এই অবনি আগামিকাল না তোর ভর্তি পরিক্ষা।আর তুই ঘুমাসচ্ছিস।
– আরে মা,রাতে ঘুম হবে না বলেই তো।
– আচ্ছা ঘুমা।আর তোর বাবা তোকে গাড়ীতে তুলে দিতে যাবে।
– ওকে,আমি অবনি মা- বাবা,ছোট ভাই পিয়াশ আর আমার ভাইয়ের চেয়ে কোন অংশে কম না,আবরার ভাই নিয়ে আমাদের স্বর্গ।
– বাবা আমাকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে গেলো।গাড়ীতে এক ছেলে আমাকে লুকিয়ে দেখছে।তবে ছেলেটি খুব কিউট।চুল গুলো হেব্বি।আমার ভাবনার ছেদ পড়লো আবরার ভাইয়ের ডাকে।কুরিয়ার সারভিস বাস।আর এর দায়িত্বে আবরার ভাই।
– এই যে অবনি তুমি তো খুব লাকি।জানালার ধারে সিট।রাতের প্রকৃতি দেখতে তো খুব ভালবাসো।
– সব আপনার জন্য ভাইয়া।আপনি তো প্রতিবার এই ব্যাবস্থা করে দেন।
– আর শুনো আজ কিন্ত বেশি ফোনে গান ও এফবি তে থাকবে না।তাহলে পরিক্ষার বারোটা বাজাবে।ঘুমিয়ে পড়ো।
– না আমি ঘুমাবো না,আপুর ছবি দেখবো।আর এখানে বসেন।
– কোন আপুর।না বসবো না। হাই স্কিল সুন্দরী দের পাশে বসতে আন ইজি লাগে।
– তাহলে আয়রা আপুর পাশে কী করে বসেন।আয়রা আপু তো আমার চেয়ে হাজার গুন বেশি সুন্দরী।( আয়রা আপু ভাইয়ার জিএফ) ফোন দেন আমি দেখবো।দেখছি ছেলেটা আমাদের কথা বলা পছন্দ করছে না।
– এই নাও ফোন।আর এ হল ক্যাটবেরী।তোমার আপু দিয়েছে।
– ফোনে আপু ভাইয়ার অনেক ছবি দেখলাম।গান শুনছি আয়রা আপু ফোন দিয়েছে।রিসিভ করে কথা বললাম।
ভাইয়াকে ফোন দিলাম।আর ভাবছি ভাইয়া কেন আমার নিজের ভাই হলো না।তবে দায়িত্ব সব পালন করে।বড় ভাইয়ের।মার কাছে আবরার ভাই তো চোখের মনি।আর বাবার বড় সন্তান। ভাবতে ভাবতে গাড়ী কখন যেন সিরাজগঞ্জ চলে আসচ্ছে।সবাই নেমে ফ্রেশ হচ্ছে কেউ খাচ্ছে।আমি বাহিরে ঘুরছি।দেখি সেই ছেলে ওয়ান টাইম কাপ হাতে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে এখানে দেখে।কাছে আসলো।
– এই যে মিস।কফি খাবেন? আর আপনার নাম কী? আমি তূর্য।
– আমার নাম অবনি।।বলে ঘুরতেই দেখি,আবরার ভাই খাবার নিয়ে রাগি লুকে তাকিয়ে আছে।আমি ভয়ে বাসে ওঠে পড়লাম।
– এই নে খাবার খেয়ে নে
– ভাইয়া রেগে আছে।রেগে থাকলে তুই বলে।
– সবাই বাসে ওঠলো।ওই ছেলেটি আমার পাশে বসতেই।আবরার বাই চেঁচিয়ে বলে ওঠলো যে,ওইটা আমার সিট।
– আমরা ঢাকায় পৌঁছে গেলাম।সকালের খাবার খেতে দিলো সবাই কে।সবাই খেলাম।তূর্য ওর খাবারের ময়লা জড় করে ঠুসে পুরে আমাকে ফেলতে দেই।আমিও নিয়ে ফেলে দেই।এর পর ফোন নং চাই ওঠাও আমি কেন জানি না দিয়ে দেই।
– পরিক্ষা দিয়ে বের হয়ে ফোন অন করতেই। আননোন নং ফোন আসলো।রিসিভ করলাম।
– আমি তূর্য ।পরিক্ষা কেমন হলো
– ভালো।তোমার?
– আমি পরিক্ষা দিতে পারি নি।এডমিড ভুলে রেখে আচ্ছি।
– ইউ কি পাগোল
– না,সাইকো।
– এই ভাবে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।হঠাং ফোনে ম্যাসেজ আসলো।অন করে দেখি।লিখা: ami Turjo,kamon aco,porco kamon,vlo thako.আমি উওর গুলো লিখে সেন্ট করতে পারি নি।
– কিছু দিন পরে আবার ম্যাসেজ আসলো।” jani namber save kor oni,valo aco,porco kamon,ami valoi.এবারও উওর লিখলাম সেন্ট করলাম ৫০ মিনিট পর।
– ৫০ মিনিট পর।ভালো তাও রিপলে দিলে।
এই ভবে দিনগুলি কাটছিলো।ম্যাসেজ চালাচালিতে।একদিন বাজারে গেলাম।দেখি তূর্য, নামা্য পড়ে বের হচ্ছে।আমি দূরে গিয়ে ফোন দিলাম।আমি বাজারে।তুমি কই।
– আমিও তো। তুমি কোথাই বলো।আর এক পাও নড়বা না।আমি আসছি ওখানে থাকো
– কেমন আছো অবনি।
– ভালো,তুমি
– ভালো।তোমার সময় হবে।এক কাপ কফি খাওয়ার।
– হুম,কোথায় যাবে চলো।
– অবনি কে নিয়ে কফি সপে আসলাম।মুখোমুখি বসে আছি।আমি নিরোবতা ভাংলাম।আমি তোমাকে লাইক করি এটা জানো।তুমিও কী আমায়….!
– আমি তোমায় ফ্রেন্ড এর মত দেখি তূর্য….
– ও,আচ্ছা
– দিনগুলো কেটে যাচ্ছে, তার সাথে আমরাও অনেক সময় কাটাচ্ছি।এক সাথে সূর্য ডোবা,ফোসকা,খাওয়া,নদীর পাড়ে হাটা।দেখতে দেখতে আমাদের দূরে য়াওয়ার সময় চলে এসেছে।অবনি কে ময়মনসিংহ যেতে হবে পড়তে।আর তূর্য রাজশাহীতে থাকছে, রাজশাহী মেডিকাল এ।
– আজ আমি অনেক দিনের জন্য শেষ দেখা করতে এসেছি আমার অবনির সাথে।রাতে অনেক কেঁদেছি ফলসরুপ লাল চোখ।কীরে অবনি দাঁড়িয়ে আছিস।আর তোর চোখ ফুলা! রাতে ঘুমাসনি।নতুন ফ্রেন্ডের জন্য,ওখানে অনেক মজা করবি বলে।
– তুই কেন ঘুমাস নি তূর্য….?
– আমি তো তোকে একটু একটু করে হারিয়ে ফেলার ভয়ে।তুই তো জানিস আমি তোকে কতটা…..!থাক ওসব বাদ দে।
– আমিও তোকে বলে বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে দিলাম।তুই খুব বড় শিকারী রে তূর্য ।তা না হলে এই অবনি কে…. বলে তূর্যের বুকে ইচ্ছে মত কিলমেরে চলছি।
– আমি তো এই দিনটার জন্য পথ চেয়ে ছিলাম রে পিচ্চি পরী।আমাদের ভালবাসাকে স্বাগতম জানানোর জন্য এক নিমিশে বৃষ্টি ধারায় ভিজিয়ে দিলো।চল বাসায় দিয়ে আসি,
– যে যার মত পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।এখন আমাদের পড়া প্রায় শেষের পথে।আজ খুব বৃষ্টি হচ্ছে।আর আমার পিচ্চি পরীটা বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালোবাসে।আমার জন্য ভিজতে পারে না।আজ একটু ভিজাই যায়।ফোন দেই।হ্যালো পিচ্ছি পরী একটু তোমার মেসের ছাদে যাও তো।আজ আমরা বৃষ্টি বিলাশ করবো।বেশি ভিজবা না।মনে থাকবে তো।আর প্রতিটা ফোটা মনে করো আমি।আমিও মনে করবো প্রতিটা ফোটা তুমি।বেশি ভিজবা না।এসে ফোন দিবা।
-কাল পিচ্চি পরীর জম্মদিন। এবার নতুন কিছু করতে হবে।সকালে ফোন অফ করে ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম ৩ টায় পৌছলাম।আমার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।
– আমার জম্মদিনে একবারও তূর্য আমায় উইশ করলো না।আমিও ফোন দিবো না।এখন রাত ১০ টা হয়ে গেলো।তাও উইশ করলো না।এত রাতে আবার কে ফোনকরছে।দেখি তূর্য কলিং।হ্যালো
– একটু নিচে নামো না প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ,জানি কষ্ট হবে তবুও ম্যানেস করো।
– দেখছি বলে রেখে দিয়ে।ম্যানেস করে নিচে আসলাম।দেখি হাদারাম আমার পছন্দের সাদা শাট আর জিন্স প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– পিচ্চি পরী চোখ একটু বুজোতো..
– হুম, বলে চোখ বুজলাম।
– এবার খোলোও
– খুলে দেখি আমার চার পাশে জোনাকিরা তাদের অপরুপ যাতনা দেখাচ্ছে। আমি তো হা হয়ে উপভোগ করছি।
– পিচ্ছি পরী মুখ বুঝো।নইলে জোনাক মুখে ঢুকে য়াবে।
– এই জন্য আমায় উইশ করো নি না।
– হুম, বিকালে এসেছি।এইগুলো ধরতে দেরী হয়ে গেলো।আর কাল তো এক বারে চলে যেতে হবে।পড়া তো শেষ।আমার আর পিচ্চি পরীর জম্মদিন ভালো করে আমরা কাটাবো। আজ তূর্যের জম্মদিন। তাই নেভী ব্লু ক্যালারের শাড়ী পড়েছি,হাতে নীল চুড়ী,হালকা মেকাপ।নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।দূর থেকে দেখি হাদারাম দাঁড়িয়ে আছে।নেভী ব্লু পাঞ্জাবি পড়ে।
– কিরে, তোকে বলি নি যে আটা মাখবি না।তুই তো এমনিতে আটার বস্তা।চল রিকশায় ঘুরবো আজ।
– রিকশা কিছুদূর যাওয়ার পর। এক্সিডেন্ট হয়।তূর্য আমায় ঢেলে ফেলে দেই।অনেক পরে আমার সেন্স ফিরে।আমি তূর্য কে খুঁজতে থাকি।মা বললো যে ও ICU তে।আমি ছুটে গেলাম ভাংগা হাত নিয়ে।আমি পাশে বসে কাঁন্না করছি।কখন যে চোখের পানি ওর মুখে পড়ছে আমার খেয়াল নেই।
– কে যেন ভাংগা গলায় বলছে যে,আমি স্যাল্যাইন আর খাবো না।কাঁদছিস কেন….? আমার কিছুই হয় নি।
– তুই এমন কেন করলি।নিজে বিপদের মুখে পড়লি আমায় বাঁচিয়ে।
– আমি বারবার এমন করবো।কারন আমি যে “তোমাতে বিভোর”।সারা জীবন তোমাতে বিভোর থাকতে চাই।
– হুম,থাকিও,আমিও যে “তোমাতে বিভোর ” থাকবো সারা জীবনভর?