এক্স রিভেঞ্জ

এক্স রিভেঞ্জ

কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতেই ওপাশের ছেলেটাকে দেখে থ মেরে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে রইলাম। ছেলে টা আমার ক্লাস নাইনের প্রাক্তণ প্রেমিক।বড় ছেলের জন্য নতুন টিউটর খুজছিলাম কয়েকদিন ধরেই।কিন্তু মনের মত কাউকেই পাচ্ছিলাম না।শেষমেশ আমার স্বামী ওর এক ভার্সিটি লিডার ফ্রেন্ডকে বলে একজন টিউটর ম্যানেজ করেছে।

ক্লাস এইট থেকে দেড় বছর তার সাথে আমার গভীর ভালবাসা ছিল। স্কুলের জানালা,দরজা, বেঞ্চ, ব্লাকবোর্ড, কাঁঠাল গাছ সব জায়গায় জোড়ায় জোড়ায় আমাদের নাম লিখা থাকতো।তারপর কেতকী নামের এক সুন্দরী এসে স্কুলে ভর্তি হতেই ও আমার ভালবাসা চান্দে তুলে দিয়ে কেতকীর সাথে “মারিয়ানা ট্রেঞ্চ” গভীরতার প্রেম শুরু করে দিলো।
সেই শোকে ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হয়েও এসএসসি তে ছয় সাব্জেক্টে ফেল করলাম। যদিও এই ফেইল করাতে আমার শোক পালনে সামান্য ব্যাঘাত ঘটেনি।প্রতিদিন ঘড়ি ধরে দুই ঘণ্টা কান্না করা,ভাতের পরিবর্তে রুটি দিয়ে দুই বেলা নিরামিষ খাওয়া আমার শোক পালনের প্রধান অংশ। কিন্তু না খেয়ে থাকাটা আমার দ্বারা অসম্ভব। আমার শোক পালনে বাবা বিরক্ত হয়ে আমাকে বিয়ে দিলেন। এখন আমার এক ছেলে, এক মেয়ে।

যেই ছেলে স্কুলে আমার খাতা দেখে পাশ করত,সে নাকি আমার ছেলে কে পড়াবে!  পড়াতে পারুক আর না পারুক,সুযোগ যখন পেয়েছি হাত ছাড়া করা চলে না। ভিতরে আসতে বলে ওকে কাঠের চেয়ারে বসতে দিয়ে নিজে সোফায় হেলান দিয়ে বসলাম। তারপর ভারী স্বরে জিজ্ঞেস করলাম.. আপনি টিউশনি কেন করবেন?

সুহাসিনী,তোমার কাছে আর কিছু লুকাবো না।ভার্সিটি তে যে মেয়েটার উত্তরপত্র দেখে চান্স পেয়েছিলাম ওর সাথেই আমার রিলেশন। সাংঘাতিক মেয়ে। ওর হাত খরচ আমাকেই দিতে হয়।টিউশনিটা আমার দরকার।প্রেমিকার এক লিডার বড় ভাই টিউশনিটা দিয়েছে। না করলে গুলি করে মেরেও ফেলতে পারে। ভদ্রতা রেখে কথা বলুন।আমি আপনার স্টুডেন্টের মা। আপনি করে সম্বোধন করুন। জ্বি আচ্ছা।

আর শুনুন, পড়ানোর সময় ফোনে কথা বলাটা আমার অপছন্দ। আমার ছেলের রেজাল্ট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। ওকে আপনি বুঝাতে পারলেই হবে। যতক্ষণ না বুঝবে,ততক্ষণ বুঝাবেন।আর ছেলে কে আমি চুক্তিতে পড়াই।পাশ করলে স্যালারী দেব,আর না পারলে উলটা শাস্তিস্বরুপ আমার কাজের বুয়া কেতকীর সাথে বিয়ে করতে হবে। না পারলে জানিয়ে দিন। এই কেতকী তার সেই প্রেমিকা।ওর জন্য পালিয়ে এসেছিল, কিন্তু প্রাক্তন আমার কেতকীকেও ছ্যাকা দিয়ে ভার্সিটিতে প্রেম শুরু করেছে। সে অতিরিক্ত কনফিডেন্স নিয়ে উত্তর দিলো,”না,না, পারবো। কোনো সমস্যা নেই।” মনে মনেই বললাম,”তুমি যে কি পারো তা স্কুলের মাঠের গরু গুলোও জানে।”

সেদিন আমার ছেলের পড়ার রুমের চেয়ার পালটে ফেললাম,এসির রিমোট সরিয়ে রাখলাম, বাসার ওয়াইফাই অফ করে দিলাম।আর ছেলের জন্য কিনলাম গরম নিরোধক স্পেশাল শার্ট। ছেলে কে শিখিয়ে দিলাম “শোন বাবা, তোর টিউটর স্যার যেটাই বুঝাক তুই বলবি স্যার কিচ্ছু বুঝিনি।এক পড়া জিজ্ঞেস করেই যাবি।পড়া পারলেও জানাবি না।”
ছেলে আমার পড়াশোনাতে তার মায়ের এত ছাড় দেখে তো মহা খুশি।

পরদিন থেকে প্রাক্তণ পড়াতে এলো। আধা ঘণ্টা পড়ানোর পর সে ঘেমে একাকার। ছেলে কে জিজ্ঞেস করলো” তোমাদের এসি চালাও না?” দরজার এপাশ থেকে আমিই উত্তর দিলাম, “এসি ঘরের লোকদের জন্য।এত এসি চালালে ইলেক্ট্রিক বিল কি আপনি দিবেন?” আর আর কোনো উত্তর দিলো না।  প্রতিদিন আমার বাধ্য ছেলে স্যারকে ঘাড় দুলিয়ে দুলিয়ে জিজ্ঞেস করে “স্যার,এটা পারিনা।ওটা পারিনা।স্যার এটা বুঝিনি।”

বুঝাতে বুঝাতে প্রাক্তণের গলা শুকিয়ে এলে তেলাপোকায় চাটা চায়ের পাতি দিয়ে এক্সকে চা করে খাওয়ায়।সেটাই ও কি সুন্দর তৃপ্তি করে খায়! আহ প্রাক্তণ আমার,কি সুন্দর করে চা খায়!দেখলেই ক্রাশ খেতে ইচ্ছে করে। একদিন ছেলে কে সে গরুর রচনা পড়তে দিলো।পাশে ছেলে কে ডেকে শিখিয়ে দিলাম “তোর স্যারকে প্র‍্যাক্টিক্যালি গরুর পা,চোখ, শিং এগুলো শিখাতে বলিস।”

সেদিন ছেলে আমার গরুর কয়টা পা আছে এটা শিখতে গিয়ে টিউটরকে উবু হয়ে চার হাত, পায়ে ভর করে হাটিয়েছে। যার সমস্ত প্ল্যানিং মাস্টার আমি। এক পর্যায়ে এক গামলা আমের খোসা আর ভাতের মাড় প্রাক্তণের সামনে ধরে ছেলে কে বললাম, “এই দেখ, গরু এভাবে একেক ঘাস চেখে বেড়ায়।” প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেলেও তখনো তাকে এক টাকাও বেতন দিইনি। তারপরের মাসেই ফ্যামিলি ট্যুরে দার্জিলিং ঘুরে এলাম। প্রাক্তণ আমার না পারছে টিউশনি করতে,না পারছে ছাড়তে।

একদিন ওর ভার্সিটির প্রেমিকা ওর ফোনে কল দিলো। আর আমিও সুযোগ বুঝে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দিয়ে শাসিয়ে বললাম,” “টিউশনির ফার্স্টেই কথা ছিল ফোনে কথা বলা যাবে না।” প্রাক্তণ আমার কাঁদো কাঁদো স্বরে জানালো ” আমি ওর সাথে কথা না বললে,আমার শরীরের এক টুকরো মাংসও আর আস্ত থাকবে না।” মিষ্টি কথায় আমি গলছি না।একবার গলে গিয়ে ছ্যাকা খেয়ে এখন আমি দুই বাচ্চার মা।এরপর গললে আট নাতীর দাদি!

পরদিন আমার মা ভক্ত গুণধর ছেলের এক্সামের রেজাল্ট দিলো।ছেলে মাশাআল্লাহ তিন সাব্জেক্টে ফেইল।এদিকে আমি প্রাক্তণকে কল দিয়েই যাচ্ছি, কিন্তু সে কল রিসিভ করে না। প্রায় সাতাশবার কল দেওয়ার পর ও রিসিভ করে বলল,” সুহাসিনী,আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ছাড়ো। কাল কল কেটে দেওয়ায় আমার প্রেমিকা গুন্ডা দিয়ে পিটিয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে। আমার গার্লফ্রেন্ড,ভার্সিটি, টিউশনি,স্যালারী কিচ্ছু লাগবে না।গ্রামে ফিরে কামলা খেটে খাব।”

আমি কটকটির স্টাইলে হাসি দিয়ে উত্তর দিলাম, ” কামলা তো খাটবিই।কিন্তু ছেলে আমার তিন সাব্জেক্টে ফেইল করেছে।কেতকীকে বিয়ে তো করে নিয়ে যা।” কই রে কেতকী! তাড়াতাড়ি মাথায় একটু শ্যাম্পু করে সরিষার তেল গুলো ধুয়ে আয়।আজ তোর বিয়ে।

 

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত