যে গল্পের শেষ নেই

যে গল্পের শেষ নেই

– নিশি, দাঁড়াও।তোমার সাথে কিছু কথা ছিল…
– কি কথা বলেন তাড়াতাড়ি। ওদিকে অামার ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছে।
– কেমন অাছ??
– এইতো ভালো।অাপনি??
– ভালো।একটা কথা তোমাকে অনেকদিন ধরেই বলতে চাচ্ছিলাম।জানিনা কথাটা তুমি কিভাবে নিবে। বলি??
– হু বলেননা, এত হেসিটেট করার কি অাছে।

অামি একটু দম নিয়ে তারপর বললাম- ” অামি তোমাকে ভালোবাসি নিশি।সেই প্রথম দেখাতেই তোমার প্রেমে পড়েছিলাম।বিভিন্ন কারনে বলা হয়ে উঠেনি অার।” নিশি অামাকে অবাক করে দিয়ে কিছুসময় হাসল।হাসি থামিয়ে তারপর বলল- ” প্রথমে অাপনার বন্ধু তারপর অাপনি।অাপনারা দুইবন্ধু মিলে প্রতিযোগিতায় নামছেন নাকি অামাকে অপমান করার, কে কার থেকে বেশি কষ্ট দিতে পারে।কিন্তু এবার অার সেটা হতে দিচ্ছিনা অামি।মানুষ ঠকে তারপর শিখে।অামিও অাপনার বন্ধুর কাছে ঠকে তারপর শিখেছি।সরলমনে বিশ্বাস করেছিলাম অাপনার বন্ধুকে।বিনিময়ে পেলাম কি নিশি এটুকু বলে একটু যেন দম ছাড়ল।তারপর বলল- দেখেন, অাপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে অামার নাই।প্লিজ পথ ছাড়ুন।অামাকে ক্লাসে যেতে হবে।

– হৃদয় তোমার সাথে যেটা করছে সেটা একেবারেই ঠিক কাজ করেনি।ওটার জন্য অামি নিজেও তোমার নিকট লজ্জিত।তারপর ও এক পাল্লাতে অামাদের দুজনকে বসাতে পারোনা তুমি।অামরা দুইজন দুই অাত্মা, দুই শরীর, দুই মন।অামাদের চিন্তা ভাবনার মাঝে যথেষ্ট ফারাক থাকতে পারে।

– সেদিন অাপনার বন্ধু সবার সামনে অামাকে যেভাবে উপহাসের পাত্র বানিয়েছিল তারপরও কি অাপনার মনে হয় অামি নতুন করে কোন সম্পর্কে জড়াব তাও অাপনার সাথে।শুনেন, পৃথিবীতে প্রেম ভালোবাসার মত দূর্লব বস্তু অামাদের মত কালো মেয়েদের জন্য অাসেনি।অামরা তো কেবল ভালোবাসার নামে যুগ যুগ ধরে উপহাসের পাত্র হয়ে অাসছি।সড়েন নিশি পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

:< ১বছর অাগের ঘটনা >:

কোচিং থেকে বের হয়ে হৃদয় অার অামি একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।দুজনেই নাস্তা করছিলাম।হঠাৎ করে হৃদয় বলে উঠল- নিশিকে তোর কেমন লাগেরে?

– কোন নিশি?
– ওই যে, অামাদের এক ইয়ার জুনিয়র, কালো করে মেয়েটা।
– ওহ! মেয়েটার মধ্যে তো খারাপ লাগার মত কিছুই দেখলামনা।ভদ্র, লাজুক, চুপচাপ থাকে সবসময় ও।কিন্তু তুই হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞাস করলি কেন?
– মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলছি রে বন্ধু…
– কি! কেমনে কি বন্ধু…
– জানিনা। তবে প্রতিরাতে নিশি অামার স্বপ্নে অাসে, এলোমেলো করে দিয়ে যায় সবকিছু।ভাবতে ভালো লাগে তাকে নিয়ে।অাজ সকালে অাবিষ্কার করলাম অামি নিশিকে ভালোবাসি।বন্ধু হিসেবে প্রথমে তোকেই বলেছি।
– অারে এটা তো খুশির কথা।অাজকের নাস্তার বিলটা তুই দিয়ে দিস।

অামরা যে কোচিংয়ে পড়তাম নিশিও সেই কোচিংয়ে পড়ত।প্রায় প্রতিদিনি দেখা হত অামাদের।মাঝে মাঝে টুকটাক কথাও চলত।তবে অামার থেকেও বেশি কথা হৃদয়ের সাথে হয়েছিল ওর।পরদিন ক্লাস শেষ করে অাবারো ঢুকলাম রেস্টুরেন্টে।নাস্তার অর্ডার দিয়ে অামি মেসেঞ্জারে গুঁতাগুঁতি শুরু করে দিলাম।সামনে থেকে হৃদয় বলে উঠল- মোবাইল পকেটে ঢুকা।অামি কি বলছি শোন অামি মেসেজ টাইপ করতে করতে বললাম- অামি শুনছি তুই বল…

– নিশিকে কিভাবে মনের কথা বলা যায় তার একটা উপায় বের করে দে,,, অামি হৃদয়ের কথা কর্ণপাত করিনি।তখনো চ্যাট নিয়ে ডুবে ছিলাম।হৃদয় এবার একটু রাগি গলায় বলল- তোরে কিছু বলছি সেতু। মোবাইল টিপা বাদ দিবি তুই নাকি অামি চলে যাব?

– এই যে রেখে দিলাম।এবার বল অামি মোবাইলটা পকেটে ঢুকায়নি।টেবিলের উপরেই রেখেছি।হৃদয় বলল- ” তুই একটা ওয়ে বের কর নিশিকে প্রপোস করার/

– খুব সিম্পল ওয়ে।কাল সাদিক ভাইয়ের দোকান থেকে কয়েকটা গোলাপ নিবি তারপর হাঁটু গেড়ে ফিল্মি স্টাইলেসোজা প্রপোস।অকে?
– অসম্ভব ভাই।ওর সাথে সামান্য কথা বলতে গেলেই অামার হাত পা প্রায় অবস হয়ে অাসে।হার্টবিট কি হারেবেড়ে যায় তুকে বলে বুঝাতে পারবনা রে। যা করার তোকেই করতে হবে।
– দেখি কি করা যায়।চল অাজ উঠি।
– চল। এরপর দুইজনেই সেখান থেকে চলে অাসলাম।

পরদিন একটু চালাকি করলাম।হৃদয়কে ফাঁকি দিয়ে নিশিকে একটা জায়গায় দেখা করার জন্য বললাম।ক্লাস শেষে নিশি দেখা করার জন্য অাসল। নিশি বলল- হঠাৎ এভাবে লুকিয়ে দেখা করার কারন কি? এমন কি কথা অাছে অামার সাথে অাপনার যেটা কোচিংয়ে সবার সামনে বলা যেতনা।

– অামি তোমাকে এখন একটা ফোন রেকর্ডস শুনাব, মন দিয়ে শুনবা।

নিশি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলল।এরপর মোবাইল থেকে গতকাল করা দুই মিনিটের রেকর্ডটা নিশিকে শুনতে দিলাম।হৃদয় জানেনা কাল ওর সব কথা অামি গোপনে অডিও রেকর্ড করে নিয়েছিলাম।টেবিলের উপর মোবাইল রেখেছিলাম এই একটা কারনেই।নিশি কানের কাছে নিয়ে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে তিনবারের মত রেকর্ডটা শুনল।তারপর মোবাইলটা অামার হাতে দিতে দিতে বলল- অাপনার বন্ধুকে কাল একবার অামার সাথে দেখা করার জন্য বলবেন।

পরদিন ওরা দেখা করে।অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে।অামি দূরে দাঁড়িয়ে পাহাড়াদারের দায়িত্ব পালন করি।অাসার সময় দুজনের মুখেই হাসির রেখা দেখা গেল।তখনি বুঝে গেলাম নতুন প্রেমের সূচনা ঘটতে চলেছে।নিশি বোধয় অাগে থেকেই মনেমনে হৃদয়কে পছন্দ করত।নাহলে কোন মেয়েই এত সহজে হ্যাঁ বলে দেয় না।এরপর থেকে সবকিছুই ঠিকঠাক মত চলে যাচ্ছিল।দুজনের ভালোবাসা দেখে অামি নিজেও মাঝেমাঝে অবাক হতাম।এমন পবিত্র ভালোবাসায় বিচ্ছেদ ঘটবে সেটা কে জানত।রিলেশনের প্রায় পাঁচমাস পরে হৃদয় নিজ থেকেই তাদের সম্পর্কের ফুলস্টপ বসিয়ে দেয়।নিশিকে নানা বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করেই সম্পর্কে ইতি টানে সে।সবার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল বিষয়টা।এ ব্যাপারে অামাকে কিছুই বলেনি হৃদয়।সবটা পরে পরে জানতে পারছি।

এরপর নিশি অামাদের কোচিং ছেড়ে অন্য কোচিংয়ে চলে যায়।অামাদের অার দেখা হয়না তেমন একটা।হুট করে হৃদয়ের এমন উদ্ভট সিদ্ধান্ত অামার মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি করল।তাকে বার বার জিজ্ঞেস করি কেন সম্পর্কে ব্রেক করেছে।কারন হিসেবে একটা কথায় বলত সে মেয়েটা কালো।সুন্দরী কোন মেয়েকেই সে ডিজার্ভ করে।অামার সন্দেহ গেলনা।হাল ও ছাড়িনি।সবশেষে হৃদয়ের মুখ থেকে অাসল সত্যিটা বের করেই তারপর ছাড়ি।কয়েকদিন হল হৃদয় জানতে পারে তার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে।বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম।ভবিষ্যৎতে নিশিকে ভালোরাখার জন্যই সে এই পথ বেঁচে নিয়েছিল।শেষবারের মত হৃদয় অামাকে একটা অনুরোধ করেছিল- ” অামার অবর্তমানে নিশিকে ভালো রাখার ভালোবাসার দায়িত্বটা তুই নিস বন্ধু…”বন্ধুর লাস্ট অনুরোধ রাখার চেষ্টা চলছে এখনো।জানিনা সেই অনুরোধ অাদৌ রাখতে পারব কিনা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত