চাপাবাজ বউ

চাপাবাজ বউ

‘জানেন বিয়ের আগে আমি প্রায় সারে তিন হাজার প্রপোজাল পেয়েছিলাম।’ বাসর রাতে বউয়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বুঝতে পারলাম বউ আমার সেই লেবেলের চাপাবাজ। আমি বউয়ের কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলাম। বললাম….

–এত প্রপোজাল পেয়েছিলেন?
-হাহা শুধু কি তাই? কত ছেলেযে আমার জন্য হাত, পা, বুক কেঁটে নাম লিখেছে তার হিসেব নেই।
–বাপরে, আপনিতো দেখছি বিরাট মাপের সেলিব্রেটি।
-আরে শুনুন আগেই, এটা বলতে অবশ্য লজ্জা লাগছে। তবুও বলি, দুই তিনজন ছেলেতো আমাকে পাওয়ার জন্য তাদের নুনু-ই কেঁটে ফেলেছে। হাহাহা…কি হাইস্যকর ব্যাপার তাইনা?

নুনু কাঁটার কথা শুনে পুরাই আবুল হয়ে গেলাম। এ কেমন কথা, নুনুই যদি না থাকে ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে কি লাভ? ব্যাপারটা আমার মাথায় আসলোনা। বউ কি মিথ্যে বলছে নাকি সত্যি বলছে তাও জানিনা। বললাম….

–আপনি আসলেই সত্যি বলছেন?
-কিইইইই…আপনি আমাকে অবিশ্বাস করছেন?
–আরেনা, জীবনে প্রথম এমন কথা শুনলাম তাই অবাক হয়েছি।
-আচ্ছা সমস্যা নেই। জানেন, আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার বরের সাথে নেপচুনে বাসর করব। কিন্তু সেটা আর হলোনা।

এই কথা বলেই বউ দুঃখ প্রকাশ করলো। মনে মনে বললাম… ইচ্ছের মায়রে বাপ। কি ইচ্ছেরে মাইরি। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো বউ চাপাবাজ। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বউকে বললাম….

–সমস্যা নেই, আপাতত এখানেই বাসর করি। যখন আমরা বাচ্চা নিব তখন নাহয় প্লুটোগ্রহে গিয়ে নিব আর তাও না হলে চাঁদে গিয়ে বাচ্চা নিব।
-ওয়াও সত্যি, উফফফফ আমি অনেক খুশী। আমি মনেমনে আপনার মতনই একজন বর চেয়েছিলাম।
–আমিও আপনার মতন স্ত্রী চেয়েছিলাম।
-আচ্ছা এখন করুন তাহলে?
–মানে? কি করব? হোয়াট?
-লাইট অফ করুন ঘুমাবো।
–আচ্ছা।

লাইট অফ করলাম। বউ ঘুমিয়ে পরলো। আমি ঘুমাতে পারলাম না। কানে শুধু বউয়ের কথাই বাঁজছে। বউ কি সত্যি চাপাবাজ নাকি মাথায় সমস্যা আছে? কি জানি অনেক চিন্তাভাবনা করে আমিও ঘুমিয়ে পরলাম। বিয়ে হলো এক সপ্তাহ হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে বসলাম। বউ বলল….

–আপনার জন্য আজকে আমি নাস্তা বানিয়েছি।
-সত্যি?
–হুম সত্যি, জানেন আমার রান্নার হাত নাকি অনেক ভালো আম্মা বলতো।
-তাই বুঝি? তা কি রান্না করেছো আজকে?
–বেগুন, পটল আর করলা দিয়ে ডাল রান্না করেছি, অনেক টেশ হয়েছে।
-কিইইই…বেগুন, পটল আর করলা দিয়ে ডাল? কেমনে কি?
–আরে অবাক হচ্ছেক কেনো? এই বেগুন ডাল আমি একবার বাসায় রান্না করেছিলাম। আমার এমন ডাল খেয়ে প্যারালাইজড এর রোগি ভালো হয়েছে। আর এক টিউমারের রোগির টিউমার অটোমেটিকলি গলে গেছে হু।

বিশ্বাস করেন বেয়ান কথা শুনে মাথা ঘুরে গেলো। বাপরে বউ দেখি রান্না ডাঃ। বেগুন ডাল খেয়ে প্যারালাইজড, ডিউমারের রোগি ভালো হয়ে যায় ভাবা যায় এগলা? আমি খাব কি খাবনা দোটানায় পরে গেলাম। বউ বলল….

–কি হলো খাচ্ছ না কেনো?
-না তোমার এগুলো দেখেই পেট ভরে গেছে, খাব আর কি বলো?
–উহু তা বললে হবেনা, তোমার খেতে হবে।

বউ অনেক জোরাজুরি করলো। উপায়ন্তর না পেয়ে দোয়া, দরুদ পরে বেগুন ডাল খাওয়া শুরু করলাম। মুখে দিতে মুখ অবশ হয়ে গেলো। গিলতে পারছিনা। বুক ফেঁটে কান্না আসছে। এর চেয়ে যদি বউ চিকা, ইঁন্দুর আর তেলাপোকা ভর্তা বানিয়ে সেগুলো দিয়ে ডাল রান্না করতো তবুও বোধহয় ভালো লাগতো। বউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে খেয়ে ফেললাম। প্লেটে হাত নারছি, খাইতে মন চায়না। বউও কাছ থেকে সরছেনা, বলল….

-খাও, বন্ধ করলে কেন?
–তোমার রান্না এত সুস্বাদু হয়েছে যে খেতেই মন চাচ্ছেনা খেলেই ফুঁরিয়ে যাবে।
-ধ্যাততত…তুমি না একটু বেশিই বলো। আমার লজ্জা করে। আচ্ছা তাহলে আমি রোজ এগুলো তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো।

–মাফ চাইগো, এটা আর রান্না করোনা।
-কেন, তুমিইতো বললা সুস্বাদু হয়েছে।
–সেজন্যই, এত সুস্বাদু যে আর খেতে পারবনা। পরে আবার ডায়বেটিস হবে।
-মানে? ডায়াবেটিস হবে কেন?

ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্ন ভাবে বউকে বুঝালাম। কিন্তু বউ মানতে নারাজ। ওর একটাই কথা বেগুন ডাল রান্না করবেই। অবশেষে এই মর্মে বউ রাজি হলো যে প্রতি সপ্তাহে একদিন বেগুন ডাল আমাকে খেতে হবে। আমিও সপ্তাহে একবার করে মরার জন্য রাজি হয়ে গেলাম।

অফিসে এসে পরেছি আরেক মুসিবতে। বউয়ের বেগুন ডাল খেয়ে পেটে মোচরামুচরি শুরু হয়েছে। মুখ দিয়ে সমানে উকি আসছে। এক দৌঁড়ে টয়লেটে গেলাম। ১০ মিনিট পর টয়লেট থেকে আবার বের হলাম। আবারো মোচর দিলো। আবার দৌঁড়ালাম টয়লেটে। এভাবে প্রায় ২৭ বার টয়লেটে যাওয়া আশা করলাম। এবার মনে হয় নিজেই প্যারালাইজড হয়ে যাব। চেয়ারে বসে পরলাম। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম বউ ফোন দিয়েছিল। ৬ বার মিসকল উঠে রয়েছে। কল ব্যাক করতেই বউ ইচ্ছেমত বকা শুরু করলো…..

–তোমার সমস্যা কি? সেই সকাল থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন রিসিভ করছোনা যে।
-সকাল থেকে মানে?
–মেজাজ খারাপ করবানা, আমি তোমাকে নিম্নে চারশো কল দিয়েছি তুমি রিসিভ করোনি। বলো কার লগে কথা বললে?

হায়রে ডাহা মিসা কথা। ৬ বার ফোন দিয়ে বলে চারশো বার। কি আজব মাইরি। প্লিজ গিবমি হারপিক। এখন আমি সত্যি বললে উল্টা তর্ক করা শুরু করবে। আমি বললাম…..

–আচ্ছা সরি বাবা সরি। বলো কি হয়েছে।
-শোনোনা একটা কথা।
–হুম বলো?
-আমার বান্ধবী নিরা এসেছে, ওকে বেগুন ডালের কথা বললাম। খেতে চাচ্ছে খাওয়াবো?

এবার মনে হয় সত্যি সত্যি অজ্ঞান হয়ে যাব। বেগুন ডাল নিরা খেলে মানইজ্জত সব শেষ হবে। বউকে ধমক দিয়ে বললাম….

–তোমার বেগুন ডাল খাওয়ার অধিকার একমাত্র আমার। অন্য কাউকে খাওয়ালে আমি কষ্ট পাবো।
-ওলে গুলুমুলুটা জামাইতা আচ্ছা কাউকে খাওয়াবোনা।
–লাপ্পিউ বউমনি।
-লাপ্পিউটু জামাই।

যাক অবশেষে বাঁচলাম। বসের কাছ থেকে বলে ছুটি নিলাম। বেগুন ডাল খেয়ে শরীর খারাপ হয়ে গেছে। সন্ধ্যের দিকে বাসায় গেলাম। বউ বলল….

–কি হয়েছে এত তাড়াতাড়ি এলে যে?
-এমনি ভালো লাগছেনা তাই।
–এই তোমার আবার শরীর খারাপ করলনাতো? আচ্ছা ভিতরে আসো।

আমি ভিতরে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। রাত ১০ টা বাঁজে। আমি আর বউ ছাদে বসে আছি। বউ হঠাৎ বলল….

–আচ্ছা রুপাউল (আদর করে রুবেল না বলে রুপাউল বলে ডাকে) আমাদের প্রথম কি বেবি হবে?
-মেয়ে বেবি হবে।
–হুম আমারো আশা আমাদের মেয়ে বেবি হোক। আচ্ছা আমরা এককাজ করব….
-কি কাজ?
–আমরা আড়াইশো বাচ্চা নিব, তুমি কি বলো?

হোয়াট দা ফুসকা, বউ বলে কি। আড়াইশো বাচ্চা? হাউ জোক্স অফ দা আমগো ছাদের উপরে। কেমনে সম্ভব! অবাক হয়ে বললাম

–আড়াইশো বাচ্চা কেমনে সম্ভব?
-বারে তুমি চাইলে সব সম্ভব। তবে শোনো, আমরা একটা ফুটবল, একটা ক্রিকেট, ভলিবল, হকি খেলার টিপ বানাবো। দারুন হবেনা? এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ছাদ থেকে লাফ দেই। কিন্তু ভয় করে তাই লাফ দিলামনা। বউকে বললাম….

–আচ্ছা নিও সমস্যা নেই।
-এই একটা সুন্দর গান বলোনা।
–আমিতো গান পারিনা, তুমি গাও।
-উহু আমি গান পারিনা, তবে গল্প বলি শুনবে?
–বলো।
-জানো, দুইবছর আগে আমাদের এলাকায় প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিলো। সেবার আমাদের ওখানে অনেক শিলাবৃষ্টি হয়েছিলো।
–হুম তারপর?
-অবাক করা বিষয় কি জানো, শিলাবৃষ্টির সাথে আমাদের বাসায় আকাশ থেকে মুরগির ছাউ পরছিলো।
–মা..মানে? কি বলছো শিলাবৃষ্টির সাথে কখনো মুরগির বাচ্চা পরে নাকি?
-ঐ তুমি আমায় বিশ্বাস করোনা?

–করি কিন্তু তাই বলে আকাশ থেকে মুরগির বাচ্চা পরবে?
-হুম এটাই সত্যি। পরে আমরা অনেক মুরগির বাচ্চা বিক্রি করেছি। অনেক আমরা পেলেছিও।
–তাহলে ঠাডার সাথে নিশ্চই ছাগলের বাচ্চা পরেছিলো।
-আরেনা পাগল একটা।
–তাহলে কি পরেছিলো?
-একটা ঠাডা পরেছিলো আর সেটা আমাদের রান্না ঘরের উপরে। যখন ঠাডা পরলো আমরা তখন আমাদের ঘরে বসা। পরে সবাই দৌঁড়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি সেখানে একটা হাতির বাচ্চা পরে রয়েছে।
–মানে?
-মানে আবার কি ঠাডার সাথে হাতির বাচ্চা পরেছিললো। তবে আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে সেই হাতির বাচ্চা আস্তে আস্তে গলে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো।

বউয়ের এমন চাপাবাজ মার্কা কথা শুনে মাথা চক্কর দিলো। বউকে ডাক দিতে যাব হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখলাম। তারপর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙ্গলো বউয়ের ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে। আমার চোখ খোলা দেখে বউ বলল….

–ওগো তুমি উঠেছো, আজ পাঁচদিন যাবত তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। কেমন আছো তুমি?

দেয়ালে থাকা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালাম। তারিখ সময় সব ঠিক আছে। কিন্তু পাঁচদিন হলো কেমনে বুঝে আসলোনা। আমি আবার আলতো করে চোখ বুজলাম। আর চোখ খোলার ইচ্ছে নেই। বিদায় পিতিবি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত