বান্ধবী

বান্ধবী

রাতুলের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি। মেয়ে আমাদের সামনে বসা,ঘোমটা দেওয়া থাকার কারণে চেহারা ভালো ভাবে দেখতে পারছি না। বুঝতে পারছি বিউটি পার্লার থেকে সাজুগুজু করে এসেছে। মেয়ের বাবাও বসে আছে, সে একজন নামকরা কসাই।

মেয়ের বাবা আমাকে বললেন, তুমি কি কর? রাতুল বললো, ও নামকরা লেখক। ও হচ্ছে বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখক।  মেয়ের বাবা বললেন, তুমি কি লেখ? দলিল? রাতুল জিভ কেটে বললো, ছিঃ ছিঃ আংকেল, কি বলছেন আপনি? ও একজন ফেসবুক সেলিব্রিটি। ফেসবুকে ওর কত ভক্ত জানেন? ও হচ্ছে বিখ্যাত লেখক হানিফ ওয়াহিদ। যদি মন দিয়ে লেখালেখি করতো তাহলে হুমায়ুন আহমেদ কে ছাড়িয়ে যেতো!

আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। এই সেরেছে!আমি আবার এতো বড় লেখক হলাম কবে? শখ করে ফেসবুকে দুই এক লাইন লিখি,কেউ পড়ে বলে মনে হয় না। তা লেখ কি?  এই ধরেন গল্প কবিতা,প্রবন্ধ। ফেসবুকে ওর অনেক সুনাম।  সুনাম দিয়ে কি পানি খামুনি মিয়া! মালপানি কেমন আসে সেইটা বল। মালপানি কি আংকেল?

মেয়ের বাবা ধমক দিয়ে বললেন, মিয়া মালপানি চিন না,আবার আসছো আমার মেয়েরে বিয়ার জন্য। লেখালেখি করে টাকা কেমন কামাও? টাকা কামায় না তো আংকেল, লাইক কমেন্ট কামায়।প্রচুর লাইক কমেন্ট পায় ও।  এগুলো কি বিক্রি করন যায়? না আংকেল,এগুলো কি বিক্রি করার জিনিস? তবে প্রচুর সম্মান,,,,  টাকা না কামাইলে সম্মান ধুইয়া কি পানি খামু? যাও এখানে বিয়ে হবে না।  রাতুল বললো, বিয়ে তো ও করবে না,,, বিয়ে করবে না তো আসছো কেন? পাত্র তো আমি!  ধুর মিয়া! আগে কইবা না! ভদ্রলোক গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। মেয়ের মা এসে আমাদের সামনে বসলেন। বিকাল বেলা শুয়ে আছি, রাতুল এসেই বললো, চল। আমি বললাম, কোথায় চলবো?

মেয়ে দেখতে যাবো। রিমা যেতে বলেছে।  রিমাটা আবার কে? আমার ফেসবুক বান্ধবী। এক মাস আগে পরিচয় হয়েছে।জানিস,রিমা খুব ধার্মিক, মাওলানা টাইপ মেয়ে।  আমি বললাম, মাওলানা টাইপ মেয়ে ফেসবুক চালায়? তোর সাথে প্রেম করে? রাতুল বললো, গাধার মতো কথা বলিস না তো! মাওলানা বলে কি মানুষ না? রিমা আমাকে খুব পছন্দ করে। দেখতে খুব সুন্দরী।  বুঝলি কি করে সুন্দরী? ছবি দেখেছিস? হা, ওর আইডিতে একটা হিজাব পরা ছবি আছে। জানিস ও হিজাব ছাড়া কোন ছবি পোস্ট দেয় না। আমার জন্য বাড়ি থেকে পাত্রী দেখছে শুনে বললো, আমাকে দেখে যাও। ও নিজে তোকে প্রস্তাব দিল? তবে আর কি বলছি! আমি কি কম হ্যান্ডসাম নাকি? দেখতে হবে না বন্ধুটা কার?

রিমার বাবা চলে যাওয়ার পর রিমার সাথে কথা বললাম। কথা বার্তায় বেশ স্মার্ট,তবে সব সময় ঘোমটা দিয়ে রইল। রাতুল এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেললো। আমাকে বললো, দোস্ত বিয়ে যদি করি একেই করবো!  ঘোমটাপরা অবস্থায় ও কি দেখলো আল্লাহই ভালো জানে। আমরা পাঁচ হাজার টাকা রিমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসলাম।  দুই দিন পর রাতুল এসে বললো, দোস্ত ফেসবুকে রিমাকে পাচ্ছি না,মনে হয় আমাকে ব্লক মেরেছে! কি করি বল তো? বাসায় গিয়ে ও পাচ্ছি না।  আমি বললাম, হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে।  রাতুল বললো, দোস্ত, আমি জানি, তুই চাইলে সব পারিস,যে করে হউক রিমাকে খু্ঁজে বের করে দে।তোর পায়ে পড়ি দোস্ত!  আমি বললাম , আচ্ছা।

এক মাস পর বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে গেছি একটা মুভি দেখতে। টিকেট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছি টিকেট কাটার জন্য। আমার পাশে হিজিাব পরা একটা মেয়ে এসে দাড়ালো। গায়ে জিন্সের প্যান্ট এবং টি শার্ট। সাথে একটা ছেলে, মনে হলো বয়ফ্রেন্ড। মেয়েটাকে পরিচিত মনে হলো।  সামনে এগিয়ে গিয়ে বললাম, তুমি কি রিমা? মেয়েটা হকচকিয়ে গেল। আমাকে আশা করেনি।আমি বললাম, আমরা কি একটু কথা বলতে পারি?  মেয়েটা বললো, নিশ্চয়ই। একটু আড়ালে গিয়ে বললাম, ব্যাপার কি রিমা? আমার বন্ধু তোমাকে পাগলের মতো খুঁজছে। সাথে কে? বয়ফ্রেন্ড?
রিমা বললো, হা।

তাহলে রাতুল কে ছ্যাকা দিলে কেন? রিমা বললো, ঐ ছাগলের সাথে আমি প্রেম করবো কেন? ছাগলটা আমাকে বারবার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছিলো। এ রকম একটা বলদের সাথে আমার যায়? আপনিই বলেন?  তাহলে যে বাসায়,,,, ছাগলটা বারবার আমার বাসার ঠিকানা চাইছিলো,,, ,, সেদিন আমার বয়ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল, হাতে কোন টাকা ছিল না, তাই ভাবলাম ছাগল টাকে কাজে লাগাই। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা হাতে নিলাম। রাতুল কে বলতে হবে, রিমা কে খুঁজে পেয়েছি!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত