ভালবাসার রকমভেদ

ভালবাসার রকমভেদ

ছেড়ে দিলাম শখের লিখালিখি, তোমার ওই হাসি মুখেআমার ভালো থাকা দেখি। স্ট্যাটাস টা দিয়ে চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে কানিজ ফোন দিল সিয়াম কে-

কানিজঃ আর গল্প লিখব না

সিয়ামঃ এইটা তো ভালো খবর, এখন থেকে তোমার সব সময় শুধু আমার জন্য?

কানিজঃহুম

সিয়ামঃ এখন যখন তখন আমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করতে পারবা?

কানিজঃহুম

সিয়ামঃকল দিলেও বলবা না গল্প লিখা নিয়ে ব্যস্ত?

কানিজঃনা

সিয়ামঃআহা! কি ভালো লাগে

কানিজঃহুম

সিয়ামঃআচ্ছা রাখি পাব্জি খেলবো।

কানিজ কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দেই সিয়াম। কানিজ ভেবে পাই না মানুষ এত অদ্ভুত হয় কি করে, যে ছেলে এক সময় আমার লিখা গল্প পড়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকতো সেই ছেলে এখন তার প্রেম করার অসুবিধা হয় বলে আমার গল্প লিখা বন্ধ করে দিল।

আগের কথা গুলা মনে করতে করতে কানিজ কখন ঘুমিয়ে গেছে তা তার মনে নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে অনলাইন যেতেই ম্যাসেজ আর নোটিফিকেশন এর অত্যাচারে ফোন হ্যাং হবার উপক্রম কিন্তু সব সেই এক কথা “কি হয়ছে” “কি সমস্যা” “আপনার গল্প ছাড়া ফেসবুক ভাবা যায় না” ইত্যাদি ইত্যাদি। একটাও রিপ্লে করে না কানিজ তবে একটা ম্যাসেজে চোখ আটকে যায়  “কি গো গিন্নি! কর্তা বুঝি প্রচুর রাগি? দেয় না করতে লিখালিখি? ম্যাসেজ টা দেখে কানিজ একটু ভাবে তার পরে রিপ্লে করে- ” কর্তা! সে আবার কি? ছেড়েছি লিখালিখি আপন ভুলেতে, অন্যর দোষ দিবো কেমন তে?” অনলাইন থেকে বের হয়ে সিয়াম কে কল দিল-

সিয়ামঃ(ঘুম চোখে) হুম বলো বেবি

কানিজঃ এখনো ঘুমাও

সিয়ামঃ হুম

কানিজঃআচ্ছা ঘুমাও

কেন জানি না সিয়াম কে আর ভাল্লাগেনা কালকে থেকে। সারাদিন সিয়ামের সাথে আর কথা হয় নি, রাতে সিয়াম কল দিলেও কানিজ খুব একটা কথা বলে নি, ৪ দিন হলো কানিজ অনলাইন যায় না, ফেসবুকে যেয়েই কি হবে যদি গল্প লিখতে না পারে,তার পরেও ডাটা অন করলো। না আজকে আর আগের মতো ম্যাসেজ নোটিফিকেশন নেই তবে কেও একজন প্রচুর ম্যাসেজ দিছে। চেক করে দেখলো “পরশ আহমেদ ” আইডি থেকে ৯৯+ ম্যাসেজ।  যার সারমর্ম  “যে কর্তা লিখালিখা করতে দেয় না তার সাথে থাকার মানে কি? আগে নিজের স্বাধীনতা “। পরশ তখন অফলাইন থাকাই কানিজ আর রিপ্লে দেয় না।  তবে পরশ এর কথায় কেমন একটা শক্তি খুজে পাই কানিজ, সে আবার সিয়াম কে কল দেয়-

সিয়ামঃ হ্যাঁ বলো

কানিজঃবিকালে দেখা করতে পারবা?

সিয়ামঃ বিরিয়ানি আনবা?

কানিজঃ আজকে নিয়ে ৭৬১ বার দেখা হবে কখনো বিরিয়ানি ছাড়া এসেছি?

সিয়ামঃ না,ওকে ৫ টাই ক্যাম্পাসের ডানের পুকুরপাড় এর ওইখানে

কানিজঃ ওকে

ফোন রেখে কানিজ একটু ঘুমিয়ে নিলো। অন্যদিন হলে বিরিয়ানি রান্না করতে করতে নিজের সাজার সময় পাওয়া যায় না, ৩ টার দিকে উঠে ভাত খেয়ে বাসন্তী রঙ এর শাড়ি পরে মনের মতো করে সেজে নিলো, কানিজ সাজগোজ করতে করতে ৫ টা ১০ বেজে গেলো, যাক তা কি? ঠিক ৫ টা ৪২ মিনিটে কানিজ পুকুরপাড় গেলো।

সিয়ামঃএত দেরি আর হাত খালি কেন বিরিয়ানি কয়?

কানিজঃ আগে বলো কেমন লাগছে আমাকে?

সিয়ামঃ যে হারে আটা সুজি দিছো এই দিনের বেলা কেও ভুত ভাবলেও ভুল হবে না,এইবার বিরিয়ানি দেও।

কানিজঃ তোর সাথে আমার ব্রেকাপ আর আমি তোরে অভিশাপ দিলাম আমার পরে তোর যত গুলা gf হবে আর তোর হবু বউ একটা ও বিরিয়ানি রান্না করতে পারবে না।

সিয়ামঃ এএএএ

কানিজঃ থাক তুই তোর পাব্জি নিয়ে আমি আমার গল্প লিখা নিয়েই বেশ ভালো আছি। ৭ মাস পরে, এখন কানিজ আবার আগের মতো রোজ গল্প লিখে আর পরশের সাথেও নিয়ম করে কথা হয় তবে ভালবাসি কথা টা বলা হয় নি আর বলা হবেও না, ভালবাসি কথা টা বললেই মনে হয় সব শেষ হয়ে যায় অথচ কবি বলেছিল “ভালবাসি কথা দিয়ে নতুন পথ শুরু হয়”। সেদিন রাতেও পরশ আর কানিজ ফোনে কথা বলছিল। কথা বলতে বলতে হঠাৎ কল কেটে গেলো তার পর থেকে ফোন বন্ধ পরশ ভেবে পায় না লেখিকা গায়েব হয়ে গেলো কি করে। ১ দিন ২ দিন করে ৯ দিন হয়ে গেলো লেখিকার খবর নেই। পরশ চাইলেও কানিজ এর বাড়ি যেতে পারে না কারন কানিজ থাকে সেই বরিশাল আর পরশ থাকে রংঢং এর শহর ঢাকা তে।  পরশ একবার চিন্তা করলো বরিশাল যাবে আবার ভাবে না আমার বাবা মা লাশ টাও পাবে না। এমন সব আজগুবি ভাবনা নিয়ে কেটে গেলো ১৫ দিন। ১৫ দিন পরে, কানিজ এর নাম্বার থেকে কল আসলো

পরশঃ গিন্নি কোথায় ছিলেন আপনি এত দিন? জানেন আমি আমার এই কানিজ গিন্নি টারে কত মিস করছি?

ওপর দিক থেকেঃ আমি কানিজ এর বাবা,কানিজ এখম ঢাকা বারডেম এ আছে চাইলে দেখা করে যেতে পারো।

পরশঃজি আচ্ছা

পরশ এর কলিজা টা কেমন ছ্যাঁত করে উঠে কিন্তু তারপরেও একা যাওয়ার সাহস হয় না। সাতপাঁচ না ভেবে মা বাবা কে সব বলে দেয়, তার পরে বাবা মা কে নিয়ে যায় কানিজের সাথে দেখা করতে। বারডেম গিয়ে কানিজের পরিবার এর সাথে দেখা করে জানতে পারে “সেদিন রাতে বেলকুনি থেকে পরে যেয়ে এই অবস্থা, বরিশালে উন্নতির ধীরগতি দেখে এখানে নিয়ে আসে,এখানে এসে একটু সুস্থ হয়ে পরশের কথা বলে, বলে যে তার এক বন্ধু ঢাকা তে থাকে যাবার আগে এক বার দেখা করে যাবে” পরশ আর কথা না বাড়িয়ে কানিজের রুমে চলে যায়, কানিজের হাত পা মাথা ব্যান্ডেজ করা। ঠিক কতক্ষণ ২ জন নিরব ছিল তা হিসাব করা হয় নি, নিরবতা ভেঙে-

পরশঃ গিন্নি তোমায় অনেক ভালবাসি। কানিজঃ ভাগ্যিস বলেছিলে না হয় আমার জানায় হতো না।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত