সব কিছু সুন্দর দৃশ্য হলো আপনার মুখের হাসি। যার হাসি সুন্দর। সেই মানুষ টা ততো আপনার কাছে অনেক প্রিয় মানুষ। আমি মানুষ টা একটু রাগি হলেও অতিথি নামক মেয়েটার কাছে একদম ভালো ছেলে। অতিথি দেখতে বাঁশের মতো উঁচু। চায়না মেয়ের মতো চিকন। দাঁত গুলো আফ্রিকান। চুলগুলো পাকিস্তান। মেয়েটা আমাদের পাশের বাসায় থাকে। অনেক বদমেজাজি একটা মেয়ে। কাউ কে ভয় পায় না। সব কিছু নিজের মতো করে ভাবে। মেয়েটার সীমানা কত টুকু আমি জানি না যদি জানতাম তাইলে সে সীমানা অতিক্রম করে বলতাম ভালবাসি। কিন্তু সে সোনারতরী জিনিষ টাই জানি না। মাঝে মাঝে অতিথি কে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। তাকে বলতে ইচ্ছা করে তোমার হাসি টা আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু সে সাহস কি আছে?
দাদার কাছে গিয়ে খুব চুপ করে দাঁড়িয়ে তাকলাম। দাদা চোখে কম দেখেন। আমাকে দেখে বললেন ” নাতী কিছু বলবা? “আমিও দাদা কে বললাম ” দাদা দাদু চশমা পড়েন কেন? ” দাদা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ” তোর দাদু টা চোখে কম দেখে। চশমা ছাড়া একদম কিছু দেখতে পারে না। ” আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম। দাদা কে বললাম ” দাদা দাদুর চোখে চশমা নাই। অথচ তোমার একটা ছবি হাতে নিয়ে চেয়ে আছেন। “দাদা অট্টালিকা হাসি দিলেন। এটা বুঝবি না গাধা। এটা ভালোবাসা। ” এই কথা বলে দাদা দাদুর কাছে গেলেন। আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। কি সুন্দর আকাশ। আজ বৃষ্টি আসবে মনে হয়।
অতিথি হাসি দিয়ে তাদের বাসা থেকে বের হয়ে আসছে। জানো অতিথি তোমাকে আমি খুব ভালবাসি। তোমাকে আমি জনম জনম ধরে ভালবাসতে চাই। যুগ যুগ ধরে তোমার কাছে তাকতে চাই। তোমার আশেপাশে থেকে তোমাকে ছুয়ে দেখতে চাই। তোমার চুলের ঘ্রাণ নিয়ে বেঁচে তাকতে চাই। আমি আনমনা হয়ে তাকতে চাই। অতিথি আমাকে দেখেই মুখ টা কি রকম করল। অতিথি আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না। মেয়েটা খুব জেদি। ছোট বেলায় অতিথি কে বলেছিলাম ” ভালবাসি। ”
অতিথি আমার সাথে দু’বছর কথা বলে নি। এখন আমি বলতে চাই না। শুধু ভালবেসে যাব। আমার মন বলছে অতিথি একদিন আমাকে বলবে তার ভালোবাসার কথা। আমাকে পরীক্ষা করছে। মনের মধ্যে এখন কত কিছু সাগরের পানির মতো জোয়ার উঠে। শুধু একটু সময়ের জন্য স্বপ্ন টা ভেঙ্গে যায়। হৃদয়ের ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না। পরিমাপ করতে গেলে আরেকজন ভালবাসার মানুষ সাথে তাকতে হয়। তাইলে বুঝা যায় ভালোবাসা মানে কি। ভালোবাসা একটা আবেগ। আবেগ তাকতে হবে।
অতিথি একটা রিক্সায় উঠল। মেয়ে টা চলে যাচ্ছে। একটা বার তাকায় নি। তাকালে এমন কি হয়। আমি তো একটা মানুষ। আমার একটা প্রাণ আছে। আমার এই প্রাণ দিয়ে অতিথির জল – ছল – ছল চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে চাই ভালবাসি। অতিথি লজ্জা পেয়ে বলবে এভাবে তাকাবেন না। আমার ভয় করে। আমার অনেক লজ্জা লাগে। আমি অতিথির চোখের কান্নার অংশীদার হতে চায়। অতিথির চোখের পানি মুছে দিতে চাই। অতিথি কান্না করলে সে পানি আমার শার্টের এককোণে দিয়ে মুছে দিব।
গাছও এখন ছায়া দেয় না। ঠিক মতো করে যেন অক্সিজেন দেয় না। এখন খুব কষ্ট হয়। গাছের নিচে কাঁপলরা বসে তাকত। বসে বসে গল্প করত। রাজা রানীর গল্প। কে হবে রাজা কে হবে রানী। কিন্তু তারা আর গল্প করে না। ঐ যে বললাম অক্সিজেন নামক শব্দ টা এখন অনেক কম। পথে হাটতে ভালো লাগে না। পাশে একজন মানুষ তাকলে সে মানুষ তোমার কপাল থেকে ঘাম মুছে দিবে। তোমার খুব ভালো লাগবে। মাঠের দিকে তাকাতে দেখলাম একদল বাউল সংগীত করছে। এদের ভালোবাসা নাই। ভালোবাসা টা একটা অন্ধবিশ্বাস। তারা ভালোবাসা কে গান গেয়ে গেয়ে বিদায় জানাতে চায়। একদল পারছে আর একদল কান্না করছে। কেউ কেউ কান্না করছে আবার কেউ হাসাহাসি করছে কিন্তু কষ্টে।
বিকালবেলা আমাদের এলাকায় খুব আড্ডা হয়। সবাই একটা মাঠে গিয়ে অনক সময় ধরে আড্ডা দেয়। যুবক যুবতী। যেন আড্ডা দিয়ে পরিবেশ টা সুন্দর করে দেয়। অতিথিও আসছে। আমি দূর পথে দেখতে পেলাম। আমি একটু সামনের দিকে গেলাম। অতিথি আমাকে না দেখার ভাণ করে চলে যেতে চাইল। আমি কিছু বললাম না। সব কিছু বলতে হয় না। নিরব হয়ে শুনতে হয় দেখতে হয়। অতিথি হাসছে। ইশ! অতিথির দাঁত গুলা খুব সাদা। যেন বাতাস গুলা অতিথির দাত গুলো ছুয়ে যাচ্ছে। আমার খুব হিংসা হয়। প্রকৃতি কে নিয়ে আমি খুব চিন্তায় থাকি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় প্রকৃতির দিকে চেয়ে থাকি। যদি প্রকৃতি আমার কষ্ট গুলো বুঝতে পারে। আমার মুখ ফুটে তো বুক ফাটে না। এখন সব কিছু ভুলে যাই। খুব হিংসা হয় অতিথির সাথে কেউ কথা বললে। হনহন ঝনঝন শব্দ শুনা যাচ্ছে। আমি খুব বিরক্ত হলাম। ইশ! কান টা আমার একদম ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। খুব বিরক্ত হয়ে বললাম ” কে রে? ”
ও বাবা চোখ মেলেই দেখতে পেলাম মেয়েটা । আমি চুপ করে তাকলাম। শুধু হনহন ঝনঝন শব্দ টা শুনতে পাই নি। খুব ইচ্ছে হলো শব্দ টা শুনব কিন্তু শুনতে পারি নি। অতিথি মুচকি হাসি দিয়ে বলল ” শব্দ শুনবেন? ” আমি আনন্দে উল্লাসে একটা হাসি দিলাম। অতিথির আমার সাথে কথা বলছে। ইশ! এক না দুই না তিন না প্রায় ১৫ বছর পর। আমি খুব আনন্দ উল্লাস করলাম। অতিথি কে আমি তুমি করে বলি। আজও অতিথি কে তুমি করে বললাম ” নুপুর পড়ছ বুঝি। ” অতিথি হাসি দিয়ে বলল ” দেখতেই তো পারছেন। তাইলে বোকার মতো প্রশ্ন করে কেন? ” আমি মুগ্ধ হলাম। আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর, আসল নিকট, আসল সুদূর আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে! ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল হাসল শিশির দুবঘাসে আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে! অতিথি মাথায় শিউলি ফুল দিতে খুব ইচ্ছে হলো। শিউলি ফুল দিয়ে দু’জন একসাথে করে হাটব। তালে তাল দিয়ে। ছন্দের সাথে ছন্দ মিলিয়ে। ইশ! কি যে ভাল লাগবে।
অতিথি বলল ” চলেন দু’জন নদীর পাড়ে যাই। দু’জন একসাথে হাটলাম। নদী টা মনে হয় কান্না করতাছে। তাই বারবার টেউ দিচ্ছে। আমার মনে অনেক ইচ্ছে হলো ইশ! এখন যদি তুফান আসতো তাইলে অতিথির চুল গুলো উড়ত। আমি স্বার্থপর হয়ে অতিথির দিকে চেয়ে তাকতাম। মেয়েটা গুনগুন করে গান গাইতে ছিল। আমি শুনতে পেয়েও শুনি নি। আমার খুব আগ্রহ হলো আমি অতিথির কন্ঠে গান শুনতে চাই। না না পারি নি। মন বলছে থাক মেয়েটা গান মেয়েটা শুনতে থাক। উপলব্ধি করতে থাক। অতিথি দূর আকাশের দিকে চেয়ে থাকল।
অতিথির মধ্যে অনেক বিষ। অতিথ বুঝতে পারে না। তার মধ্যে কিসের বিষ? হ্যা আমিও বুঝতে পারি না। বোকা মানুষ গুলা বুঝতে পারে না। তবে বিষের ব্যথা ঠিকি বুঝতে পারি। যত দিন যায় তত বিষের ব্যথা আমাকে পাগল করে দেয়। আমাকে অস্থির করে দেয়। আমাকে যন্ত্রণা দিয়ে একেবারে পুড়িয়ে দেয়। অতিথি কোনো দিন জানতে চায় নি আমার বিষের ব্যথা কি তোমাকে বেশি যন্ত্রণা দেয়। মেয়েটা বুঝেও বুঝে না। শুনেও শুনে না।
অতিথি বলল ” কফি খাবেন? ” অতিথি আমাকে একটা রিক্সা করে শহরের ব্যস্ততম শহরের মাঝে দিয়ে একটা কাশফুলে নিয়ে গেল। আমি চেয়ে চেয়ে দোকানের মালিক কে দেখলাম। দোকানের মালিক কে আমার তেমন ভালো লাগে নি। কেমন করে চেয়ে আছে। কিছু বলছে না। একটু পর একটা পিচ্চি ছেলে আমাদের জনকে দু’কাপ কফি দিয়ে গেল। আমি খুব অবাক হলাম। অবাক হওয়ার কারণ আছে। আমরা তো কোনো অর্ডার করে নি। অতিথি বলল ” কফি টা কিন্তু খুব ভালো হয়েছে। আমি প্রায় এখানে এসে কফি খেয়ে যাই। ”
এখন বুঝতে পারছি। কেন ছেলে টা অর্ডার করে নি। আমি কফি টা মুখে দিতেই কোনো স্বাদ পেলাম না। এখন আমি কিছু বুঝতে পারি না। আমি উপলব্ধি করি। শুধু ভালোবাসা উপলব্ধি করি। হ্যা। ভালোবাসা আমার কাছে একটা জীবন্ত একটা জীবন। যখন যে রোগ আসে তখন সে ” সে ” রোগে খুব বেশি করে ভোগে । সে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন। ইচ্ছে করলেই আপনি সে রোগ থেকে মুক্তি পাবেন না। আপনার কোনো ক্ষমতা নেই। অতিথি আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি অতিথি কে বললাম ” খুব ভালবাসি ” অতিথি আশেপাশে তাকাল। অতিথি মাথা টা নিচের দিকে নিয়ে বলল ” আমিও আপনাকে ভালবাসি। আপনি যাকে ভালবাসেন তাকে ভালবাসার কথা বলতে হয়। আপনি যদি বীজ না বপন করেন তাইলে শস্য পাবেন কোথায় থেকে?
দাদী আমার দিকে চেয়ে বলেন ” মেয়েটা কিন্তু বেশ ভালো। ” আমি থমকে দাঁড়ালাম। আমার মনে অনেক হাসি পাচ্ছে। দাদী কে কপালে একটা চুমু দিলাম। দাদী আমাকে বললেন ” তোর বাবা কে বলব কিন্তু? ” আমি বুঝতে পারছি দাদী কি বলবেন। অতিথি আমাদের বাসায় দিকে আসছে। আমি চেয়ে আছি। অতিথি আমাকে দেখে থমকে দাঁড়াল। আমি বুঝতে পারি নি। পরে দেখলাম পিছন দিকে দাদা। দাদা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ” অতিথি আসো। নাতী কিন্তু আমার বেশ ভালো। নিজের নাতী বলে কিছু বলছি না। ”
অতিথি দাদুর কাছে এসে বলে তা আমি জানি ” ভালবাসা বুঝতে দাদা অনেক বছর লেগে গেল। অতিথি আমার বাগানের এক কোণে দাঁড়িয়ে অতিথির বাসা টা দেখতে লাগল। ” নাতনী বউ। বাসা কিন্তু বেশি দূরে না। রাগ করে যেতে পারবে। কিন্তু বেশি রাগ দেখিও না। নইলে আমার নাতী টা অল্প বয়সে জ্ঞান হারাবে। ” অতিথি হাসি দিয়ে বলল ” আগে বউ হতে দেন তাইলে দেখবেন এই গাছে কয় টা ফুল থাকে। আমাকে প্রতিদিন একটা একটা ফুল দিয়ে ভালবাসি বলতে হবে নইলে আমি বাবার বাসায় চলে যাব। ” আমি দু’জনের কথা গুলা শুনতে লাগলাম। দাদা এক সময় বললেন ” কি নাতী হিংসা হচ্ছে? ” আমি অতিথির দিকে হঠাৎ করে হাসি দিলাম।
রাতের আকাশ। শহরে একটা জিনিষ খুব ভালো লাগে। ছাদে সবাই এসে রাতের হাজিরা দিয়ে যায়। আমিও আসলাম। অতিথি কল দিয়ে বলল ” ছাদে আসেন। ” আমি অতিথির দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু অতিথি কে দেখতে পাই নি । তবুও বললাম শাড়িতে কিন্তু তোমাকে খুব ভালো লাগছে। অতিথি চুপ করে আছে। হয়তো আমার কথায় মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে।