হঠাৎ করে আমার এক্সের মেসেজ পেয়ে আমি আহ্লাদে আটখানা হয়ে গোলাম। কাঁপা-কাঁপা হাতে দুরুদুরু বুকে মেসেজটা ওপেন করতে হাত বাড়ালাম। কিন্তু না, হাত কাঁপছে। উত্তেজনা কন্ট্রোল করতে পারছি না। নিজেকে মনেমনে বুঝালাম কুল ডাউন অনিক, কুল ডাউন। আমাদের ব্রেকআপ হয়েছে দেড়বছর। আমি জানতাম মিথিলা আবার আমার জীবনে ফিরে আসবে। কিন্তু আজকেই যে আসবে, আজ রাতই যে সে রাত তা কখনো ভাবিনি।
আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে মিথিলার সাথে ব্রেকআপ হয় আমার কারনেই। আমি মিথিলার নেকামি, এক্সট্রা কেয়ার, এক্সট্রা রোমান্টিজম এইগুলা আর নিতে পারছিলাম না। যেমন, একদিন বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমি ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস খেলছি। অ্যাটাক দিবো-দিবো অবস্থা। মিথিলা ফোন দিয়ে বলল, “অনিক চলো বৃষ্টিতে ভিজি।”
বাংলা সিনেমা মা বড় না বউ বড়-এর মতো আমার মনেও পশ্ন জাগলো– প্রেমিকা বড় না ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস বড়? অবশ্যই প্রেমিকা বড়। তাড়াতাড়ি উত্তর দিলাম, “ওহ্ বৃষ্টিতে ভিজবা…দাঁড়াও এক্ষুনি আমি রিকশা নিয়ে আসছি, তুমি বের হও।”
-আরে বের হবো মানে! তুমি তোমার বাসার ছাদে ভিজো, আমি আমার বাসার ছাদে। কিন্তু মনে হবে দুজনে একসাথেই বৃষ্টিতে ভিজছি।
এইডা কোনো কথা! এইডা কী বাংলা সিনেমা, যে নায়ক ব্যাথা পাইলে নায়িকাও ব্যাথা পাইবো, নায়কের খিদা লাগলে নায়িকারও লাগবো, নায়কের বড়ডা চাপলে নায়িকারও চাপবো। আবার আরেকদিন দুপুরে কাচ্চি সামনে নিয়া বসছি। জিহ্বা জলে লকলক করছে। তাড়াতাড়ি শার্টের হাতা গুটিয়ে যেইনা এক নলা মুখে দিলাম, ফোনটা বেজে উঠল।
-হ্যালো অনিক, কী করো?
-এইতো খাচ্ছি জান।
-তা…আমার বাবুটা কী খাচ্ছে শুনি। আমি আরেক নলা মুখে দিয়ে আঙুল চাটতে-চাটতে বললাম, “কাচ্চি।”
-ছিঃ অনিক, ছিঃ…তুমি ঐগুলা আবার খাচ্ছো?
-অতো ছিছি করছো কী জন্য! কাচ্চি-ই তো খাচ্ছি, নেশাপানি-তো আর করছি না।
-ছিছি করবো না! এইগুলা মানুষ খায়?
-মানুষ খায় না? মানুষ তাহলে কী খায়?
-ক্যান…বেশি বেশি করে শসা খাবা, টমেটো খাবা, গাজর খাবা, ফল-ফ্রুটস খাবা।
আমি শুধু মুখ দিয়ে ওহ্ বলে শব্দ করলাম।
-শুধু ওহ্ বললে হবে না। যতটুক খাইছো..খাইছো। তুমি এখন গিয়ে বাকিটা বেসিনে ঢালবা, তারপর সেইটা ভিডিও করে আমারে পাঠাইবা।
-কী বলো জান! এবারের মতো মাফ করে দেওয়া যায় না, প্লিজ?
-নো, নো…তুমি প্রতিবার আমাকে এইগুলা বলো। এক্ষুনি যাও…
আমিও আর দেরি করলাম না। সাথে-সাথে ফোনটা অফ করে দিলাম। তারপরে তৃপ্তি ভরে খাইলাম। আরো দেড় প্লেট খাইলাম। এরপর একটা সেভেনাপ খাইয়া ঘুম দিলাম। ঘুম থিকা উইঠ্যা আরেক চোট খাইলাম।
সাতদিন সকাল-দুপুর-রাত তিনবেলা খালি কাচ্চি-ই খাইলাম। এরপর সাতদিন পর ফোন ওপেন কইরা মিথিলারে একটা মেসেজ দিলাম– “আসলে আমাদের ঠিক যাচ্ছে না। এভাবে আর কতো দিন! তুমি আসলে আমার থেকে আরো অনেক বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো।”
এরপর মিথিলা আর আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমিও না। তবে আমি সবসময় চাইতাম ও আবার আমার কাছে ফিরে আসুক। কারণ অন্য কারো সাথে আমার ঠিক হচ্ছিল না। দুমাস একজনের সাথে রিলেশনে যাই। সেই মেয়েটার মাঝেও আমি যেন মিথিলাকে-ই খুঁজছিলাম। তো আজকে সেই মিথিলা নক করেছে। আমি তাড়াতাড়ি ফ্রীজ থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি নিয়ে ঢকঢক করে গলায় ঢাললাম। এরপর মেসেজটা ওপেন করলাম— “কেমন আছো অনিক?”
-এইতো আছি। তুমি?
-আমিও ভালো।
-ওহ্…
-তা কী করছো?
আমি তো কাচ্চি খাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা তো আর বলা যাবে না। তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে ল্যাপটপে একটা মুভি অন করে বললাম, “এইতো মুভি দেখি। তুমি? ”
-তেমন কিছু না। এই ফোন টিপি..
-ওহ্…
-তা খালি কী ওহ্..আহ্ করবে! কিছু বলবে না?
-কী বলবো!
-হুম…কী বলবে! আচ্ছা আমিই বরং ডিরেক্টলি বলি।
এই মেসেজটা পেয়ে আমি খুশিতে একেবারে গদগদ হয়ে গেলাম। বক্সে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে একটু নেচে নিলাম। বুঝতে পারলাম, মিথিলা বোধহয় এখনই আবার আমার জীবনে ফিরে আসার কথা বলবে। নাচানাচি শেষে ঘাম টাম মুছে রিপ্লাই দিলাম, “হুম…বলো।”
-আচ্ছা, তোমাদের বাসার তিনতলায় কী রাহাত নামে কেউ থাকে?
-হুম থাকে তো..
-উনার কী এবার বিসিএস হইছে?
-হুম…সেদিনই-না আমাদের বাসার সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াল।
-ওহ্..তা ছেলে কেমন?
-ভালোই আছে। রোমান্টিক, কবিতা-টবিতা লেখে। কাচ্চি-টাচ্চি খায় না, ধূমপানও করে না, নিয়মিত এক্সারসাইজ করে। কিন্তু এইগুলা জানতে চাচ্ছো কেনো?
-তুমিই না বলছিলা আমি আরো বেটার কাউকে ডিজার্ভ করি। তাই বেটার কাউকে খুঁজছি। রাহাতের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে।
আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। আর কিছু বলছি না। আমার এখন মনে হচ্ছে– আমি কোনো হোটেলে গিয়ে ইচ্ছেমতো কাচ্চি খেয়েছি। তারপর পকেটে টাকা নেই বলে বিল দিতে পারিনি। তাই ম্যানেজার রাগে-খুবে আমারে দশতলার ছাদে নিয় গিয়ে পাছায় লাত্থি মেরে নিচে ফেলে দিছে।
মিথিলা আবার মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। আমি সেদিকে তাকাচ্ছি না। ফোন অফ করে দিচ্ছি। এখন তো আর কাচ্চি খাচ্ছি না। তাহলে এবার আমি কী করবো? বাপ্পা রাজের মতো বোতল হাতে নিয়ে গান গাইতে-গাইতে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াবো, নাকি কাচ্চির প্যাকট নিয়ে ঘুরে বেড়াবো?