মৌমিতা অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রান্না করতে করতে ভাবছিল, আজ পাঁচ দিন হলো, সে নিজেই রান্না করে খাচ্ছে। গত তিন বছর সে রান্না করে নি। সবুজই রান্না করতো। ছেলে হলেও ওর রান্নার শখ ছিল আর রান্নাটা সবুজ সত্যিই অসাধারণ করতো। যে কোন পেশাদার কুকের থেকে ও কম ছিল না। মৌমিতা চাইলেও, সবুজ কোনোদিন মৌমিতাকে রান্না করতে দেয় নি।
সবুজ বলতো,’ বাকি কাজ গুলো তুমি করে নাও, রান্নাটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।’ সবুজ শুধু যে রান্না করতো, তাই নয়, রান্না ঘরের যাবতীয় কাজ এমনকি বাসন পত্র ধোয়ার কাজটাও সবুজ নিজের হাতে করতো। সেই সবুজ ইউ এস চলে গেছে সাত দিনও হয়নি, এরমধ্যেই যে তার নিজেকে এতটা অসহায় লাগবে, মৌমিতা তা স্বপ্নেও ভাবে নি। সবুজ চলে যেতে সে আজ পুরোপুরি একা। সবুজের সাথে থাকতে গিয়ে তার মা, বাবার সাথেও সম্পর্ক ছেদ হয়েছে। মৌমিতা মনে মনে ভাবে এর জন্য তো সে নিজেই দায়ী, সবুজকে সে এর জন্য দায়ী করতে পারে না। মৌমিতার দেওয়া শর্ত অনুযায়ী সবুজ তাকে ছেড়ে চলে গেছে। মৌমিতাও তাকে এক বারের জন্য বাধা দেয় নি। অবশ্য বাধা দিয়েও লাভ ছিল না। মৌমিতার ধীরে ধীরে সব পুরোনো ঘটনা গুলো একে একে মনে পড়তে লাগলো।
মৌমিতার সাথে সবুজের আলাপ হয় কোম্পানির টাইম ম্যানেজমেন্টের তিন দিনের একটা ওয়ার্কশপে। যদিও তার আগেই একে অপরের মুখ চিনতো বিভিন্ন মিটিং এটেন্ড করার সুবাদে। মৌমিতা কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে আর সবুজ মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতো। ওয়ার্কশপে লাঞ্চের সময় আলাপ হয়। কথায় কথায় জানতে পারে মৌমিতার মা আর সবুজের মায়ের বাড়ি কলকাতার একই পাড়ায়। সেই ওয়ার্কশপের আলাপ থেকে বন্ধুত্ব হয়। কিছুদিনের মধ্যেই সেই বন্ধুত্ব বেশ গাঢ় হয়ে যায় আর শুরু হয়ে যায় এক সাথে লাঞ্চ করা, অফিসের পর কফি শপে বসে আড্ডা মারা, উইক এন্ডে সবুজের গাড়িতে লং ড্রাইভে যাওয়া। মৌমিতা যেটা আশা করেছিল, সেটাই হলো ওদের মেলামেশার ঠিক এক বছরের মাথায়। সেদিন ছিল রবিবার। সবুজ দুপুরে খেতে এসেছিল মৌমিতার ফ্ল্যাটে।
খাওয়া দাওয়ার পর সবুজ হটাৎ বলল,’ আমরা দুজনেই ফ্ল্যাটের ভাড়া গুনছি। কেন না আমরা একটা ফ্ল্যাট ছেড়ে দিই?’ শুনেই মৌমিতা বলেছিল,’ তোমার কথা ঠিক। ছেড়ে দাও তোমার ফ্ল্যাট, চলে এসো আমার ফ্ল্যাটে। আমার ফ্ল্যাটটা থেকে অফিস অনেক কাছে।’ মৌমিতার কথা শুনে সবুজ মুচকি হেসে বলেছিল,’ তাহলে তো তার আগে আমাদের কিছু ফর্মালিটি সেরে নিতে হয়?’ মৌমিতা অবাক হয়ে বলেছিল,’ কিসের ফর্মালিটি?’ সবুজ বলেছিল,’ কেন তুমি কি কিছুই বুঝতে পারছো না, আমি কোন ফর্মালিটির কথা বলছি। কিছু না হোক একটা একসাথে থাকার লাইসেন্স তো চাই?’ মৌমিতা সবুজের কথা ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল কিন্তু তাও প্রশ্নটা ইচ্ছে করেই করেছিল। সে চেয়েছিল সবুজ একটু খুলে বলুক। সবুজ লাইসেন্সের কথা বলতেই মৌমিতা বলল,’ দেশের আইনটা আমি তোমার থেকে একটু বেশিই বুঝি। তুমি হয়তো জানো না যে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই একটি রায়ে বলেছেন যে একজন পুরুষ ও মহিলা যদি বিয়ে না করেও একসাথে থাকে, সেটা আইনের চোখে কোনো দণ্ডনীয় অপরাধ নয়।
সবুজ মৌমিতার কথা শুনে একটু হাসলো। তারপর সিগারেট ধরিয়ে এক মুখ ধোয়া ছেড়ে বলল,’ আমি আইনের কথা বলতে চাই নি। আমি বলতে চাইছি, রেজিস্ট্রি ম্যারেজ না করলেও, তোমার আর আমার বাড়ির লোকের এটলিস্ট অনুমতি নেওয়া তো আমাদের কর্তব্য।’ সবুজের কথা শুনে মৌমিতা হাসতে হাসতে বলল,’ তুমি কি পাগল হলে? আমি লিভ ইন রিলেশনে বিশ্বাস করলেও, আমার বাড়ির লোক করবে না। তারা এক কথায় না বলে দেবে। উল্টে আমায় প্রেসার দেবে বিয়ের জন্য। না বাবা না, এসব নিয়ে বাড়ির পরামর্শের দরকার নেই। তোমার যদি মনে হয়, তোমার বাড়িতে আপত্তি করবে না, তাহলে তুমি তাদের অনুমতি নিয়ে নাও।’ সবুজ বলল,’ একবার জিজ্ঞেস তো করে দ্যাখো। সামনের শুক্রবার আমি বাড়ি যাচ্ছি। শনি আর রবিবার বাড়িতেই থাকবো। তুমিও চলো, তোমার বাবা, মাকে একবার জিজ্ঞেস তো করে দ্যাখো?’
সবুজের জোরাজুরিতে মৌমিতা তার বাড়িতে গিয়ে তার ইচ্ছের কথা বাবা, মাকে বলেছিল। মা কিছুই মতামত দেয় নি। তবে মৌমিতার বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলেছিল,’ তুই বড় হয়েছিস। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিস। নিজের ভালো মন্দ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তোর আছে। সেক্ষেত্রে আমার বা তোর মায়ের আপত্তির কি কোনো মূল্য আছে? তুই তোর মত সিদ্ধান্ত নিতেই পারিস। তবে আমি বুঝতে পারছি না, বিয়ে করতে আপত্তিটা কোথায়? এটলিস্ট রেজিস্ট্রি ম্যারেজ তো করতেই পারিস।’ মৌমিতা তার বাবাকে বলেছিল,’ বিয়ে করা মানে তো আটকে পড়া। কিছুদিন পর যদি আমার সবুজের সাথে থাকতে আর ভালো না লাগে? তখন? তখন সেই ডিভোর্সের একটা লেনদি প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে সেই ধরণের কোনো হ্যাসেল এভয়েড করার জন্যই আমি বিয়ে করতে চাইছি না।
মৌমিতার বাবা বলেছিল,’ তোর কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে তুই এখনও সবুজকে ভালোবাসতেই শুরু করিস নি। শুধুমাত্র ওর কম্পানিটা এনজয় করছিস মাত্র। কারণ ভালোবাসার মধ্যে এত ভবিষ্যৎ চিন্তা আসতে পারে না। এনি ওয়ে। তোর যেমন ভালোলাগে, তেমনি থাকিস। তবে তোদের ওখানে আমার আর তোর মায়ের কোনোদিন আর যাওয়ার রাস্তা রইলো না। তবে তোর ইচ্ছে হলে আমার এখানে আসতে পারিস। অবশ্যই একা আসবি। সবুজ তখনই তোর সাথে আমার বাড়িতে আসতে পারবে, যখন সে তোর স্বামী হিসাবে আসবে।’ মৌমিতা যেরকম আশা করেছিল, তাই হয়েছিল। এমনকি সবুজের বাবা, মাও রাজি হয় নি। সবুজের জন্যও তার বাড়ির দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তা স্বত্বেও কলকাতা থেকে ফিরে সবুজ মৌমিতার ফ্ল্যাটেই থাকতে শুরু করেছিল। নিজের ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই মৌমিতা বুঝেছিল যে, সে আর সবুজ খুব খুশিতে দিন কাটালেও, সামাজিক দিক থেকে তারা প্রায় এক ঘরে হয়ে পড়েছে। দুজনের বাড়ি এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে তাদের আর যোগাযোগ নেই। নেই মানে তাদের বাড়ির লোকেরা বা আত্মীয় স্বজনরা ওদের এড়িয়ে চলে। এমনকি অফিসের কলিগরাও তাদের ব্যক্তিগত সামাজিক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তাদের আর ডাকে না।
তাও দু বছর পর্যন্ত তার আর সবুজের আন্ডারস্ট্যান্ডিং খুব ভালো ছিল। সেই আগের মতোই গল্প করা, উইকেন্ডে লং ড্রাইভে যাওয়া, সবই চলতে লাগলো। সঙ্গে অতিরিক্ত যেটা পাওয়া সেটা হলো স্বামী-স্ত্রীর মতোই এক ছাদের নিচে, এক বিছানায় শোয়া আর সঙ্গে একে অপরকে আদরে ভরিয়ে দেওয়া।
সবুজের সঙ্গে মৌমিতার মানসিক দূরত্ব একটু যেন বেড়ে গেল ঠিক দু বছরের মাথায়। অসাবধানতার ফলে মৌমিতা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল সেই সময়। সবুজ এই সময় আবার মৌমিতাকে রেজিস্ট্রি ম্যারেজের কথা বলেছিল। মৌমিতা রাজি হয় নি। সে তখনও সন্তান আসুক এটাও চায় নি। সবুজ মৌমিতাকে বুঝিয়ে বলেছিল,’ রেজিস্ট্রি ম্যারেজ না হয়, নাই বা করলাম। কিন্তু বাচ্চাটাকে নষ্ট হতে দিওনা। আইনের দিক থেকেও কোনো অসুবিধা নেই বাচ্চাটাকে নিজেদের মতো করে মানুষ করতে।
কিন্তু মৌমিতা শোনে নি। সে এবরশন করিয়ে নেয়। মৌমিতা সবুজকে বলেছিল,’ এখনও আরও কয়েক বছর ঝাড়া হাত পা থেকে লাইফটাকে এনজয় করতে দাও। ওসব পরে ভাববো।’ সবুজ মৌমিতার সাথে কোনো অশান্তি করে নি। আগের মতোই নরমাল ব্যবহার করতো। সেই আগের মতোই সকাল, রাত্রি রান্না ঘরে ঢুকে মৌমিতার পছন্দের ডিস বানানো, উইকেন্ডে লং ড্রাইভে যাওয়া সবই ছিল। তাও মৌমিতা বুঝতে পারতো কোথায় যেন সবুজের সাথে তার তাল কেটে গেছে। কিন্তু মৌমিতার কিছুই করার ছিল না। সে তো এরকম স্বাধীন, বিন্দাস জীবন কাটাতে চায়। সে যে সবুজের সাথে আছে সেটাও সবুজের প্রস্তাব ছিল। সে তো সবুজকে বলেছিল যে, যেদিন আর এক সাথে থাকতে ভালো লাগবে না, সেদিন ওরা আলাদা হয়ে যাবে। তাই মৌমিতার মনে কখনোই সবুজের জন্য সিমপ্যাথি জাগে নি।
মৌমিতা সবুজের আপত্তি সত্ত্বেও এবরশন করানোর মাস দুয়েক পর থেকেই সবুজের জীবনে আরও একটা পরিবর্তন এলো। যদিও সেই পরিবর্তনটা মৌমিতা কোনোদিনই জানতে পারে নি। সে জানতে পেরেছিল সবুজ ইউ এস যাওয়ার দিন পনের আগে, যখন সবুজ তাকে সে কথা নিজের মুখে বলেছিল।
মৌমিতাদের কোম্পানি তাদের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের ফিউচার প্লানিং প্রজেক্ট “ভিসন মার্কেটিং 2025” এর জন্য একটা ইউ এস বেসড কনসালট্যান্সি ফার্মকে এপন্টমেন্ট দিয়েছিল। ওই ফার্মের একটা তিনজনের টিম গত আট দশ মাস ধরে ইন্ডিয়াতেই ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ডাটা কালেক্ট করে রিপার্ট তৈরি করেছিল। কোম্পানির তরফ থেকে সবুজ ওদের এসিস্ট করছিল। ওই টিমে ছিল ক্যাথরিন নামে একটি মেয়ে। কিছুদিনের মধ্যেই সবুজের সাথে ক্যাথরিনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। মৌমিতা, সবুজ আর ক্যাথরিনকে অফিসের লবিতে এক সাথে অনেকবার হেঁটে যেতে দেখেছিল। কিন্তু মৌমিতার তাতে মনে কোন সন্দেহ হয় নি। মৌমিতা জানতো সবুজ মনে প্রানে কাজের ব্যাপারে কতটা প্রফেশনাল। কিন্তু দিন পনের আগে সবুজ যখন সব বলল, তখন মৌমিতা শুধু চমকেই ওঠে নি, বেশ আঘাত পেয়েছিল। মনের দিক থেকেও বেশ ভেঙ্গে পড়েছিল। কিন্তু মৌমিতা মুখের কথায় তা প্রকাশ করে নি।
সবুজ রাত্রে খেয়ে দেয়ে বিছানায় মৌমিতার পাশে শুয়েই বলেছিল,’আমি এই চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছি। ইউ এস যাচ্ছি। ভালো একটা অফার পেয়েছি।’ মৌমিতা চমকে উঠে বলল,’ হটাৎ? এর আগেও তো তুমি অনেক ভালো ভালো অফার পেয়েছিলে। তখন যাওনি, এখন হটাৎ?’ মৌমিতাকে দ্বিগুন চমকে দিয়ে সবুজ বলল,’ আসলে যাচ্ছি ক্যাথরিনের জন্য।’ সবুজের কথায় মৌমিতা এতটাই অবাক হয়েছিল যে, সে আর কথা বলতে পারছিল না। সবুজ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করলো,’ বেশ কয়েক মাস ধরেই আমি যেন একটা সাফোকেসন ফিল করছিলাম। কিছুটা লোনলি ফিল করছিলাম। কিন্তু সেই ব্যাপারটা অনেকটাই কেটে যাচ্ছিল ক্যাথরিনের সাথে মেলামেশার পর থেকে। ও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আমাকে বিয়ে করতে চায়। ওর উদ্যোগেই আমি ওদের ফার্মে জয়েন করছি। এখানে গিয়ে ক্যাথরিনকে বিয়ে করবো। আশা করি তোমার কোনো আপত্তি নেই এতে। আমাদের তো এরকমই কথা ছিল। ভালো না লাগলে আমরা একে অপরের থেকে সরে যেতে পারি।’
মৌমিতার তখন চোখ ফেটে জল বেরোবার উপক্রম, বুকের ভেতরটা কেমন করছে। তাও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’ খুব ভালো খবর। তা কবে যাচ্ছ?’ সবুজ বলল,’ দিন পনের পরে। সামনের সপ্তাহে ওরা রিপোর্ট জমা দেবে। আমি অবশ্য ইতিমধ্যেই এক মাসের নোটিস সমেত রেজিগনেশন দিয়ে দিয়েছি কোম্পানিতে। আর একটা কথা, পরশু আমি কলকাতা যাচ্ছি। ইউ এস যাওয়ার আগে একবার মা, বাবার সাথে দেখা করে যেতে চাই।’ মৌমিতা যেন একটু ঠেস দিয়েই বলল,’ আর ক্যাথরিনকে বিয়ে করার অনুমতি চাইবে না?’ সবুজ মৌমিতার কথা শুনে উঠে বসে মৌমিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,’ তার মানে তুমি আমার আর ক্যাথরিনের ব্যাপারটা কি ঠিক মেনে নিতে পারছো না?’ মৌমিতা পাস ফিরে শুয়ে বলল,’ পরে আলোচনা হবে। এখন একটু আমাকে ঘুমোতে দাও।’
সবুজ সেদিন মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেদিন রাত্রে মৌমিতা আর ঘুমোতে পারে নি। সে না চাইলেও, তার চোখ বার বার জলে ভরে যাচ্ছিল।
সেই রাত্রের পর থেকে মৌমিতা বা সবুজ, কেউই আর ক্যাথরিনের প্রসঙ্গে বা সবুজের ইউ এস যাওয়া নিয়ে কথা বলে নি। দুজনেই যেন যন্ত্রের মতো পনেরটা দিন কাটিয়েছে। কথাবার্তা হলেও, তাও যেন ছিল যান্ত্রিক। মৌমিতার কষ্ট হলেও, সে এয়ারপোর্ট গিয়েছিল। ক্যাথরিনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে তাদের বিবাহিত জীবনের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। যখন ক্যাথরিনের হাত ধরে সবুজ চেক ইনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, মৌমিতা একদৃষ্টে সেদিকে তাকিয়েছিল। গেট দিয়ে ঢোকার ঠিক আগে সবুজ একবার ফিরে তাকিয়েছিল মৌমিতার দিকে। মৌমিতা দেখেছিল সবুজের চোখ দুটো চিক চিক করছিল।
মৌমিতা রান্না শেষ করে ব্যালকনিতে এসে বসলো। মনে সেই সবুজের স্মৃতি। হটাৎ মৌমিতার মনে হলো, সবুজ কি তাকে ভালোবাসতো? নাকি সবুজ ভালোবাসলেও সে সবুজকে ভালোবাসতো না। সবুজ তো তার সব কথা শুনতো, সে যা বলতো, সবুজ তাই মেনে নিত। সবুজ তাকে ভালোবাসতো বলেই না সবুজের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সে তো সবুজের কোনো কথাই রাখতে পারে নি। একবারই সে মুখ ফুটে বলেছিল রেজিস্ট্রি ম্যারেজের কথা, বাচ্চাটাকে নষ্ট না করার কথা। কিন্তু মৌমিতা সবুজের সে কথাও রাখে নি। সবুজের কি মনে হতো, মৌমিতা তাকে ভালোবাসে না! তাই কি সে ক্যাথরিনকে…