বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। এখনও বিয়ে করার নামগন্ধ ও নেই। বলছি আমার চাচাতো ভাইয়ের কথা, পরিবারের সবার বড় ছেলে। পড়ালেখা শেষ করে এখন ব্যাংকে চাকরী করছে তবুও নাকি ওনার কোন পছন্দের মেয়ে বা গার্লফ্রেন্ড নাই।
তাছাড়া আমার পরিবারে ছেলেদের বিয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী হয়। আর সেজন্য ওনার কারনে পরিবারে অন্য ছেলেদেরও বিয়ে হচ্ছে না। ওনাকে কোনো মেয়ের ছবি দেখানো হলেই বলে,”এর নাক বোঁচা, এর চোখ সুন্দর না, এই মেয়ের চুল গুলো এতো ছোট কেন ইত্যাদি ইত্যাদি।”
আর এসব দেখে আম্মু আমাকে বলে রেখেছে, “বাবা যাই করিস না কেন, তোর বিয়ের সময় যাতে এতো ঝামেলা পোহাতে না হয়। আগেই পছন্দের মেয়ে ঠিক করে রাখিস”। অর্থাৎ বড় ভাইয়ের বিয়ে না হওয়ার দৌলতে আমি প্রেম করার জন্য পরিবার থেকে আনঅফিসিয়াল অনুমতি পেয়ে গেলাম।
ভাই ছবি দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় একটি মেয়ের ছবি তার চোখে আটকায়। অসম্ভব সুন্দর মেয়েটি। ভাই ছবির উপর ক্রাশ খেয়ে যখন সবাইকে বললো যে এই মেয়েকে সে দেখতে তাদের বাড়িতে যাবে। তখন আমি বলেছিলাম, “ভাই এটা এখন এফেক্টের যুগ। ছবি দেখে মেয়েদের উপর ক্রাশ খাইয়ো না,পরে পস্তাইবা”। আর সেদিন এটা বলার কারনে ভাই আমারে খুব বকছিলো। আজ সেই সন্ধিক্ষন। এই নিয়ে তেরো নাম্বার মেয়ে দেখতে তাদের বাড়িতে এসেছি। কিন্তু এবারই প্রথম ভাইয়ের ক্রাশ খাওয়া মেয়ে দেখতে এসেছি।
অনেকক্ষন যাবত বসে আছি। মেয়ের বাবা মা এসে আমাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প গুজব করছে। কিন্তু মেয়ের আসার নাম গন্ধও নেই। আমার খুব বিরক্ত লাগছিলো,তাই ভাইকে খোঁচা মেরে বললাম, ” গিয়ে দেখো তোমার ক্রাশ আবার পালিয়ে গেছে নাকি?” ভাই কোন উত্তর দিলো না।
আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর, হাতে শরবত নিয়ে মেয়েটি রুমে ডুকলো। বাহ, মেয়েটি আসলেই সুন্দর। ছবির চেয়েও বেশী সুন্দর। এতো সুন্দর মেয়ে আমার ভাবি হবে ভাবলেই কেমন জানি অন্যরকম ভালো লাগছে।
সবাইকে সালাম দেওয়ার পর মেয়েটি আমার সামনের সোফায় বসলো। তারপর একে একে পরিবারের সব সদস্য মেয়েটিকে প্রশ্ন করতে লাগলো। প্রশ্ন গুলো ছিলো এমন,”মেয়ে কি করে,রান্না পারে কিনা, পরীক্ষার রেজাল্ট কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি”
আমি আর বড় ভাই শুধু চুপ করে বসে আছি। বড় ভাই লজ্জায় কিছু বলছে না আর আমি সবার ছোট তাই কিছু বলছি না আর বলারও সাহস হচ্ছে না। সবার প্রশ্ন করা শেষ হওয়ার পর মেয়ে সম্পর্কে যা যা জানতে পারলাম তা হলো, মেয়ের নাম মিম। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সাইন্স থেকে।রেজাল্ট গোল্ডেন এ প্লাস। রান্না বান্না সব পারে। বাড়িরও সব কাজ করতে পারে।
মোট কথা হলো পরিবারের সবার কাছেই মেয়েটি পাশ হয়ে গেছে। এখন বাকি শুধু বড় ভাই। এখন ওনার প্রশ্ন করার পালা। ওনাকে যখন মেয়ের কাছ থেকে কিছু জানার আছে কিনা বলা হলো তখন উনি বললো,” আমার আর তেমন কিছু জানার নাই। তবে ইমনের(আমি) কিছু জানার থাকলে ও জিগ্যেস করুক তাতেই হবে”
এই প্রথম নিজেকে মনে হচ্ছে পরিবারের একজন সদস্য। বড় ভাই এতো ভালো আমি আগে জানতাম না। কিন্তু এই ত্রিশ বয়সের একটা আধবুড়ার সাথে ওতো ছোট মেয়ে মানায় না। না এসব কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তার উপর এটা বাল্যবিবাহ হবে। নাহ এই মেয়ের সাথে ভাইয়ের বিয়ে হতে দেওয়া যাবে না, না কিছুতেই না। এসব যখন মাথার ভেতর আওরাচ্ছি তখন ভাই বললো,” কিরে তোর কিছু জিগ্যাস করার আছে?” “হ্যা ভাই আছে” “তাহলে চুপ করে বসে আসিস কেন,আমাদের হাতে সময় বেশী নাই,যা জিগ্যেস করার আছে তাড়তাড়ি কর?” “আচ্ছা ভাই ওয়েট, আমি বলতাছি” এবার মিমের দিকে মুখ ফিরে বসলাম, মিমের সাথে কথা বলা শুরু করলাম।
— আপনি সাইন্স থেকে এসএসসি দিয়েছেন??
–জ্বি।
–আচ্ছা তাহলে বলুন তো, আলেকজান্ডার গ্রাহামের গার্লফ্রেন্ড এর নাম কি ছিলো।
–আআ….স্যরি বলতে পারছি না।।
–সমস্যা নাই। বলুন তো নিউটনের মাথায় যে আপেলটা পড়েছিলো ওইটা কি কালারের ছিলো?? লাল নাকি সবুজ?
–ইশশ, এটা জানতাম কিন্তু মনে করতে পারছি না।
–ব্যাপার না।। এবার বলুন শরবতের সংকেত কি??
–H2O(এইচটুও)।
–এটা তো শুধু পানির সংকেত। আমি জানতে চাচ্ছি শরবতের সংকেত কি?
–এ….জানি না।
–আচ্ছা বায়োলজি কেমন পারেন?
— ওইটা খুব ভালো পারি।
–আচ্ছা তাহলে বলুন তো, নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানী ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কোন কোষ আবিষ্কার করেছে?
— জানি না ভাইয়া। এগুলা তো আমাদের সিলেবাসে ছিলো না।
— সিলেবাসে ছিলো না ঠিক আছে। কিন্তু এগুলা ক্লাস এইটের বাচ্চারাও পারবে।
–আচ্ছা ভাইয়া তাহলে উত্তর গুলা আপনি বলে দেন?..
আমি মিমের এই কথাটা শুনেও না শোনার ভান করলাম। সবাই এতোক্ষন হা করে আমাদের প্রশ্নোত্তর পর্ব মনোযোগ সহকারে দেখছিলো। এবার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে৷ আস্তে আস্তে করে সবাই উঠতে লাগলো। আর যাওয়ার আগে আমার আম্মু মেয়েদের পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বললো,”আসি ভাবি,সম্পর্ক যেহেতু হচ্ছে সেহেতু আবার আসবো। আর বাসায় গিয়ে বিয়ের দিনক্ষন আলোচনা করে আপনাদের জানাবো” বাসা থেকে বের হওয়ার আগে, মিমের ফেসবুক আইডিটা নিয়ে মিমকে বললাম,” প্রশ্ন গুলোর উত্তর রাতে বলে দিবোনি। ইনবক্সে নক দিয়েন” ও সম্মতি জানালো।
গাড়ি করে বাড়িতে ফেরার সময় আমি ভাইয়ের পাশে বসেছি। ভাইকে বললাম,” ভাই দেখো এই মেয়ে তোমার জন্য না। দেখলে না আমার একটা প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর দিতে পারলো না। আমার কাছে কি মনে হচ্ছে জানো, এই মেয়ে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পেয়ে গোল্ডেন পেয়েছে। তাছাড়া মেয়ের ভেতর একটু ঝামেলাও আছে মনে হলো, এই মেয়ে তোমার জন্য না ভাই” এক নিশ্বাসে এতো গুলা বলার পর ভাইয়ের জবাবের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ভাইয়ের কোন জবাব তখন পাইনি।।
তবে বাসায় আসার পর হুট করেই ভাই বলে দিয়েছে যে ওই মেয়েকে সে বিয়ে করছে না। সবাই খুব অবাক হয়েছে বটে কিন্তু কেউ আর কিছু বলে নি। যাই হোক আমি আমার প্লানিং এ স্বার্থক এই ভেবেই গর্বে বুকটা ফুলে উঠছে।
বাসায় পৌছানোর পর দেখি মিম ফ্রেন্ড রিকু এক্সেপ্ট করছে। তারপর থেকে প্রতিদিন আমাদের কথা হয়,মাঝে মাঝে দেখা হয়। আর এখন মিম নাকি আমাকে ছাড়া বাচবে না। আজ আমাদের রিলেশনের দুইবছর পূর্তি। মিম এখন আঠেরো প্লাস।। আজ আবারও মিমদের বাড়িতে পরিবারের সবাই এসেছে। বড় ভাইয়ের বৌ ও এসেছে।। আমার বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করতে।।