সকাল সকাল শ্রাবণী খুব ডাকাডাকি শুরু করলো। আমি ঘুম ঘুম চোখে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
–এত সকালে ডাকছো কেন? শ্রাবণী বললো,
– তোমার বন্ধু রাকিব ভাইয়ের বিয়ে না আজ। তাড়াতাড়ি ৫ হাজার টাকা দাও.. আমি শ্রাবণীর কথা শুনে বললাম,
— ও তুমি গিফট কিনতে যাবে? কিন্তু ৫ হাজার টাকা দিয়ে গিফট দেওয়া একটু বেশি হয়ে যায় না? আমাদের বিয়েতে অই সালা ৭০ টাকা দিয়ে আমাকে একটা বই দিয়ে ছিলো। বইয়ের নাম ছিলো স্ত্রীকে শারিরীক তৃপ্তি দেওয়ার ১০১ টা উপায় আমার কথা শুনে শ্রাবণী বিরক্ত হয়ে বললো,
-আমি কেন গিফট কিনবো? গিফট তুমি কিনে নিয়ে যাবে। আমি তো পার্লারে যাবো মেকাপ করতে…
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— শুধু মেকাপ করতেই ৫ হাজার টাকা লাগবে? তা এই মেকাপ কতদিন পর্যন্ত থাকবে, ১ মাস না কি ২ মাস?
শ্রাবণী আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো,
— ফাইজলামি করো আমার সাথে? মেকাপ ২ মাস কখনো থাকে? রাতে যখন মুখে পানি দিবো তখনি মেকাপ চলে যাবে শ্রাবণীর কথা শুনে আমার বুকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা শুরু হলো। আমার রক্ত পানি করা কষ্টের টাকা গুলো শেষ পর্যন্ত আমার বউ কিনা পানি দিয়ে ধুঁয়ে শেষ করবে আমি শ্রাবণীর হাতটা ধরে বললাম,
— বিয়েতে সব সময় নিজেকে আনকমন ভাবে প্রেজেন্ট করতে চেষ্টা করবে। দেখো বিয়েতে সবাই গর্জিয়াস মেকাপ লুকে যাবে। তুমি যদি সবার মাঝে খুব সাধারণ সাজে যাও তখন সবাই তোমার দিকেই ফোকাস দিবে। তাছাড়া তোমার এই ফর্সা মুখের মাঝে দুই একটা লাল ব্রুন তোমার সৌন্দর্য্যটাকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেকাপ করলে তো এই ব্রুন গুলো থাকবে না। তাই তুমি সাধারণ ভাবেই যাও আমার কথাশুনে শ্রাবণী চুপ করে রইলো। মনে হয় আমার কথাগুলো ওর মাথাতে ঢুকে গেছে। মনে মনে নিজে নিজেকে বলতে লাগলাম, সাবাস ব্যাটা পিয়াস। কি সুন্দর বুদ্ধি করে ৫ হাজার টাকা বাঁচালি এমন সময় শ্রাবণী বললো,
– পিয়াস, আমার তো সব ভারী গহনা। সাধারণ সাজে ভারী গহনা পড়লে মানাবে না। তুমি বরং আমাকে ২০ হাজার টাকা দাও। একটা সিম্পল দেখে গহনা কিনবো একেই বলে নিজের জন্য নিজেই কবর খুঁড়া। শ্রাবণীর হাতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বললাম,
–সবাই যাবে গর্জিয়াস লুকে আর তুমি যদি সাধারণ ভেসে যাও লোকে তোমায় ফকিন্নি ভেবে ভিতরে ঢুকতে দিবে না। আর মুখে এই সব ব্রুনের দাগ দেখলে তোমাকে কুষ্ঠ রোগী ভাববে। যাও পার্লারে গিয়ে একটু মানুষ হয়ে এসো কথাগুলো বলে আমি দৌড়ে কোনরকমে বাথরুমের ভিতর ঢুকলাম। কারণ এই মহূর্তে শ্রাবণীর পাশে থাকলে আমার মাথা ফাটিয়ে ফেলবে নীলক্ষেত থেকে অনেক ধরাধরি করে ৫৫ টাকা দিয়ে একটা বই কিনেছি। বইয়ের নাম, বউয়ের নির্যাতন থেকে বাচার ১০২ টি উপায়। বিয়ে বাড়িতে যেতেই শ্রাবণী আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার কানে কানে বললো,
– আজ বাসায় যাও শুধু, তোমায় বুঝাবো আমি কি জিনিস। বিয়ে বাড়িতে আমার সকল বন্ধু বান্ধব আসলো কিন্তু আমি কাউকে সময় দিতে পারছি না কারণ আমার হাত সারাক্ষণ শ্রাবণী ধরে রেখেছে। আমি শ্রাবণীকে বললাম,
— আমি কি ছোট বাচ্চা যে সারাক্ষণ আমার হাত ধরে থাকতে হবে না হলে হারিয়ে যাবো। শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,
– তোমার স্বাভাব আমি জানি। ভার্সিটি পড়ার সময় আমার সাথে প্রেম থাকা শর্তেও জুনিয়র ৩ টা মেয়ের সাথে তুমি প্রেম করেছো। এখন তোমার হাত ছাড়লে তুমি কারো না কারো বউয়ের সাথে গিয়ে পরকীয়া করবে। লুচ্চা বলে কথা বিয়ের এতদিন পর যদি বউয়ের মুখ থেকে সেই চিরচেনা পুরোনো শব্দ লুচ্চা কথাটা শুনতে হয় সেটা স্বামীর পক্ষে যথেষ্ট অপমান জনক। আমি কন্যা রাশি ছেলে। আমাকে মেয়েরা একটু বেশি পছন্দ করে এটা কি আমার দোষ। তাই বলে লুচ্চা বলবে হঠাৎ রাকিবের বাবা এসে বললো,
~বাবা পিয়াস, কনের ৩ ভাবীকে ঐখানে খেতে দিয়েছে। তুমি গিয়ে যদি একটু হেল্প করতে। আমি শ্রাবণী হাত সরিয়ে বললাম,
— জ্বি আংকেল অবশ্যই। বন্ধুর বিয়েতে এসেছি। এইখানে সব কাজ নিজের মনে করেই করতে হবে শ্রাবণী আংকেলের সামনে আমায় আটকাতে পারে নি। ৩ ভাবীই খুব সুন্দরী। আমি উনাদের নিজ হাতে ভেরে খাওয়াচ্ছি। হঠাৎ এক ভাবী বললো,
~ ভাই আমি আর খেতে পারবো না। আমি ডায়েটে আছি। আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
— কি যে বলেন ভাবী,হালকা মোটা হলেও আপনার ফিটনেস একদম ঠিক আছে। একদম বলিউডের নায়িকা সুনাক্ষি সিনহার মত। অন্য দুই ভাবী ঠোঁট বাকানো হাসি দিয়ে বললো,
~আমরা দেখতে কেমন? আমি চোখে হালকা ইশারা দিয়ে বললাম,
— একজন ক্যাটরিনার মত আরেকজন দীপিকার মত। এমন সময় কেউ একজন পিছন থেকে বললো,
-আমি দেখতে কেমন?
পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার বউ শ্রাবণী। এই মেয়েকে আমি যতবার দেখি ততবার প্রথম থেকে প্রেমে পড়ি। হালকা গোলাপি রঙের চেহারা, খাড়া নাক, আর সেই নাকের মাঝে ছোট সাদা পাথরের নাকফুল, মায়াভরা চোখ, আর গোলাপি পাপড়ির মত চিকন ঠোঁট দেখলে আমার ভিতরে ০.৪ স্কেলের একটা ভুমিকম্প বয়ে যায়। তবুও এই মেয়েটার পিছনে আমি সব সময় লেগে থাকি। আমি সারাক্ষণ কাছে বাহিরে থাকি। বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দেয়। দিনে হাজারটা মানুষের সাথে হাজার রকম কথা বলি।কিন্তু শ্রাবণী বাসায় একাই থাকে। একজন কথা বলার লোক পর্যন্ত নেই। সংসারের টুকটাক কাজ শেষ করার পর ওর সময় কাটে টিভির স্কিনের দিকে তাকিয়ে। আর আমার ফেরার অপেক্ষায়।
শ্রাবণীকে বিয়ের জন্য যখন ওর বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেই তখন উনি আমাকে আলাদাভাবে ডেকে বলেছিলেন, শ্রাবণীর বয়স যখন ১৬ তখন কিছু মেয়েলী শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণে একটা অপারেশন করাতে হয় যার ফলে ও কোনদিন বাচ্চার মা হতে পারবে না। আর এই কথাটা শ্রাবণী জানে না।
আমি সেদিন শ্রাবণীর বাবার হাত ধরে বলেছিলাম, আংকেল এই কথাটা আমি আপনি ছাড়া দুনিয়ার ৩য় জন যেন না জানে। আমার বাচ্চা চাই না আমার শ্রাবণী হলেই হবে। বৃদ্ধ বয়সে আমার একহাতে লাঠি অন্য হাতে শ্রাবণীর হাতটা থাকলেই হবে।
এখন শ্রাবণীর সাথে আমার ৩ বছরের সংসার। ও খুব চাইছে কনসিভ করতে কিন্তু পারছে না। কিছু টাকা ঘুষ দিয়ে ডাক্তারের থেকে একটা ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে এনে শ্রাবণীকে বুঝিয়েছি সমস্যাটা আমার। নিয়মিত ঔষধ খেলে ঠিক হতে পারে৷ আর ভিটামিনের ট্যাবলেট অন্য ঔষধের বোতলে ভরে শ্রাবণীকে দেখিয়ে খাই আর বলি, আজ আমার জন্য তুমি মা হতে পারছো না। শ্রাবণী তখন অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে, আমার মা হবার দরকার নেই আমার তুমি হলেই চলবে এখন সময় শ্রাবণী চিৎকার করে বললো,
– এমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন? বললে না আমাকে কার মত লাগে? আমি শ্রাবণীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বললাম,
— তোমাকে বাংলা মুভির ডায়নী রিনা খানের মত লাগে। শ্রাবণী রাগে আমার দিকে আসছে আর আমি ছুটে পালাচ্ছি..