মায়াবতী

মায়াবতী

সদ্য প্রেমে ব্যর্থ হয়ে দেবদাসের তালিকায় নাম লিখিয়েছি আমি।প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজের জীবনটা মনে হচ্ছে এখানেই শেষ করে দেই।চোখের সামনে যা কিছু ঘটছে সব কিছুই কেন জানি আমার বিপরীত মনে হচ্ছে।কোন কিছুতেই মন বসছে না।এটা হয়তো আমার সাথে একা ঘটেনি,এ শহরে অনেকেই আছে তারা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে শহরের ওলিতে-গলিতে নিজের কষ্টটা ধোয়ার সাথে উড়িয়ে দিচ্ছে।কেউ হয়তো অনেক আগে থেকেই ধোয়া উড়ায় আবার কেউ সদ্য ধোয়া উড়ানো শিখেছে।কেউ আবার মোহিনী অথবা লাচ্ছি খেয়ে ঘুমে মগ্ন থাকে। কেউ আবার আঙ্গুরের রস খেয়ে রাস্তায় পাগল রূপে সুয়ে থাকে।কিন্তু আমি তো কোনটাই পারছি না।

ধোয়া উড়ানোর অভ্যাস আমার নেই,তবে মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে উড়াইতাম।মোহিনী অথবা লাচ্ছি খাওয়াটাও শিখেছি কিছু দিন হলো।এক বড় ভাই লক্ষ করলো আমার এই পরিবর্তনগুলো।সেদিন সন্ধার সময় রাস্তার পাশে টং দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো রুম্মোন ভাই।আমি রুম্মোন ভাইকে খেয়াল করি নি,অনেক মানুষের ভিড় ছিলো দোকানটায়।সবে মাত্র সিগারেট ধরিয়ে একটি টান দিয়েছি এই সময় কাঁধে কে যেন হাতটা রাখলো।পিছন ফিরতেই রুম্মোন ভাইকে দেখে চমকে যাই,সিগারেটটা ফেলে দিতে যাই কিন্তু রুম্মোন বললেন কিনেছিস যেহেতু শেষ কর।চল ঐ ফাকা যায়গাটায় গিয়ে বসি।

– ইদানিং তোর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি,কি হয়েছে বলতো?
– নাহ ভাইয়া কিছুই হয় নাই।
-সিগারেটটা টানবি নাকি আমায় দিবি?
-রুম্মোন ভাইয়ার এমন কথায় একটু লজ্জাই পেলাম।কারণ উনি আমার থেকে বয়সে অনেকটা বড়।
-নাহ! আপনিই টানেন বলে সিগারেটটা এগিয়ে দেই।
-সিগারেট খাওয়া দিলি কবে থেকে?
-চুপ করে আছি,কি বলবো উনাকে।
-ধর একটা টান দে, ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে দিলেন।
-নিজের অনিচ্ছা সত্তেও টান দিলাম।
-তারপর প্রেমে ব্যর্থ হলি নাকি? যে সিগারেটের নিকোটিনে নিজেকে বিষাক্ত করছিস?
-জি ভাইয়া, দিয়ার সাথে ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে গত ১মাস হলো।
-বুঝতে পেরেছি!নিজেকে শক্ত কর, এভাবে নিজেকে নিকোটিনের বিষে বিষাক্ত করিস না।
-ভাইয়া কেউ না জানুক আপনি তো জানেন আমি দিয়াকে কতটা ভালোবাসি।তারপর বলুন কি করে নিজেকে সামলে রাখি।

-শোন ছোট আমাদের জীবনটা এতটা ঠুনকো না যতটা মনে করি।জীবন চলার পথে অনেক ঘাত -প্রতিঘাত আসে।তার মানে এই না যে জীবন ওখানেই থেমে যাবে।জীবনকে নতুন করে শুরু কর।জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।জীবন তার নিজ গতিতে চলে।একটা কথা মনে রাখিস যদি কোন দামী জিনিস হারিয়ে যায় তাহলে বুঝবি তার থেকে বেশী দামী জিনিস পেতে চলেছিস যেমনটা আমি পেয়েছি তোর ভাবিকে।দেখবি এমন কেউ আসবে যে তোকে খুব বেশিই ভালোবাসবে। তোর প্রতি খেয়াল রাখবে, তোর এই এলোমেলো হওয়া জীবনকে সুন্দর করে গুছিয়ে দিবে।তাই নিজেকে নিকোটিনের বিষে বিষাক্ত করিস না।আমাকে এভাবে বলার কেউ ছিলো না তাই তো জড়িয়ে গেছি নিকোটিনে। তবে পরিমাণটা কমিয়ে দিয়েছি তোর ভাবির জন্য।অনেক দিনের অভ্যাস তো হুট করে কি ছাড়া যায়।সময় নিচ্ছি ছেড়ে দিবো এই নিকোটিনের বিষাক্ত বিষকে।

-মাথা নেড়ে রুম্মোন ভাইয়ের কথার সম্মতি জানালাম।কেননা রুম্মোন ভাই সব সময় নিজের ছোট ভাইয়ের মত আমাকে স্নেহ করেন।আমিও উনাকে বড় ভাইরের মত সম্মান করি।
-চল বাসায় চল, তোর ভাবি তোকে যেতে বলেছে।
-আমি সম্মতি জানাই, রুম্মোন ভাইয়ের বাসা উত্তরা ১৩ নাম্বার সেক্টরের ১০ নাম্বার রোডের ০৯ নাম্বার বাড়িতে।

দুই জনে হাটতে হাটতে যাচ্ছি।রাস্তার নিয়ন আলো আমাদের পথ চলতে সাহায্য করছে।রুম্মোন ভাই আমাকে রীতিমতো বুঝিয়ে চলেছে। কি গো গুলু গুলু দেবরজি আমার কথা কি ভুলে গেছ? কোন খোজ খবর ই নেই তোমার।কেমন কি আছো দেবরজি? জি ভালো, আপনি কেমন আছেন?

-হুমমম ভালোই আছি।তোমাকে বিষণ্ণ লাগছে যে? মন খারাপ?
– ভাবি আমার জন্য একটু পায়েস রান্না করো তো।
-কথা ঘুরাচ্ছো কেন?
-দিয়ার সাথে ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে (রুম্মোন ভাই)

ভাবি আর কোন প্রশ্ন না করে রান্না ঘরের দিকে যান।কেননা ভাবি কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা দিতে চান না।রুম্মোন ভাই টিভি দেখছে।আমার কিছু ভালো লাগছে না,তাই ফেসবুকে যাই। একটা আইডি চোখের সামনে আসে।আমার বন্ধু গুলোও মেয়েটার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে।পরিচিত কোন বান্ধবী হবে তাই ভেবে রিকুয়েষ্ট পাঠাই সাথে মেসেজও।কিছু সময় পর তার রিপ্লে আসে।তার সাথে পরিচয়ের মাধ্যেমে জানতে পারি সে আমার পরিচিত নয়।তবুও প্রথমদিনে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায়।কথা হতে থাকে প্রতিনিয়ত মেসেজেই। নিশাত ওঠো ১০ টা বাজতে গেলো কত ঘুমাবে?

-আহা নিশী একটু ঘুমাতে দাও তো,ডাকাডাকি করো না।
-ওঠো সকালের নাস্তা করতে হবে তো। ছুটির দিন এলেই তুমি দুপুর করে ঘুম থেকে ওঠো।দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা আমার পছন্দ নয়।
-প্লিজ নিশী একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ।
-দাড়াও তোমার ঘুম আমি ছুটাচ্ছি।
-দাড়াতে পারবো না এখন তুমি যা করার করো গিয়ে।নিশী রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

নিশী এই নিশী দরজাটা খুলো তো কে এলো দেখো তো।তুমি খুলো আমি রান্না করছি।সেই কখন থেকে কলিং বেলটা বেজে যাচ্ছে কোন খেয়ালই নাই শুধু ঘুম আর ঘুম। ওমা ভাবি আপনারা,আসুন ভিতরে আসুন।

-নিশী কে এসেছে, কাদের সাথে কথা বলো।
-রুম্মোন ভাই আর ভাবি আসছে,এদিকে আসো।
-কেমন আছো তোমরা ভাবি?
-হ্যা ভালোই আছি তোমরা নতুন বাসা নিয়েছো তাই হুট করে চলে এলাম।
-এসেছো ভালোই হলো।আজ এক সাথে দুপুরের খাবার খেতে পারবো।অনেকদিন এক সাথে খাওয়া হয় না।

আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি রান্না করতে যাই(নিশী) নিশী শোনো বুঝেছি তোমার আর রুম্মোন ভাইয়ের জন্য পায়েস রান্না করতে হবে তাই তো? হুমমম বুঝলে কী করে? তোমার ডাকের সুরেই বুঝি কী বলতে চাও।চিন্তা করো না হয়ে যাবে।তোমার জন্যই তো পায়েস রান্না করাটা শিখেছি।

এই মেয়েটির নাম আমি মায়াবতী দিয়েছি। কেন দিয়েছি জানেন তার প্রতি কেমন একটা মায়া কাজ করতো।যে মায়ার জন্য তাকে প্রতিনিয়ত ফেসবুকে মেসেজ করতাম।জীবনের নতুন নীড় খুজে পেয়েছিলাম। রুম্মোন ভাইয়ের সেদিনের কথা গুলো আমাকে পাল্টে দিছে।নতুন করে ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করেছে।তাইতো দিয়ার স্মৃতি একটু একটু করে ভুলতে থাকি এবং নিশীর মায়ায় পড়তে থাকি।বুনতে থাকি নতুন স্বপ্নের জাল মায়াবতীকে নিয়ে। একটু একটু চ্যাটিং তারপর ভালো বন্ধুত্ব।আর বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক।তবে সেজন্য কিছুদিন অবশ্য নাকে দড়ি বেঁধে ঘুরিয়ে নিয়েছে আর মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে আমায়।সেদিনের মেসেজগুলো..

-হায়
-হ্যাঁ মায়াবতী বলো।
-কি করো তুমি?
-গল্প লিখি, তুমি?
-চ্যাটিং করি।
-কার সাথে?
-আমার পাগলটার সাথে?
-মানে, কে তোমার পাগল? আমি তো নই,কে সে বলবা?
-কেন তুমি হলে সমস্যা।
-আমি কি করে হবো তুমি তো অন্য একজনকে পছন্দ করো।তার সাথে তোমার দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব।সেই থেকে তোমাদের চেনা জানা।

-বুদ্ধু একটা, মনের কথাগুলোও বোঝে না।
-সত্যিই তো বললাম।
-তুমি কি সত্যিই বুঝো না নিশাত আমি তোমায় পছন্দ করি,ভালোবাসি বোঝো না কিছুই।
-তাহলে রিফাত?? তুমি তো বলেছো রিফাত কে পছন্দ করো,ভালোবাসো।
-ও তো তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছি।একটু বাজিয়ে নিয়েছি পাগলটাকে।
-তো পরীক্ষায় কী পাস মার্ক পেয়েছি??
-হুমমমম! তবে মায়াবতী বলে ডাকতে হবে তাহলে ফুল মার্কস্ পাবা।এমনকি আমার ভালোবাসার টিকিটাও পাবে।
-বলতে হবে মায়াবতী?
-হুমমম! বলতে হবে।
-ভালোবাসি আমি মায়াবতীকে,খুব ভালোবাসি।
-ভালোবাসি মুখে বলবো না, তবে তোমাকে আমার বুকে আগলে রেখে বুঝাবো যে কতটা ভালোবাসি তেমাকে নিশাত।

-তাহলে নিচ্ছো না কেন?
-তুমি যে দূরে, কি করে নিবো বলো?
-আমি আসছি, এখনই তুমি একটু অপেক্ষা করো।
-এই না এত রাতে তোমার আসতে হবে না মহারাজ।কাল দেখা হবে কেমন।
-মায়াবতীর মায়াময় চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তো?
-মায়াবতী অসুস্থ,এখন না কাল দেখো তোমার মায়াবতীকে। এখন থেকে তো আমি তোমারই। যখন খুশি দেখতে পাবা সমস্যা নেই তো মহারাজ।
-আচ্ছা আমার মায়াবতীটা।

এরপর থেকে আমি আমার জীবনের সব থেকে ভালো সময়টা পার করি।নিশী মেয়েটা আমার জীবনে আসার পর আমার থেমে যাওয়া স্বপ্ন গুলো নতুন করে দেখতে শুরু করি।চাকরিটাও হয়ে যায় আমার তারপর আর কি করা। মায়াবতীকে চিরদিনের জন্য আপন করে নিলাম।শুরু হলো আমাদের দুজনের স্বপ্ন পূরণের পালা।

এই শোনো রান্না ঘরে একটু আসো তো(নিশী) ভাবি আমার মায়াবতী ডাকছে শুনে আসি। হ্যা বলো মায়াবতী। দেখো আমি ঘেমে গেছি একটু মুছিয়ে দিবে। কেন দিবো না দিচ্ছি মায়াবতী। মায়াবতীর মুখের ঘাম মুছিয়ে দিয়ে একটা আলতো ঠোটের স্পর্শ দেই তাহার কপালে। মায়াবতীর ক্লান্তি কী দূর হলো?? হুমমম! মহারাজ হলো,তোমার ভালোবাসাই আমার ক্লান্তির দূর করার জন্য যথেষ্ট।এজন্যই তো তোমাকে ডাকি মজারাজ। আমার মায়াবতীটা উমমমম্মাহ। আমি কী তোমায় সাহায্য করবো??

না করতে হবে না মহারাজ,হয়ে এসেছে।তুমি ফ্রেস হয়ে আসো যাও।নাহ যাবো না এই বলে নিশীর ঘামে ভেজা শরীরটা পিছন থেকে আকড়ে ধরি। এই ছাড়ো কি করছো হ্যাঁ।আমি পুরো গেমে গেছি ছাড়ো। নাহহহ! ছাড়বো না।
ছাড়ো না, উনারা দেখলে কি ভাববে হ্যাঁ। আমার সকালের গিফট্ এখনও পাই নি। আগে গিফট্ দাও তারপর ছাড়বো।
তোমার গিফট্ তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখনই দিয়ে এসেছি।প্রতিদিন তুমি ঘুমিয়ে থাকলে আলতো করে আমি চুমু খেয়ে তার পর উঠি। নাহহ! আমি অত শত বুঝি না, এখন চাই এখন। তোমাকে নিয়ে আর পারি না। উম্মাহ যাও এবার ছাড়ো। জি মায়াবতী ছাড়ছি।  বউকে কি ছাড়তে ইচ্ছে হয় না দেবর জি? হুট করে ছেড়ে দেই। আরে আমি, ভয় পেতে হবে না। কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে চলে আসতে যাই রান্না ঘর থেকে। বউ এর জন্য দেখছি খু্বি প্রেম মনে। সারাজীবন যেন এমনটাই থাকে কানটা মলে দিয়ে। উহহহ! ভাবি লাগছে তো ছাড়ো। কথাটা মাথায় থাকে যেন বুঝলে। হ্যাঁ থাকবে এবার ছাড়ো তো।আচ্ছা ছেড়ে দিলাম, পরের বার আমাদের সামনে পড়লে তখন আর ছাড়বো না বুঝেছো। নিশীও খানিকটা লজ্জ পেল,আমি আর দাড়ায় নি চলে আসি।

এদিকে আয় নিশাত আমার পাশে একটু বস।কেমন যাচ্ছে নিশীকে নিয়ে তোর দিনকাল। ভাইয়া তুমি যদি সেদিনের ভুলটা ধরিয়ে না দিতে তাহলে নিশীর সাথে আমার দেখা বা কথা হতো না। খুব ভালো আছি ভাইয়া,নিশী এতটা খেয়াল রাখে যে পিছনের দিনগুলো ভুলে গিয়েছি।জানো ভাইয়া যখন দিয়ার স্মৃতি খুব মনে পড়ে তখন নিশী এসে আমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে সুয়ে থাকে।ও আমার মন খারাপের কারণটা বুঝতে পারে কিন্তু কখনও এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে নি।শুধু শুধু মায়াবতী বলি না,দিন দিন আমাকে ওর মায়াতে আরো বেশি পড়তে হচ্ছে।বাকি জীবনটা এই মায়াবতীর সাথেই পার করতে চাই।হাটতে চাই বহুদূর। ভালোবাসা এমনই রে ভাই।নিশীকে কখনো কষ্ট দিস না ভাই। তোরা ভালো থাকলেই আমাদের ভালো লাগবে।দুজন দুজনের সাথে মানিয়ে নিবি যেকোন পরিস্থিতিতে। জি ভাইয়া নিশী আমাকে খুব বোঝো।কিছু বলার আগেই বুঝে যায় কি বলতে চাচ্ছি।মাঝে মাঝে আমাকে অবাকই করে দেয় নিশী।আমি নিশীকে পেয়ে খুশি,খুব খুশি। এই যে খেতে এসো তোমাদের খাবার তৈরী। সবাই মিলে এক সাথে খেতে বসি।খাওয়া শেষ করে আমরা কিছু সময় গল্প করি।বিকালে রুম্মোন ভাই,ভাবি চলে যায়। ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের ফাইল তৈরী করছি এমন সময় নিশী..

-নিশাত চলোনা আজকে বাহির থেকে আমরা ঘুরে আসি।বিয়ের পরে তুমি কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে না হুহহহহ।
-না আজ যাওয়া হবে না,অফিসের একটু কাজ আছে পরের সপ্তাহে নিয়ে যাবো।
-ছুটির দিনেও তোমার কাজ, থাকো তোমার কাজ নিয়ে।কোথাও যেতে হবে না আমায় নিয়ে।এই বলে চলে যায়।

কাজে এতটা মগ্ন ছিলাম নিশীর দিকে কোন খেয়াল নেই।রাত তখন ১২টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি।কাজ শেষ করে সুতে যাবো দেখি নিশী নেই।দু একবার ডাক দিলাম কোন সাড়া নেই।খুজতে খুজতে গিয়ে দেখি বেলকুনেতে সোফায় ঘুমিয়ে আছে। আমার প্রতি রাগে অভিমানে সোফায় ঘুমিয়ে গেলো। আমিও মায়াবতীর পাশে একটু জায়গা করে নিয়ে সুয়ে পড়ি।মায়াবতী জেগে যায় আর আমাকে দেখে ওপাশ ফিরে যায়।আমি ভাবতেছি কি করে মায়াবতীর রাগ অভিমান ভাঙাই।হাতটা বাড়িয়ে মায়াবতীকে আমার দিকে ঘুরিয়ে আনি আলতো করে কপালে চুমু দেই।

-মায়াবতীটা কি খুব রাগ করেছে?আচ্ছা কালকে বিকালে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো কথা দিলাম।এবার চলো রুমে চলো।
-নাহ আমি যাবো না, তোমার কাছে শুবো না আমাকে ছাড়ো।
-ওরে আমরা মায়াবতী রে সত্যি বলছি কাল তোমাকে নিয়ে যাবো এই প্রতিজ্ঞা করলাম।
– যাবে তো?
-হ্যাঁ মায়াবতী যাবো।
-আচ্ছা মনে থাকে যেন।
-আচ্ছা থাকবে থাকবে এবার চলো রুমে যাই।
-আমি হেটে যেতে পারবো না কেউ যদি পারে আমাকে কোলে করে নিয়ে যাক।
-ও আচ্ছা এখন আমার কোলে ওঠার সখ হয়েছে তাই না। আচ্ছা নিচ্ছি এই বলে মায়াবতী কে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে যেতে থাকি আর আমার মায়াবতী চুপচাপ আমাকে তার হাত দুটি দিয়ে জড়িয়ে নেয়।আমার থুতনিতে মায়াবতির ঠোটের স্পর্শ পাই।এভাবেই আমাদের চলতে থাকে মিষ্টি মিষ্টি খুনসুটি।

দিনটি ছিলো ২৭ ই জুলাই।এই দিনে দিয়া আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে চলে যায়।তাইতো ইজি চেয়ারে বসে একের পর এক সিগারেট টানছি।যদিও বিয়ের পর নিশীকে কথা দিয়েছিলাম তুমি পাশে থাকলে সব বাজে অভ্যাস ছেড়ে দিবো।সেই থেকে আর সিগারেট খাই নি তবে আজ খাচ্ছি বহুদিন পর।নিশী ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগেই।সিগারেট টানছি আর ভাবছি আমার জীবনে মায়াবতীর আগমন ঘটেছিলো বিদায় এতটা পথ দিয়াকে ছাড়াই কাটিয়েছি।নিশী তার ভালোবাসা দিয়ে আমকে আগলে রেখেছে।নাহ দিয়া আমার অতীত ছিলো,ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ওর কথা ভেবে মন খারাপ করাটা ঠিক হবে না।আমি আমার বর্তমান ও মায়াবতীকে নিয়েই ভাবা উচিৎ। আমাদের সকলেরই অতীত নিয়ে না ভেবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিতে ভাবতে হবে।আর আমর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হচ্ছে আমার মায়াবতী,আমার নিশী।যে আমার প্রয়োজনে পাশে ছিলো,তার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে নতুন করে পথ চলতে শিখিয়েছে।আমি যাই এখানে বসে না থেকে মায়াবতীর ভালোবাসা নিয়ে বীজগণিতের হিসাব মিলাই।মায়াবতীটা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত।

আমি চুপটি করে মায়াবতীর পাশে শুয়ে পড়ি।মায়াবতীর মুখের দিকে অপলক চেয়ে তার সৌন্দর্য দেখতে থাকি।কতটা নিষ্পাপ দেখায় আমার মায়াবতীকে।তার এই মায়ামাখা চেহার দিকে তাকিয়ে ফিস ফিস করে বলতে থাকি স্তব্ধ শহর,চারপাশ ঘুমিয়ে।আমি বাতাস হয়ে কানে ফিস ফিস করে বলে দেই যদি বড্ড ভালোবাসি! ঘুম ভাঙবে কি তোমার? নাকি ঘুমিয়েই জড়িয়ে নিবে আমাকে আবেশে? কথাটা শেষ করে ঠোটে স্পর্শ দেই মায়াবতীর কপালে। ঠিক তখনি দুহাতে ঘুমের মধ্যেই জড়িয়ে ধরে আমায় আর ভাবতে থাকি না জানি আরো কত মায়ার বাঁধনে আমায় বাঁধবে।বাঁধুক না যত খুশি আমিও যে মায়াবতীর মায়াতে ডুবে থাকতে চাই।মায়াবতীকে একটু শক্ত করেই জড়িয়ে নেই।নরম ঠোটের স্পর্শ দিতে থাকি মায়াবতীর কপালে।

-নিশাত তুমি সিগারেট খেয়েছো কেন? ঘুম থেকে উঠে
-আর হবে না,একটু ইচ্ছা হলো তাই।
-আচ্ছা নিশাত দিয়া আপুকে তুমি খুব ভালোবাসতে তাই না।
-হুমমম! বাসতাম তবে এখন আমি বাসি না।কারণ আমার ভালোবাসা শুধু মাত্র আমার মায়াবতীর জন্য। মায়াবতীটাই আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।

কথাটা শেষ হতেই মায়াবতী খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মাথাটা আমার বুকে রেখে বলে নিশাত তুমি খুব ভালো। আর আমি খুব ভাগ্যেবান। দিয়াকে আমি ধন্যবাদ জানাই যে উনি চলে যাওয়াতে তোমাকে আমি পেয়েছি।তোমার এত ভালোবাসা পেয়েছি যে মাঝে মাঝে নিজের চোখে পানি চলে আসে।ভালোবাসি তোমায় বলবো না তবে তোমাকে ভালোবাসা দিয়ে আমি সারাজীবন আগলে রাখবো। বিনিময়ে তোমার ভালোবাসা টুকুই চাইবো, আর মায়াবতী ডাকটা শুনতে। তোমার এই ডাকটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকি। অফিস থেকে এসে কখন মায়াবতী বলে একটা চুমু খাবে আমার কপালে। তোমার কাছে এতটুকু চাইবো আর কিচ্ছু না।

আমার মুখ তে কোন কথা বের হচ্ছে না।শুধু মায়াবতীকে একটু শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতে চাচ্ছি।এটাইতো চেয়েছিলাম তোমার থেকে মায়াবতী।যতদিন বাঁচবো এভাবেই তোমাকে ভালোবেসে যাবো,তোমার চাওয়াগুলো পূরণ করে যাবো প্রতিনিয়ত। এভাবে চলুক না আমাদের খুনসুটি। এমন মায়াবতীর আবির্ভাব ঘটুক সকলের জীবনে যে নতুন করে গুছিয়ে দিবে আমাদের জীবনকে।ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবে অতীতকে।পথ চলতে শেখাবে নতুন স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত