সুন্দরীশেষ্ঠা

সুন্দরীশেষ্ঠা

সকাল ৬:৩০ এর সময় তাড়াহুড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।আজও আবার ডাক পড়েছে পাহারাদার হবার জন্য।বন্ধু তার প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা করবে সেখানে আমার পাহারাদারি করতে হবে।এটা আমার কাছে নতুন কিছু না।যেতে যেতে প্রায় ৩৫ মিনিট সময় লেগে গেল।বন্ধু তো রেগে আছে আমার প্রতি।বন্ধুর রাগী মার্কা চেহারে দেখে বুঝতে পেরেছি যে আমার আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে।আমার দেরি হওয়াতে নিতুর সাথে কথা বলতে পারে নি।কারণ ৭ টায় নিতুর কোচিং ছিলো।নিতু কোচিং এ চলে গিয়েছে,আমি ভয়ে ভয়ে বন্ধু ফরাবির কাছে গেলাম।কান ধরে দুবার উঠ-বস করতেই বন্ধু ফারাবির রাগ নিমিষেই উধাও।

-শালা লেট লতিফ তুই প্রতিবার এমন করিস।ইচ্ছা হয় তোরে ঐ গাঙ্গে নিয়ে ইচ্ছা মত চুবাইতে।যাই হোক নিতুর সাথে একটু ঝামেলা হইছে তুই যে করে হোক এবারের মত মিউচিয়াল করে দে।
-যা পারবো না ভাগ তুই,আমি গেলাম তুই থাক (একটু মুড নিলাম)
-ও বন্ধু, বন্ধু রে শোন রাগ করিস না। তুই ছাড়া নিতুরে কেউ বুঝাতে পারবে না।প্রতিবার তুই তো ঠিক করে দিস, এবারও করে দে না, দে দোস্ত।
-আচ্ছা এটাই শেষবার, এর পর থেকে নিজের টা নিজে করবি।আর সকাল সকাল ফোন দিয়ে আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবি না।
-আচ্ছা দোস্ত করবো না।আমার কলিজার দোস্ত।
-নে হইছে, নিতু কই এখন?
-উপরে কোচিং করে।
-আচ্ছা চিন্তা করিস না আমি দেখছি।

টানা দুই ঘন্টা অপেক্ষা করার পর নিতু নিচে এলো।আমাদের দেখে নিতু একটু জোরেই হাটছিলো।বুঝতে বাকি রইলো না রাগ একটু বেশিই হয়েছে ফারাবির প্রতি। নিতু এই নিতু একটু দাড়াও কথা আছে,সময় হবে কী একটু কথা বলার জন্য?

কি কথা বলবেন বন্ধুর গুণগান করবেন এটা ছাড়া তো কিছু বলার নেই আপনার তাই না।  আচ্ছা কী করেছে ফারাবি বলবে?  আপনি গিয়ে শুনুন কি করেছে। তুমিই বলো নিতু, কি হয়েছে? কাল রাতে আমার সাথে একটুও কথা বলে নাই।ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিলো।আমার কি চিন্তা হয় না।  আচ্ছা বুঝতে পেরেছি,আসলে ওর ফোনটা নিলয় নিয়ে গেছে।তাই হয়তো কথা বলতে পারে নি।আর তোমাকে জানাতেও পারে নি।তুমি রাগ করে থেকো না কেমন। আচ্ছা নিতু ঐ মেয়েটা কে? কেন ভাইয়া পছন্দ হয় নাকি।নতুন এসেছে,আগে ফরিদপুর থাকতো। নাম কি মেয়েটার?

ওর নাম উর্বালি। বাহহ! খুব মিষ্টি নাম তো। অরণ্য ভাইয়া নামটা যেমন মিষ্টি মেয়েটাও তেমন মিষ্টি। হুমমম চোখদুটো দেখেই বুঝতে পারছি। মনে ধরেছে, খুব মনে ধরেছে।  ভাইয়া আপনি বললে আপনার ঘটকালিটা করতে পারি। নাহ সেটার প্রয়োজন হবে না, নিজেরটা নিজেই করবো।যদি প্রয়োজন হয় তখন জনাবো। আচ্ছা অরণ্য ভাইয়া ফারাবিকে একটু ডাক দেন তো, ভালো লাগছে না।কিভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখটা কেমন ছল ছল করতেছে। বাবা খুব দরদ হচ্ছে না এখন।আচ্ছা ডাকছি, এই ফারাবি এদিকে আয়।যা তোরা দুজনে কথা বল।আমি একটু উর্বালির সাথে ভাব জমাই। উর্বালি তোমার পাশে একটু দাড়াতে পারি?

-আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?আর আপনি কে?
-কিছু মানুষ খুব স্পেসাল হয়।আর তাদের সম্পর্কে জেনে নিতে হয়।তাই জেনে নিয়েছি তোমার নামটা।
-দুঃখিত আপনার সাথে অযথা কথা বলার আমার কোন ইচ্ছা নেই।

কথাটা শেষ করেই চেলে গেল।আমি একটু জোরে জোরেই বলি, মেয়েদের এতটুকু মুড প্রয়োজন।আর হ্যা আমি কিন্তু তোমাকে একটু বিরক্ত করবো কেমন।একটু আড় চোখে তাকিয়ে চলে যায়। আমি তো অজানা অনুভূতিতে হারিয়ে যাই।নিজের ভিতর এলোমেলো গানগুলো একে একে বাজতে থাকে। বেশ ভালোই তো লাগছে। ধন্যবাদ উর্বালি, জীবনের নতুন রং খুজে দেয়ার জন্য। সেই থেকে শুরু হলো উর্বালির জন্য ছুটে আসা।প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম উর্বালিকে দেখার জন্য।এভাবেই কেটে যায় ৬ মাস।কথা বলতে গেলে পাত্তা দিত না।তবে ওর চাহনিতে কেমন জানি মায়া ছিলো।আমায় কাছে ডাকতো উর্বালির চোখ দুটি। অন্যরকম নেশা কাজ করতো উর্বালির চোখের মাঝে।

হটাৎ একদিন উর্বালিকে দেখার জন্য ছুটে যাই। কিন্তু উর্বালি বা নিতু কাউকে দেখছি না।সম্ভবত কোচিং স্কুল দুটোই বন্ধ, সেটাই ঠিক হলো। কোচিং এ আসবে না জেনেও অপেক্ষা করছি উর্বালিকে দেখার জন্য। মনটা কেন জানি বুঝ নিচ্ছে না। অনেক সময় বসে থাকার পর সামনের দিকে হাটতে থাকি। সেদিন আবার ফারাবি ছিলো না তাই একাই ছিলাম।মন একটু খারাপও বটে কারণ তো একটাই উর্বালি। হাটাৎ পিছন থেকে নিতুর ডাকে দাড়িয়ে যাই এবং পিছনে ফিরি।নিতুর সাথে উর্বালিকে দেখতে পেয়ে একটু কামড় দিয়ে ওঠে বুকের ভিতর।উর্বালির মুখে অন্যরকম একটা হাসি ছিলো।পরনে ছিলো নীল রঙের শাড়ী,দু হাতে কাচের নীল চুড়ি,কানে ছিলো দুল।

-তোমরা কি কোথাও যাবে?
-হুমম! বুঝলেন কি করে? (নিতু)
-উর্বালি যে শাড়ী পরেছে সেটা দেখেই অনুমান করেছি।তা কোথায় যাবে তোমরা?
-উর্বালির বোন বাড়ি।ওর বোনের ননদের গায়ে হলুদ আজ।আর আমিও ওর সাথে যাচ্ছি।আগামী শনিবার দেখা হবে (নিতু)

-তার মানে উর্বালিকে না দেখে থাকতে হবে এই কয়দিন।আমি তো পাগল হয়ে যাবো তখন?
-পাগল হলে হবেন তাতে আমাদের কী? মুচকি হাসি দিয়ে উর্বালি কথাটা বললো।
-ইশশশশ! বুকে লাগলো কথাটা।
– পথ ছাড়ুন যেতে দিন আমাদের। সময় নেই আমাদের হাতে আর হ্যা শনিবার সকাল ৭:৩০ এ ব্রিজে থাকবেন আপনি(উর্বালি)

বলা শেষ করে চলে যায় ওরা।আমি একাই ওদের পিছন পিছন যেতে থাকি।ওরা গাড়িতে উঠে চলে যায়।আমিও বাসায় ফিরি।মনের ভিতর অনুভূতিগুলো কেমন জানি হয়ে গিয়েছে।একটাও ধরতে পারছি না সব এলো মেলো।এলো মেলো অনুভুতি লিখতে ইচ্ছা করছে খুব।এভাব চলতে থাকে আমাদের দিনগুলি।উর্বালির সাথে একটা সময় ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়।কিন্তু উর্বালিকে যে ভালোবাসি বলার সাহস হতো না।কারণ উর্বালি খুব রাগী ও জেদী ছিলো।কখনো বলিনি ভালোবাসি তোমায় উর্বালি।কারণ উর্বালির সাথে সারাজীবন কথা বলতে হবে বিদায় বলি নি ভালোবাসি।তবে মাঝে মাঝে মনে হতো বলে দেখি না কি হয়। কিন্তু কোন এক ভয়ে বলতে পারি নি।বলবো বলবো করে বলা হয় নি ভালোবাসার কথা গুলো।নাহ এভাবে আর কত দিন। আজ উর্বালিকে মনের মধ্যে জমে থাকা কথাগুলো বলতেই হবে, ভালোবাসি কথাটা বলবোই আজ যা হবার হবে। উর্বালির জন্য অপেক্ষা করছি ৩০ মিনিট হয়ে গেলো।কিন্তু উর্বালির আসার নামে কোন খবর নেই।ব্রিজেই অপেক্ষা করতে থাকি উর্বালির জন্য। ৮:১৫ এর দিকে উর্বালির দেখা মেলে।

-আসতে দেরি করলে যে? ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট ধরে বসে আছি তোমার জন্য।
-আমি তো বলিনি আপনি অপেক্ষা করেন।
-উর্বালি তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।বলবো বলবো করে বলা হয় নি।তবে আর পারছি না।
– হ্যাঁ বলুন। কি বলতে চান আপনি।
-ভা ভা ভা লো বা
-কি আমতা আমতা করছেন যা বলার সুন্দর করে বলুন।শুধু শুধু ভদ্রভীতু বলি না বুঝছেন।
-ভদ্রভীতু এটা আবার কেমন কথা?
-এই যে দেখতে তো খুব ভদ্র আবার ভীতুদের মত কাপাকাপি করেন সব সময়।
-ভালোবাসি! হ্যা তোমাকে ভালোবাসি উর্বালি।
-ওমা! আমার ভদ্রভীতুটার দেখি সাহস বেড়েছে।
-অনেক আগে থেকেই তোমাকে ভালোবাসি সেই প্রথম থেকে।কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নি।তবে আজ সাহস নিয়ে বলেই দিলাম। জানিনা তুমি আমাকে গ্রহণ করবে কী না।তবে ভালোবাসার কথা চেপে রাখতে পারছিলাম না তাই বলে দিলাম।

-কিন্তু মিঃ ভদ্রভীতু আমার ভালোবাসা তো এমন সস্তা নয়।শুকনা প্রোপজে উর্বালির ভালোবাসা পাওয়া যাবে না।আমাকে যে গোলাপ দিয়ে প্রোপোজ করতে হবে।তখন ভেবে দেখবো বুঝেছেন।আপনি এবার থাকেন আমি যাই।

মহব্বত কাকার দোকানে বসে রং চা খাচ্ছিলাম। শহরের টং দোকানের চা আর গ্রামের বাজারের চা স্বাদে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।আমি আমার ভাবনা থেকে চায়ের কাপের গরম স্পর্শে বাস্তবে ফিরে এলাম।বেশ ভালোই ছিলো মূহুর্তগুলো।তারপর কেটে গিয়েছে ৮ টি বছর।কতই না ভালোছিলো দিনগুলি।ব্রিজি বসে থাকা,উর্বালির পিছন ফিরে তাকানো।সব থেকে বেশি ভালো লাগতে উর্বালির রাগটা।

প্রথমে রাগের পরিমানটা খুব কমই ছিলো কিন্তু আমাদের সম্পর্কের তিন মাস পর থেকে রাগের মাত্রাটা বেড়ে গেলো।আমি ওর রাগের সময় নিজেকে সংযত করে উর্বালির রাগ ভাঙাতাম।উর্বালির রাগটা ভাঙানোর জন্য নানা ধরণের কথা বলতে হতো।সব শেষে উর্বালির যখন রাগটা হাওয়াতে মিলিয়ে যেতো। তখন আমাকে জড়িয়ে নিতো এবং মলিন সুরে বলতো তুমি খুব পচা। আমারও যে খুব ভালো লাগতো ওর ঐ মলিন সুরের কথাগুলে। তাইতো মাঝে মাঝে ইচ্ছা করেই রাগাতাম।আমাদের সম্পর্কে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় নি।আমাদের বিবাহ জীবনের ৫ বছর হয়ে গিয়েছে গত মাসের ২২তারিখে।
তবে এখন হয়তো সেই আগের মত আবেগটা নেই কিন্তু উর্বালির প্রতি ভালোবাসা ঠিকি রয়ে গেছে। অরণ্য তুমি বাসায় ফিরবে কখন?

-সন্ধ্যা হয়ে যাবে ফিরতে,কেন? কিছু আনতে হবে তোমার জন্য?
-নাহহ! কিছু আনতে হবে না।তোমাকে একটা খুশির খবর দেওয়ার আছে।তুমি বাসায় এলেই বলবো।
-আচ্ছা! বাসায় এসেই খুশির খবরটা শুনি।এখন ফোনটা রাখি না হলে যে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।
-আচ্ছা রাখছি তাহলে।

সন্ধ্যা ৬ টায় অফিস থেকে বের হলাম।অফিসের সামনেই ফুলের দোকান, রোজই ফুল নিতে হয় উর্বালির জন্য।কারণ প্রতিদিনই উর্বালিকে ফুল দিয়ে প্রোপোজ করতে হয়।এটা উর্বালির ইচ্ছাতেই করি।এই নিয়ে দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করি নি।আজও এক গুচ্ছো গোলাপ নিলাম তবে লুকিয়ে রাখলাম। কলিং বেলের আওয়াজ হওয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো। আমার চোখটা আটকে গেলো উর্বালির মাঝে।পরনে নীল শাড়ী,চোখে কাজল,হাতে কাচের চুড়ি,ঠোটে হালকা লিপস্টিক ও দিয়েছে।মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমাকে নিজের মধ্যে থেকে হারিয়ে দিলো।আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি মুখে কোন শব্দ নেই আমার।কিন্তু নিমিষেই উর্বালি মুখটা মলিন করে নিলো।হয়তো আমার হাতে কোন ফুল নেই সেজন্য।মাথাটা নামিয়ে নিলো নিচে,বেশ ভালোই লাগছিলো দেখতে।কিন্তু উর্বালির চোখে পানি দেখে নিজেকে সামলে রাখি কি করে।

-এই কাঁদছো কেন তুমি?

কোন উত্তর নেই।আমি হাতটা এগিয়ে মাথাটা উঁচিয়ে দিয়ে বলি, এই সুন্দর সাঁজে কান্নাটা মানায় না। তুমি ভাবলে কি করে তোমার জন্য ফুল আনবো না।আজ অনেক গুলো এনেছি দেখো। টলমলে চোখ নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো একটু জড়িয়ে ধরবে আমায় অরণ্য। হুম! অবশ্যই ধরবো। দু পা সামনে এগিয়ে জড়িয়ে নিলাম আমার উর্বালিকে।আর বলতে লাগলাম খুশির খবর টা কখন দিবা আমাকে? আমার যে আর তড় সইছে না। তুমি বাবা হতে চলেছো, আর আমি মা। কিহহ! তুমি সত্যি বলছো। হুমমম! তুমি খুশি হওনি। এই ছাড়ো কি করছো অরণ্য, ছাড়ো পড়ে যাবো তো।

চুপ কোন কথা বলবা না।উর্বালিকে কোলে নিয়ে ছাদে চলে যাই।আজ খুব আনন্দ হচ্ছে আমার।ঘরে যে আমাদের আলোর প্রদীপ আসতেছে আমাদের ঘর আলো করতে।খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছি। উর্বালি শোনো আমাদের সন্তানের নাম কিন্তু তোমার নামের সাথে মিল রেখেই রাখবো।না অরণ্য আমার নয় তোমার নামের সাথে মিল রেখে রাখবো। না না তোমার! আচ্ছা ঠিক আছে আমাদের দুইজনের নামের সাথে মিল রেখে সুন্দর একটা নাম রাখবো কেমন।  হুম ঠিক আছে, আচ্ছা উর্বালি আজকে সব কিছু কেন জানি অন্য রকম লাগছে।ইচ্ছা করছে তোমাকে কোলে নিয়ে সারা শহরটা ঘুরতে।

ইশশশ! আড়ে নাই ফোড়ে আছে।ঘুরতে হবে না তোমার কোলে মাথা রেখেই ঐ চাঁদটা দেখি তাতেই হবে। আচ্ছা দেখো তাহলে আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। কিছু সময় পর দেখি উর্বালি ঘুমিয়ে গিয়েছে।চাঁদের এক টুকরো আলো উর্বালির গালে আচড়ে পড়েছে।অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি উর্বালির দিকে। কত অপরূপ সুন্দর লাগছে আমার উর্বালিকে সকল সুন্দরের শেষ্ঠ তুমি।তুমি আমার কাছে সকল সুন্দরের উর্ধে সুন্দরীশ্রেষ্ঠা। আলতো ঠোটের স্পর্শ দেই উর্বালির কপালে। আজকের রাতটা এভাবেই কেটে গেলো।

মা খবর সুনে চলে আসেন আমাদের বাসায়।কেননা মা উর্বালিকে খুব আদর স্নেহ করেন।উর্বালিকে বুঝতেই দেয় না মা আর শ্বাশুড়ির মধ্যে পার্থক্যটা।তাইতো উর্বালি নিজের মায়ের মতই ভালোবাসে আমার মাকে।দেখলে মনে হবে জনম জনমের সম্পর্কে আমার মা এবং উর্বালির মধ্যে।

-কই আমার বউ মা কই।মা এসেই উর্বালিকে জড়িয়ে নেয়।উর্বালির কপালে চুমু খায় মা। আমি বসে বসে উনাদের কান্ড দেখছি। একদম চিন্তা করবে না বউ মা আমি এসে গেছি।এখন থেকে তুমি শুধু বিশ্রাম করবে।তোমার খেয়াল রাখতে হবে প্রতিনিয়ত ঘরে যে নতুন মেহমান আসতেছে।উর্বালির চোখটা পানিতে ভরে গিয়েছে দূর থেকে লক্ষ করলাম। মা উর্বালির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে পাগল মেয়ে কাঁদো কেন।আমি আছি তো তোমার পাশে। মা আপনি হাত মুখে পানি দিয়ে আসেন আমি আপনার জন্য খাবার আনছি। না বউ মা তোমার কিচ্ছু করতে হবে না। তুমি শুধু বিশ্রাম করবে যা করার আমি করবো।

আমি ভেজা চোখটা মুছে মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের কপালে চুমু খাই।মা তার আচঁলে জড়িয়ে নেয় আমাদের। প্রতিটা বউ এবং শ্বাশুড়ির সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিৎ।তাহলে সুখের কোন সীমা থাকে না।তাহলে কোন মায়ের থেকে ছেলে আলাদা হতে হবে না।আর প্রতিটা বউ এর ও স্বামীদের মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রাখা উচিৎ। এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিৎ যাতে সকলে বুঝতে পারে তাদের মধ্যে মা মেয়ের সম্পর্ক। যাই হোক আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো কেননা মা উর্বালির পাশে থাকবে সব সময়।অফিসেও একটু কাজের চাপ যাচ্ছে।সব মিলিয়ে ভালোই হবে।

অরণ্য বাবা তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয় বউ মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।আমি ফোন কানে নিয়েই অফিস থেকে বেরিয়ে যাই।অফিসের কাছেই আমার বাসা দুই মিনিট পার হতেই বাসায় পৌছে যাই।অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছি রাস্তা থেকেই।উর্বালিকে অ্যাম্বুলেন্স করে হসপিটালের দিকে রওনা হই। আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে উর্বালি।পাশের সিটে মা বসে দোয়া দূরুদ পড়ে ফু দিচ্ছে। উর্বালি ব্যাথায় ছটফট করছে। জ্যামের কারণে হসপিটালে পৌছাতে কিছু টা দেরি হয়ে যায়।এক পর্যায় উর্বালি অজ্ঞান হয়ে যায়।আমার হাত শক্ত করে ধরেই রেখেছে অজ্ঞান অবস্থায়।হাতটা ছাড়িয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো উর্বালিকে।উর্বালির বাবা মা ও এসে গিয়েছে এরি মধ্যে। ৩০ মিনিট পর ডাক্টার অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এলেন।

আমি এগিয়ে গেলাম উর্বালির অবস্থা জানতে। ডাক্টার বললেন দেখেন রোগীর অবস্থা খুবি আশঙ্কাজনক। বাচ্চা এবং মা দুজনকে এক সাথে বাঁচানো সম্ভব নয়।যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে।এখন সিদ্ধান্ত নেন কি করবেন। এমন কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারছি না। ডাক্টার সাহেব আপনি আমার উর্বালিকে বাঁচান আমার উর্বালিকে বাঁচান। আপনারা আল্লাহ আল্লাহ করুন দেখছি কি করা যায়। এর পর আর কিছুই মনে নেই আমার।নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি।উর্বালি উর্বালি বলে চিৎকার দিতে থাকি।মা আমার উর্বালি কই, ও মা! মা রে আমার উর্বালি কই।মা উত্তরে বলে বাবা এত উতলা হইস না।তোর একটা ছেলে সন্তান হয়েছে।

উর্বালি! আমার উর্বালি কেমন আছে মা? কথা বলো?  উর্বালির এখনও জ্ঞান ফেরেনি।২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে বাঁচানো সম্ভব হবে না। মা আমি উর্বালির কাছে যাবো।আমি উর্বালির কাছে যাবো।আবারও অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার ছেলের কান্নার আওয়াজে জ্ঞান ফিরে আসে।জ্ঞান ফিরে আসতে উর্বালি বলে আবারও চিৎকার দেই।উর্বালি উর্বালি বলে ডাকতে থাকি।পাশের বেডের থেকেই আমার ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই।উর্বালি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

বউ মার জ্ঞান ফিরেছে ৪ ঘন্টা আগে।তখনও তুই অজ্ঞান হয়ে ছিলি।বউ মা’র জ্ঞান ফেরার পর তোর ছেলে এবং বউ মা’কে তোর পাশর বেডে নিয়ে আসি। উর্বালির চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি উঠতে গেলাম কিন্তু এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে উঠতে পারছিলাম না। এইদেখে আমার এবং উর্বালির বেড মিশয়ে দেওয়া হয়।আমি হাতটা বাড়িয়ে আমার ছেলাটাকে কাছে নিয়ে আসি। কপলে চুমু দেই কয়েকটা। উর্বালি হাতটা বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে।ওর হাতটা শক্ত করে ধরি আমি।একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈর হয়েছিলো তখন।

আমি দুই দিন পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাই। তবে উর্বালির সুস্থ হতে ১মাস সময় লাগবে জানিয়েছে ডাক্টাররা।আমার ছেলেটা দেখতে প্রায় আমার আব্বুর মতই হয়েছে।উর্বালি ডেকে বলে দেখো আমার শ্বশুড়ের মতই হয়ে আমাদের ছেলেটা। আমি হ্যাঁ সূচক বার্তা জানাই এবং উর্বালির কপালে চুমু দিয়ে বলি তুমি সুস্থ হয়ে আবার আগের মত সব কিছু গুছিয়ে নিবে।উর্বালি আমার হাতে চুমু খেয়ে বলে আমার ভদ্রভীতু বরটা যদি পাশে থাকে তাহলে আমার অসুস্থতা বেশিদিন স্থায়ী হবে না। দীর্ঘ ২৭ দিন পর উর্বালি সুস্থ হয় এবং হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরি।একটা সময় উর্বালিকে হারানোর ভয় চেপে ছিলো আমার উপর।কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে ফিরে পেলাম আমার ছেলে ও আমার উর্বালিকে। শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়ের। যে অধ্যায়ের সূচনায় আমাদের ছেলে।

আজ এক বছর পূর্ণ হলো আমাদের ছেলের।সেই নীল শাড়ী,কানের দুল,চোখে কাজল,হাতে চুড়ি দেখতে বরাবরে মতই মহনীয় লাগছিলো।প্রতিদিনের মত আজও এনেছি লাল গোলাপগুচ্ছ।বাঁকা ঠোটের হাসি বরাবরের মত কেড়ে নিলো মনটা। অপলক তাকিয়ে বলছি…

তুমি তীব্র গরমের হিমেল হাওয়া,
তুমি বাতাসে ভেসে আসা কদম ফুলের সৌরভ।
তুমি পূর্ণিমারাতের চাঁদের আলো,
তুমি ঘন কালো মেঘের আড়ালে নীলের আভা
তুমি মেয়ে! তুমি প্রিয়তমা,
তুমি সুন্দরীশ্রেষ্ঠা।
তুমি শরৎ এর সাদা কাশফুল,
তুমি মগ ডালে ফুটে থাকা কৃষ্ণ চূড়া।
তুমি অন্ধকার ঘরের জোনাকির আলো,
তুমি প্রকৃতির মাঝে সবুজের আভা।
তুমি মেয়ে!তুমি প্রিয়তমা,
তুমি সুন্দরীশ্রেষ্ঠা।
তুমি শীতের সকালের উষ্ণতা,
তুমি শিশির ভেজা ঘাসফুল।
তুমি কুশায়ার আড়ালে সোনালী রোদের আলো,
তুমি গোধূলি বেলার রক্তিম আভা।
তুমি মেয়ে!তুমি প্রিয়তমা,
তুমি সুন্দরীশ্রেষ্ঠা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত