বাস্তবতা

বাস্তবতা

সব স্বামীরাই দিনশেষে কাজ থেকে ফিরে দরজায় এসে স্ত্রীদেরকে ‘হায় বেবি, ওপেন দ্যা ডোর!’ এভাবে সম্বোধন করেনা। সব স্বামীরাই শয্যায় যেতে স্ত্রীদের বলেনা, ‘কাম ওন বেবি, লেটস্ রোমান্স টুগেদার।’ কেউ কেউ সারাদিন কাজ করে রাতে দরজায় এসে লাথি মেরে বলে, ‘এই চুতমারানি, কই গেলি? হারামজাদি, কোন নাগরের বাড়িতে থাকিস যে দরজা খুলতে এত দেরি হয়?’ প্রথম জন ভালো ফ্ল্যাট/বাসায় থাকেন, মোটা অংকের বেতনে চাকরী করেন তাই তার মুখে স্ত্রীকে বেবি-ট্যাক্সি বলে ডাকা শোভা পায় কিন্ত দ্বিতীয় জন হয় রিক্সাওয়ালা নয় ভ্যানচালক আর না হয় দিনমজুর অথবা এধরণের কোন পেশার। আর তাই তার মুখে এসকল সুমধুর বাণী শোভা পায়। সমাজে একজন স্বামীর পজিশন যাই হোকনা কেন। চাই সে কোটিপতিই হোক বা কোন হত দরিদ্র। প্রতিটি স্বামীরই উচিৎ তাদের স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ করা। কারণ, স্বামীদের থেকে উত্তম আর সুন্দর আচরণ পাওয়াটা স্ত্রীদের অন্যতম বিশেষ অধিকার।

যেমন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ তিরমিযি ১১৬ । আমাদের সমাজের পুরুষরা বিয়ে করে স্বামী নয় হয়ে যান নবাব! নবাবদের নবাবী চলে শুধু স্ত্রীদের কাছেই। একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে ঘরের যত কাজ সব তাকে দিয়েই করানো হয়। কাজ করতে করতে পরে চেহারা সুরত এমন হয় যে, বিশ বছরের মেয়েটাকেও দেখতে চল্লিশ বছরের মহিলা মনে হয়! পেয়াজ রসুন আর তরকারি কাটতে কাটতে শরীর থেকে শুধু এসবের গন্ধই বেরুয়। কেন নবাব সাব, সামর্থ থাকলে একটা কাজের মেয়ে রাখতে পারেননা স্ত্রীর কাজে সহযোগীতা করার জন্য? এদিকে স্ত্রী বয়সে নয় কাজের ভারে নিজের রূপ আর লাবণ্য হারাতে থাকে আর তখনি স্বামী মজেন পরনারীর রূপে। রাস্তায় মেয়েদের দেখলে তখন আর নজর ফেরাতে পারেননা। মনে মনে বলেন, পথেঘাটের নারীরা এত সাজুগুজো করে চলে! এরা এত এত সুন্দর! এত এত কিউট! আর আমি কি একটারে বিয়ে করলাম দেখে নয়নও জোড়ায়না।

কি করে নয়ন জোড়াবে নববা সাব? একটা কাজের মেয়ে রাখুন। স্ত্রীকে হাতেগোনা বিশেষ বিশেষ কাজ গুলো করার সুযোগ করে দিন। সাজুগুজোর জন্য যা যা লাগে সব এনে রেখে দিন। তবেইনা আপনি ঘরে ফিরে হুরপরী দেখতে পাবেন। তখন শুধু আপনার নয়নই নয় পরানও জোড়াবে। নিজের স্ত্রীকে চুতমারানি নয় রাজরানী করে রাখার দায়িত্ব প্রতিটি স্বামীর। শহরের পার্কগুলোতে কবুতরেরা জোড়ায় জোড়ায় বসে বাদাম খায়। আরে বাবা, বাবারে বাবা! সে কি প্রেম! একজন বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মুখে দেয় আর আরেকজন কোলে মাথা রেখে সেগুলো খায় আর বলে, ‘এই বাদাম যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো!’ আরে নবাব সাবেরা, আপনারা কি পারেননা, কিছুদিন পরপর নিজেদের সাধ্যানুযায়ী ধারেকাছে থাকা মনোরম কোন পরিবেশ এই যেমন, নদীর দ্বারে বা এমন বিশেষ কোন জায়গায় স্ত্রীদের নিয়ে ঘুরতে যেতে? নদীর পার ধরে দুজনে হাতে হাত রেখে পায়ে পা মিলিয়ে হাটবেন আর বাদাম খাবেন। একে অপরের মুখে তুলে খাইয়ে দিবেন। দেখবেন দাম্পত্য জীবনে সুখ কি করে না আসে!

শুনুন নবাব সাবেরা, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রাঃ) -এর মনোরঞ্জনের জন্য দৌড় প্রতিযোগিতাও দিয়েছেন। এসম্পর্কিত হাদিসটি হলো, “হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, একবার নবী (সা.) এবং আয়েশা (রা.) একটি ভ্রমণে যান। তখন আয়েশা (রা.) শরীরের গঠন ভালো ছিল এবং তিনি মোটা ছিলেন না। সেসময়ে নবী (সা.) ও আয়েশা (সা.) একটি দৌড় প্রতিযোগিতা করেন এবং আয়েশা (রা.) জিতে যান। এর পরে আয়েশা (রা.) এর শারীরিক গঠন যখন মোটা হয়ে যায় তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, ‘এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি’। কিন্তু আয়েশা (রা.) দৌড় প্রতিযোগিতা করতে রাজি হননি। তাকে নবী (সা.) জোর করেন এবং অবশেষে তারা দৌড় প্রতিযোগিতা করেন এবং আয়েশা (রা) হেরে যান। তখন নবী (সা.) বলেন, এখন আমরা দুই জনই সমান সমান।’ ” (বুখারি)

আমি গ্রামের ছেলে। ছোটবেলায় অনেক স্বামীদেরকেই স্ত্রীদের চুলে মুষ্টি ধরে মাঠিতে ফেলে টানাহ্যাঁচড়া করতে দেখেছি! লাঠি দিয়ে পেঠাতে দেখেছি। এগুলো ছোটবেলায় অনেক দেখেছি। আর এমনও শাশুরী দেখেছি; ছেলে বউ পিঠিয়ে ঘামছে আর তিনি গামছা দিয়ে ছেলের ঘাম মুছে দিচ্ছেন! কেউ বউ পেঠালে পাড়া-মহল্লার মানুষ জড়ো হয়ে তা দেখতো আর আড়ালে হাসাহাসি করতো। খুব কম মানুষই প্রতিবাদ করতো। এখনো হয়ত পেঠায়। অন্তত খবরের কাগজ তাই বলে। তবে প্রকাশ্যে পেঠাতে এখন ভয় পায় অনেকে। ঐ যে, মোবাইল ফোন আছে! কেউ যদি ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় বা প্রমাণ হিসেবে পুলিশের কাছে তা দাখিল করে। এসবের জন্য হয়ত প্রকাশ্যে পেঠাতে কিছুটা ভয় পায়।

তবে হ্যাঁ, সবার পক্ষে সম্ভব নয় স্ত্রীকে সাজিয়ে গুজিয়ে রাজরানী করে রাখার। যে যার নিজ সামর্থ অনুযায়ী যদি স্ত্রীর চাহিদা মেটায়। তাকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেয়। তার সাথে ভালো আচরণ করে, তাকে ভালোবাসে। তার সকল অধিকার রক্ষা করে চলে। তাহলে স্ত্রী সে অবস্থাতেই নিজেকে রাজরানীদের চাইতেও বেশি সুখী মনে করে। কারণ, একজন মেয়ে তার বাবার পরেই সবচাইতে বেশি ভরসা করে আর ভালোবাসে নিজের স্বামীকে। স্বামীদের উচিৎ স্ত্রীদেরকে ভালোবেসে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করে স্ত্রীদের প্রকৃতার্থে ঘরের বউ করে রাখার দাসী করে নয়। তবেই প্রতিটি ঘরে আসবে স্বর্গীয় সুখ। সমাজ থেকে দূর হবে সকল বিকার। খবরের কাগজে বন্ধ হবে, ‘অমুক জায়গায় পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন’ টাইপের হাজারো শিরোনাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত