-আমাকে কি বিশ্বাস করো না?
;যে ব্যক্তি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে না সে কখনো অন্য কাউকে বিশ্বাস করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।
-তুমি এমন কেনো?
;খুব বেশি খারাপ নাকি?
-এক দমই না।
;না আমি খুব বেশি খারাপ।
-সে তুমি যাই ভাবো। আচ্ছা তুমি কি আমাকে কখনো বুঝবে না?
;না বুঝতে চাই না। শুধু শুধু সময়টা অপচয় না করাই ভাল।
-এভাবে আর কত দিন।
;যতদিন বেঁচে আছি।
মেয়েটার নাম তিথি। পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। পরিচিয়ের সময় কাল এক বছর হলেও মাস তিনেক থেকে খুব বেশি কথা হয়।
মেয়েটা খুব বেশি কেয়ারিং। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় গুলার দিকে খুব বেশি লক্ষ রাখে। সকালের ঘুম থেকে জেগে উঠা থেকে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া
পর্যন্ত সব কিছুতেই শিহাবকে কড়া শাসনে রাখে। শিহাব ও তার কথা মেনে চলে। কিন্তু ইদানীং তিথির ব্যবহার তাকে খুব বেশি ভাবাচ্ছে।
যত দিন যাচ্ছে মেয়েটা শিহাবের উপর কেমন যেন দুর্বল হয়ে পড়ছে। মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে শিহাব ঠিক করল যোগাযোগ কমিয়ে
দেয়া উচিত। সে চায়না তার জীবনে কেউ আসুক। এভাবেই তো ভালোই আছে তাহলে অন্য কিছু কেনো?
-এভাবে অবহেলা করার কারণটা কি জানতে পারি?
;অবহেলা করিনি তোমার ভালোর জন্যেই যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছি।
-তাতে কি আমি ভাল আছি?
;আজ না হয় কাল ঠিকই ভাল থাকবে।
-এটা তোমার ভূল ধারণা। যাকে নিজের সর্বচ্ছ দিয়ে ভালোবেসেছি! তাকে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকব বলতে পারো কি?
;রাখছি! রাত অনেক হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ব।
অপর প্রান্তের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকেই ফোন রেখে দিয়ে টেবিলে থাকা বইটি হাতে তুলে নিলো। রাতে ঘুমানোর আগে যদি বই না
পড়তে পারে তবে তার ঘুম পূর্ণতা পায় না। যথারীতি বই পড়া শুরু করে দিয়েছে।
.
ঘুম থেকে জেগে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল শিহাব। যদিও আজ সে ছুটি নিয়েছিল তাও অফিসে যেতে হল।
কি না কি কাজের জন্যে তাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। ইচ্ছা না থাকা সত্বেও গেলো। অফিশিয়াল কাজকর্ম শেষ করে হোটেলের উদ্দেশ্যে
পা বাড়াতে গিয়ে থমকে দাড়াল শিহাব। সামনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অবন্তিকা।
দুই জন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব কিছু থমকে আছে। দুই জনের এক জনের ও চোখের পলক পড়ছে না।
অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ একজন মানুষের ধাক্কায় শিহাব নিজেকে ফিরে পেলো। তারপর মাথায় হাত দিয়ে আশাপাশে
তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল…
;কেমন আছো?
“ভালো। তুমি কেমন আছো আর আসছোই বা কবে?
;এই তো দুই দিন হল। অফিসের কাজে আসছি। কাললেই চলে যাব।
“মা ভালো আছে তো?
;হ্যা ভালোই আছে।
“বউ বাচ্চা কেমন আছে?
;উত্তরটা দিতে পারছি না কারণ বিয়েটা যে এখনো করি নি।
“কেনো?
;একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম তাই।
“এখনো শিহাব। আমার মনে হয় এখন একটা বিয়ে করা দরকার তোমার। এখন আমার দুইটা বাচ্চা। আশা করি বিয়ে করে নিবা।
আসি, ভালো থেকো।
অবন্তীকা চলে যাচ্ছে। শিহাব তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে যেমনটা বিয়ার সময় তাকিয়ে ছিল। কলেজের প্রথম দিনে অবন্তীকার সাথে পরিচয়।
তারপর বন্ধুত্ব। স্যার হুমায়ুন আহম্মেদ বলেছিল একটা ছেলে আর মেয়ে মাঝে কখনো বন্ধুত্ব সম্পর্ক থাকতে পারে না।
তাই তাদের মধ্যেও বন্ধুত্বের সম্পর্কটা থাকেনি। বন্ধুত্বের পর তাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়।
কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার আগেই অবন্তীর বিয়ে হয়ে যায়। তখন শিহাব কিছুই করতে পারেনি।
.
-একবার দেখা করতে পারবে?
;আজ তো সম্ভব না। রাতেই চট্রগ্রাম থেকে এসেছি। আর সকালে অফিসে। কাল দেখা করি।
-ওকে সময় ও প্লেস টেক্সট করে দিচ্ছি।
;ওকে দাও
তিথির ফোন রেখে দিয়ে। অফিসের কাজে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করছেন শিহাব। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না।
এক দিকে অবন্তীকার পুড়নো স্মৃতি আবার অন্যদিকে তিথি। দুইটাই যেন তাকে পাগল বানিয়ে তুলব। জোরে জোরে দুইবার নিঃশ্বাস নিয়ে,
সামনে থাকা ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন শিহাব।
.
শিহাব দাঁড়িয়ে আছে পার্কের বকুল গাছের নিচে। তিথি আসবে বলে তার অপেক্ষা। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে বেশ দূরে তিথিকে দেখা গেলো।
কালো শাড়ি পড়েছে। চুল গুলা খোলা। খুব সুন্দর করে এগিয়ে আসছে। চুল গুলা বাতাসে উড়ে উড়ে তার মুখে আসছে।
হাত দিয়ে সেগুলা সরানোর চেষ্টার করেও বৃথ্য। খানিক বাদে আবার মুখে আসছে। তিথি শিহাবের থেকে একটু দূরে। শিহাব তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ দুজনের চোখাচোখিতে তিথি কিছুটা লজ্জা পেয়ে আবার মুখের চুল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
-এভাবে দেখছো কি?
;কই কিছু না তো। ডাকছ কেনো সেটা বল?
-বাসা থেকে আমার জন্যে ছেলে দেখা হচ্ছে।
;তাহলে বিয়েটা করেই নাও।
-আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে কল্পনা করতে পারব না।
; না পাড়ার কি আছে। পারবে সব পারবে।
-তুমি বুঝতাছ না কেনো? কি এমন কমতি আছে যা আমার মধ্যে নাই যার অভাবে এভাবে রিজেক্ট করে দিচ্ছো? নাকি দেখতে খারাপ?
; না তুমি দেখতে খুব সুন্দর সব কিছুই ঠিক আছে বাট…
-কি? আমি কি অবন্তীর মত তোমাকে ভালোবাসতে পারব না? নাকি তার যায়গা আমাকে দিতে পারবে না?
চাই না তার যায়গা শুধু তোমার বুকে মাথা রাখতে দিও। না হলে পায়ের কাছে একটু যায়গা দিও। কখনো বলব না বাহিরে নিয়ে কোথাও ঘুরতে।
বাসার ভিতরে একটু ভালোবেসে কথা বললেই হবে। কখনো উচ্চ আশা করে কিছু চাইব না। তুমি ভালোবেসে যা দিবে তাতেই আমি সুখে থাকব।
কথাগুলা বলছে আর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করছে। চোখের কাজল গুলা চোখের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বাচ্চা মেয়ের মত কেমন করে কান্না করছে। গম্ভীর ভাবে শিহাব এগিয়ে গিয়ে। চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকে টেনে নিলো।
; তোমাকে এই শাড়ীতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে?
-কান্দিয়ে এখন প্রশংসা করো। পচা ছেলে।
;পচা হোক আর যাই হোক তাকে নিয়েই সারা জীবন থাকতে হবে।
-পারব না হু।
;সত্যি পারবে না, তাহলে থাকো, ওই মেয়েটা একা আছে, গিয়ে লাইন মেরে আসি।
-ওই কই যাও হ্যা। কোন মেয়ের দিকে তাকালে আগে তাকে খুন কর।
;সে কি করছে? দোষ তো আমি করছি আমাকে না খুন করবে?
– তোমাকে খুন করলে, বিয়া করব কাকে।
; ঐ যে তোমার বাবার দেখা ছেলেকে।
-জ্বী না আমি তোমাকেই বিয়ে করব।
; চল তাহলে বিয়েটা করেই ফেলি
-ওকে চল!
দুইজনেই কাজি অফিসে বসে আছে। তাদের পাশে রিফাত,মিরু আর রাফি দাঁড়িয়ে আছে।
তাদের সাক্ষী দ্বারা দুইজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো।
কাজি অফিস থেকে বের হয়ে সবাই বাসায় চলে গেলো। শিহাব আর তিথি তাদের নতুন জীবনের জন্যে চলে গেলো শিহাবের বাসায়।
পরিপাটি একটা বাসা। সব কিছু অগোছালো হলেও দেখতে সুন্দর। শিহাব দাঁড়িয়ে আছে তিথির সামনে,
পলক হীন ভাবে দুই জন দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে।