জানালা দিয়ে চাঁদের আলোটা মেয়েটার মুখে পড়ছে,কারেন্ট নাই তাও লাবণ্যের ঘুম ভাংছে না।
ভাংবে কীভাবে সারা দিন এতো কষ্ট করলে যে কেউ একটু যায়গা পেলেই ঘুমিয়ে যাবে। আমার ঘুম আসছে না,
অনেক দিন থেকে গল্প লিখিনি আজ বড্ড গল্প লিখতে ইচ্ছা করছে, বাস্তব জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে গল্প লিখা ভুলে গেছি।
।।
আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কথা!
আমি ইউনিভার্সিটিতে ২য় বর্ষে। লাবণ্যের সাথে আমার পরিচয় তখন, একদিন আমরা একটা পিকনিকে যাবো,
আমি বরাবরই পিছনে আসি, সে দিন বাসেও এর ব্যাতিক্রম হলো না।
আমার যে বাসে সিট ছিল সেটা ১৫ মিনিট আগেই ছেড়ে গেছে, তাই আমি টিচার আর ওনার পরিবারের বাসে উঠলাম।
বাসে উঠতে গিয়েই আমার প্রথম যে মানুষটার সাথে দেখা হলো, সে ছিল লাবণ্য। যদিও মেয়েটার তখন কিছু দেখা যাচ্ছিলো না, বড় বড় চোখ দুটো ছাড়া।
।।
আমিঃ আমি কি এখানে বসতে পারি?
লাবণ্য- জি বসেন।
আমি- আমি আয়ান।
লাবণ্য- জি চিনি! আমার জানার ভুল না হলে আপনি ইতিহাস নিয়ে পড়েন।
(মনে মনে ভাবলাম, আমি এতো পপুলার হলাম কীভাবে)
আমি- আপনি?
লাবণ্য- আমি লাবণ্য। ইংরেজি বিভাগ।
আমি- আমাকে চিনলেন কীভাবে?
লাবণ্য- আপনার গল্প গুলো পড়ি তো তাই। ভালো লিখেন আপনি, আপনার ইতিহাস নিয়ে না পড়ে সাহিত্য নিয়ে পড়া উচিৎ।
আমি- চাইলেই কি সব পাওয়া যায়? আর তাছাড়া কি নিয়ে কি করা উচিৎ আমি কখনও সেটা ভাবি না। মনে যা বলে সেটায় শুনি।
লাবণ্য- ও ভালো কথা। লেখক মানুষরা একটু ছন্ন ছাড়ায় হয়, তবে গল্পের মতো বউদের একটু সময় দিবেন।
আমি- গল্পের মতো বউ হলেই দিবো।
লাবণ্য- হা হা হা হা।
।।
এরপর থেকেই লাবণ্য আমার আসতে আসতে আমার জীবনে একটু একটু প্রবেশ করতে থাকে।
আমাদের বিয়েটাও খুব অদ্ভুত ভাবে হয়।
তখন পড়াশুনা শেষ করে একটা ছোট খাটো ব্যাবসা করছিলাম।
একদিন লাবণ্য আমাকে বলল, বিয়ে করবেন আমাকে?
আমি- হটাৎ এই রকম প্রশ্ন?
লাবণ্য- যেটা বলেছি উত্তর দেন।
আমি- আমি কিন্তু এখন ও চকুরি পাই নি।
লাবণ্য- আমার খুব বেশি প্রয়োজন নাই, যতটুকু না হলেই না, শুধু অতটুকু।
আমি- তোমার পরিবার?
লাবণ্য- কাল আমাদের বাসায় আসেন।
।।
পরের দিন ওনাদের বাড়ী গেলাম, যদিও আমার মনে হলো, ওর বাবা এই ব্যাপারে খুব রাজী না।
পরে রাতে সে আমাকে ফোন করলো, আমি ওর গলা শুনে বুঝতে পারলাম যে সে খুব কেঁদেছে।
আমি বুঝলাম না কারণ সে আমাকে কোন দিন বলেনি যে সে আমাকে ভালোবাসে। আর আমিও বলিনি, তবে মেয়েটার মধ্যে সব গুন ছিল।
আমি তাকে কখনও ভার্সিটিতে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতে দেখিনি, আমার সাথেও যে অনেক কথা বলতো সেটা না, খুব কম।
আমিও তাকে দূরেই রাখতাম।
যে যেটা ভালোবাসে, সেটায় করতে দেওয়া উচিৎ। অন্তত আমি সেটা মনে করি।
।।
পরের সপ্তাহে আমার বিয়ে হলো, সেখানেও আরেক ঝামেলা। সেটা হলো দেন মোহর।
লাবণ্যের এক মামা নগদ এক লক্ষ ছাড়া বিয়ে হবে না বলে দিলো।
অবশেষে লাবণ্য অনেক বুঝিয়ে সেটা বিশ হাজারে নামিয়ে আনলো। সেটাও আমি অবশ্য এক বড় ভাইয়ের থেকে ধার নিয়েছিলাম,
কারণ আমার কাছে তখন খুব সম্ভবত পাঁচ হাজার টাকা ছিল। আমারা মাত্র ৭ জন মিলে গিয়ে বিয়ের কাজ শেষ করি।
।।
বাসর রাতে যখন ঢুকবো, আমার পকেটে তখন আর মাত্র পাঁচ শত ত্রিশ টাকা ছিল।
আমি লাবণ্যের জন্য এক প্যাকেট ফুচকা নিয়ে গেছিলাম, কারণ এই তিন বছরে আমি জানি মেয়েটা ফুচকা আর তেতুল টক খুব পছন্দ করে।
।।
সে দিন লাবণ্য অনেক খুশী হয়েছিলো, আর অনেক কেঁদেও ছিল, ওর বাড়ীর জন্য আমাদের যেটা অপমান হয়েছে।
ও আমাকে টাকা ফেরত দিচ্ছিল, আমি নেই নি। ওকে নিয়ে নতুন করে শুরু করলাম।
মেয়েটাও আমাদের বাড়ীতে মানিয়ে নিলো।
আমার বাবা মায়ের দুই ছেলে আমরা, বড় ভাই বউ নিয়ে বাইরে থাকে।
বিয়ের ১ বছর পর আমার একটা স্কুলে চাকুরী হলো। আমি অনেক খুশী ছিলাম। কারণ মেয়েটাকে এই এক বছরে কিছুই কিনে দেয় নি।
সে প্রাইভেট পড়াতো, এ নিয়ে তার চলে যেতো।
।।
লাবণ্য তার বাবার বাড়ী খুব বেশি যেতো না। কেন সেটা জানি না, কখন ও প্রশ্ন ও করিনি।
৬ মাস আগের কথা। লাবণ্য যেহেতু প্রাইভেট পড়াতো তাই অনেকে তাকে চিনতো,
একদিন আব্বুর এক বন্ধু লাবণ্য কে বলে আমাদের একটা স্থানীয় কলেজে খণ্ড কালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করবে নাকি?
লাবণ্য আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি আর কি উত্তর দিবো, আমি বললাম তোমার ইচ্ছা।
।।
তারপর থেকে সে কলেজে ক্লাশ নেওয়া শুরু করে। গত সপ্তাহে জানতে পারলাম, তার সামনে মাস থেকে বেতন চালু হবে। যাক ভালো কথা।
।।
কাল আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
আমি- লাবণ্য! একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
লাবণ্য- হ্যাঁ বলো।
আমি- মেয়েরা বিয়ের পর বাবার বাড়ী যাবার জন্য তাকিয়ে থাকে, যে কোন সুযোগে তারা বাবার বাড়ী যেতে চাই।
আমিও সেটা খারাপ চোখে দেখি না। কিন্তু তুমি কেন বাবার বাড়ী যেতে চাও না?
লাবণ্য- প্রতিটা মানুষ যেখানে সুখ থাকে সেখানে থাকতে চাই। আমিও তার ব্যাতিক্রম না।
আমি- মানে?
লাবণ্য- আমি তোমাকে কেন বিয়ে করেছি জানো?
আমি- না তো।
।।
লাবণ্য- আমার বাবা মা ৩ বছর প্রেম করে তারপর পালিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু তারা কখনও সুখী হতে পারে নি।
আমি ছোট থেকেই দেখেছি বাবা মা প্রতিদিন ঝগড়া করে, আমার তো ইচ্ছা যে আমি কোন দিন বিয়েই করবো না।
কিন্তু তোমার গল্প গুলো পড়ে জানতে পারলাম মানুষের জীবন এতো সুখের ও হয়, যদিও গল্প গুলো ছিল কাল্পনিক।
।।
তবে ওখানে কিছু বুঝার জিনিস ছিল, আর সেটা হলো, লোভ করলে কখন ও সুখী হওয়া যায় না।
প্রতিটা সম্পর্ক বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে, ছোট্ট একটা ভুলে অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। স্বামী হবে স্ত্রীর সব থেকে কাছের বন্ধু,
কিছু করার আগে স্বামীর কাছে সেটা জানতে হবে, , তার অনুমতি নিতে হবে, এতে নিজেকে ছোট ভাবার কিছু নাই।
কারণ হাদিসে উল্লেখ আছে, যদি আল্লাহ্ মানুষকে আল্লাহ্ বাতিত কাউকে সিজদা করার অনুমতি দিতো তবে ছেলে-মেয়েকে মায়ের পায়ের নীচে,
আর স্ত্রীকে তার স্বামীর পায়ে।
।।
আর আমি সেই নিয়মে চলি বলেই আজ পর্যন্ত আমাদের মাঝে টুক কথাও হয় নি।
আমার বিয়ের আগেই মনে হয়েছিলো তোমাকে বিয়ে করলে আমি টাকা পয়সা না পেলেও অনেক সুখে থাকবো।
আমার তো টাকা পয়সা, দামী গাড়ী বাড়ী চাই না। আমার সুখ চাই।
।।
আর আমার ধারণা ভুল ছিল না। আমি অনেক সুখেও আছি, আর আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আমাদের এখন টাকা পয়সার ও অভাব নাই।
।।
মেয়েটা একের পর এক কথা বলেই চলে গেলো, আর আমি শুধু শুনে গেলাম। এক মুঠো সুখের জন্য সে কতো কষ্ট করছে।
।।
লাবণ্যের ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম।
লাবণ্য- এই তুমি এতো রাতে কি করছো?
আমি- কিছু না অনেক দিন থেকে কিছু লিখিনি, তাই লিখতে ইচ্ছা করছিলো।
লাবণ্য- সকালে না তোমার প্রাইভেট। শুয়ে যাও। সামনে মাস থেকে প্রাইভেট বাদ দিয়ে দিও। তারপর মনের ইচ্ছা মতো লিখিও।
আমি মিস করি তোমার সেই সুন্দর গল্প গুলো। এখন শুয়ে যাও।
আমি- ঠিক আছে।
।।
ল্যাপটপ এর ও চার্জ শেষ হয়ে আসছে। বাকিটা অন্য দিন লিখবো।
…………………………………………………..সমাপ্ত…………………………………..