——- এই আরিয়া শোন!
——- কি বলবি বল।
——- আমার সাথে চলতো!
—— কই যাব তোর সাথে?
—— মার্কেটে যাব জুয়েলারির দোকানে।
—— কেন?
—— এক জোড়া নুপুর কিনবো,তুই পছন্দ করে দিবি!
—— কার জন্য নুপুর কিনবি?
——- আরে সেদিন তরে বলছিলাম না,ফেসবুকে এক মেয়ের সাথে পরিচয় হইছে।সেই মেয়েরে সেদিন মেসেজ দিয়ে I Love You বলছি।
—— তা মেয়েটা কি বলছে?
—— বলছে সরাসরি প্রপোজ করতে!
—— তুই মেয়েটাকে পাবি কই,যে সরাসরি প্রপোজ করবি?
—— আরে আমাদের গ্রামের কয়েকগ্রাম পরেই মেয়েটির বাসা,, তাই মেয়েটিকে আমাদের পাশের গ্রামের ভেতরে যে পার্ক আছে ঐখানে আসতে বলছি!
—— ওও,তা নুপুর দিয়ে কি করবি?
—— মেয়েটার নাকি নুপুর পরতে খুব ভালবাসে,,তাই ভাবছি নুপুর পড়িয়েই প্রপোজটা করব।এখন তুই চলতো!
—— নারে আমি যেতে পারব না, আমার ভাল লাগছে না।তুই বরং অন্য কাওকে নিয়ে যা।আমার বাড়ি যেতে হবে!আমি এখন যাই।
—– এই কই যাবি তুই?তোরে আমি যেতে দিলে তো,,তুই আমার একমাত্র বান্ধবি,, আমার কি আর অন্য কোন মেয়ে বান্ধবি আছে নাকি,যে অন্য কাওকে নিয়ে যাব!তোকে যেতেই হবে আমার সাথে,বলেই এক প্রকার জোর করেই আরিয়ার হাত টানতে টানতে নিয়ে গেল নিলয়। মার্কেটের জুয়েলারির দোকানে গিয়ে আরিয়া এক জোড়া নুপুর পছন্দ করলে নিলয় তা নির্দিষ্ট দামে কিনে নেয়।আরিয়াকে বাসায় পৌছিয়ে দিয়ে নিলয়ও বাসায় চলে আসে। পরদিন দুপুরের একটু পর নিলয় আরিয়াদের বাসায় যায়।নিলয়কে দেখে আরিয়া জিজ্ঞেস করে- কি রে অবেলায় তুই এখানে?
—— কেন, আমি কি এখানে আসতে পারি না নাকি?
—— তা বলছে কে!তেমন প্রয়োজন না পড়লে তো আর আমার বাসায় আসিস না, তাই জিজ্ঞেস করলাম।
—— হুম আজও প্রয়োজন আছে,তাই আসছি।
—— তা আজ আবার কি প্রয়োজন আমাকে?
—— এক্ষুনি তৈরি হয়ে নে!আমরা বাহিরে যাব.!
—— কেন?
—— আরে তোরে বললাম না ফেসবুকের সেই মেয়েটির কথা,সে আজ আমাকে পার্কে যেতে বলেছে,আজই প্রপোজ করব তাকে।
—— তুই প্রপোজ করবি তুই যা আমি সেখানে গিয়ে কি করব?(অভিমানী সুরে)
—— তোকে ছাড়া আমি কোথাও গিয়েছি?তুই আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড সো তোকে যেতেই হবে!
—– বিয়ের পর বাসর রাতেও আমাকে নিয়ে যাস!
—— হুম তুই যেতে চাইলে আমার কোন আপত্তি নেই!
নে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে,মেয়েটা পার্কে এসে আমাকে নাপেয়ে আবার চলে যাবে,,এগুলা বলেই নিলয় আরিয়াকে ডাক্কা দিয়ে তার রুমে পাঠিয়ে দিল তৈরি হওয়ার জন্য!আরিয়া তৈরি হয়ে আসলে নিলয় আর আরিয়া একটা রিকশা নিয়ে তাদের নির্দিষ্ট পার্কে গেল।
পার্কে গিয়ে কোথাও তেমন কোন মেয়েকে না দেখে আরিয়া নিলয়কে জিজ্ঞেস করল কি রে কই সেই মেয়ে?
——- আরে আছে আছে,,পার্কেই আছে!
—— কচু আছে,কই আমিতো তেমন কোন মেয়েকেই দেখতে পারছি না!
—— চোখ কপালে নিয়ে ঘুরলে দেখবি কি করে!আমি তোকে সারপ্রাইজ দিব বলে মেয়েটিকে বলছি পার্কে এসে লুকিয়ে থাকতে।
—— কেন?
—— আরে বললাম না তোকে সারপ্রাইজ দিব তাই!নে এখন কোন কথা না বলে চোখ বুজে থাক,,
আমি না বলা পর্যন্ত তুই কোন ভাবেই চোখ খুলবি না কিন্তু?
—— কেন?
—— আরে বিল্লি বললাম না সারপ্রাইজ দিব।
—— আচ্ছা নে চোখ বন্ধ করলাম, তুই না বলা পর্যন্ত চোখ খুলব না!
—— হুম মনে থাকে যেন।
আরিয়া নিলয়ের কথা মতন চোখ বুঝে নিলয়ের সামনে দাঁড়িয়ে রইল।নিলয় তার পকেট থেকে নুপুর বের করে, হাটু গেড়ে বসে আরিয়ার পা নিলয়ের একটি পায়ের উপর রেখে নুপুর পড়িয়ে দিল।আরিয়া কিছু একটা অনুভব করলেও তেমন কিছুই বুঝতে পারল না! নুপুর পড়ানো শেষ হলে নিলয় আরিয়াকে চোখ খুলতে বলল, আরিয়া চোখ খুলে নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল গতকাল তারই পছন্দের কেনা সেই নুপুর তার পায়ে পড়ানো।এসব দেখে একটু অবাক হয়েই নিলয়কে জিজ্ঞেস করল আরিয়া এটা কি করলি নিলয়?তুই না ফেসবুকে পরিচয় ঐ মেয়েটাকে প্রপোজ করবি বলে নুপুর কিনলি?
—— হ্যা কিনছি, তাতে কি?
—– তাহলে আমার পায়ে নুপুর পড়ালি কেন?
—- তুই তো আমার সেই ফেসবুকে পরিচিত সেই মেয়ে!
—– মানে কি বলছিস তুই এসব?
—– হ্যা বিল্লি এটাই সত্যি!আরিয়া নীল নামে ফেসবুক আইডির মেয়েটা,,যাকে আমি প্রতিদিন মেসেজ করি,তুই সেই মেয়েটা!যাকে কিনা আমি সেদিন I Love You বলেছিলাম,,তুই সেই আরিয়া!যে কিনা আমাকে বলেছিলি সরাসরি প্রপোজ করতে, তাই করে দিলাম।তোর তো নুপুর খুব প্রিয় তাই নুপুর পড়িয়েই প্রপোজ টা করলাম।তোর পা দুইটা না খুব সুন্দর, দেখ দেখ কত্ত সুন্দর লাগছে নুপুর পড়ানোর ফলে!
—– আরিয়া আরেকবার নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল সত্তিতো খুব সুন্দর লাগছে!কিন্তু তুই জানলি কি করে আরিয়া নীল আইডিটা আমার!আমিতো তোকে বলেছিলাম আমি ফেসবুক ইউজ করি না!
—– হুম বলেছিলি,, কিন্তু সেদিন কেন জানি আরিয়া নীল নামটা দেখে খুব সন্দেহ হতে লাগল,,তাই তোর প্রোফাইল এ ডুকে দেখলাম ১৪ই সেপ্টেম্বর তোর জন্ম তারিখ আবার তোর মোবাইল নাম্বার ও Show করা আছে,,তাই সেদিন নিশ্চিত হইয়েছিলাম এইটা তোরই আইডি,,তাই তো প্রতিদিন মেসেজ করে তোর মনের না বলা কথাগুলি জেনে নিয়েছি! নিলয়ের কথা শুনে আরিয়া আর দেরি না করে নিলয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে কান্না করে দিল।নিলয় আরিয়াকে শক্ত করে ঝড়িয়ে ধরে বলল কিরে বিল্লি কান্না করছিস কেন!
—— আরিয়া কান্না করতে করতে বলল,,কুত্তা তুই এভাবে আমাকে কষ্ট দিলি কেন/?
—— আরে কষ্ট দিলাম কেমনে?
—— এই যে তুই বলছিলি আজ তুই ফেসবুকে পরিচিত এক মেয়েকে প্রপোজ করবি,,যানিস কি ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি!খুব কষ্ট হচ্ছিল,,মনে হচ্ছিল এই বুঝি তোকে হারিয়ে ফেললাম,,বুকের বাম পাশে কেমন যানি চিন চিন ব্যাথ্যা করছিল!(কান্না করতে করতে বলল আরিয়া)
—— সরী বিল্লি,,আরে এমন করে তোকে কষ্ট দিব না।তুই যানিস না, কষ্টের ফল মিষ্টি হয়,তাই একটু কষ্ট দিলাম,,প্লিজ আর কান্না করিস না।(আরিয়ার কপালে চোখে চুমু দিয়ে বলল বলল নিলয়)
—– ,,এভাবে ভালবেসে সারাজীবন তোর বুকে আগলে রাখবি তো?
—– হুম রাখব, আমার পাগলিটাকে ভালবেসে সারাজীবন এভাবে আমার বুকে আগলে রাখব,,এবার একটু হাঁসি দে!
—— না,আগে তুই প্রপোজ কর তারপর হাসব!
—— কি এখনো প্রপোজ করিনি?
—– কখন প্রপোজ করলি? শুধু তো নুপুর পরিয়ে দিলি,,এটা কোন প্রপোজ হল নাকি?এত কথা না বলে এক্ষুনি প্রপোজ কর?
—— ঐ শোননা?
—–,কি?
—– তোর ঐ পায়ে নুপুর পড়ানোর অধিকার দিবি সারাজীবন এর জন্য?
—– না দিব না!
—– কেন?
—- শুধু নুপুর পড়িয়ে দিবি আর কিছু করে দিবি না?
—— তোর ঐ পায়ে নুপুর পড়ানোর অধিকার দিবি,,?তোর শাড়ির কুচি ঠিক করার অধিকার দিবি?তোর ঘন কালো কেশের ঘ্রাণ নেওয়ার অধিকার দিবি?তোর ঐ গোলাপি ঠোটের লিপস্টিক নষ্ট করার অধিকার দিবি! তুই আমার সন্তানের মা হবি? আমার ছোট খাটো স্বপ্নগুলো পূরন করে আমার স্বপ্নের রাণী হবি?
—— হুম হব তো, তোকে সব কিছু করার অধিকার দিব,,আমি তোর সন্তানের মা হব!
—– তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পার! আমার ভাল লাগা ভালবাসা তোমায় দেব আরও! তুমি হাতটা শুধু ধরো, আমি হব না আর কারও।
—— হুম,এই যে শক্ত করে তোর হাতটা ধরলাম শত বাধা আসলেও আমি কখনোই এই হাতটা ছাড়ব না!
—— এখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বল ভালবাসি!.
—– আরিয়া নিলয়কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,,ভালবাসি,খুব বেশিই ভালবাসি আমার পাগলটাকে!.
—— আমিও ভালবাসি আমার পাগলটাকে!. এবার কতগুলা পাপ্পি দে পাগলী!.
—– না দিব না!
—– কেন?
—— আমার লজ্জা করেনা বুঝি?
—— আরে লজ্জা কিসের,আমরা পাগলা পাগলিই তো!আর তো কেও নেই!
—– এই যে দেখছ না,কতলোক আমাদের ভালবাসার গল্প পড়ছে আর মনে মনে এরকম রোমান্টিক মুহুর্তগুলি কল্পনা করছে তারা দেখে ফেলবে না!।
—— ইসসসসরে সত্যি সত্যি তো দেখে ফেলত! এই যে ভাইয়ারা/আপুরা আপনারা এখন যেতে পারেন,, আপনারা থাকলে আমার লজ্জাবতীটা আমাকে পাপ্পি দিবে না!