হলুদের স্টেজে এতো লাইট কে দিয়েছে? আর এতো বড় স্টেজে কি ফুটবল খেলবো নাকি? এসব বলে শিথি যখন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তখনি, “আপু সরেন তো এই পানির ঘটি গুলো রাখতে হবে।” “এই পানির ঘটি আবার কিসের জন্য। এগুলো স্টেজে কেনো রাখা হচ্ছে?” “জানিনা আপু, মামুন ভাই রাখতে বলছে।” “মামুন ভাই কে? আহহহ, কাকে যে কাজ দিয়েছে এসবের আল্লাহই জানে। এই তুমি নিচে গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে দাও তো।” “কোন ভাইয়া কে ডাকবো আপু?” একটু চেচিয়ে শিথি বললো, “আমার ভাইয়াকে। যার বিয়ে হচ্ছে। সায়েম ভাইয়া।” ছেলেটা রাগ দেখে দৌড়ে নিচে চলে গেলো। একটু পরে সায়েম এসে বললো, “কিরে শিথি, কি হয়েছে? “আচ্ছা ভাইয়া, তোমার বিয়েটা ওয়েডিং প্লানার দিয়ে না করলে হতো না। আমরা কি সাজাতে পারিনা নাকি আমাদের পছন্দ তোমার কাছে ভালো মনে হয় না?”
“আরে পাগলী এমনটা না। মামুন আমার অনেক ভাল বন্ধু। কলেজ জীবন থেকেই ও বলে আসছে যে আমার বিয়ের প্লানিংটা সে করবে। আর তাই হচ্ছে। এর সব খরচও ওই দিচ্ছে। ওর এটা ইচ্ছে ছিলো বুঝলি। তোর যদি কোথাও সমস্যা মনে হয় তুই বদলে নিতে পারিস।” “আমার বয়েই গেছে এসব করার। কি স্টেজ সাজিয়েছে দেখেছো? ফুটবল খেলা যাবে। দুই পাশে গোলি হবে তুমি আর তোমার বউ। আর তোমার বন্ধু রেফারি। আর আমরা হবো রেফারির নিয়মে বাধা পরা খেলোয়াড়।”
“হাহাহা, তাহলে তো ভালই হয়। যাই হোক তোর কথাতেই সব হবে ঠিক আছে। আমি মামুনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই ওকে বলে তোর যেভাবে মনে হয় সাজিয়ে নে। আর ও কোন প্রফেশনাল ওয়েডিং প্লানার নয়। আমরা আগে থেকেই অনেকের বিয়েতে ডেকোরেট করেছি তাই এটা ও ভালই পারে। আর আর্কিটেকচার বিষয়টা পুরোটাই ক্রিয়েটিভ। তাই বলছি ওর মাথায় নিশ্চয়ই কোন ভাল পরিকল্পনা আছে তাই এতো বড় স্টেজ।” “হুম তাতো দেখতেই পাচ্ছি।” “রাগ করে না বোনটা। আমি মামুনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই কথা বলে নে।”
এটা বলেই সায়েম নিচে এসে মামুনকে উপরে পাঠিয়ে দিলো। এদিকে শিথির সাথে সায়েমের আর সব বোনেরাও বললো, আপু আমরা অনুষ্ঠান কি আমাদের মতো করবো না? কিছুই কি আমাদের মতো হবে না? শিথি ছোটদের এরকম আরও অনেক কথা শুনছে আর রাগে ফুসছে। ভাবছে যে করেই হোক বিয়ের কাজগুলো নিজের আয়ত্বে নিতে হবে। নয়তো বিয়েটাই মাটি হয়ে যাবে। এর মাঝেই কয়েকটা ছেলে এসে ঘটিগুলোর একটাতে কচুরীপানা, একটাতে পদ্ম, আরও কয়েকটাতে ভিন্নধরনের পানিফুল দিয়ে গেলো। শিথি ভাবছে এখানে বর বউ সাঁতার কাটবে নাকি?
একটু পরে এক ছেলে এসে ঘটিগুলোকে সাজিয়ে রাখলো। ঘটিগুলোর চারপাশ দিয়ে লাল আলপনা সাথে পানির মাঝে ফুলগুলো অমায়িক লাগছে। স্টেজে একটা লাল আর হলুদের মিশ্রনের গোল সিংহাসনের ন্যায় আবরক বসানো হলো যার ফলে কিছু লাইট ভেতরে আবার কিছু লাইট বাইরে থাকলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই একটু একটু অন্ধকার লাগছিলো। একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
মামুন উপরে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে এক ছেলেকে দেখে বললো, এই এখানে কেউ কি ছিল যে আমায় ডেকেছিলো? ছেলেটি শিথিকে দেখিয়ে দিলে মামুন শিথির দিকে তাকালো। শিথিও ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিলো। মামুন শিথির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো আর শিথিও কয়েকটা করা কথা শোনানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। হঠাৎ ওই সময়ই লাইট জলে উঠলো। চারপাশ আলোকিতো হয়ে গেলো। শিথি আলোর ঝলকে হাত দিয়ে চোখ ঢাকলো। একটু পরে হাত সরাতেই দেখলো স্টেজটাকে অন্যরকম লাগছে। আবরকটার ভেতর আর বাইরের লাইট মিলিয়ে আকর্ষনীয় করে তুলেছে। মাঝখানে পাত্র বসার জায়গাটার উপরে বিভিন্ন রং এর কাপর দিয়ে বানানো ঝুমুরটা যেনো এক আলাদা সোন্দর্য এনে দিয়েছে। পুরো কাজটা দেখেই শিথির রাগটা কমে এলো। ভাবলো, ও তো এসব কিছু চিন্তাও করেনি।
ঠিক তখনি মামুন এক ছেলেকে বলে উঠলো, দরজার পাশের লাইট টা যেনো বরের দিকে তাক করা থাকে। তাকে যেনো ভালোভাবে ফোকাস করে। এরপরেই শিথির দিকে তাকিয়ে ও বললো, আপনি ডেকেছিলেন আমায়? শিথি মামুনকে দেখেই কেমন যেনো দ্বিধার মধ্যে পরে গেলো। মনে হলো এই লোকটিকে কোথায় যেনো দেখেছে। এদিকে মামুন শিথির দিকে ভালভাবে তাকিয়েই হেসে ফেললো। সে চিনে ফেলেছে শিথিকে। তাই আবারও বললো,
আপনি ডেকেছেন আমায়?
শিথি অনেকটা ব্যর্থ রাগী ভাব নিয়ে বললো, “হ্যা ডেকেছি। আপনি এটা কি সাজিয়েছেন বলেন তো? একটা বারও জিজ্ঞেস করেছিলেন কি করতে হবে? ‘না আসলে সায়েম তো ইচ্ছেমত করতে বলেছিলো। তাই জিজ্ঞেস করা হয় নি। তারপরও যদি কোন সমস্যা হয় বলুন, আমি ঠিক করে নিচ্ছি।’ এটা শোনার পর শিথি স্টেজের দিকে তাকিয়ে অনেকটা হতাশ হলো। সবকিছু এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে লোকটা। এতো কিছু সে নিজেও পারতো না। আর কি সমস্যার কথা বলবে। তাই বললো, “যা করার তো করেই ফেলেছেন। এখন আর বলে লাভ আছে। যতোসব অকাজের লোক।” এসব কথা বলেই শিথি হলুদের পরের অনুষ্ঠানের জন্য ছোট ভাইবোনদের কাছে চলে গেলো। এদিকে মামুন হেসে বললো, হুদাই ভাব নিয়ে কি যে মজা পাওয়া যায় বুঝিনা।
একটু পরে কনেপক্ষের লোক চলে আসলো। ফুলেল শুভেচ্ছায় বরন করে তাদের বসতে দেওয়া হলো স্টেজের সামনে। গুনগুন করে তাদের মুখে স্টেজের গুনগান করতে শোনা গেলো। অনুষ্ঠানের শুরুতে সায়েম স্টেজে গিয়ে বসলে চারদিকের লাইটিং আর সবকিছুতে যেনো অমায়িক লাগছিলো। হলুদে সন্ধ্যায় পানির ঘটিগুলো থেকে আকাশের চাঁদটাও বারবার উকি দিচ্ছে। সবি যেনো একটা গুচ্ছ সুন্দর পরিবেশনা। আত্মীয় পক্ষের হলুদ দেওয়া শেষ হলে তাদের খাওয়ার আয়োজন করা হলো৷ তাদের বিদায়ের পর শুরু হলো নিজেদের আয়োজন। হলুদের স্টেজে সবাই হলুদ দিয়ে এবার সাংস্কৃতিক কিছু পরিবেশনা শুরু হলো। সবাই যে যার মতো বিভিন্ন গানে নাঁচছে। কিন্তু শিথি আর ওর ভাইবোনদের অনেকটা গোছানো নাঁচ। তারা অনেক প্রাকটিস করেছে বোঝাই যাচ্ছে।
এভাবে সবাই যখন অনেক মজা করলো তখন সায়েম স্টেজে এসে হঠাৎ বললো, এবার আমার বন্ধুদের থেকে একটা নৃত্য। এটা শুনে মামুন তো হচকচিয়ে গেলো। সে তো একেবারেই প্রস্তুত নয়। এদিকে মামুনের সাথের ছোট ভাইরা তো অনেক খুশি এটা শুনে। অনেকদিন পর নাচানাচি হবে। মামুন আর ওর সাথীরা সবাই স্টেজে গেলো। গান ছাড়া হলো, চলে যায়, প্রানের পাখি চলে যায়। এই আমেজে এই অদ্ভুত গান শুনে মামুন কি নাচবে ভেবে পেলো না। তবুও সবাই উরাধুরা যে যা পারে নাচা শুরু করে দিলো। সবাই হাসতে হাসতে শেষ এদের নাচ দেখে। মামুন ভাবছে মানসম্মান যখন গেলোই তো সায়েমকে নিয়েই যাক। সায়েমকে স্টেজে নিয়ে এসে গলা ধরাধরি করে নাচতে শুরু করলো সবাই। এভাবেই হাসি আনন্দে শেষ হলো অনুষ্ঠান। তবে মামুন স্টেজ থেকে নামার সময় শিথির দিকে চোখ পরতেই দেখলো শিথি ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ঢুলে পরছে।
রাতে অনেকক্ষন আড্ডা হলো মামুনের ওর ছোট ভাইদের সাথে। আসলে মামুন ওর ভার্সিটির ছোট ভাইদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। এতে করে ওদের সাথে সম্পর্কও ভালো থাকে, ছোটদের কাজও শেখা হয় আর কিছু পকেট খরচও এসে যায়। অনেকদিন পর দেখা হলো তাদের এই কাজের জন্য। সবাই আড্ডা দিয়ে যখন ঘুমোতে গেলো তখন ছাদের এক কোনে এসে মামুন সিগারেট ধরালো। এটা সবসময় সে খায়না তবে আজ স্পেশাল দিন। পুরনো দিনের কথায় ফিরে গেলো সে। শিথি মেয়েটার কথা মনে হতেই চলে এলো ছয় মাস আগের কথায়, অফিস ছুটি হলে মামুন দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাস পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই দেখে রিকশার চিন্তা করলো। এক রিকশা দেখে সে বললো, মামা যাবেন নাকি সৈনিক ক্লাব?
“হো মামা যামু।” ‘কতো নিবেন?’ “পঞ্চাশ টাকা” ‘কচুক্ষেত থেকে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া? না না। বেশি হয়ে যায়। ত্রিশ টাকা দিবো।’ “তাইলে আরেকটা লোক নিমু মামা।একা গেইলে বেশি দিতে হইবো। আর দুইজন গেলে পয়ত্রিশ টাকা” ‘আচ্ছা নাও। সমস্যা নেই।’ এর একটু পরেই হুরমুর করে এক মেয়ে রিকশায় উঠে বসলো। বললো, “মামা চলেন। সৈনিক ক্লাব।” “ভাড়া পয়ত্রিশ টাকা আপা।” “আরে নিও চলো। পাঁচ টাকাই বেশি নিবা তো।” “না আপা কইয়া দিলাম। কেউ কেউ আবার টাকা নিয়াও ভেজাল করে তো। গরীব মানুষ দুইটা টাকা বেশি দিতেও ওগো সমস্যা।” এটা বলেই রিকশাওয়ালা রিকশা চালাতে শুরু করলো। কথাটা যে আমাকেই খোঁচা মেরে বললো বুজতে পারলাম। কি দিন আসলো, সবাই খোঁচা মেরে কথা বলে। এসব ভাবতেই নিজে নিজেই হেসে ফেলি। পাশের মেয়েটা কেমন যেনো আড় পেতে তাকালো।
সৈনিক ক্লাব আসতেই আবার খুচড়া নিয়ে সমস্যা হলো। দুজনেরই একশ টাকার নোট। রিকশাওয়ালা আমার নোটটা নিয়ে ত্রিশ টাকা ফেরত দিলো। বললো, আপনেরা মিটায়া নিয়েন। মেয়েটি এটা শুনেই আমার দিকে তাকালো। আমি উনার হাতের নোটটা নিয়ে খুচড়া করার জন্য সামনে দোকানের দিকে যেতেই মেয়েটি পেছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরে বললো, “টাকা নিয়ে কোথায় পালাচ্ছেন হুম? লোক ডেকে কিন্তু পেটাবো বলছি কোন চালাকি করলে?” ‘একটু কেশে বললাম, আমি তো খুচড়া করতে যাচ্ছি ওই দোকানে। আর আপনি কি সব বলছেন এসব?’ “ও আচ্ছা। যান তবে জলদি আসবেন। আমি এখানেই আছি। পালানোর চেষ্টা করলেই কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
শার্টটা ঠিক করে দোকানে এলাম। ভাবছি কি হচ্ছে আমার সাথে? দোকান থেকে খুচড়া আনতেই আবার পাঁচ টাকা নিয়ে সমস্যায় পরলাম। উনাকে দিলে আমার পাঁচ টাকা দিয়ে দিতে হবে। এমনিতেই মেজাজ বিগড়ে গেছে। উনাকে ষাট টাকা দিয়ে দিলাম। চলে চসতেই বললো, “আরও পাঁচ টাকা। কই দেন।” ‘ভাংতি নেই আর। দশ টাকার নোট।’ “তাহলে দশ টাকার নোট দেন। নাহলে লোক ডাকবো কিন্তু।” আমি আর কিছু না বলে এক দৌড়ে চলে আসি। এইটা মেয়ে না অন্য কিছু আল্লাহই জানে। কথায় কথায় মার খাওয়াবো বলে। সেদিনের পর আরও একবার কচুক্ষেতের ওখানে দেখা হয়েছিলো তবে আমি আর উনার সাথে রিকশায় উঠিনি। আর এই বিয়েতে ওর সাথে আবারও দেখা। ভাগ্যিস চিনতে পারেনি নয়তো লোক ডেকে পেটাতো নিশ্চয়ই। “এহেম এহেম। এতো রাত জেগে সিগারেট খাওয়া কি ঠিক?”
আচমকা কথা শুনে মামুন অনেকটা হকচকিয়ে গেলো। বললো, ‘এই কাজ শেষ তো তাই একটু সময় পার করছি আরকি। তা আপনি এতো রাতে?’ “আশা যাবে না বুঝি। কারও মানা আছে নাকি? নাকি অন্য কোন বেপার আছে?” ‘না না, অন্য কি হতে যাবে। আপনাকে একটা জিনিস দেওয়ার আছে।’ “কি” হাত দিয়ে পাঁচ টাকার একটা কয়েন বাড়িয়ে দিলাম। পাঁচ টাকার কয়েনটা হাতে নিয়েই ও বললো, “ফকির মনে হয় আমাকে? পাঁচ টাকা ভিক্ষা দিচ্ছেন?” ‘ছি ছি, কি বলছেন এসব?’ “তা নয়তো কি? আপনি কিসের পাঁচ টাকা দিচ্ছেন? ফাজলামো পাইছেন আপনি?” ‘আরে এটা আপনি আমার কাছে পেতেন?’ “মানে কি? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন সরাসরি বলুন নয়তো ভাল হবে না।” ‘আচ্ছা আপনি শান্ত হোন। মনে পরে গত ছ’মাস আগের কথা। আপনি আমি একবার রিকশা করে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত এসেছিলাম। সেদিন আপনাকে তো ওই পাঁচ টাকা না দিয়েই চলে এসেছিলাম। লোক ডেকে পেটানের ভয় দেখিয়েছিলেন তাই চলে এসেছিলাম। মনে পরে?’
এটা শোনার পর শিথি যেনো অবাকের সাথে খুশিও হলো অনেক। বললো, “আচ্ছা আপনিই সেই লোক। তাই তো বলি আমার কেনে মনে হচ্ছিলো যে আপনাকে কোথায় যেনো দেখেছি। তা মশাই সেদিন তো টাকা না দিয়েই পালিয়েছেন আজ তাহলে লোক ডেকে পেটাই। কি বলেন?” ‘হ্যা ওই একটা কাজই মনে হয় খুব মন দিয়ে করেন তাই না?’ “কি বললেন?” ‘না, কিছু বলিনি তো। আমি তো বলতেই পারিনা কিছু। আপনি কিছু শুনেছেন?’ “মজা করছেন?” ‘তা একটু বলতে পারেন। হাহাহা। বাদ দিন। কেমন আছেন বলুন?’“হাহাহা। আছি ভালই। সেদিন আপনি দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় আমার খুব হাসি পেয়েছিলো। আপনি এরকম হাবা কেনো?”
আমি শুধুই হাসলাম। ও আবারও বললো, “তা মশাই, এতো রাতে একটা মেয়ের সাথে গল্প করছেন, আপনার উনি আবার রাগ করবে নাতো?” ‘একা থাকার বিশেষত্ব কি জানেন? একা থাকলে আপনি সবচেয়ে স্বাধীন আর স্বার্থপর এবং ভিতুও বলতে পারেন। প্রিয়জনকে হারাতে হয় না অন্ততঃ। বা হারানোর ভয়টা থাকে না। জিবন তো চলেই যায় তবে শুধু শুধু কেনো জিবনে কিছু কালো অধ্যায় রেখে যাবো বলুন? আর এবার আপনি যেটা জানতে চাচ্ছেন, আমার উনি বলে কেউ নেই।’
“বাব্বাহ আপনি তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন বেপারটাকে।”
‘আমি আসলে কাউকে হারাতে চাই না। অন্ততঃ সেই মানুষটাকে যে আমার জিবনে সবচেয়ে মুল্যবান। কিন্তু কেউই আমাকে এরকম ভরসা দিতে পারে নি। বলতে পারেন আজকালের দুনিয়াটাই এরকম। সবকিছুই কেমন যেনো ক্ষনস্তায়ী। তবে এই স্বল্প জিবনেও কেউ কেউ একসাথে পার করতে পারে না। খুব জানতে ইচ্ছে হয় আমার যে তাদের কাছে জিবনের মানে কি?’ “আপনাকে কি কেউ ছেড়ে গিয়েছিলো? এভাবে বলছেন যে?” ‘না, আমাকে না। তবে আমার অনেক প্রিয়জনকে কাঁদতে দেখেছি। এই যে আপনার সায়েম ভাই, সেও তো মরতে যাচ্ছিলো দু’বছর আগে। অনেক কষ্টে সামলেছি। এরকম প্রিয় মানুষদের কান্না তারা নিজেরা ভুলে গেলেও আমি কেনো জানি ভুলতে পারি না। এজন্যই আক্ষেপটা।’
“সরি আমার এভাবে বলা ঠিক হয়নি।” ‘আরে নাহ, কি বলেন এসব। তবে কি জানেন, একবার কষ্টটা সামলে নিতে পারলেই পরের জিবনটা অনেক সুন্দর হয় মনে হয়। অনেককেই দেখেছি। আপনার ভাইকেই দেখুন না, কত হাসিখুশি দেখাচ্ছ তাকে।’ “হাহাহা, ভালো বলেছেন। এই আপনার পাঁচটাকা রাখুন। সুদু আসলে বেড়ে গিয়েছে এতোদিনে। শোধ করতে চাইলে অফিস শেষে নাহয় দুকাপ কফিতে সময় দিলেন একটু।” এটা বলেই মুচকি হেসে চলে গেলো শিথি। মামুনের কখনও এরকমটা মনে হয় নি তবে এই সিগারেটের ধোঁয়ায় একরাশ ভালোলাগা ঘিরে ধরেছে তাকে। এরপর বিয়েতে অনেক মজা হলো। অনেকবার চোখাচোখিও হয়েছে মামুন আর শিথির। শিথি শুধুই মুখচিপে হেসেছে মামুনকে দেখে। বিয়ে শেষ হলে যখন মামুন আবারও ব্যস্ত শহরে ফেরে তখন কেনো যেনো মনে হলো, শিথির নাম্বারটা নিলেই পারতো সে।
এমনি একদিন অফিস থেকে বের হতেই দেখে শিথির সাথে এক ছেলে আর ও শিথির সাথে টানা হেচড়ো করছে। একটু কাছে যেতেই মামুন শুনলো ছেলেটি বলছে, “কাল টাকা চেয়েছিলাম দিসনি কেন? খুব দেমাগ হয়েছে তাই না?” “সুমন ছাড়ো লাগছে আমার। কি করছো তুমি? আশেপাশে মানুষ দেখছে।” “মানুষের খেতা পুরি আমি। তোকে কাল টাকা পাঠাতে বললে তুই পাঠাসনি কেনো বল?” এভাবে যখন সে আরও জোরে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলো তখনি শিথির ওড়নায় টান পরে কাধের পাশে পিনসহ কাপরটা ছিড়ে গেলো। শিথি ওকে ধাক্কা দিয়ে কাপড় ঠিক করে কাঁদতে শুরু করলো। ছেলেটা উঠে আবারও কিছু করতে যাবে তখনি আমি আটকালাম।
‘ভাই একটু থামেন। যা হয়েছে নিজেদের মধ্যে সমাধান করে নিন। কেনো শুধু শুধু এই খোলা রাস্তায় এসব করছেন?’
এই তুই কে রে আমাদের মাঝে? সরে যা বলেই ধাক্কা দিয়ে শিথির হাত ধরে টানতে লাগলো তখনি আমি সামনে গিয়ে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিলাম। ছেলেটা তখনি ফুটপাতে পরে গেলো। একেবারে ঢুস। বুঝলাম যে ছেলে খেয়ে এসেছে মালপানি। ছেলেটাকে ওখানে রেখেই শিথিকে নিয়ে সৈনিক ক্লাবে এসে একটা কফিশপে বসলাম। আসার সময় ঐ ছেলের দিকে তার ঘৃনায় ভরা চোখটা দেখে আমার গায়ে এক শিহরন বয়ে যায়। এখন পর্যন্ত একটা কথা বলেনি শিথি।
কফিশপে গিয়েই ও ফ্রেশ হয়ে এলে সামনে বসে মুখ নিচু করে থাকলো। আমিও চুপচাপ আছি। হটাৎ ও বললো, অনেক ভালবাসতাম ওকে। প্রথম দিকে ওর আমার প্রতি যত্ন, ভালবাসা দেখেই ওর প্রতি এতো দুর্বল হয়ে পরেছি। এক পর্যায়ে ও আমার থেকে টাকা নেওয়া শুরু করলো। বলেছিলো, ওর খুব জরুরী দরকার। এভাবে প্রায়ই টাকা নিত। আমিও বিশ্বাস করে দিতাম তাকে। একদিন জানতে পারি যে ও টাকা নিয়ে যেইসেই খায়। তারপরও কেনো যেনো তাকে ভালবেসেছি। কিন্তু আজ ও এমনটা করবে আমি চিন্তাও করিনি। এটা আমার দোষ। আমি নিজেই নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে এখন। বলেই কান্না শুরু।
আমি চুপচাপ কফির কাপে চুমুক দিচ্ছি। একটু পরে শান্ত হয়েই শিথি আমার দিকে তাকালো। বললো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এটা শুনে আমি পিটপিট চোখ করে তাকালাম ওর দিকে। ও মাথা নিচু করে নিলো। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার রক্তের গ্রুপ কি?’ “একটু প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললো, এবি নেগেটিভ। কেনো?”আমি বসা থেকে দাড়িয়ে গেলাম। ফোনটা বের করে পিজি হাসপাতালে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, বাচ্চাটার রক্ত যোগাড় হয়েছে কিনা? ওরা বললো, হয়নি, তবে খোঁজ চলছে। আমি বললাম, আমি একজন কে পেয়েছি। আমরা আসছি। এটা বলেই আমি শিথিকে বললাম, ‘টাকা আর কারও পেছনে নষ্ট না করে কিছু ভালো কাজ করতে চান?’ ও কিছু না বলে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হেসে বললাম, আসুন আমার সাথে।
পিজি হাসপাতালে পৌছতেই সেখানে কিছু টেস্টের পর শিথির থেকে রক্ত নেওয়া হলো। রক্ত দেওয়ার সময় শিথি আমাকে বললো, আপনি আমার সাথে থাকবেন প্লিজ। আমি কখনও রক্ত দেই নি। আমি হেসে বললাম, ঠিক আছে। ওই মোটা সিরিঞ্জ দেখে শিথি চোখ বন্ধ করে ঠোট চেপে ধরেছে আর আরেক হাতে আমার হাত শক্ত করে ধরেছে। আমার খুব হাসি পেয়েছিলে এটা দেখে।
বাচ্চাটার ওপারেশন শুরু হয়েছে আর আমরা বাইরে দাড়িয়ে আছি। দুপুরেই একজন ফোন করে বাচ্চাটার জন্য রক্তের কথা বললো। তখন আমি কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু শিথির রক্তের গ্রুপ জানার পরেই এখানে আসা। ডাক্তার বেড়িয়ে জানালো, ওপারেশন সফল হয়েছে। রোগী ভাল আছে। বাচ্চার বাবা মা সবাই আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছিলো। কিন্তু আমি বললাম, যা বলার উনাকে বলুন। উনি রক্ত দিয়েছে। তখন তারা শিথির কাছে গিয়ে অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। বাচ্চাটিকে দুজনি একবার দেখে এসে আমরা বাসায় ফিরবো বলে হাসপাতাল থেকে বেড় হচ্ছি। রাত প্রায় দশটা। ফুটপাত ধরে এগিয়ে চলেছি শিথি আর আমি। শিথি বললো, “আপনি এসবও করেন?” ‘হাহাহা, এসব কি করতে হয় বলুন। একটু দায়িত্ব নিয়ে যদি কোন মানুষ বেঁচে যায় তবে সেটা কেনো করবো না বলুন তো? আর তাছাড়া আপনি বলুন, কেমন লাগছে এখন?’ “ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাচ্ছি না। শুধু বলবো, আপনিই মানুষ।”
‘হাহাহা, আপনি অনেক মজার। যাই হোক কিছু কথা বলি আজকে। বিকেলে আজ যা হলো তা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। বিবেক কে জিজ্ঞেস করবেন কি করা উচিৎ। তবে অবশ্যই রাগের মাথায় নয়, ঠান্ডা মাথায়। আপনি জেনে যাবেন আপনার জন্য কোনটা ভালো হবে।’ “আপনার কি মনে হয়, আমার কি করা উচিৎ এই মুহুর্তে?” ‘এসব ব্যাপারে তৃতীয় কাউকে না জোড়ানোই উচিৎ। জিবনটা আপনার তাই ভাল মন্দ যাইহোক সিদ্ধান্ত আপনার। তবে একটা কথা আছে যে, নিজের ভালো তো গাধাও বোঝে। জিবনটা অনেক সুন্দর বুঝলেন। শুধু বিশ্বস্ত একটা হাত দরকার।’ শিথিকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমিও বাসায় আসি। আবারও মেয়েটার ফোন নাম্বার নিতে ভুলে গেলাম। মেয়েটাকে একটু একটু পছন্দ হয়েছে আমার। কেমন যেনো একটা মায়া কাজ করে। কিন্তু এসব ভাগ্যে নেই। কয়েকদিন পর এক রাতে হঠাৎ সায়েম ফোন দিয়ে বললো, “কাল বিকেলে একটু দেখা করতে পারবি? একটু দরকার ছিলো।” ‘কোথায় দেখা করতে হবে?’ “রেড রোজ ক্যাফেতেই আশ নাকি?” ‘আচ্ছা ঠিক আছে’
রেড রোজ ক্যাফেতে সময়ের দুঘন্টা আগেই এসে বসে আছি। একটু পরেই সায়েম আর শিথি আসলো। দুজনকে একসাথে দেখবো ভাবিনি। তারা ঠিক আমার পেছনের টেবিলেই বসলো। মনে মনে ভাবছি আজ শিথির নাম্বারটা নিয়েই যাবো। আচ্ছা ও কি ওই ছেলেটার সাথে এখনও সম্পর্ক আছে? আচ্ছা সেকি বুঝবে আমাকে? আমি ওকে নিয়ে এতোদুর ভেবে ফেলেছি, সে কি আমাকে নিয়ে ভেবেছে? এর একটু পরেই শোনা গেলো, “দেখ শিথি আমি মামুনকে চিনি। ও আসলে এসবে কখনও জড়ায়নি। কারন বিচ্ছেদের কষ্টটা ও সহ্য করতে পারবে না এটা ওর ভয়। তুই কি ওকে সেভাবেই ভাবছিস নাকি শুধুই আজকালের মতো একটা সম্পর্ক?” “ভাইয়া তোর কি আমাকে এরকম মনে হয়? ওই একটা মানুষকে দেখেছি যে নিঃস্বার্থে কাজ করতে জানে। মানুষটার মনটা অনেক ভালো জানিস। আমি উনার মাঝে ভরসা খুজে পাই। ওই মানুষটা আমাকে ভালো রাখবে ভাইয়া। তুই শুধু ওর কাছে আমার কথা একটু বলে দেখ না।” “তুই নিজেও তো বলতে পারিস, তুই বল।”
“না আমি উনার সামনে দাড়াতে পারবো না। উনি সেদিন রাশেদের সাথে আমাকে খারাপ সময়ে দেখেছে। ওইদিন উনি আমাকে বিঝিয়েছিল জিবনের মানে কি? সেদিন থেকে রাশেদের সাথে সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছি। ওই জানোয়ার টাকে আর এক মুহুর্ত সহ্য হয় না আমার।” “এসব ও দেখেছে তুই আমাকে বলিস নি কেনো? এখন ও কি মানবে?” শিথি কোন কথা বলছে না আর। সায়েম বললো, “কি যে করিস না তুই? আচ্ছা দেখি ওর সাথে কথা বলে, ও কি বলে?” শিথি মনে হয় একটু কান্নার মতো হয়ে গেছে তাই ও উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। সায়েম এদিক ওদিক তাকাতেই আমি ওর সামনে বসে পরলাম। হচকচিয়ে গিয়ে আমাকে দেখে ও বললো, “তুই এসময়ে?” ‘হুম, ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসতে হলো।’ “আচ্ছা মামুন তোর কাছে যদি আমি কিছু চাই, তুই কি আমাকে দিবি?” ‘হুম দিবো তার আগে শিথির নাম্বার টা দে তো।’ ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো, “কেনো? ওর নাম্বার কি করবি?” ‘নাম্বার নিয়ে মানুষ কি করে? আর তাছাড়া তুই তো এটাই চাস তাই না বলেই মুচকি একটু হাসলাম।’
ও উঠে বললো, “তুইও কি এটাই চাস? দেখ ও হয়তো একটু ভুল করেছে জিবনে কিন্তু তুই তো বুঝিস এসব। তাই বলছি তুই কি মেনে নিতে পারবি ওকে?” আমি হাসলাম। বললাম, আমি এখন আসি। ওকে এ ব্যাপারে কিছু বলিস না। আর তুই তো এখন থেকে আমার শালাবাবু হতে যাচ্ছিস তাই তোকে কিছু কাজ দেই। সন্ধ্যায় ওকে ফোন দিয়ে বলবি আমি রাগ করে চলে গেছি। পরে আমি যা করার করবো। আর শুন, পরশুদিন একটা বড়সড় ট্রিট দিবি ভাবি কে নিয়ে। বুঝলি? অনেকটা হেসে ও আমাকে জড়িয়ে নিলো। বললো, “দেখে রাখিস আমার বোনটাকে।” মুচকি হেসে বললাম, ভাবি বলা শিখ বেটা। বলেই চলে আসি। রাতের বেলা শিথিকে ফোন দিলাম। হয়তো কাঁদছিলো। তাই মৃদু গলায় হ্যালো বলতেই ওকে বললাম, ‘বিরিয়ানি পছন্দ করো না কাচ্চি। কোনটা?’ “আপনি কে?” ‘আরে সেটা পরের কথা। বাসার বাইরে দাড়িয়ে আছি। চোট করে একটা ভাল ড্রেস পরে বেরিয়ে আসো তো।’
চারতলা বাড়িটা থেকে কেউ একজন তিনতলার বেলকনিতে আসলো। কাপা কাপা গলায় ফোনে ও বললো, “আপনি এখানে?” আমি হাসলাম। হেসেই বললাম, ‘একটু হাঁটবে আমার সাথে? অনেকদিনের ইচ্ছে নিজের খুব কাছের একজনকে নিয়ে হাত ধরে হাঁটবো সারাজিবন। যেই মানুষটা শুধুই আমার হবে। হবে কি সেই মানুষটা?’ ও কেঁদে দিয়ে বললো, “আপনি মানুষটা খুব খারাপ জানেন? কেনো কাঁদালেন এতোক্ষন?” সারাজিবন আর না কাঁদানোর চেষ্টা করবো তাই হয়তো শুরুতে একটু কেঁদে নিলে। এটা শুনে মেয়েটা ফোনটা কেটে দিয়ে ভেতরে গেলো। একটু পরেই মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে শিথি আমার সামনে এসে দাড়ালো। বললো, “আমি তো কাঁদতেই চাই তবে সেটাও আপনার বুকে মাথা রেখেই।”
চোখের পানিটা মুছে দিয়ে হাতটা সামনে বাড়িয়ে দিলাম। ইশারাতে বোঝালাম, ধরবে কি এই হাতটা? হাতটা ধরে ও এগিয়ে এলো আমার কাছে। আস্তে করে মাথটা বুকে রাখলো। উউউ, করে ওকে একটু সরিয়ে বললাম, আজ শুধু হাতটাই ধরি। লজ্জা লাগছে নয়তো আমার। শিথি কান্নামুখে হেসে ফেলে বললো, আপনার লজ্জা লাগছে? কেনো ছেলেদের লজ্জা নেই মনে হয়? আচ্ছা বাদ দাও। চলো হাটি। শিথি বাম হাতটা জড়িয়ে নিয়েই হাঁটছে আমার সাথে। নিরিবিলি সেই রাস্তা সাথে পোকামাকড়ের গুনগুন এক শব্দ। মিলিয়ে যাচ্ছে অনুভুতিগুলো। শুধু আকড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে তাকে। হোকনা নতুন করে আরেকবার জিবনে নতুন পথচলা।মেয়েটা নিশ্চয়ই বুঝবে আমাকে আর হয়তো প্রকৃতিও সহায় হবে।