পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিল আবির আর রিয়ার। ভালবাসা ছিল না তবে অশান্তি ও ছিল না। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবির অনেক অসুস্থ হয়ে যায়।ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার বলে দিল “ব্লাড ক্যান্সার, প্রায় লাস্ট স্টেজ কিছু করার নেই”।। আবির একটু অবাক হলো “হুট করের ক্যান্সার লাস্ট স্টেজ এ চলে গেলো”!!কিন্তু কিছু করার নেই শুনে আশা ছেড়ে দিল।।আবির কে আরো হতাশ করে দিল রিয়ার বাবা,,
রিয়ার বাবাঃ আমার মেয়ের একটা ভবিষ্যৎ আছে,,,আপনার ছেলের সেবা করার জন্য মেয়ে বড় করি নি এমন আরো কিছু কথা বলে রিয়া কে নিয়ে যায় ওর বাবা।। আবির এর মা ছাড়া এখন আর কেও নেই,, মা আবির কে বোঝাই “বাবা একটু অন্য ডাক্তার এর কাছে যা, কয়টা দিন বেশি বাচা গেলে দোষ কই” আবিরের সেই এক কথা “সব শেষ করে আমি মরে গেলে তুমি কার কাছে হাত পাতবে” তাই যেমন আছি সে ভাবেই মরা শ্রেয়।।
ফেসবুক ফেমাস আবির রিসাদ নিজেকে মৃত্যু পথের যাত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে নিজের এক মাত্র পছন্দের কাজে মনোনিবেশ করে,, আবার ফেসবুক এ গল্প লিখা শুরু করে,, তবে গল্পের ধরন টা ভিন্ন,,আগের রোমান্টিক আর রাম্য গল্প ছেড়ে কষ্টের লেখা শুরু করে।। আবির এর গল্পের ভক্ত অনেক তাদের ভেতরে অন্যতম “নিলিমা রহমান”।। আবির এর এমন কষ্টের গল্প পড়ে নিলিমা একদিন ঝগড়া করার মেজাজ নিয়েই আবির কে প্রথম ম্যাসেজ দেয়
নিলিমাঃ এই আবির রিসাদ মিয়া আপনার হয়ছেটা কি এমন গল্প কেন লিখেন?? আবির ভাল ভাবে নিলিমার আইডি টা ঘুরে দেখে ম্যাসেজ এর রিপ্লে দেয়
আবিরঃ এমন গল্প লিখতে ভাল লাগে আর আমার নাম এ মিয়া নাই।
নিলিমাঃ নিজের ভাল লাগা না দেখে পাঠক এরর ভাল লাগা দেখুন আর মিয়া টা না হয় আমি ই দিলাম।।
আবিরঃ ওকে দেন মিয়া খারাপ লাগে না
নিলিমাঃহাহাহাহা
আবিরঃ ভূত
নিলিমাঃ না রাক্ষসী
আবিরঃ পুচকি রাক্ষসী
এই ভাবেই চলে ২ জনের কথা।।। নিলিমা রহমান এতিমখানার মেয়ে,,, এই বার ইন্টার ১ম বর্ষ তে,,, আর আবির বাবার কাপড় এর ব্যবসা টা দেখতো,,,অসুস্থ হওয়ার পরে সেটা এখন আবির এর মা দেখে।। নিলিমার সাথে কথা বলে হাল ছেড়ে দেয়া আবির আবার ব্যবসায় মন দেয়। এক দিন রাতে-
নিলিমাঃ ওই মিয়া,, লাস্ট স্টেজ এ থাকলে এত দিনে মরে যায়তা,,,একটু অন্য ডাক্তার দেখাও না
আবিরঃ না রে পিচ্চি শরীর টা ইদানীং খারাপ হয়ে যাচ্ছে
নিলিমাঃ এই গুলা মনের ভয় তোমার। আবির ও আজ কাল বিশ্বাস করে ডাক্তার ভুল ছিল।।তাই আজকে আর ঝগড়া না করে বলে
আবিরঃ হুম বাহিরে যাব ডাক্তার দেখাতে,
কয় এক দিন আবির একটু ব্যস্ত ভারতে যাবে টাকা জোগাড় কাগজ পত্র অনেক কাজ।। একদিন সকালে ফেসবুক এ যেতেয় নোটিফিকেশন দেখে আবির জানতে পারে “আজকে আবির আর নিলিমার ফ্রেন্ডশিপ এর ১ বছর হলো”।। নোটিফিকেশন টা দেখে আবির ভাবতে থাকে কি ভাবে সময় চলে যায় এই ১বছরে রিয়া একবার ও খোজ নেই নি আমিও চেষ্টা করি নি।। এই সব ভাবতে ভাবতেই নিলিমার কল
আবিরঃ হুম পিচ্চি বল
নিলিমাঃ happy friendship day
আবিরঃহুম কালকে ভারত যাচ্চি নিজের খেয়াল রাইখেন ম্যাডাম।।
নিলিমাঃ ওকে।
ভারতে যেয়ে আগে থেকে ঠিক করে রাখা ডাক্তার এর সাথে কথা বলে অনেক টেস্ট করে জানতে পারে আগের টেস্ট গুলা ভুল ছিল।। ক্যান্সার হয় নি,,,ভাইরাস জনিত কিছু সমস্যা এই আর কি।। সেই দিন কারনে অকারনে ল্যান্ডফোন থেকে প্রথম কল টা আবির নিলিমাকেই দিয়েছিল
আবিরঃ ওই পিচ্চি ডাক্তার বলছে ক্যান্সার হয় নি,,ভাইরাস এর সমস্যা।।
নিলিমাঃ আগেই বলছিলাম,,,দেশে আসবা কবে???
আবিরঃ কিছু ওষুধ আর কাজ আছে সব শেষ করে দেশে আসবো।
নিলিমাঃ ওকে
৮ দিন পরে আজকে আবির দেশে ফিরছে,,,গাড়ি তে বশে আবির ভাবছে মাকে যেয়ে বলবো ” রিয়া তো চলেই গেছে,,সব ঝামেলা শেষ করে নিলিমা কে নিয়ে আসি” আচ্ছা নিলিমা কি বিয়ের প্রস্তাব শুনে অবাক হবে,,,এমন হাজার ভাবনার ভেতরে আবির বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিল কিন্তু দরজা খোলার পরে ওপাশের মানুষ কে দেখে আবির নিজেই অবাক হয়ে গেলো
আবিরঃ একি রিয়া!! আপনি??
বিয়াঃ ভেবেছিলাম মরে যাবে কিন্তু বেচেই যেহেতু আছো তাই ফিরে এলাম।। আবির কিছু বলার আগেই আবির এর মা বলে উঠলো
আবির এর মাঃ রিয়া যেহেতু ফিরে আসছে তার সাথে আর ঝগড়া করিস না,,,সমাজ এ গুলা ভাল চোখে দেখে না আর বউ রে নিয়েই থাকবি ওই এতিমখানার মেয়ের থেকে দূরে থাকিস বাবা,,,জারজ সন্তান সব।।। আবির তার মার মুখে এই কথা গুলা শুনে অবাক হয়ে গেলো।। এই মাই ২০ দিন আগে নিলিমা কে ভাল বলতো,,,ধন্যবাদ দিত আমাকে মেয়েটা সাহস দেয় বলে,, হায়রে দুনিয়া।। রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে নিলিমা কে কল দেয়
আবিরঃ জানো পিচ্চি রিয়া ফিরে এসেছে
নিলিমাঃ বউ নিয়ে ভাল থাকবেন।।
আবির এর অনেক কিছু বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু নিলিমা সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয়।।। আজও আবির রিয়া কে পাশে রেখে ভাবে ” নিলিমা কি তাকে ভালবাসতো,,নিলিমা কি তাকে মনে রেখেছে নাকি প্রতারক/ স্বার্থপর ভেবে ভুলে গেছে” অন্যদিকে নিলিমার মতো এতিমখানার মেয়েরা হারিয়ে যায় সমাজের উঁচু মানুষদের ভীড়ে,, এতিমখানার এই মেয়েদের ভাল থাকা সাময়িক সময় এর জন্য।।।