এই পৃথিবীতে যদি আমার কোন হেটার্স বা শত্রু থাকে সেটা আমার বউ। মাঝেমাঝে আমি কনফিউজড হয়ে যাই সত্যিই কি আমি বিয়ে করেছি!? সকালে বউ ঘুম থেকে টেনে তুলে বলল….
–সমস্যা কি তোমার?
-আমি ঘুমোচ্ছি, সমস্যা হবে কিউ?
–এত বেলা করে ঘুমানোর পার্মিশন তোমায় কে দিয়েছে?
-আমার বাসা, নিজে চাকরি করে বাসা ভাড়া দেই। আমি ঘুমাই নাহয় লুঙ্গী ডান্স দেই। এতে তোমার এত জ্বলে কেন?
বউ কিছু বললনা। আলনা থেকে টিশার্ট এনে সেটা আমায় জোর করে পরিয়ে দিলো। তারপর টিশার্টের কলার ধরে বলল….
-আবার বল এই বাসা কার?
–আমার বাসা আবার কার। এটা কি তোমায় নতুন করে বলতে হবে আজব।
-একদম মেজাজ খারাপ করাবি না বলে দিলাম। বল বাসা কার?
–তোই মুই কিত্তাম? বারবারর বলতেছি আমার বাসা।
-ওহ বুঝেছি, দাঁড়া বলেই বউ রান্না ঘরে চলে গেলো। রশি এনে আমার কাছে চলে আসলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম….
–রশি আনলা কেনো?
-তোকে বাঁধবো, তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।
–আমি আবার কি করলাম? আমার কথার উত্তর না দিয়ে বউ টুম্পাকে (মেয়ে) ডাক দিলো। টুম্পা আমাদের কাছে আসলে, বউ বলল….
–আম্মু যাওতো বটি দা আর লবন নিয়ে আসো।
-কি করবা আম্মু?
–তোমার আব্বুকে কাটবো,ভর্তা বানাবো। অনেক টেশ….খাবা?
-ওয়াও, ত্যাংকু আম্মু আমি ভর্তা খাব।
বউয়ের কথা শুনে টুম্পা নাচত নাচতে চলে গেলো। এদিকে আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো। কাহিনী কি আজব! আমাকে কাটবে কেন? পুরাই আবুল হয়ে বসে রইলাম। বউকে বললাম….
–আই কিচ্চি? অপরাধ কি?
-নো অপরাধ তোকে কাঁটবো।
–কিন্তু কেনো?
-যেহেতু এটা তোমার বাসা তোমার ইচ্ছে হলেই নাচবা, ঘুমাবা। তেমনি তুমি আমার হাজবেন্ড আর টুম্পার আব্বু। তাই তোমাকেও আমরা ইচ্ছেমতন কুপাবো, ল্যাং মারবো ভর্তা বানাবো। বউয়ের কথা শুনে পুরাই আহাম্মক হয়ে গেলাম। কয় কি! বললাম….
-হোয়াট এ যুক্তি?
–আপনাকে কাটবো তারপর যুক্তি শেখাবো।
-এটা রীতিমত অন্যায় আমি মানিনা।
–তো আমরা মা মেয়ে কিত্তাম? তুমি ঘাউরামি করলা কেন?
-আরে আমার বাসা তাই বলছি।
–এত বড় বাসা তোমার একার হয় কিভাবে? আমরা কি উড়ে এসে জুরে বসছি?
-মানে আমাদের তিনজনের বাসা….
–এত কথা শোনার টাইম নাই আমার, টুম্পা মা তাড়াতাড়ি আসোতো
টুম্পা বটি’দা আর লবণ নিয়ে আসলো। ভাবছিলাম বউ মজা করছে এখন দেখছি সত্যি সত্যি। আর মেয়েটার হয়েছে মায়ের মতন সাক্ষাৎ কুটনি। কোথায় আমার পক্ষ নিবে তানা উল্টা ব্লাকমেইল। বউকে বললাম….
–সরি বউমনি…
-কোন সরি টরি চলবে না।
–আম্মু কুপাও…(মেয়ে)
-হুররররর কুটনির মেয়ে। আমি তোমার বাবা না?
–এই তুমি কুটনি কাকে বললা? (বউ)
-কাউকে না।
–তাহলে মেয়েকে কুটনির মেয়ে বললে কেন?
-কথার কথায় বলে ফেলছি। আমি সরিগো বউমনি….
–কানে ধরো?
-কিইইইইইইই
–অবাক হওয়ার কিছুই নেই কান ধরো?
-না ধরলে হয়না?
-ধরব কি না?
অগত্যা কান ধরতে হবে। বউয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। বউ মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কানে হাত দিতে যাব আর অমনি বউ ফিক করে হেসে দিলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম। বউয়ের হাসি থামছেই না। টুম্পা হতবাক। ভাবছে ওর মা হাসছে কেনো? আমিও ভাবছি। বললাম….
–হাসছো কেনো?
-আমি অনেক সুখী তাই।
–আর আমিই দুখী, সবই কপাল।
-তুমি অনেক অনেক ভালো। বোকা একটা,ভালোবাসি। এই খেলবা?
–মানে?
-লুডু আরকি। হি হি হি….
–মস্কারা করো?
–হা হা হা…
–(অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি)
–হি হি… অবাক হওয়ার কিছু নেই পাগল একটা। এগুলো প্লান। আর হ্যাঁ এই আমি রেডি হতে গেলাম। তুমিও গোসল করে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হও, আজকে তিনজন একসাথে ঘুরতে যাব। বলেই বউ হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমি টাস্কি খেয়ে বিছানার উপর ঠাই বসে রইলাম। কি হলো! টুম্পা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ের তাকানোর ভঙ্গি দেখে প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে। বললাম….
-ত্যাংকু আম্মু। আমায় কাঁটোনি।
মেয়ে আগের মতনই দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা। বাচ্চা মানুষ অবাক হলে এত কিউট লাগে সেটা আমার মেয়ে টুম্পাকে না দেখলে বুঝতামনই না। আমি হাসছি, একটু পর শব্দ করেই হেসে দিলাম। বউ পাশের রুম থেকে বলল “ঐ বেশি হাসবানা বোকারাম একটা। তাড়াতাড়ি রেডি হও নইলে আপনার খবর আছে।