তোর ঠোঁট সবসময় শুকনো থাকে ক্যান?
-মানে, কি বলতে চাস তুই?(ভ্রু-কুঁচকে)
–আরে রাগ করিস ক্যান?
-না তুই কি বললি, আবার বল।
–না মানে তোর ঠোঁট সবমসময় শুকনো থাকে তাই বললাম। লিপস্টিক ছাড়া আরকি।
-তুই কি অন্যকিছু মিন করেছিস?
–আরে নাহ গাধী, আমি এমনি বললাম।
-এই দুই ঘণ্টা যাবত বসিয়ে রেখেছিস কি এই কথা বলার জন্য?
–তুই এত্ত বেরসিক কেনরে?
-আমি এইরকমি বুজলা চান্দু, না বুজলে চল ফুট।
–আচ্ছা তোর কখনও শীতের সকালে লালপাড়ের সাদা শাড়ি পরে হাঁটতে ইচ্ছে হয়না? ঠোটে থাকবেহালকা গোলাপি লিপস্টিক, হাত ভরতি থাকবে কাঁচেরচুড়ি, খোপায় থাকবে বেলি ফুল, কানের দুলটা নাহয়আমিই পরিয়ে দিলাম।
-হইছে তোর কথা বলা, আমি চললাম।
–সত্যিই চলে যাবি?
-না কুতকুত খেলবো।
–রাগিস কেনরে?
-তোর মত পাগলের কথা শুনে কি আমিহাসবোরে?
–আচ্ছা যা, তোকে মনে হয় ডিস্টার্ব করলাম।
-সত্যিই যাব?
-হুমম যা, আর আসিস না।
-ওলে আমাল গুলুগুলু লে, রাগ করেনা বাবু।
–যেতে বলছি যা, বেশি বকবক করবিনা।
-একশবার করবো, তোর কি?
-কিরে কি হলো?
-আচ্ছা বাবা সরি, এইযে তোর পাশে বসলাম বল কি বলবি।
–মুড নেই বলারর।
-এহহহ আইছেরে মুডওয়ালা। তুই বল..?
–কি বলব?
-যে জন্য ডেকেছিস?
–আজনা কাল?
-তুই একমাস ধরে এই একটা কথাই বলছিস, আজনা কাল।আজকে বল নইলে…..
–তোর জন্য একটা জিনিস নিয়ে এসেছি, নিবি?
-দেখি কি আনছস?
–আগে প্রমিস কর রাগ করবিনা?
-আচ্ছা প্রমিস, এখন দে।
তারপর আমি আমার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট নীলের হাতে দিলাম। মেয়েটা অনেকটাই চমকে গিয়েছে। হা করে তাকিয়ে আছে। চেহারায় রাগি ভাব…বলল….
-এটা কার জন্যরে, তোর বউয়ের বুঝি?
–না তোর জন্য।
-হা হা হা আমার জন্য, কেনো?
–তুই নে, আমি দিলাম ব্যাস?
-আমি তোর কে শুনি।
-কেউ না।
-আচ্ছা…. (একটু মন খারাপ)
–পছন্দ হয়েছে শাড়ীটা।
-নাহহ…..(মুখ ঘুড়িয়ে)
–না হলেও কিচ্ছু করার নাই, কালকে এটা পরে আসবি।
-আচ্ছা আর কিছু দিবি?
–এই ব্যাগে একটা বেলি ফুলের মালা, আরেকটা গোলাপি লিপস্টিক আছে। (ব্যাগ দিয়ে)
-গোলাপি লিপস্টিক কেনো, লাল লিপস্টিক আনতি।
–তুই লাল লিপস্টিক পরলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবনা।
-মানে?
–কিছুনা।
কিছুক্ষণ নীরবতা। কারো মুখে কোন কথা নেই। নীলা আস্তে করে উঠে চলে যাওয়া শুরু করলো। রাগ করেছে হয়তো অনেক। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। নীলকে আরেকটাবার দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি জানি কাল ও আসবে না সকাল সকাল ফোনের রিংটোনেরর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো । নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে ঘুম জরানো কণ্ঠে বলল….
–কে বলছেন?
-হারামি আমি।
–ওহ নীল তুই, এত্ত সকালে কেনো ফোন করছিস?
-তুই কি এখনও ঘুমাচ্ছিস?
–উমমমমম…..
-কালকে কি বললি মনে আছে?
–কি বললাম।
-আচ্ছা তুই ঘুমা আমি চললাম।
এক লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলামম। উফফফ সিট। তাড়াতাড়ি কোনরকম ফ্রেস হয়ে জামাকাপড় পাল্টিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম ধানমন্ডি লেকের পারে। নীল মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে নীল শাড়ী, খোপায় বেলি ফুল, হাত ভর্তি নীল রং-এর কাচের চুড়ি। তাহলে ঠোঁটেও কি হালকা গোলাপি লিপস্টিক আছে? কেন জানি বুকটা ধুক করে উঠলো। ডাক দিতে অসস্থি হচ্ছে। এমনটা আগে কখনও হয়নি। মাথা চুলকাচ্ছি, কি বলব বুঝতে পারছিনা। মেয়েটা বোধ হয় খুব রেগে আছে। তবুও আস্তে করে পিছন থেকে ডাক দিলাম…..
-নীল?
-হুমমমম। (আগের মতই)
-সরি।
-হুমমমম।
-আসলে হয়েছে কি, মানে আমারনা খেয়াল ছিলোনা। হঠাৎ নীল ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল….
–তুই যে লেট বাবু সেটা আমি জানি ।
-তোর রাগ হচ্ছেনা?
–অনেক বেশি.. কিন্তু এখন হাসি পাচ্ছে ভীষণ।
-কেনো?
–কারণ তোর পায়ে দুইরকমের স্যান্ডেল।
পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই দুই পায়ে দুই রকমের স্যান্ডেল। ইসসসস! আমারর এমন অবস্থা দেখে নীলের হাসিরর পরিমান আরো বৃদ্ধি পেলো। একটু লজ্জা পেলামও বটে। নীল বলল….
–হইছে হইছে আর লজ্জা পেতে হবেনা ।
-চল।
–কোথায়।
-হাঁটবো।
-হাঁটতে ইচ্ছে করছেনা।
-তাহলে আসলি কেনো।
–মন চায় এসেছি।
-তাই?
–হুম, আমার কানের দুল কই?
-উফফফ।
–তুই যে বুদ্ধু সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। তারপর নীল দুইটা কানের দুল দিয়ে বলল….
-দে পরিয়ে দে?
–আ আ আমি?
-কেনো কালকেই না বললি তুই পরিয়ে দিবি।
–না মানে?
–দে বলছি। আমি মন্ত্র মুগ্ধেরর মত নীলের দিকে তাকিয়ে আছি। কানের দুল পরিয়ে দেওয়া শেষ হলে নীল মাথা নিচু করে ফেলল। বললাম….
–চল হাঁটি।
-তোর স্যান্ডেল ফেলে দে।
–কেনো?
-বিশ্রী লাগছে।
–আচ্ছা দিলাম।
-আমার স্যান্ডেল হাতে নে।
–আমি? পারবনা। যা…
-আমি গেলাম তাইলে।
–আচ্ছা নিচ্ছি দে।
আমি আর নীল পাশাপাশি হাটছি। কারো মুখে কোন কথা নেই। আমি কিছু একটা বলতে চাচ্ছি। কিন্তু নার্ভাস লাগছে অনেক আজ কেন জানি না ।
–নীল আজকে তোকে সুন্দর লাগছে।
-শুধু সুন্দর? (আমার দিকে তাকিয়ে)
–নীল পরীর মতো।
-(মাথা নিচু করে ফেল্লাম)
–একটা কথা বলব?
-হুম।
–রাগ করবিনা?
-নাহ বল?
তাকাতেও পারছি না ওর দিকে আর মাটিতে চোখ আটকে আছে নীল আমার হাত শক্ত করে ধরলো। বলল…”থাক লাগবেনা বলা, আমি জানি। বলেই হেসে দিলো। তাকিয়ে আছি, অনন্তকাল তাকিয়ে থাকতে পারবো এই হাসিতে..