বিথীকে দেখতে আজ ছেলেপক্ষ আসবে। তার আগে আরো তিন জন দেখে গেছে। কারো মেয়ে পছন্দ হয় কারো ছেলে পছন্দ হয় না। এবারের ছেলের নাম দিয়ান। দিয়ান লাজুক স্বভাবের। লাজুক স্বভাবের ছেলেরা প্রেমে পরে বেশী। দিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ চুকিয়ে এখনো কারো প্রেমে পরে নি। বিথী মার ব্যস্ততা অনেক। কিরে এখনো রেডি হস নি কেনো? তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নে। পার্লারে যাবি? পাঠাবো সাথে কাউকে? টাকা দিয়ে দিবো কিছু? সকাল থেকে খেয়েছিস কিছু? কিরে কথা বলছিস না কেনো? বিথীর মা এক নিঃশ্বাসে সব বলে গেলো।
বিথী কাপড় ভাজ করছে। কোন প্রশ্নের ই কোন উত্তর দেয় নি সে। বিথীর ইচ্ছে করছে ছেলের সামনে আজ দেখা দিবে না। ঘর থেকে বের হয়ে যাবে সন্ধ্যার আগে। বিয়ের প্রতি মন উঠে গেছে। বিথীর ছোট বোন সাথী এবার ইন্টারে পড়ছে। দুই বোনের নাম মিলিয়ে রেখেছে তাদের বাবা। তাদের বাবার ধারণা ভাই বোনদের নাম মিল থাকলে সম্পর্ক গভীর হয় বেশী। বিথীর বাবার ধারণা খুব একটা ভুল না। বিথী আর সাথী দুই বোন দুইজনের সাথে খুব ক্লোজ। সাথী বিছানায় মোবাইলে টাইপ করতে করতে এসে বসলো। কিরে আপু এখনো যে রেডি হও নি? তুমি বিয়ে না করলে বলো আমি করে ফেলি। এবারের ছেলেটা সুন্দর আছে কিন্তু। সাথীর চোখে মুখে আনন্দের হাসি। বিথী বললো, করবি বিয়ে এই ছেলেকে? ব্যবস্থা করে দিবো কিনা বল। আমার জামা তো তোর গায়ে হয় তাই না? আজ তাহলে আমার জামাটা তুই পর।
সাথী কিছুক্ষণ অবাক হয়ে গেলো তার বড় বোনের কথায়। অবশ্য এবার ই প্রথম নয়। বিথীর পাগলামী সে ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছে। বিথীর খালা তারা আপা কল দিয়েছে বিথীর মা কে। বিথীর খালার নাম তারান্নুম। সবাই তারা আপা ডাকে। উনি গুষ্ঠির সবার বিয়ের জন্য ঘটকালি করে। রান্নাঘর থেকে বিথীর মায়ের মোবাইলের কথাবার্তা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
– হ্যা আপা। এইত বলো। ছেলেরা আসবে কখন?
– চলে আসবে। বেশী দেরী করবে না। মেয়েকে ওরা আজই বিয়ে পরিয়ে নিবে বুঝছিস।
– কি বলো তারা আপা। আজই বিয়ে করিয়ে নিবে!!
– হুম। বিথীকে কিছু বলিস না বুঝছিস।
– বলবো না মানে। বিয়ে কি আমি আর তুমি করতেছি আপা!! ও বিয়ে করবে ওকে বলবো না কেনো।
বিথী সবই শুনছে। মাঝে মাঝে পাশের রুমের কথাবার্তা শুনেও না শোনার ভান করে থাকতে হয় মানুষকে। সন্ধ্যা প্রায় হলো হলো। বিথী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের দরজা বন্ধ। বাহিরে আকাশটা আজ বেশী সুন্দর হয়ে আছে। মাঝে মাঝে দু একটা কাক উড়ে এসে বেলকনির উপরে বসছে। কাকের ও কত স্বাধীনতা। দেখতে কতটা বিশ্রী অথচ কোথাও উড়ে যেতে মানা নেই। কাকের বাসায় মনে হয় কেউ কাউকে কিছুতে মানা করে না। পাখিদের বাবা মা হয়ত পাখিদের শাসন করে রাখতে পারে না। মন খারাপ হলেই চট করে উড়ে যেতে পারে। সমস্যা হয় চেহারায় দেখতে সুন্দর মেয়েদের। শাসন করে রাখা যায়। তারা উড়ে যেতে পারে না। সবাই তাকিয়ে থাকে।
বিথীকে শাড়ি পরতে বলে গেছে বিথীর মা। সে একাই শাড়ি পড়তে পারে। মোবাইল হাতে সে এক নাম্বার ডায়াল করে বসে আছে। কল করতে ইচ্ছে করছে আবার করছে না। জীবনের সবচেয়ে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত গুলো নিতে গেলেই মানুষ খুব চিন্তায় পরে যায়। বড় বড় সিদ্ধান্ত গুলো অনায়াসেই নিয়ে ফেলে। বিথীর ইচ্ছে করছে তার প্রিয় মানুষটাকে একটা কল করে জানাতে। বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাদের অনেক আগেই। তবুও তার মনে হচ্ছে তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা ছেলেটার জানা উচিত। ছেলেটার নাম তৌকি। বিথী আদর করে ডাকতো ত-কি? কল বাজছে। তৌকি হয়ত টিউশনে। পাঁচ ছয়বার কল বাজার পরে কলটা ধরলো।
– হ্যা লো।
– জ্বী কে বলছেন।
– কন্ঠস্বর কি ভুলে গেছো আমায়?
– ওহ বিথী।
– হুম বিথী। কোথায় তুমি?
– হাটছি। আর সিগারেট টানছি।
– অভ্যাস করে ফেলেছো?
– কি হাটাহাটি? না না। একটু আধটু হাটাহাটি করি মাঝে মাঝে।
– সিগারেটের কথা জানতে চেয়েছিলাম। অভ্যাস হয়ে গেছে?
– জানি না। এটা সিগারেট ভালো বলতে পারবে। আমি ত প্রতিদিন নতুন নতুন ধরি। একটা ফেলে আরেকটা। একটা টেনে পুরনো হয়ে গেলে আরেকটা নতুন। হাহাহা।
– হাসবে না। একদম হাসবে না।
– শাসন করছো?
– না মোটেও না। আচ্ছা রাখি এখন।
– শুনো।
– বলো।
– শাড়ি পরেছ এর মধ্যে আর?
– জানি না।
– পরলে আমার কথা মনে পরে?
– জানি না। রাখি এখন।
– আচ্ছা।
– আর শুনো আমি এখন শাড়ি পরেই আছি।
ওপাশ থেকে কিছু কথার আগেই বিথী কলটা কেটে দিলো। শাড়ি পরলেই তৌকির কথা মনে পরতে যাবে কেনো!! সে এ কথা কেনো জিজ্ঞেস করলো? এটা জানার জন্য কি আবার কল দিবো তাকে!! বিথী মনে মনে এইসব ভাবছে। তার ছোট বোন সাথী রুমে ঢুকলো। তার হাতে এখনো মোবাইল। সে হাসতে হাসতে কার সাথে ম্যাসেজে কথা বলছে। কিছুক্ষন পরে ছেলে পক্ষ আসবে। তারা রওনা দিয়েছে।
– দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে? সাথী তার বোনের দিকে তাকিয়ে বললো, আপু তোমাকে মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। আমি ছেলে হলে তোমাকেই বিয়ে করে ফেলতাম।
– আচ্ছা এই ড্রেসে তোকে কেমন লাগবে একটু পরে দেখবি।
– পাগল হয়েছ তুমি?
– আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাবো ভাবছি। তুই আমাকে হেল্প করবি।
সাথী বিথীর কথাটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। সে জানে তার বোন এমন কিছু একটা করবে। বাসা ভর্তি মানুষ। ছেলের বাসা থেকে আত্মীয় অনেকেই চলে আসছে। বধু সেজে আছে কনে। মুখটা ঢাকা। বিথীর খালা তারা আপা ভিডিও কলে সব দেখছেন। তিনি আসতে পারেন নি। এমন খালাদের ব্যস্ততা থাকে বেশী। বিথীর মা মেয়ের ঘোমটা তুলে দিলেন। আমার হীরার টুকরা মেয়ে। খুব ই লক্ষ্মী ও বুঝছেন। একদম চুপচাপ।ছেলেপক্ষের সবাই থ মেরে বসে আছে। সাথী ঘোমটা মুখে বসে আছে। বিথী নেই। পুরো বাসায় একটা হুলস্থুল কান্ড। বিথীকে খুঁজতে বের হয়েছে সবাই। তৌকির মোবাইল আবার বাজছে। বিথী কল করেছে।
– হ্যালো বিথী।
– আজ শাড়ি পরেছি কেনো জিজ্ঞেস করবে না?
– কিছু বলার আগেই কলটা রেখে দিয়েছিলে তুমি।
– শাড়ি পরা অবস্থায় দেখা করবা একবার?
– তুমি মজা করছো নাতো?
– মেয়েরা শাড়ি পরে কখনো মজা করে না।
– আচ্ছা কোথায় আছো তুমি?
– তুমি টিএসসি আসো। আর শুনো পাঞ্জাবী পরে এসো।
দুটো কাক টিএসসি যাচ্ছে, একটা শাড়ি পরা একটা পাঞ্জাবী। বিয়ে হয়ে গেলেই প্রতিটা দম্পতি এক জোড়া কাক হয়ে যায়। তারা চাইলেই উড়তে পারে যখন তখন। বিথীর এখন নিজেকে ব্যালকনিতে বসা কাকের মতো মনে হচ্ছে।
এদিকে বিথীর বাসায় লাজুক ছেলে দিয়ান সাথীর সামনে বসে আছে। তার সাথীকে পছন্দ হয়েছে। সে লজ্জায় তার দিকে চোখে চোখ রেখে তাকাতেও পারছে না। সাথী বললো, আপনি এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেনো!! টিএসসি তে বিথী তৌকির সামনে লজ্জায় তাকাতে পারছে না। তৌকি বিথীর হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো, এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো?