ভালবাসা

ভালবাসা

ইরা তুই নাকি আজকাল প্রেম করিস?
-হুম!আসলে ভাইয়া আর কয়দিন একা থাকা যায় বলেন তোহ,তাই প্রেম করছি
-তাইলে তুই টাইমপাস করতেছিস?
-টাইমপাইস কেন?? লেখাপড়া শেষ করে মা-বাবকে তার কথা বলব
-তাই নাকি৷ তুই নাকি দিনদিন খুব বুদ্ধিমান হচ্ছিস?
-কেন সারাজীবন কি বোকা থেকে যাব নাকি
-আজকে বিকালে আসতেপ পারব না পড়াতে
-কেন আজকে কি হল?পরশু আমার এক্সাম
-কালকে এসে পড়িয়ে দিব
-আচ্চা

এই বলে হাবিব চলে গেল৷ কেন জানি আজ তার ভাল লাগছে না৷ কারন গত কয়েক সপ্তাহ থেকে ইরা আর একটা ছেলে খুব ঘুরাঘুরি করে৷ পরে জানতে পারে সে নাকি ছেলেটার সাথে প্রেম করে৷ ইরা আর হাবিব খালাতো ভাই বোন৷ হাবিব টিউশনি করায় না৷ ইরার মায়ের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছে৷ আর পড়াতে পড়াতে মেয়েটার কিভাবে মায়ায় পরে গেল বুঝতে পারল না৷ মেয়েটাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে৷ হাবিব অনার্স ৪র্থ বর্ষে৷ আর ইরার ১ম বর্ষের ফাইনাল এক্সাম চলছে৷ মেয়েটা বড্ড পাগলী৷ আর এই পাগলামী গুলো বারবার হাবিবকে মুগ্ধ করে৷ আর তার এইসব পাগলামী দেখতে দেখতে একসময় তার মায়া পরে যায়৷ আর আস্তে আস্তে বুঝতে ইরাকে সে গভীরভাবে ভালবেসে ফেলেছে৷ ইরা যে কলেজে পরে হাবিবও সে কলেজে৷ ইরার যাতে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে না পারে,কলজে ইরার সাথে হাবিবই সবসময় থাকে৷ আর ইরা আর হাবিব সবসময় একই সাথে কলেজে যায়৷ হাবিব অনেকবার চেয়েছে তাকে ভালবাসার কথা বলতে,কিন্তু কি এক অজানা ভয়ে বলতে পারে নাই৷

তাদের দেখে অনেকে ভাবত তারা প্রেমিক-প্রেমিকা৷ ইরাও মাঝে মাঝে উপলব্ধি করতে পারত যে হাবিব তাকে খুব গভীরভাবে ভালবাসত৷ কারনে অকারনে অনেক আবদার করত৷ যেমন হঠাৎ করে বলত ইরা আজকে শাড়ি পড়েই রেডি থাকিস তোহ আজকে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাব৷ আর হ্যা খালামনি থেকে নীল শাড়ি থাকলে পড়ার চেষ্টা করিস৷ আর নুপুর,চুড়ি পরে রেডি থাকিস৷ যখন তারা নদীর পাড়ে ঘুরতে যেত তখন হাবিব অদ্ভুত কথা বলত৷ যেন ঘুরে ফিরে বুঝাতে চাইত সে অনেক ভালবাসে৷ আর তার আবদার গুলো অদ্ভুত সুন্দর লাগত৷ যেমন রাতে হাটাহাটি করা৷ তার নাকি আমাকে নিয়ে হাটতে ভাল লাগে৷ আর আমাকে নিয়ে জ্যোৎস্না দেখতে ভাল লাগে৷ তখন আমি বলি,

-আচ্চা আমি কি আপনার প্রেমিকা যে আমাকে সাথে নিয়ে আপনার সব আবদার পূরন করবেন?
-কেন প্রেমিকা না হলে পূরন করা যায় না
-নাহ৷ আর চেয়ে বরং আপনি একটা প্রেম করেন, তারপর তার সাথে এই সব আবদার করেন
-তুই কি রাগ করিস!!
-না তোহ রাগ করি না
-জানিস একজনকে খুব পছন্দ করি কিন্তু বলতে পারি না৷ তাই ভাবছি বলে দিব
-তাই নাকি ভাইয়া৷ তোহ কে সে এত্ত ভাগ্যবতী মেয়ে৷
-সময় হলে বলব এখন না
-আচ্চা ঠিক আছে

হাবিব ভাবছে তাকে নিয়ে এতদিন এত ঘুরেছি৷ কিন্তু সেকি একটু বুঝল না৷ যে আমি তাকে ভালবাসি৷ আর বুঝলেও কি হবে আমি পছন্দ করলে কি হবে,সেও তোহ আমাকে পছন্দ করতে হবে৷ তবে খুব খারাপ লাগছে তাকে নিয়ে এতদিনের স্বপ্নগুলো খুব মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে৷ আর তাকে নিয়ে আমার মনের আকাশের ঘুড়িটা ছিড়ে যাওয়ার ধুল খাচ্ছে৷ খুব কষ্ট লাগছে৷ আর হাবিব ভাবছে তাকে আর পড়াবে না৷ তাকে দেখলে তার কষ্টটা বেড়ে যায়৷ সে ভাবল সে তাকে ভালবাসার কথা না বলে, এখন প্রায় তার পড়ালেখা শেষ৷ তারপর একটা চাকরি জোগার করে মা-বাবা বলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব৷ কিন্তু তস্র আগেই এইরকম একটা ঘটনা ঘটবে সে বুঝে ওঠতে পারে নাই৷

ইরা চিন্তা করতে লাগল হাবিব কেন আসছে না৷ ইরাও ভালবাসে তা না৷ আর সেইদিন এমনেই মজা করে বলেছে৷ আয়ান তার বন্ধু৷ কোনো বয়ফ্রেন্ড না৷ ইরা বুঝতে পারল হাবিব পড়াতে না আসার কারন৷ তাই ইরা ঠিক করল আজকে তার খালার বাসা যাবে৷ হাবিব এর সাথে কথা বলবে৷ কারন ইরা হাবিবকে ভালবাসে অনেক আগেই৷ আর ইরাই বলেছে তার আম্মাকে হাবিবর কাছে পড়বে৷ যখন ইরা তাদের বাসায় আসল,

-হাবিব ভাই কেমন আছেন?
-ভাল!! তুই কেমন আছিস?
-ভাল৷ তাহ আমাকে পড়াতে যান না কেন?
-আসলে আমার সামনে এক্সাম তোহ তাই যাই না৷ এক্সাম শেষ হলে যাব
-মিথ্যা বলছেন কেন?আপনার এক্সাম অনেক দেরী আছে
-মিথ্যা না৷ প্রস্তুতি নিতে হবে তোহ
-তাই নাকি৷ আচ্চা কালকে নদীর পাড়ে দেখা করবেন৷ বিকাল চারটায় কেমন৷
-আচ্চা ঠিক আছে৷ এইবলে ইরা চলে গেল৷

হাবিব গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু মেয়েটার আসার কোনো খবর নাই৷ ইরা তোহ সবসময় আগেই আসে৷ কিন্তু আজকে এত দেরী করছে কেন বুঝতে পারছে না৷ যখন ইরা আসলে,তখন হাবিব বলল,

-আজকে দেরী কেন?
-আগে বলেন আমাকে কেমন লাগছে? (হাবিব যখন ভাল করে ইরার দিকে তাকাল তখন দেখে৷ একদম পরিপূর্ণ মনের মায়াবতীর মত সাজিয়ে আসল৷)
-সত্ত্যি বলতে খুব সুন্দর লাগছে৷
-আমাকে পড়াতে কেন আসছেন নাহ?
-ইচ্ছাক করছে না৷ তাই যাই না৷

-তাই নাকি স্যার৷ জানেন আয়ান আমার বয়ফ্রেন্ড না৷ আমার বন্ধু শুধু৷ এখন আপনার যা বলার বলতে পারেন৷ আর জানি আপনিই আমাকে ভালবাসেন৷ এইবার প্রপোজ করেন
-অহ বাবা!একেবার ইনডাইরেক্ট প্রপোজ৷
-না করলে সত্ত্যি প্রেম করব৷ তবে আপনার সাথে আর কিছু বলতে না দিয়ে নদীর পাড়ের কাশফুল দিয়ে তাকে বলে, “আমাদের এক সাক্ষী হিসেবে,দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে এই কাশফুল গুলো দিয়ে তোমাকে চাই৷ আমি তোমাকে আমার করে নিতে৷ একবার সম্মতি দাও না প্রিয়া৷”

-ইরা বলল৷ করতে পারি আমি কিন্তু বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারব না৷ তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে৷
-আচ্চা খুব তাড়াতাড়িই করব৷

এইভাবে তাদের প্রেমের সূচনা শুরু হয়৷ যখন হাবিব চকারি পেল৷ তখন হাবিব এর মা এসে বলল,

-আচ্চা ইরাকে কেমন লাগে তুর?
-কেন?
-আসলে তুর জন্য তুর বাবা আর আমি ইরাকে পছন্দ করেছি
-তোমরা যা ভাল বুঝ!! এই বলে হাবিব রুমে গিয়ে ইরাকে কল দিল৷ ইরা কল ধরার পর হাবিব বলল,
-জানো ইরা আম্মু তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে?
-জানি৷ নতুন কিছু থাকলে বল
-কিহ!কিভাবে জানো?
-আমাদের দুজন এর বিয়ে অনেক আগে ঠিক হয়ে আছে৷
-তাইলে আমার সাথে এতদিন নাটক করেছিল৷ পড়ার বাহানা দিয়ে?
-কেন জামাই এর কাছে পড়তে লজ্জা কিসের৷ আর যখন ছোট বেলায় আমার বউ বলে বলে পাগল করে ফেলতে তখন লজ্জা করত না৷
-তাই তোহ বলি৷ আমি আবদার করার সাথে সাথে কেন মহারাণী রাজি হত
-হুম তাইলে এইভার বুঝলেন স্যার
-জ্বি ম্যাম৷

এইভাবে চলতে থাকে তাদের ভালবাসা৷ কিছুদিনই পর থেকে শুরু হবে তাদের সুখের সংসার ৷

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত