বাসর রাত।কেঁদে কেটে বুক ভেসে যাচ্ছে লাবনীর, কি থেকে কি হয়ে গেল। এই কি আশা করেছিল সে? যার সাথে বিয়ে হয়েছে, তাকে মন থেকে কখনোই মেনে নিতে পারবে না। শরীর তো কখনোই পাবে না। সাথে বাসা থেকে লুকিয়ে একটা ছোট চাকু এনেছে সে,বেশি বাড়াবাড়ি করলেই ঘ্যাচাং! তারপর পর যা হবার হবে। আজই লোকটাকে সব কিছু জানাতে হবে।এখানে বিয়ে করতে চায়নি সে,বাধ্য হয়েই বিয়েটা করেছে। কিন্তু রিফাত আসছে না কেন?অনেক রাত হয়ে গেছে।
ঔ তো রিফাত আসছে, শক্ত করে চাকুটা ধরলো লাবনী,বাড়াবাড়ি করলেই ডাইরেক্ট বুকে মেরে বসবে সে।মরে গেলেন যাবে। রিফাত ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো, তারপর এগুতে লাগলো লাবনীর দিকে। লাবনী সমস্ত শক্তি দিয়ে চাকুটা চেপে ধরে রাখলো। রিফাত আস্তে আস্তে লাবনীর একেবারে কাছে গেল,হাত বাড়ালো, তারপর তার কাছে পরে থাকা কোল বালিশটা নিয়ে উল্টো দিকে শুয়ে পরলো। অবাক হয়ে অনেক সময় ধরে বসে রইলো লাবনী, লোকটা ঘুমায়নি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে নড়াচড়া করছে। সে কি লোকটাকে ডাকবে? না থাক,কাল সকালে বললেও হবে। সে মাথা কাত করে খাটের অন্য প্রান্তে শুয়ে পরলো। সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ও প্রান্ত থেকে আওয়াজ এলো, প্রতিদিন এভাবেই ঘুমাবে। এ প্রান্তে আসার চেষ্টা করবে না। লাবনীও ঘোরের মধ্যেই বললো, তুমিও এ প্রান্তে আসার চেষ্টা করবে না, ডাইরেক্ট খুন করে ফেলবো।
রিফাত বললো, তোমার মতো খালাম্মার কাছে যাওয়ার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নাই। ঠিক সময়ে বিয়ে হলে তো এতদিনে পাঁচ বাচ্চার মা হয়ে যেতে! লাবনী বললো, তোমার মতো কাকা মামা টাইপ লোকের সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধবে! ভুঁড়ির সাইজ দেখেই তো বমি আসছে। মাথায় তো মনে হয় সর্বসাকুল্যে বিশ বাইশটা চুল হবে। বুড়া বয়সে বিয়ে করার শখ হয়েছে? তুমি যে ঝগড়াটে টাইপ মেয়ে বুঝাই যাচ্ছে, আমি তোমাকে মন থেকে মেনে নিতে পারবো না,শুধু মা বাবাকে খুশি করার জন্য বিয়ে করেছি।আর শোন, আমার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল, এই নিয়ে আমাকে কোন কথা শুনাতে পারবা না।
আমার ও একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল, এ নিয়ে তুমি ও কোন কথা বলতে পারবা না,মা বাবা আমাকে এখানে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। নইলে কি আর তোমার মতো বেল মাথার লোককে বিয়ে করি! রিফাত ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, আহা! আমার গার্লফ্রেন্ড আমার কত প্রশংসা করতো! আমি নাকি সাকিব খানের চেয়ে বেশী সুন্দর, সিনেমায় নামলে নাকি ফাটিয়ে দিতে পারতাম! সকাল বিকাল ফোন করে বলতো,বাবু খাইছো? আমার আগে কখনো খেতো না।আমি খেলে তারপর খেতো। আমাদের এক মাসের সম্পর্ক, অথচ মনে হয় যুগ যুগের আপন!
আমারও একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। আহা! ছেলেটা আমার কতো প্রশংসা করতো! আমি নাকি কারিনা কাপুর,ঐশ্বরিয়া রাইয়ের থেকে বেশি সুন্দরী! সে বলতো,জুলি তুমি যদি হিন্দি সিনেমার নায়িকা হতে, তবে কারিনা,দীপিকার না খেয়ে থাকতে হতো, পরিচালকদের লাইন তোমার পিছনে ছুটতো,ওরা কোন কাজই পেত না! আমার ও গার্লফ্রেন্ডের নাম ছিল জুলি,সে যখন কথা বলতো, তখন মনে হতো ঢাকা শহরের সব মিষ্টির দোকান তার মুখের ভিতরে, মিষ্টির রস চুইয়ে চুইয়ে পরছে! সে আমাকে বলতো, কেরামত, তোমার মতো ভালো মানুষ বোধ হয় আল্লাহ তায়ালা এক পিস ই পয়দা করেছে, তুমি এতো ভালো কেন?
জানো,আমার বয়ফ্রেন্ডের নামও ছিল কেরামত,আহা! ছেলেটা কত ভালো ছিল, আমি তাকে শুধু ফেসবুকে দেখেছি। এক মাসের সম্পর্ক হলেও আমাদের ভালো বাসা ছিল যুগ যুগের! রিফাত লাফিয়ে উঠে বললো, তুমি কি এন্জেল জুলি? লাবনী বললো হ্যা,ওটা তো আমার ফেসবুক আইডি।তারপর জোরে চিৎকার দিয়ে বললো, তুমি কি মাইকেল কেরামত? রিফাত বললো, হ্যা, এইটা আমার ফেসবুক আইডি নাম। অনেকক্ষন সময় কেউ কোন কথা বলতে পারলো না। এক সময় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লাবনী বললো, তোমার এই অবস্থা কেন?ফেসবুকে তোমাকে অনেক স্মার্ট দেখেছি!
রিফাত বললো, আরে ওটা তো আমার দশ বছর আগের ছবি এডিট করা।তখন আমার মাথায় চুল ছিল, ভুঁড়ি ছিল না। কিন্তু তোমার এই অবস্থা কেন? লাবনী আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ওটা আমার স্কুল জীবনের ছবি এডিট করা! রিফাত লাবনীর হাত ধরে বললো, এই ভুড়িওয়ালা টাক মাথার লোকটাকে কি ভালোবাসা যায় না? লাবনী কোমড়ে গোজা ছুরিটা বের করে দুরে ফেলে দিল।