ত্যাগ

ত্যাগ

আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে গুলো যেভাবে স্বপ্ন দেখি আসলে তেমন করে বাস্তবে চলতে পারি না। কারন আমাদের চেয়ে আমাদের স্বপ্নগুলো বড় হয়। হুম অন্যদের কাছে আমাদের স্বপ্ন গুলো কিছুই না। একটা উদাহরণ দেয়, আমরা যে টাকা আয় করি মাস শেষ হওয়ার আগে চিন্তা করি সেই টাকা দিয়ে গার্লফ্রেন্ডকে গিপ্ট করবো কিংবা কোথাও ঘুরতে যাবো অথবা শফিং করবো আরো অনেক কিছু চিন্তা করি। আচ্ছা আসলে কি আমরা মধ্যবিত্তরা টাকা পাওয়ার আগে যেসব কিছু চিন্তা করি ভেবে রাখি সেইভাবে কি আমরা টাকা টা খরচ করতে পারি? না। আসলে আমরা সেইভাবে খরচ করতে পারি না।

টাকা টা যখন হাতে আসে তখন মার ওষুধ ভাই বোনের স্কুলের বেতন মাসিক বাজার কারেন্ট বিল গ্যাস বিল পানির বিল এসব মেনেজ করতে করতে পকেট খালি। কখন যে টাকা টা শেষ হয়ে যায় আমরা বুঝতেই পারিনা। এসব করার পর রাতের অন্ধকারে যখন নিজেকে হারিয়ে ফেলি তখন মনে পড়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলোর কথা। তখন একটা অনেক বড় শ্বাস ত্যাগ করে নিজেকে সান্তনা দেয়। এই মাসে করিনি তো কি হয়েছে আগামী মাসের বেতনটা দিয়ে সবার আগে নিজের কাজটা করে নিব তারপর বাকিটা। এইভাবে হাজারো স্বপ্ন ইচ্ছে গুলো ত্যাগ করেই যায়। আমরা শুধু আমাদের বেতনটা ত্যাগ করিনা মাঝে মাঝে আমাদের সব চাইতে প্রিয় জিনিষটাও ত্যাগ করি। যে কাজটা সবাই পারেনা। কাজটা কেবল আমরা মধ্যবিত্তরা পারি।

“বাবা বিয়ে ঠিক করেছে। সামনের মাসে আমার বিয়ে। “ও তাহলে তো ভালো করে ফেলো। “আমি ফাইজলামি করছি না ফারাবি। “আমিও ফাইজলামি করছি না অধরা। তোমার বাবা তো তোমার খারাপ চাইবেন না। তিনি যা করবেন তোমার ভালোর জন্য করবেন। “কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা। চল আমরা বিয়ে করে ফেলি। “দেখ অধরা আমি জানি তুমি কি চাইছ কিন্তু আমার পহ্মে এটা সমব্ভ না। আমি এখন তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার পরিবার। আর আমি এখন তোমাকে বিয়ে করে কোথায় রাখবো কি খাওয়াবো? দেখ আমাকে বিয়ে করে তুমি কিছু পাবেনা। তুমি বরং আন্কেল যেখানে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে সেখানে বিয়েটা করে ফেল।

“আমি তোমাকে ছাড়া তাকতে পারবো না। সব কিছু ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসবো শুধু তুমি একবার বলো।
“আমি জানি তুমি চলে আসবা কিন্তু আমি তো আমার চোখে দেখতে পারবোনা তোমার কষ্ট । অধরা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি চায় তুমি ভালো থেকো হ্যাপি থাকো। অধরা ভালোবেসেছি এর মানে এই না যে তোমাকে পেতে হবে। ত্যাগী হচ্ছে প্রকৃত ভালোবাসা। দেখ যে বাবা মা আমাদের ছোট থেকে বড় করেছে কত কষ্টসহ করেছে নিজে না খেয়ে আমাদের খেয়েছে নিজে ভালো টা না পড়ে আমাদের ভালো টা পড়িয়েছেন আজ আমরা যদি স্বার্থপরের মত তাদের এসব কিছু ভুলে আমরা বিয়ে করি কাজটা কি ভালো হবে? তাদের কষ্ট দিয়ে কখনো আমরা সুখি হতে পারবো না।

তার চেয়ে বরণ তোমার বাবা যেখানে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে সেখানে বিয়েটা করে ফেল। সারাজীবন তো তারাই আমাদের জন্য সেক্রিফাইস করেছে আজ না হয় আমরা তাদের জন্য করলাম। “আমি যদি বিয়েটা করি তুমি ভালো তাকবে? “যদি সত্যি বলি আমার কষ্ট হবে অনেক কষ্ট হবে কিন্তু ভালো তাকবো এইটা ভেবে আমার বাবা মা ভালো আছে তুমি ভালো আছো এটা ভেবে আমি ভালো তাকবো। “হুম। “অধরা আমি জানি আমি যেটা করছি এটা অন্যায় করছি। তোমার সাথে অন্যায় করছি। আমাকে হ্মমা করে দিও পারলে। আমার যেতে হবে মালিক আসার সময় হয়ে গেছে তাকে আনতে যেতে হবে।

“আর একটু তাকবা প্লীজ তোমাকে দেখবো আর একটু। কারন জানিনা কখন আমাদের দেখা হয়। হয়তো এটা আমাদের শেষ দেখাও হতে পারে। অধরার এমন কথা শুনে কাজের কথা ভুলে গেলাম। কেমন মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার চোখ দেখে আর সাহস হয়নি বসা থেকে উঠতে। বসে রইলাম তার সামনে। অধরা তার চল চল করা চোখগুলো নিয়ে এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মোবাইলের বাইব্রেটে পকেট থেকে মোবাইলটা বাহির করে দেখলাম মালিক কল দিছে “ঐ কয় তুই? “এই তো স্যার আসতাছি স্যার। “আসতাছি মানে? কয় তুই? আমি আসার সময় হয়ছে এটা দেখস নায়? তা দেখবি কেমনে সময় তো দেখবি শুধু টাকা নেওয়ার সময়। কাজের কোনো ঠিক তাকে না কিন্তু টাকার সময় সব কিছু বরাবর দিতে হবে টাকা কি একটা কম নিস?

“সরি স্যার আর এমন হবে না আমি চলে আসছি আর একটু। লাইন কেটে যখন অধরা থেকে বিদায় নিবো তখন দেখলাম অধরা কান্না করছে। “বকা দিছে তাই না? “আরে না বকা দিবে কেন জানতে চাইলো কোথাই কতহ্মন লাগবে যেতে এটা জানতে চায়ছে। “হুম। জানেন ঐদিন অধরার চোখ দেখে আমি বুঝতে পেড়েছিলাম আমার মিথ্যা বলাটা সে বুঝতে পেড়েছিল। সে শুধু হুম বলেছিল কারন আমি যেন আর মিথ্যা কথা না বলি সে খুব ভালো করে জানে আমি মিথ্যাটাও ভালো করে বলতে পারিনা তাই আমার সময় নষ্ট না হওয়ার জন্য সে হুম টা বলেছিল।  এভাবে আমার মত যারা মধ্যবিত্ত পরিবারে তাকে তাদের শুধু ত্যাগ করতে হয়। তার সব চাইতে প্রিয় জিনিষ টাও ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু আমার কাছে আমার প্রিয় জিনিষ টা ত্যাগ করতে হয়নি। “এই কয় তুমি?

“এইতো আছি বারান্দাতে। শুনলেন তো? হ্যা এটা আর কেউ না অধরাই আমার সব চাইতে প্রিয় জিনিষ যাকে আমি হারাতে গিয়েও হারালাম না। অধরার জন্য আমরা এইভাবে আছি। আসলে সেদিন অধরা আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার বাবার সাথে আমার ব্যাপারটা বলে। প্রথমে রাজি হয়নি। যে কোনো বাবাই চায় না একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে কারন যেখানে তাকে তাকার ভয় খাওয়ার ভয় এমন পরিবারে বিয়ে দিতে তো কোনো বাবাই চাইবে সব বাবাই চাইবে তার মেয়ে ভালো কোনো পরিবারে বিয়ে দিতে নামীদামী পরিবারে বিয়ে দিতে কেবল তার মেয়ের সুখের জন্য। অধরার বাবাও তাই চেয়েছেন আমার সাথে বিয়ে না দিয়ে ভালো কোনো পরিবারে তার বিয়ে দিতে কিন্তু তার রাগের কারনে আমাদের রিলেশনশিপ টা তিনি মেনে নিলেন। আসলে আল্লাহ চাইলে কি না করতে পারেন। আসলে মন থেকে যদি আমরা আল্লাহ এর কাছে কিছু চাই তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ সেটা আমাদের কে দিবেন। হয়তো একটু সময় দরকার হয়। আজ আমরা ভালো আছি। অনেক ভালো আছি।

“ঐ তুমি কার সাথে একা একা কথা বলছো?
“কয় না তো?
“মাত্রই তো বললা।
“কয় না।
“তুমি আবার মিথ্যা বলছ?
“ঐ যে দেখছো যারা এই গল্পটা পড়ছে তাদের সাথে কথা বলছি।
“কি বললা?

“এই যে একটা পাগলির পাগলামির কথা বললাম।
“ঐ পাগলিটা কে?
“কেউ না।
“আবার???
“আরে তুমি এত রাগ করছো কেন। তুমি ছাড়া পাগলিটা আর কে হতে পারে।
“তোমারি পাগলি।

আসলে ভালো তাকার জন্য টাকা পয়সা ধন সম্পদ অনেক কিছুর দরকার হয় না। ভালো তাকার জন্য প্রিয় মানুষটার হাত দুটো আর সব সময় পাশে তাকলে একজনে প্রতি আন্ডারস্ট্যান্ডিং টা ঠিক তাকল হয় আর কিছুর দরকার হয় নয়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত