আজকে একটা মিটিং ছিল আমার। মিটিং চলাকালীন সময়ে বুঝতে পারলাম,আমার ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে। পকেট থেকে বের করে দেখলাম আমার গ্রামের এক বন্ধুর এসএমএস ,’ সাদিয়া ও অয়ন (কল্পিত নাম) দুজন পালিয়ে গেছেরে আজ’। সিউর হওয়ার জন্য আমার বন্ধুটিকে ফোন দিলাম, সে জানালো, হ্যা তারা দুজনেই পালিয়েছে এবং মেয়ের বয়স কম হওয়ায় সে ইউপি পরিষদ থেকে টাকা দিয়ে জন্ম নিবন্ধন কার্ডে বয়স বাড়ায়ে নিয়ে গেছে। আমি তখন মাথায় হাত দিলাম।
এত্ত ছোট্ট বাচ্চা কিভাবে প্রেমের কারনে পালিয়ে যেতে পারে। অয়ন ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বসত।অন্য দিকে সাদিয়া ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ে। অনেক আগে আমি শুনছিলাম, তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, বাট এখন নেই। কিন্তু আমার সমস্ত ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে আজ তারা পালিয়েছে। পালানোর কারন হিসেবে যা জানতে পারলাম, মেয়েটির বাসায় নাকি একদিনে দুইটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল। ছেলেটি ভাবলো হয়তো মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তাকে সে পাবেনা। তাই তারা পালিয়েছে।
সন্ধ্যায় মায়ের সাথে কথা হল ফোনে। সবকিছু শেষে মা বললো, শুনেছিস কিছু? আমি বললাম, হুম, শুনলাম। তারপর মা বললো, বাবা তুই ওরকম করিস না। কাউকে পছন্দ করলে বলিস, আমরা তোর বিয়ে দিব। আমি বললাম, মা এসব কিছুই হবেনা, চিন্তা কইরো না তো। তারপর সালাম দিয়ে ফোনটা রাখলাম। আমি তখন থেকে ভাবতেছি, একটা অজ পাড়াগায়ের ছেলে মেয়েদের যদি এই অবস্থা হয় তবে শহরের ছেলে মেয়েদের কি অবস্থা হবে তা কল্পনা করতে পারছিনা। আমরা যে বয়সটাতে হাড়ি-পাতিল দিয়ে বর-বউ খেলতাম, আজকালকের ছেলেমেয়েরা সে সময়ে সত্যিকারের বর বউ খেলে। যে সময়টাতে আমরা হাতে নাটাই রেখে প্রকৃতির আকাশে ঘুড়ি উড়াতাম, সে সময়ে এরা কারো মনের আকাশে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত।
আজকালকার ছেলে মেয়েগুলো হয়ত জানেই না যে দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বউ-ছি, কুতকুত নামে কোন খেলা রয়েছে। এগুলো বর্তমানে গ্রামে কিছুটা খুজে পেলেও ,শহরে এদের অস্তিত্ব নেই। এইচএসসি পরীক্ষার আগে আগে আমার হাতে একটা নকিয়া ফোন আসছিল, কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েদের হাতে স্মার্ট ফোন ক্লাস সিক্স সেভেনে চলে আসে। আমাকে সেদিন একটা মেয়ে রিকুয়েস্ট দিয়েছে। আমি তাকে ইনবক্স করলাম, “আপনার পরিচয়টা কি জানতে পারি? ” সে বললো আমার টাইমলাইনে যা আছে আমি তাই। তারপর দেখলাম, সে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাকে আস্ক করলাম, আপনি এত আর্লি ফেবু চালানো শুরু করেছেন কেন ? সে বললো, আমার বাবা খুলে দিয়েছে, ক্লাস সেভেনে। আমি তো পুরাই টাস্কি খাইলাম। হায়রে অভিভাবক! পরে আর তাকে গ্রহণ করিনি আমার লিস্টে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মাথায় খালি সম্পর্কের চিন্তাভাবনা কাজ করে কেন? আসলে আমরা এখন এমন এক যুগে বসবাস করছি যে,কারো বিএফ -জিএফ না থাকলে তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টিটকারি শুনতে হয়। আমাদের চারপাশে যখন বন্ধুরা তাদের জিএফের সাথে কথা বলে তখন যারা সিঙ্গেল রয়েছে তাদেরও প্রেম করার ইচ্ছে জাগে। প্রেম না করলে হয়ত বন্ধুরা মজা করে হিজড়া বলে ডাকে আজকাল ফেবুতে প্রেমের গল্প ছাড়া কিছুই দেখিনা আমি।এইসব লুলামি গল্প পড়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মনে করে, জীবনে একটা প্রেম করা দরকার। আর একটা বিষয়, আমাদের অধিকাংশ নাটকই প্রেমের গল্প নিয়ে তৈরী।
এসব নাটক পাবলিক দেখে আর প্রেমের দিকে মোটিভেট হয়ে যায়। আর ফেসবুকের কল্যানে তো প্রেমের সম্পর্ক অহরহ তৈরী হয়। ব্রেক আপ হয়, অনেকে প্রতারণার স্বীকার হয়। কেউবা হয় ব্লাকমেইলের স্বীকার।প্রতারিত হয়ে আমরা বলি, সব মেয়েরাই খারাপ, সব ছেলেরাই খারাপ। কাউকে আর আমরা তখন বিলিভ করতে পারিনা। কিন্তু আসলে কি সবাই খারাপ? একদম না, এখনো অনেক ভাল ছেলে মেয়ে আছে, যারা অপরকে ব্লাকমেইল করার সুযোগ থাকা সত্বেও তাকে ব্লাকমেইল করেনা। কারো সাথে প্রতারণা করেনা। তবে হ্যা, এরকম ছেলে মেয়েরা, আবার প্রতারিত হয় বেশি। তাই বলছি এসব প্রেমে যাওয়ার কি দরকার, যাকে আপনার পছন্দ তাকে পছন্দ করেই রাখেন। বিয়ের সময় না হয় তার বাসায় প্রস্তাব দিয়েন।
অভিভাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ, অল্প বয়সে ছেলে মেয়েদের হাতে ফোন তুলে দিয়েন না। অথবা তুলে দিলেও তারা কি করে না করে তার খোজ রাখিয়েন। তা না হলে এরকমভাবে, অকালে পালিয়ে যাবে আপনার মেয়ে বা ছেলেটি। তখন সমাজের মানুষ আপনার দিকে খারাপ চোখে তাকাবে। অবশ্য যদি আপনার মান সম্মান বলতে কিছু না থাকে তবে সেটা আলাদা ব্যাপার। এরকমভাবে অবৈধ সম্পর্কগুলো চলতে থাকলে হয়ত আগামী ৪/৫ যুগ পর এ দেশে প্রকাশ্যে লিভ টুগেদারের প্রথা চালু হবে। আল্লাহ যেন এসব কিছু না দেখায়।