রান্না ঘরে মিতুকে পেছন থেকে জড়িয়ে আদুরে গলায় বললাম,
-বিরিয়ানী রাঁধো৷”
-প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই রাঁধবো!” জবাব দিল মিতু৷
-কী প্রশ্ন?
-আচ্ছা বলো তো, কনস্টেবল বকুল রয় সেদিন ক্রিকেট ম্যাচে কত রান করেছে?”
প্রশ্নের সাথে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মিতু৷ আমি ঢোক গিললাম৷ মিনিট দুয়েক চটপট করেও মিতুর মন গলাতে পারলাম না৷ ফিরে এসে টিভিটা অন করলাম৷ ফ্যানটা বাড়িয়ে দিলাম৷ আমি অতীতে ফিরে যায়৷ মিতু যখন আমার প্রেমিকা ছিল৷ আমি সাধারণ জ্ঞান বই পকেটে নিয়ে ঘুরতাম৷ মিতু হুটহাট আবদার করতো৷ এই সিনেমা দেখতে যাবো, ৮-১০প্লেট ফুচকা খাবো৷ কবিতা শোনাতে হবে, গান শোনাতে হবে৷ আবদারের শেষ ছিল না৷
প্রেমিকার আবদারে প্রেমিকের খবরদারী করতে নেই৷ আমিও নিরুপায় হয়ে যেতাম৷ তারপর আসলো মাথায় সেই লাখ টাকার বুদ্ধিটা৷ যখনই মিতু আবদার করতো উদ্ভট কিছু৷ আমি সাধারণ জ্ঞান বইটা বের করতাম৷ আগের রাতে লাল কলমে দাগানো প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতাম৷ উত্তর ঠিকঠাক হলেই আবদার মেটানো হবে৷ শুধু মেটানো হবে না৷ আবদারের সাথে ভ্যাট মিলিয়ে সেই আবদারটা হবে আরেকটু মোটাতাজাকরণ হবে৷ মিতু বারংবার হারতো৷ তবুও আবদার পূরণ হতো৷ আবদারে একটু শীতলতা আসতো এই যা৷ মাঝে মধ্যে আমিও ফেঁসে যেতাম৷ মিতুর কানে যখন মিনমিন করে বলতাম,
-চুমু খাবো নাকি একটা?” মিতু মুচকি হাসতো৷ আমি পুলকিত হতাম৷ আহ চুমু খাবো৷ মিষ্টি হাসির পর বের হতো আসল রূপ৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে মিতু বলতো,
-আচ্ছা বলোতো, ওমুক চ্যানেলের তমুক সিরিয়ালটার আজ কত পর্ব?” আমি পানসে মুখে মিতুর দিকে তাকাতাম৷ মিতু আবার হাসতো৷ আমার আর চুমু খাওয়া হতো না৷” বিকেল শেষে সন্ধ্যা হয়েছে৷ চ্যানেল পাল্টানোর সময় চিরযৌবনা “রচনা” দিদিকে চোখে পরলো৷ দিদি নং-১শুরু হয়েছে টিভিতে৷
মিতু রান্না ঘরে৷ চা বানাচ্ছে৷ আমি সাউন্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলাম৷ এমনিতে রচনা দিদির গলার তারিফ করতে হয়৷ সাউন্ড বাড়িয়ে আরো বড় করে দিয়েছি৷ মিতু চায়ের কাপ নিয়ে দৌঁড়ে আসে৷ চায়ে চুমুক দিতেই আমার মুখটা পানসে হয় আবার৷ চায়ে চিনি দেয়া হয়নি৷ মিতুকে বললাম একবার৷ আমার কথাটা কানে নিলো না৷ রাগ হলো একটু৷ বিরতি আসতেই চায়ের কাপ নিয়ূ আবার গেল রান্না ঘরে৷ রচনা দি ফিরে আসতেই আবার মিতু উড়ে আসলো৷ আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম৷ আহ! এবার প্রাণটা জুড়িয়েছে বড্ড৷ আমি জুড়ানো প্রাণ নিয়ে দিলাম টুপ করে চ্যানেলটা পাল্টে৷ মিতু রাগ করে৷ গাল দু’টো টমেটোর মতো হয়েছে৷ আমার কলারটা খপ করে ধরে বলল,
-রিমোট দাও৷
-প্রশ্নের উত্তর দাও আগে৷” এবার একটু নমনীয় হলো রমণী৷ আমার চুলে বিলি কেটে মুচকি হেসে বলল,
-কী প্রশ্ন শুনি!”
আমি জানি এই ভালোবাসাটা দেখানো হচ্ছে, প্রশ্ন যাতে সহজ করে বলি৷ ভালোবাসা পেয়ে আমিও প্রশ্ন ভুলে গিয়েছে৷
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে৷ চলে যাচ্ছে রচনা দি’র বকবক করে শো টাও৷ মুখে বিরক্ত আর হাতে ফোন মিতু নিয়ে বলল,
-প্রশ্ন করো!”
আমি প্রশ্ন করলেই সে গুগলে সার্চ দিবে৷ আমি আগে আপত্তি করেছি বটে৷ মিতু এক কাঠি সরেষ৷ আমি নাকি শর্ত দেইনি৷ আমি গিয়েছি উল্টো ফেসে৷ আমার মাথায় টুপ করে ফাহমি ভাই আর শবনম ফারিয়ার চেহারাটা ভেসে উঠলো৷ মিতুকে জিজ্ঞেস করলাম,
-মাসুদ রানার ছেলের বয়স কত?” মিতু উত্তর দিতে পারে না৷ তারপর বললাম,
-মাসুদ রানার ক’টা চুল সাদা হয়েছিল?” আবারও মিতু কুপোকাত৷
-মাসুদ রানার শ্বাশুড়ির নাম কী?
মাসুদ রানার পাশের বাসার আন্টি ছিল? মাসীদ রানার ছেলের প্রেমিকার নাম কী? মাসুদ রানার পাশের বাসায় সুন্দরী মেয়ে ছিল? মেয়েটার ক’টা প্রেমিক ছিল?” আরো শ’খানেক প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম মিতুর দিকে৷ অসহায় মুখে মিতু আমার দিকে তাকিয়ে তাকে৷ আমার মায়া হলো একটু৷ কপালের দিকে নুয়ে পরা চুল দু’টো ঠিক করে দিয়ে মিতুকে বললাম,
-মাসুদ রানার বৌ এর বয়স কত ছিল! এটা বলতে পারলেই চ্যানেল পাল্টাবো!” মিতু টুপ করে বসা থেকে উঠলো৷ হনহন করে পাশের রুমে গেল৷ আমি চিন্তায় পরলাম এবার৷ উত্তর জানে নাকি?” খানিকবাদে মিতু ফিরে আসে, দা হাতে! আমি একলাফে সোফার অপর পাশে আশ্রয় নিলাম৷ রিমোর্টটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “রিমোট কিংবা টিভি! সবই তোমার প্রিয়তমা!” মিতুর রাগ কমলোনা৷ রাগে গজরাতে গজরাতে বলল,
-তুই অন্যের বৌ এর বয়স মাপামাপি করিস তাই না! এবার বল, মাসুদ রানা বৌ এর সাথে তোর ক’দিনের সম্পর্ক? পাশের বাসার সুন্দরীর সাথে ক’দিনের প্রেম?” প্রশ্ন শুনে মাথাটা চক্কর দিয়েছে৷ কবে জ্ঞান হারিয়েছি মনে নেই৷ জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম৷ পাশে বসে মিতু মাথায় হাত বুলোচ্ছে৷ আমি মিতুর দিকে তাকালাম৷ কেঁদে কেটে বেচারির মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে৷ এবার কান্নাজড়ানো গলায় বলল, আচ্ছা মাসুদ রানাটা কে?” আমি উত্তর দিলাম না৷ আপাতত আবারো বেহুশ হওয়ার ভং ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছি৷”