আমি সিটি হসপিটালে এখন।। সেই ছোট্ট বেলা থেকে যাকে আপু বলে ডাকছি তার সাথে কিছুক্ষণ পর আমার বিয়ে! অবাক লাগছে না শুনতে? হ্যা একটু অবাক লাগার কথাই।। হসপিটালে আমি আবার আপু বলছি যাকে তাকে বিয়েও করছি! দাড়ান বুঝিয়ে বলি।
মিথুলা আপু আমার খালাতো বোন।। আমার থেকে দেড় বছরের বড়।। জাহাঙ্গীরনগর থেকে মাস্টার্স করে মাত্র একটা জবে ঢুকছে।। আর আমি মাস্টার্স এ ভর্তি হয়ে ক্লাস করলাম মাস তিনেক।।
সমাজের প্রচলিত বিয়ের নিয়ম অনুসারে আমাদের বিয়েটা একটু বাকা চোখে তাকিয়ে দেখার মতো।। কিন্তু কিছু করার নেই।। আমার বাবা নেই।। ছোট বেলা থেকে আমি আর মা খালাম্মাদের বাসায় থাকি।। খালাম্মাদের নিচতলাতেই আমরা থাকতাম।। ফ্লোর আলাদা হলেও খাওয়া দাওয়া সহ সংসারের যাবতীয় সব আমাদের একসাথেই হতো।। আমি আর মিথুলা আপু তাই ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি।।আমার মা একটা এনজিওতে জব করতো আর গ্রামের বাড়িভাড়ায় যা পেত ধরে খালাম্মাকে দিয়ে দিতো।। সংসার এভাবেই চলছিলো।। আস্তে আস্তে আমরা বড় হলাম।। মিথুলা আপু আমার থেকে বড় হলেও তাকে বড় বলে কখনো ভাবি নি।। মারামারি, ঝগড়া যেমন হতো আবার একসাথে খেলা পড়াশোনাও হতো।।
আমি এইচএসসি দিয়ে রেজাল্ট এর অপেক্ষায় বসে আছি তখন।। মিথুলা আপু অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।। এই অবস্থায় আমাদের এই পরিবারের উপর একটা বড়সড় ধাক্কা লাগে।। খালুর গ্রামের বাড়ি থেকে খুলনায় আসার পথে খালুদের বাস এক্সিডেন্ট হয়।। খালু মারা যায় আর খালাম্মা প্যারালাইজড হয়ে যায়! তখন থেকেই সংসার এর দায়িত্ব নেয় আম্মু আর মিথুলা আপু।। মিথুলা আপুর জন্য তখন কিছু বিয়ের কাজ আসলেও পড়াশোনা আর মায়ের দেখাশোনা করার নিমিত্তে আপু সেসব বিয়ের প্রস্তাব না করে দেয়।। এরপর এভাবেই চলতে থাকে।। আম্মু ও রিটায়ার্ড করেন।। মিথুলা আপু মাস্টার্স শেষ করে জবে ঢোকে।।আর আমার কথা তো বল্লাম ই।। গতকাল সন্ধ্যায় আমি ফ্রেন্ডের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি।। হটাত মিথুলা আপুর ফোন-
—- শাওন কই তুই?
—- এইতো মোড়ের কাছে।। কেন কিছু লাগবে?
— আম্মুর অবস্থা ভালো না রে।। চোখও মেলতেছে না।। এম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা কর।।
—- আচ্ছা।। টেনশন করিস না আসতিছি।।
খালাম্মাকে নিয়ে সারারাত হসপিটালে।।সারারাত পার করার ফজরের পর যখন খালাম্মার জ্ঞান ফেরে তখন আম্মুর হাত ধরে খালাম্মা বলছে-
—মিথুলারে দেখিস তুই।। পারলে শাওনের হাতে তুলে দিস।। জানি অন্যায় দাবি।। তাও!
—- আচ্ছা আপা, তুমি সুস্থ হও।। দেখা যাবে নে।।
— না রে।। তুই কাজী ডাক… আজকে ওদের আমার সামনে এইখানে কলমাটা দিয়ে রাখ!
খালাম্মার এই কথা যখন আম্মু বের হয়ে এসে বললো আমি আর মিথুলায়া আপু তখন দুই জন দুইজনের দিকে তাকায় ছিলাম।। এ কি করে সম্ভব?! অসুস্থ মায়ের কথা যেমন মিথুলা আপু ফেলতে পারি নি… ঠিক তেমনই আমার মা ও চায় নি যে বাবা মারা যাবার পর যার আশ্রয়ে আমি বড় হয়েছি তার শেষ ইচ্ছেতে আমি না বলি! মা কে বল্লাম,
— আমি আর মিথুলা আপু কি কথা বলবো একটু?
— যাই বলিস উত্তরে যেন হ্যা আসে! দুইজনের ই!
মা আর নানু খালাম্মার সাথে কেবিনে।। মামা গেছে কাজী আনতে। মিথুলা আপু আর আমি বারান্দার সোফায় বসা–
— কি রে, মুখ কালো কেন তোর? রাজি না থাকলে আম্মু আর খালামণিকে বল।।
— এই মূহুর্তে।।। তুই কি রাজি? তোরে তো ভাবি ই নাই কখনো এমন করে!
— সেইটাই তোর রিতা, সুপর্ণা, সুমাইয়া, ঋতু সবাইরে কি বলবি তাই ভাবছিস তো?!
— দেখ তোকে সব বলতাম বলে এখন তুই খোটা দিস না! তুই ও কম ছেলে ঘোরাস নি।। জানি তো আমি!
— বাদ দে।। কি যে হলো আম্মুর আমি না বুঝলাম না!
— বুঝে আর কি হবে! ভাবলাম সাতদিন ধরে ধুমায়ে প্রোগ্রাম করে বিয়ে করবো।। আর এখন হসপিটালের কেবিনে বিয়ে করা লাগবে!
— এইটা তো কলমা হচ্ছে।। গাধা… প্রোগ্রাম তো পরে হবেই।।
— এই আপু.. দেখ…জ্ঞান দিতে আসিস না।। একটু পর হাজবেন্ড হবো আমি।। সম্মান দে একটু।।
— এখনো তো আপু ই বলতিছিস.. নাম ধরে ডাকা শিখ আগে তখন দেখা যাবে।।
বলেই মিথিলা আপু…দৌড়ে কেবিনে চলে গেলো।। ইশ…আবার তো সেই আপু ই বলে ফেললাম! একটু পর বউ হয়ে যাবে যে!