বিয়েতে মত ছিলো না নিশির।বিশাল লম্বা একটা লোক,নিশ্চিত এই লোকের বুদ্ধি হাঁটুতেই। দাদি কে যতবার নিশি বলেছে তার বাবা কে বুঝাতে। দাদি ততবারই ফোঁকলা দাঁত বের করে হেসে হেসে বলেছে “লাইন করছ বইন”? নিশির পিত্তি জ্বলতো লাইন শব্দ টা শুনলে,প্রেম ভালোবাসার মতো সুন্দর শব্দটার প্রাগঐতিহাসিক নাম ছিলো লাইন করা। নিশি তার মা’কে দিয়ে বাবা কে বলিয়েছে বিয়েতে তার মত নেই। বাবার রাশভারী উত্তর ছিলো “হালিমা অামি কি তোমার মেয়ের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছি?” নিশির বিয়ে হয়েছে দুই মাস হলো।
কাজিন বেড়াতে এসেছে নিশির বাসায়।গা ভর্তি গয়না পাট ভাঙ্গা শাড়ী তে কি অপরুপ লাগছে ওর কাজিন কে। শারমিন অাপা এত অাভিজাত্যের মাঝেও কেন যে দুঃখী নিশি বুঝে উঠতে পারেনা। কেমন অাছো অাপা? এই তো অাছিরে। তুই কেমন অাছিস নিশি? অার বলোনা অাপা,লম্বুর নানান বায়না। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে কখনো বলবে- “গায়ে হলুদে ফুলের সাজে তোমাকে কি যে ভালো লাগছিলো নিশি।তাই এই বেলি ফুলের গহনা গুলো অানলাম হলুদ শাড়ী টা পরবে সাথে ফুলের গহনা গুলোও”। অাবার কখনো বলবে, “নিশি যাওতো একটু চোখে কাজল পরে এসো, সাথে নীল শাড়ি টা প্লিজ”। নিশি অাইসক্রিম টা তোমার জন্য,অামড়া টা তোমার জন্য।অামার এসব ভালোলাগে না অাপা।
শারমিন:নিশি রে তুই বড় কপাল নিয়ে জন্মেছিস।
নিশি: অার কপাল,তোমার কত সুখ অাপা।কত গহনা, চাকর-বাকর,গাড়ি-বাড়ি।
শারমিন: কখনো স্বামীর অবহেলা পাসনি তো তাই বুঝিসনি,সুখ কি?
সন্ধ্যায় বাড়ি এলো অারমান,নিশি দুপুরে খেয়েছ? জ্বী,টেবিলে ভাত দেয়া অাছে খেয়েনিন । নিশি অামাকে কি তোমার পছন্দ না। কেন, বলছেন এই কথা?
গত দুই মাসে প্রয়োজনের বাহিরে কোন কথাই বলোনি অামার সাথে।তুমি কি অন্য কাওকে ভালোবাসতে?
নিশি চুপ করে অাছে। বলো নিশি,চুপ করে থেকো না।একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুজন দুজন কে জানতে হয়,বুঝতে হয়। নিশি এবার মুখ খুললো- “লাইন করার টাইম দিলেন কই?” অারমান হতভম্ব হয়ে গেলো,বউ টা এসব কোন ভাষা বলছে। বাসায় ফিরে অারমান নিশির হাতে কতগুলো ব্যাগ দিয়ে বললো অফিসের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভালোকরে রেখো। অাজ অারমান নিশির জন্য অালাদা করে কোন কিছু অানেনি। একপাতা টিপ,একটা অাইসক্রিম,এক ডজন চুড়ি, একটা অাচার কিছুই না। অারমান সব সময় গৃহস্থালি অন্যান্য বাজারের সাথে নিশির জন্য একটা না একটা কিছু নিয়ে অাসবেই। অাজ কিছুই অানেনি।অথচ এই ছোট-খটো জিনিস গুলো দেখলে নিশির খুবই বিরক্ত লাগতো।নিশির বুক টা ফেঁটে যাচ্ছে, অাজ লম্বু টা বলেও নি দুপুরে খেয়েছে কি না। অারমানের কাছে গিয়ে বললো অাপনার কি শরীর খারাপ।
-না,চিন্তা কর না।
-চা বানিয়ে দিবো?
-কিছু লাগবে না।
নিশির পৃথিবী টা চুরমার হয়ে যাচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না। তবে কি শারমিন অাপার কথাই ঠিক? স্বামীর অবহেলা তাকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।কেন তার স্বামী তাকে অবহেলা করছে?কোন উত্তর খোঁজে পাচ্ছে না। রাস্তায় পরে থাকা একটা ইট এনেও তো বলতে পারতো “এটা তোমার নিশি”। রাত অাট টা প্রায়, অারমানের ঘুম ভাঙ্গলো। নিশি কে কেছে ডেকে এক প্যাকেট সেইফটিপিন দিয়ে বললো সেদিন শাড়ি টা সামলাতে পারছিলেনা। অাজ লাল একটা শাড়ি পর।অার শোন দুই কাপ চা, হালকা নাস্তা নিয়ে বারান্দায় এসো।
নিশির কাছে সেইফটিপিনের প্যকেটটা কে মনে হচ্ছিলো এক মূল্যবান সম্পদ,তার মনেচাচ্ছে বুকের মাঝে অনেক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখতে। বিশাল একটা চাঁদ এক গামলা পানির মধ্যে বন্দি করেছি নিশি তোমার জন্য। গামলার স্বচ্ছ পানির নাচনে চাঁদ টা কেমন দুলছে।ছোট টি টেবিলে একটা ছোট্ট কেক।চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অাছে বেলি ফুলের মালা।অদ্ভুদ এক মাদকতা পূর্ণ পরিবেশ। অাপনার মন খারাপ ছিলো কেন? প্রশ্নের কোন উত্তর দিলো না অারমান।অাজ তোমার জন্মদিন নিশি। কেউ কখনো এভাবেই এই দিনটি নিয়ে ভাবেনি। অামি তোমার গরিব স্বামী, হয়তো তোমার কাজিনের মতো বড়লোক স্বামী হলে, বড় পার্টি দামি গহনা উপহার দিতো।
একটা নাকফুল ছাড়া এই জন্মদিনে তোমার জন্য অার কোন দামি গহনা কেনার সামর্থ্য অামার ছিলো না,নিশি।
অাপনি এত বড় একটা চাঁদ কে অামার জন্য বন্দী করে ফেললেন,এরচেয়ে দামি অার বুদ্ধির কি হতে পারে।অামি তো নিশ্চিত ছিলাম অাপনার বুদ্ধি হাঁটুতে। অারমান বেশ জোরে জোরে হাসতে লাগলো,বউ টা কে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো “পাগলি বউ টা”। নিশির চোখ থেক জল গড়িয়ে পরছে। বিয়ের দিন বাবাও এভাবে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, পাগলি বাবার সাথে রাগ করে থাকতে পারবি না। “তোকে অলংকার দেয়ার মতো সাথী দেইনি,অহংকার করার মতো সাথী দিলাম।”