বেকার ছেলের ভালোবাসা

বেকার ছেলের ভালোবাসা

শ্রাবণী গিফটের বক্সটা খুলে দেখলো তারপর মুখে একটা অস্পষ্ট হাসি হেসে বললো,

– পিয়াস একটা কথা বললে কিছু মনে করবে না তো?  আমি একমনে অপলক দৃষ্টিতে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বললাম,

— তুমি আমাকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিলেও আমি কিছু মনে করবো না।  শ্রাবণী মাথাটা নিচু করে হাতের তালু চুলকাতে চুলকাতে বললো,

– আসলে তুমি আমাকে যে গিফট গুলো দাও সে গুলো কেমন যেনো পুরোনো পুরোনো। লোশন ফেসওয়াশ শ্যাম্পু বডি স্প্রে যে গুলোই দাও সব গুলোতে অর্ধেক অর্ধেক থাকে।  আমি শ্রাবণীর কথা শুনে ওর হাতটা ধরে বললাম,

— তুমি আমি সারাজীবন একসাথে থাকার শপথ নিয়েছি। আমি চাই তুমি সবসময় আমার স্পর্শ অনুভব করো। তাই তোমার জন্য শ্যাম্পু লোশন ফেসওয়াশ যায় কিনি না কেন আগে আমি অর্ধেক ব্যবহার করি তারপর তোমায় দেই। এমনি কি আমাদের বিয়ের পরও আমরা এককাপে দুজনে চা খাবো।অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগি করে। যেন দুজনে দুজনের ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করি। আমার কথা শুনে অশ্রুসিক্ত নয়নে শ্রাবণী আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,

– পিয়াস, তুমি আমায় এত ভালোবাসো বাসায় ঢুকে দেখি ছোট বোনের মাথা গরম। আমি মাকে বললাম,
— মা, জান্নাত এইভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছে কেন?  মা বললো,
-কয়েকদিন আগে তোর বোন নতুন শ্যাম্পুর বোতল আর ফেসওয়াশটা এনেছিলো। এখন সেটা খুঁজে পাচ্ছে না। বারবার ওর জিনিস যে কে চুরি করে নিয়ে যায় আল্লাহ জানে। আমি জান্নাতের পাশে চুপ করে বসলাম। তারপর চিন্তিত মুখে জান্নাতকে বললাম,

~একটা জিনিস খেয়াল করেছিস আমাদের বাসার কাছের মেয়ে শিউলি কেমন দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে আর ওর চুলগুলোও দিন দিন লম্বা হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আজকাল ওর শরীর থেকে বডি স্প্রের ঘ্রাণ বের হয়। জান্নাত কিছু সময় চিন্তা করে বললো,

~ একদম ঠিক বলেছিস ভাইয়া। তোর মাথায় যে এত বুদ্ধি আগে জানতাম না। শিউলিকে আমার বোন বললো কাল থেকে যেনো আর কাজে না আসে। শিউলে কারণ জানতে চাইলে আমার বোন কোন উত্তর দেয় নি। শিউলি যখন চলে যাচ্ছিলো তখন আমি ওর হাতে ৫০০টাকার একটা নোট দিয়ে বললাম,

— বোন রে বেকার ছেলেদের প্রেম করা কত যে জ্বালা সেটা তুই বুঝবি না।
শিউলি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আর আমি মনে মনে বললাম, এই যাত্রায় শিউলের জন্য বেচে গেলাম সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দেখি মা আর জান্নাত কান্না করছে৷ আমি মাকে গিয়ে বললাম,

— কি হয়েছে মা, এইভাবে কান্না করছো কেন? মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

~ আরে আমার গলার চেইনটা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার শ্বাশুড়ি আমার বিয়ের সময় এটা দিয়েছিলো। উনাকে দিয়েছিলো উনার শ্বাশুড়ি। আমি ভেবেছিলাম এটা তোর বউকে দিবো কিন্তু এখন তো এটা খুঁজেই পাচ্ছি না।
জান্নাতকে বললাম,

— তুই কান্না করছিস কেন?
~ ভাইয়া আমার নিজ হাতে সেলাইয়ের কাজ করা জামাটা খুঁজে পাচ্ছি না। এখন তো শিউলিও নাই যে শিউলি নিবে। তাহলে নিলো কে? আমি চিন্তিত হয়ে মা কে বললাম,

— মা, এই রুমে তুমি আর বাবা বাদে কেউ থাকে না। তাছাড়া আলমারির চাবি শুধু তুমি আর বাবা জানো। তুমি সেদিন বলেছিলে বাবা আজকাল দেরি করে অফিস থেকে ফিরে। জান্নাত গতকাল বললো বাবা চুলে লাল মেহেদী লাগানোর বদলে কালো রঙ করেছে। তারমানে কি বাবা কোন মেয়ের সাথে প্রেম করছে আর এই সব জিনিস গুলো চুরি করে মেয়েটাকে দিচ্ছে আমার কথা শুনে মা চিৎকার করে কান্না শুরু করলো আর বলতে লাগলো,

~ আল্লাহ গো এই বয়সে আমার সতীনের সংসার করা লাগবে গো।

বাবা অফিস থেকে এসেছে ৩ ঘন্টা হলো। এই ৩ ঘন্টা ধরে মা আর আমার বোন বাবাকে বারবার বলছে, মেয়েটা কে। আর বাবা অবাক হয়ে বলছে, কোথাকার কোন মেয়ে। আমি কোন মেয়েকে চিনি না। দয়াকরে আমাকে বাথরুমে যেতে দাও তা না হলে কাপড় নষ্ট করে দিবো বাবার অসহায় চেহারাটা দেখে আমার খুব কষ্ট লাগলো কিন্তু কিছু করার নেই। আজ যদি বাবা আমায় হাত খরচ বাড়িয়ে দিতো তাহলে শ্রাবণীর জন্মদিন উপলক্ষে আমার এইসব চুরিও করতে হতো না আর বাবার বিপদেও পড়তে হতো না শ্রাবণীর সাথে দেখা করতে বের হবো এমন সময় ছোটবোনের ফোন। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই জান্নাত বললো,

~ ভাইয়া তাড়াতাড়ি আয়। আমি বাবার প্রেমিকাকে পেয়েছি। রেস্টুরেন্টে বসে কি সুন্দর কফি খাচ্ছে। এই মেয়েকে আমি ছাড়বো না। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
— তুই কোথায়?
~ আমি সারিন্দা রেস্টুরেন্টে আছি।

কথাটা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি সারিন্দাতে গেলাম। গিয়ে দেখি অনেক মানুষের ভিড়।ভিড়ের ভিতর আমার বোন আর আমার গার্লফ্রেন্ড দুইজন দুইজনের চুল ধরে টানাটানি করছে। আমার বোন বলছে,

~দে, আমার জামা আর আমার মায়ের চেইন ফেরত দে।  আর শ্রাবণী বলছে,
– এই জামা আমার বয়ফ্রেন্ড বারিপ্লাজা থেকে আর এই চেইন মধুমিতা জুয়েলারি থেকে কিনে দিছে। আমি তকে এইসব জীবন থাকতে দিবো না…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত