীর হচ্ছে।বাড়ছে ভালবাসা। প্রতিদিন রাতে সাইফ কিছুক্ষণ গান শুনায়। তারপর কুরআনের কিছু অংশ শুনায়। খুবই ভালো লাগে নীরার। নীরা ভাবে,সাইফকে পেলে ও এ জগতেও ভালো থাকবে,ও জগতেও ভালো থাকবে। একটা মেয়ের জীবনে এর চেয়ে আর বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। নীরার পড়ালেখাও খুব ভালো হচ্ছে আগের থেকে।আগে ঠিকমতো নামাজ না পড়লেও এখন পড়ে। বলতে গেলে সবদিক দিয়ে তার উন্নতি হয়েছে।
আজ সকাল থেকেই সাইফের মন খারাপ। নীরা অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পরও কিছু বলে নি। নীরার ও মন খারাপ হয়ে গেল। সাইফ এটা বুঝতে পারছে। তাই নীরাকে সাইফ বললো, নীরা আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। প্লিজ বিষয়টা খারাপ ভাবে নিওনা। আজ কেন যেন তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।
আজ সাত মাস রিলেশনের। সাইফ নীরাদের বাসার কাছাকাছিই থাকে। এতো কাছাকাছি থেকেও সাত মাস হয়ে গেল,তবুও দেখা করেনি। এমন ঘটনা বিরল। নীরা প্রতিদিন যেভাবে বের হয়,সেভাবেই বের হয়েছে বাসা থেকে। সাইফকে এই প্রথম সরাসরি দেখলো। ছবির চেয়ে বাস্তবে আরো বেশি সুন্দর। ওর মনে পড়ল, সাইফকে তো আমি কলেজে দেখছি। ও প্রায় সময় আমার পিছু পিছু ঘুরতো। নীরার খুব লজ্জ্বা লাগছে। ওর ভালবাসার মানুৃষটি ওর সামনে দাড়িয়ে। আর ও নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে। সাইফ নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
— চলো কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।
— না,আমি রাস্তায় হাটবো আর কথা বলবো।
— ওকে, মহারাণীর যেমন ইচ্ছা।
সাইফ আর নীরা পাশাপাশি হাটছে,তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে।হাটার এক পর্যায় সাইফের হাতের সাথে নীরার হাত লেগে যায়। তখন নীরা সাইফকে বলে, দুঃখিত,ভুলে তোমার হাতের সাথে আমার হাতের টাচ লাগছে। সাইফ ভাবে,মেয়েটা কতো সরল। আপনি থেকে তুমি বলাতে কতো কষ্ট করতে হয়েছে। এখন আবার সামান্য টাচ লাগাতে কিরকম অনুশোচনা। অথচ,বর্তমানে মেয়েরা রিলেশনের শুরুতেই,নাম ধরে ডাকে। বলতেও হয় না তাদের। আর হাত ধরে না হাটলে তো তাদের প্রেম জমেই না। সত্যিই আমি ভাগ্যবান। এখন প্রায় সময়ই নীরা আর সাইফ দেখা করে। তবে তা কোনো রেস্টুরেন্ট,পার্কে নয়। রাস্তায় হাটে আর কিছুক্ষণ কথা বলে। নীরা বলে,
– এভাবে হাটার মাঝেও অন্যরকম অনুভূতি আছে।
— যদি হাত ধরে হাটতাম,তাহলে অনুভূতিটা আরো গভীর হতো।
— পাবলিক প্লেসে হাত ধরে হাটা!!
— কেন, আমি আমার বউয়ের হাত ধরে হাটবো। কে কি বললো,তাতে কান না দেওয়াই ভালো।
বলেই,নীরার হাতটা ধরে ফেললো। নীরা অবাক হয়ে গেল। সাইফ এটা কি করলো। ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
সাইফ বললো,এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তুমি এমন করছো? তোমার ভয় আমি যদি তোমাকে বিয়ে না করি!!
শোনো চারদিকে আযান দিচ্ছে। এই মুহূর্তে, আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে,তোমার মাথা ছুয়ে বললাম। তুমি ছাড়া কেউ আমার জীবনে নেই,আসবেও না।
পাগলি, আমি শুধু তোমারই। নীরার হাত ধরে হাটাটা খুব অস্বস্তিকর মনে হয়। কিন্তু এখন দেখা করতে গেলেই,সাইফ হাত ধরে হাটতে চায়। নীরার ভালো লাগে না এটা। সাইফকে না করলে,ও রেগে যায়। বলে, এই সামান্য ব্যাপারটা মানতে পারো না। তো কেমন ভালবাসো? তাই নীরা এখন আর কিছু বলে না ওর কাছেও ভালো লাগে হাত ধরে হাটা। তবে ভয় হয় খুব। যদি ও হারিয়ে যায় জীবন থেকে!! যদি ওকে আপন করে না পায়!! সাইফ তার বোনের সাথে নীরার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ভালোই চলছে সাইফ আর নীরার প্রেম। একদিন সাইফ নীরাকে বলছে, আমাদের মনে হয় বিয়ে করে ফেলা উচিত। বিয়ের পর তুমি তোমার বাসায়,আর আমি আমার বাসায় থাকবো।
— তাহলে এখন বিয়ে করার কি প্রয়োজন?
– আরে পাগলি,তুমি জানো না। বিবাহ-বহির্ভূত একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক হারাম।
তাই ভাবতেছি বিবাহের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কটা হালাল করতে। যাতে কথা বললে, দেখা করলে গুনাহ না হয়। নীরা সাইফকে নিয়ে যতই ভাবে ততোই অবাক হয়। ছেলেটা এতো ভালো কেন? সাইফ নীরাকে বলে, তোমার সাথে আমার প্রথম ফেসবুকে কথা হয়,ভালবাসা দিবসে। আমি চাচ্ছি বিয়েটাও নেক্সট ভালবাসা দিবসে করতে।
— তুমি যেটা ভালো মনে করো।
যতই বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে,ততোই নীরার মনের মধ্য এক অজানা ভয় দানা বাধা শুরু করছে। ও ভাবতে থাকে,আসলেই কি আমি পাবো ওকে,নাকি চিরকালের জন্য হারাবো। আগের থেকে সাইফের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ও ইদানিং নীরাকে নিয়ে একান্তে সময় কাটাতে চায়। সেদিন নীরাকে কিস করতে চায়। তাই নীরা রাগ করে চলে আসে। সাইফ ওকে বোঝায়,আর কয়দিন পরই তো, তুমি আমার স্ত্রী হবা। তো এখন এতোটুকু করতে চাওয়াটা কি অন্যায়। নীরা কিছু বলে না, চুপ করে থাকে। সকালবেলা সাইফ কল দিয়ে বলে,
– নীরা একটু বাসা থেকে বের হও।
— কেন?
— প্রয়োজন আছে বের হও। নীরা সাইফের কাছে যাওয়ার পর, সাইফ নীরাকে বলে, সি এন জি তে ওঠো।
— কেন?
— আমার বাসায় যাব?
— তোমার বাসায় আমি যাবো কেন?
— কারণ, তুমি আমার স্ত্রী।
— সাইফ পাগলামি করো না। আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি।
— হয়নি তো কি হয়েছে। আমি ভেবে নিয়েছি তুমি আমার স্ত্রী। আমি তোমাকে একান্তে চাই।
— না,সাইফ। তা হবে না। প্রয়োজন হলে আজ বিয়ে করে নাও।
— না আজ বিয়ে করতে পারবো না। তুমি আমার সাথে যাবা।
আল্লাহকে স্বাক্ষী করে তোমাকে বিয়ে করলাম। তুমিও রাজি,আমিও রাজি। আর স্বাক্ষী আল্লাহ। আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
— না এভাবে বিয়ে হয় না।
— হোক না হোক,আমি তোমাকে চাই।
— সাইফ বোঝার চেষ্টা করো।
তুমি না বলছো, আমাদের ভালবাসা পবিত্র। কেন কলঙ্কিত করতে চাও।
ঠিক আছে,এখন বাসায় যাও। আগের মতো আর সাইফ কথা বলে না। নীরা কল দিলে সাইফের ফোন ওয়েটিং পায়। নীরা কী করবে বুঝতে পারে না। পরদিন, সকালে সাইফ কল দেয় নীরাকে। কল দিয়ে বলে,
— প্লিজ, নীরা আমাকে একা থাকতে দাও। আমাকে তুমি ডিস্টার্ব করো না।
বলেই কল কেটে দেয়। তারপর নীরা অনেক কল দেয় সাইফকে। ওর মোবাইল নাম্বারটা বন্ধ। নীরা জানতে পেরেছে,সাইফ নতুন সিম কিনেছে। একাধিক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক। সাইফ নীরার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর,নীরার জীবনটা অগোছালো হয়ে গেছে। খুব ডিপ্রেশনে ভোগে সে। আর সাইফ,অন্য মেয়েদের নিয়ে ভালোই আছে। নীরা সাইফের নতুন সিমের নাম্বারটা কালেক্ট করে একটা মেসেজ দেয়, বন্ধু তুই লোকাল বাস রে,তুই লোকাল বাস দশ টাকার ভাড়া পাঁচ টাকায় দেওয়ায়, ঘাড় ধইরা নামাছ।
জানো,লোকাল বাসে হাফ ভাড়া দিলেও নামিয়ে দেয়,ফুল ভাড়া দিলেও নামিয়ে দেয়। স্থায়ীভাবে থাকা যায় না বাসে।
ঠিক, তোমাকেও সর্বস্ব দিলেও তুমি চলেই যেতে। ভালোই হয়েছে তোমার মতো একটা স্বার্থপর আমার জীবন থেকে চলে গেছো। নীরা এখন আর আগের মতো কাঁদে না,মনমরা হয়ে থাকে না। ও নতুন করে বাঁচতে শিখেছে। এবারের বই মেলায় নীরার বই বের হয়েছে। নীরার এখন অনেক ভক্ত। তাদেরকে বলে দিয়েছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি বইমেলায় যাবে। কেন যেন এ দিনটার মায়ায় পড়ে গেছে নীরা। বইমেলায় এসে নীরা জানতে পারে স্টলে একটা বইও নেই নীরার। নীরা বলে, সকালেই তো বললেন অনেক বই আছে।
— হুম। এক ভদ্রলোক সবগুলো বই কিনে আপনার ভক্তদের মধ্য বিতরণ করছে।
— কে সেই লোক।
— ওই যে,মিডিয়ার লোক ছবি তুলছে।
ভদ্রলোককে দেখে চমকে যায় নীরা। এতো আমার সাইফ। ও এখানে কেন? ও কি করে জানলো আমার বই বের হয়েছে। সাইফ নীরার কাছে এসে বললো, তোমার কতো ভক্ত। তাদের ভীড়ে আমাকে কি একটু জায়গা দেওয়া যায় না। দেখো,তোমার সবগুলো বই আমি কিনে মানুষের মাঝে বিতরন করেছি।
— সেটাতে আপনারই লাভ। মিডিয়া এখন প্রচার করবে,সাইফ নামক এক ছেলে তার ভালবাসার মানুষের মেলায় থাকা সবগুলো বই কিনে,মানুষের মাঝে বিতরণ করছে। এতে আপনি সকলের কাছে মহৎ হয়ে যাবেন। অনেকে আপনার মতো ছেলেকে লাইফ-পার্টনার হিসাবে পেতে চাইবে। আপনার প্রেমিকার সংখ্যা বাড়বে।
— আই ওয়ান্ট টু কাম ব্যাক। প্লিজ নীরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
— সেটা কখনো সম্ভব না। কোথায় যেন শুনেছি,ব্রেকআপের সময় প্রেমিকরা বাঁশ দিয়ে যায়। আর যদি আবার তারা ফিরে আসতে চায়,বুঝতে হবে এবার পুরো বাঁশঝাড় দিয়ে যাবে।
বলে নীরা তার ভক্তদের কাছে চলে যাচ্ছিল। পেছন থেকে সাইফ বললো, তুমি আগের মতো সরল নেই। খুব কঠোর স্বভাবের হয়ে গেছো। আমার ভালবাসা তুমি ভুলে গেছো। নীরা সামনের দিকে আগাচ্ছে,আর মনে মনে বলছে “”প্রথম প্রেম চাইলেই কি ভোলা যায়। ভালবাসি ঠিক আগের মতোই।””