–বাসায় ফিরবা কখন??
–কেন কিছু লাগবে??
–উহু,এমনি।
–আচ্ছা।
–এই শোনো শোনো!!
–কী??
–না মানে..!!
–কী??
–একটা ইয়ে আনবা??
–ইয়ে আবার কী??
–আরে ইয়ে ইয়ে।
–আরে বাবা সেটাই তো জিজ্ঞাসা করছি,ইয়েটা কী??
–উহু,বলবো না।
–না বললে আনব কীভাবে??
–থাক লাগবে না।
–আহা বলোই না!!
–উফফ! তুমি প্রতিদিন বাসায় আসার সময় নিয়া আসো আর এখন বলছ ইয়েটা কী!!
–আচ্ছা,সোজাভাবে বলো কী লাগবে??
–বলবো??
–হু,বলো।
–না থাক বলবো না।
–আহা একবার বলেই দেখ না!!
–আসার সময় আমার জন্য ক্যাটবেরি চকোলেট নিয়া আসবা কেমন??
–এই কথা!!
–হু।
–পিচ্চি
–হু, আমি পিচ্চি! মনে থাকে জেনো ?? রেগে বললো বউ…
–ক’দিন পর নিজের কোলেই একটা বাচ্চা আসবে আর উনি এখনও চকলেট পাগলি…. হাহা হা হা….
–চুপ ফাজিল। একদম মাইর দিবো। খালি পঁচা কথা বলে!
–এইটা পঁচা কথা??
–হু,পঁচা কথা। আমি এখন বাবু নিতে চাই না।
–এখন নিলে সমস্যাটা কী??
–আরও এক বছর পর নিবো।
–কিন্তু কেন??
–আমি না পিচ্চি । আর একটা পিচ্চির কোলে তুমি অন্য একটা পিচ্চি কীভাবে দিবা বলো!! সো এখন আমার ধারে কাছেও আসবা না বলে দিলাম,হুহ।
–তুমি একটা পিচ্চি!!
–হু,আমি এখনও বাবু।
–আজকে বাসায় এসে নিই।
–আবার পঁচা কথা বলে! একদম মাইর দিবো কিন্তু।
–আজ রাতে বাসায় এসে নিই। তারপর পঁচা কথা কী সেইটা বুঝাব,হুহ।
–আমি রাতে আম্মুর সাথে ঘুমাবো তাহলে।
–এহহ বললেই হয়ে গেল!! রাতে বাসায় এসে নিই। দাঁড়াও।
–চুপ। খালি দুষ্টামী!! দুষ্টামী ছাড়া একটা কিচ্ছু বুঝে না। ফাজিল একটা।
–বুঝতে চাইও না।
–রান্না আছে। ফোন রাখছি এখন।
ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ দু’বছরের কাছাকাছি। নাম পরী। লাভ ম্যারেজ ছিল আমাদের সেই বিয়ের পর থেকে আজ অব্দি একটা অভ্যাস প্রতিদিনই কন্টিনিউ করতে হয় আমাকে। সেটা হচ্ছে,প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে পরীর জন্য চকোলেট নিতে হবেই হবে। আর না নিয়ে গেলে তো হয়েছেই!! শীতকালেই কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে যাবে।
–আচ্ছা একটা কথা বলো তো পরী….
–কী??
–প্রতিদিন এত চকোলেট খাও কেন??
–আচ্ছা,তুমি প্রতিদিন ভাত খাও কেন??
–পেট ভরানোর জন্য।
–আমিও চকোলেট খাই আমার পেট ভরানোর জন্য।
চকোলেট খেতে-খেতে পরী আমার প্রশ্নের উত্তর দিলো। চকোলেট খেলে মানুষের পেট ভরে সেইটা এই প্রথম শুনলাম আমি।
–চকোলেট খেলে কারো পেট ভরে??
–আর কারো পেট ভরে কিনা জানিনা,তবে আমারটা ভরে।
–অদ্ভুত অভ্যাস তোমার!!
–সারাদিন বাসায় একা থাকি। তাই চকোলেট খেয়ে দিন পার করি।
–ভাবছি তোমাকে একটা জীবন্ত পুতুল এনে দিবো।
–পুতুল আবার জীবন্ত হয় কখনও!!
–হয় হয়। এই পুতুলটা সারাদিন ঘরের এককোণা থেকে অন্য কোণায় ঘুরে বেড়াবে,দৌড়াদৌড়ি করবে,দুষ্টামি করবে!! তোমার আর একা লাগবে না তখন।
–এতক্ষণে তোমার কথার মানেটা কী তা বুঝেছি।
–এই ছোট কথাটা বুঝতে এতক্ষণ!!
–তোমার মতলব আমি বেশ ভালোই বুঝি। সবই হচ্ছে কাছে আসার ধান্দা।
–হুর কী যে বলো না তুমি!!
–সত্যিই তো।
–আচ্ছা একটু এইদিকে আসো তো।
–কেন??
–মাথায় হাত বুলিয়ে দিই তোমার।
–থাক লাগবে না।
–কেন কেন??
–বললাম না তোমার ধান্দা আমি বেশ ভালোই বুঝি।
–এখানে ধান্দার কী আছে জানু??
–আছে বস আছে।
–আমার কলিজাটা,আমার জানুটাহ,আমার পাখিটা,উম্মাহহহ!!
–চুপ একদম চুপ!!
–একটু কাছে আসো জানু।
–না আসব না।
–তাহলে আমিই আসছি।
–খবরদার!! একদম কাছে আসবা না।
–বউয়ের এর কাছে আসতে সমস্যা কী??
–দাঁড়াও আম্মুকে ডাক দিই!!
–এই থাক থাক লাগবে না। আমি চলে যাচ্ছি।
–এইতো লক্ষ্ণী ছেলের মতো কথা।
–ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল!! পরে বুঝাব তোমাকে!!
–কচু বুঝাবা তুমি!! যাও ভাগো।
যতবারই মধুর কন্ঠে বউয়ের কাছে গিয়ে একটু আদর করতে চেয়েছি,বউ আমার ততবারই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে। আমার একটাই আপসোস!! জীবনে বউয়ের মুখ থেকে গ্রামীনফোনের মতো কখনও বলতে শুনলাম না ‘চলো বহুদূর!’
–ভাবছি আর একবার প্রেমে পরবো…..
–কি বললা তুমি??
–বললাম,আর একবার প্রেম করবো প্রেম…..
–প্রেম করবা??
–হ্যাঁ,করব।
–আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি একটু আসছি।
–কোথায় যাবা??
–ভাতের মাড় ফেলে আসি।
সাথে তরকারিটায় একটু পানি দিয়ে আসি। চুলো থেকে নামিয়ে গরম গরম ভাত খাওয়ার মজাই অন্যরকম। কারণ আমাদের একটা অভ্যাস ছিল। সবসময় গরম গরম ভাত খাব। এক বেলার ভাত অন্যবেলায় খাব না। প্রত্যেক বেলায় ভাত রান্না করে তারপরই খাব। বাজে অভ্যাসও বলা চলে অবশ্য।
–এই যে জনাব! বউয়ের মধুর কণ্ঠস্বরের ডাকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে দরজার দিকে তাকালাম।
–এমা! তোমার হাতে এইটা কি বউ??
–কেন দেখতে পাচ্ছ না??
–না গো। এটা কি গো??
–খুন্তি গরম করে এনেছি তোমার জন্য।
–মানে কি?? কি বলছ এসব বউ??
–ওমা বাবুটা আমার কিছু বুঝ না বুঝি হুহ!
–এটা দিয়ে কি করবা বউ??
–কি করব বুঝ না??
–না বুঝি না তো।
–তোমার পিঠে লাগাবো এইটা।
–ওমা!!
হাত-পা কেঁপে একদম শেষ। খুন্তিটা দেখে মনে হচ্ছে সবেমাত্র চুলো থেকে গরম করে এনেছে। এইটা যদি কোনোভাবে শরীরে লাগতে পারে তাহলে আমি নির্ঘাত অক্কা পাব।
–বউ,টুনটুনি পাখি আমার,হাত থেকে ফেলে দাও এইটা প্লিজ।
–এত সহজ না?? প্রেম করবি আবার তাই না??
–আরে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে,আমি তোমার প্রেমে আবার পরবো…..
–চুপ মিথ্যুক। একদম খুন করে ফেলব মিথ্যা বললে।
–না বউ মিথ্যা বলছি না।
–আবার??
–সত্যি বউ বিশ্বাস কর!
–তোর বিশ্বাসের খেতায় আগুন।
–ছেড়ে দেও বউ। এবারের মতো ছেড়ে দাও।
–কিসের ছাড়াছাড়ি! কোনো ছাড়াছাড়ি নাই আজকে।
–শেষবারের মতো বলছি তো।
–চুপ কর হারামজাদা। তোর প্রেম করার শখ জাগছে মনে তাই না?? আয় আজকে তোরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে প্রেমের শখ মিটাই। আয় কাছে আয়।
–আসব না আসব না।
–আয় কাছে আয় বলছি।
–একদম না। আমি এখন পালাবো।
–খবরদার পালানোর চেষ্টা করলে ঘরে ঢুকতে দিব না আর।
–তাতে কি! ফ্রেন্ডের সাথে থাকব।
–কি ঘরে বউ রেখে বাইরে গার্লফ্রেন্ড! তবে রে হারামী আজকে তো তোরে কিছুতেই ছাড়ছি না আমি। বউ রেখে গার্লফ্রেন্ড হ্যাঁ! দাঁড়া ছুটাচ্ছি তোর গার্লফ্রেন্ডের চিন্তা,দাঁড়া।
—-বউ গালফ্রেন্ড না! ফ্রেন্ড….
—–চুপপপপ আবার মিথ্যা কথা….
বউ আমার একদম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা দিয়ে যে পালাবো সেই রাস্তাও নাই। বউ আমার গরম খুন্তি নিয়ে ক্রমশই আমার কাছে আসছে। কি করি এখন?? চোখ বন্ধ করে মাথা চুলকাচ্ছি আর উপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে জানি না লেখা গুলো কেমন লাগে আপনাদের! লেখার জগৎ এ নতুন তাই তেমন কোনো বন্ধু নাই যারা লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে আমার পরিচিতি বাড়াবে আপনার যদি মনে হয় আপনার বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা আমার আছে তবে বন্ধু করবেন! সবার কাছে দোয়া পার্থী।