কোনো এক সুন্দর সকালে ১০ টার সময়..মামার দোকান থেকে চা খেয়ে লম্বা একখান হাটা দিবো ভাবছি।
ঠিক তখনি পকেটে থাকা মোবাইল এর রিংটোন শুনতে পেলাম। হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখি ফারিয়ার কল। নামটা দেখেই বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠল।
– হেলো, সালাম গ্রহন করিবেন..(আমি)
– আমাকে বিয়ে করবা..?
(ও)কথাটি শুনেই ফোনটা কখন যে হাত থেকে পড়ে গেছে টের পাইনি। ফের রিংটোনে বুঝলাম মোবাইলটা ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই.
– কি ব্যাপার..কথা বলো না কেনো?
– ইয়ে মানে, একটু আগে তুমি যেন কি বলছিলা..?
– আমাকে এখনি বিয়ে করবা..? কথাটি আবার শোনা মাত্রই পকেটে হাত দিলাম। নাহ পকেটে আজ টাকা আছে।
ক্রেডিট কার্ডটি খুব যত্ন করে পড়ে আছে পকেটে..
– বিয়ে কি আজকেই করতে হবে? (আমি)
– তা নইতো কবে শুনি..?
– আজ না করলে হয় না..?
– কোনো কথা শুনতে চাই না। বিয়ে আজই করতে হবে। মোস্তফা গলির সামনে দাড়িয়ে আছি বিয়ে করতে চাইলে এখনি আসো না হলে আমি.
– থাক থাক, আমি এখনি আসছি।টুক করে ফোনটা কেটে দিলাম। সিএনজি স্ট্যান্ড এ এসে একটা সিএনজিতে উঠে গেলাম।
তখনি আমার শরীরে ভয়ের এক রাশ আভা ছড়িয়ে পড়লো। ভয়টা পেলাম আম্মুর ভয়ংকর রাগী লুকটার কথা মনে পড়ে।
আম্মু যদি জানে আমি বিয়ে করেছি, তাহলে আমার কপালে নিশ্চিত বাঁশ।
যাই হোক ভয়কে জয় করে মোস্তফা গলির দিকে হাটা দিলাম সিএনজি থেকে নেমে।
– পরিচিত কোনো কাজী অফিস চিনো? (ফারিয়া)
– এত কষ্ট করে আসলাম,,কই একটু আঁচলটা দিয়ে ঘাম মুছে দিবা তা না করে কাজি অফিস কোথায় সেটা জিগাস করছো।
– চিনো কিনা..?
– তোমার কি মনে হয় আমি আগেও কাজি অফিসে যেয়ে বিয়ে করেছি?
– ঐ শোনো, বেশি ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবা না। চিনো কিনা বলো? ভাব খারাপ দেখে চুপ করে দাড়িয়ে গেলাম। এমনিতেই এসে দেখি রেগে আছে।
এখন যদি আরো রেগে যায় তাইলে খারাপই হবে।
– আচ্ছা চলো কাছে বিঙ্গান কলেজের গলিতে গেলে একটা কাজি অফিস চিনি দোতালায় যাবা..? কোনো কথা না বলে হাত ধরে টানতে লাগলো।
– এই এদিক দিয়ে গেলে বুথ পাবো না তো।- ঐ তোমার বুথ হলিক্রসের সামনেও পাবা। বেশি কথা বলবা না, চলো আমার সাথে।
– অগত্যা…..কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছেচি। কাজী অফিসে ঢোকার আগে ফারিয়ার দিকে তাকালাম। শুকনো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
– বাসায় কিছু হয়েছে নাকি? হুটট করে এমন সিদ্ধান্ত কেনো নিলা.?
– (চোখ পাকিয়ে তাকালো আমার দিকে) ঐ তোকে না বলেছি বেশি কথা না বলতে? চুপচাপ বিয়ে করবি।
ফারিয়ার কথাশুনে আম্মুর মুখের কথাটা মনে পড়ে গেল। কখন যে একটা ঢোক গিললাম সেটা মাথায় আসেনি।
হয়ত এখন বিয়েটা হতে পারে।কিন্তু বিয়ের পর কি হবে?
– ফারিয়া,- হুমম- ইয়ে মানে বলছিলাম কি, বিয়ের পর তুমি কোথায় থাকবা? তুমি তোমার বাসায় চলে যাবা.?
যদি এমন হয় তাহলে তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে ফেলি। না হলে আবার দেরি করে বাসায় ফিরলে আম্মু পিটাতে পারে।
– ঐ হাদারাম, মেয়েরা বিয়ে করে কি বাপের বাড়ি থাকার জন্য নাকি বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য?
– ওহ হা তাই তো,,তাহলে কোথায় থাকবা?
– কেনো তোমার বাসায়..- ইয়া আল্লাহ, আমি শেষ- চুপপ,,বিয়ে করলে করো না হলে আমাকে হারাবে..কথাটি শুনে চুপ করে গেলাম।
৪ বছর ৬ মাস ১৩ দিনের রিলেশন, তাই বিয়ে তাকেই করতে হবে। এমন সময় সিরিয়ালে ডাক পড়লো। তারমানে বিয়ে করতেই হচ্ছে।
– এই বিয়ে করতে কতটাকা লাগতে পারে? (আমি)
– আমি কি আগে বিয়ে করেছি নাকি? যত্তসব.. (রাগ দেখিয়ে)
– ওহ শুনেছি নাকি হাজার চারেক লাগে। ওকে ব্যাপার না, যাও সাক্ষী নিয়ে এসো। (আমি)
– ঐ আমি কি সাক্ষী নিয়ে ঘুরেছি নাকি?- সাক্ষীও আমাকে ডাকতে হবে?
– না তো আমি ডাকবো..?কি ঝামেলারে বাবা, বিয়েতে এত ঝামেলা জানলে বিয়ে করতে আসতাম না।
এখন আর বেরুতেও পারবো না। তাই কল দিলাম এক বন্ধুর কাছে, বন্ধুটি আবার পুলিশ। কিছুক্ষন পর সে আসলো।
– দোস্ত তোর ভাগ্যটা সেই ভালো।- কেনো? (আমি)
– আরে গর্দভ এত তাড়াতাড়ি আসছি মানে এইখানেই ডিউটিতে ছিলাম। আর সাথে দুজন কনস্টেবল এনেছি।- ভালো করেছিস..অবশেষে বিয়ে হয়ে গেল।
খুব উত্তেজিত ফিল করছি। কাজি অফিস থেকে বের হলাম।- ঐ দোস্ত তুই থাক, আমরা গেলাম কাজ আছে। (বন্ধু)- যাস না ভাউ।
– কেনো তোমার বন্ধুকি থাকবে নাকি?- আচ্ছা যা দোস্ত তবে ট্রিট নিবি না?- এখন না, ভাবির হাতের রান্না খাবো যা বাসায় যা।
বাসার কথা মনে পড়তেই আমার হাটু কাপা শুরু হয়ে গেল। তখনি মনে হল কেনো যে বিয়ে করতে এসেছি? ভালোই ভালোই বিয়েটা তো হয়ে গেছে।
কিন্তু ফারিয়াকে কই রাখবো? বাসায় গেলে আমাকে কুচি কুচি করে কাটবে আম্মু।- কি ভাবছো..- তোমার কথা।- আমার কথা মানে?
– ভাবছি তুমি আর কতক্ষন পর বিধবা হবা সেটা।
– ঐ কি বললি..?- আরে শোনো না, বাসায় গেলে আম্মু তো কুচি কুচি করবে তাই আরকি..- চলোতো বাসায় চলো।
– হুমম ঠিক আছে যাও তাইলে। (আমি)- মানে?- তুমি তোমার বাসায় আর আমি আমার বাসায় তাই না.?
– ঐ তোকে কি বিয়ে করেছি নিজের বাসায় থাকবো বলে..?
চলো বলছি….ফারিয়ার হাত ধরে নিজের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।
ভয়ে আমার সব কাপছে। কলিংবেল বাজিয়ে যেই না দৌড়াতে যাবো তখনি..- কি ব্যাপার তুমি? (আম্মু)
– আপনি এখানে? (ফারিয়া)- আমার বাসাতে আমি না তো কে থাকবে?- আপনার বাসা এটা? তার মানে আপনিই আবিরের আম্মু?
– হুমম, কিন্তু তুমি এখানে কেনো?/ওদের কথা শুনে পাটা যেনো দাড়িয়ে গেল। না পারছি দৌড়াতে না পারছি সরাতে।
একবার ফারিয়ার দিকে তাকালাম একবার আম্মুর দিকেতাকালাম। সবাাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিজেকে সত্যিই এলিয়েন মনে হচ্ছে। তবে আমি তো তাদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।- কি হল বলো তুমি এখানে কেনো?
(আমি আম্মুর পক্ষ হয়ে ফারিয়াকে কথাটি বললাম)- মানে কি.? (কোমরে হাত গুজে)- আম্মু তুমি কি চিনো একে? (আমি)
– হুমম চিনি..- তাহলে মনে হয় বিপদে পড়ে এখানে এসেছে। আম্মু তুমি থাকতে দাও পরে না হয় দেখা যাবেকথাটি শেষ করে ফারিয়ার দিকে তাকালাম।
চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম পরে খবর আছে আমার।
– ঐ বেয়াদপ, ও বিপদে পড়ে আসছে তাই না? গায়ে বিয়ের শাড়ি, আর তোর হাত ধরে আছে কি হয়েছে?
– আম্মু আসলে মানে হয়েছে টা কি, ইয়ে মানে..- আম্মু আমরা বিয়ে করেছি? (ফারিয়া)- কিহহহহ…আম্মুর চিৎকার শুনে ছিটকে সরে আসলাম।
ভাবছি কি করা উচিৎ, তখনি আম্মু বললো..- ঐ তুই কি জানিস এই মেয়েটাকে কদিন পর তার বাবা মা বিয়ে দিবে?- কি জানি, হয়ত নাওদিতে পারে। (আমি)
– চুপপ,, কদিন আগেই তো ফারিয়াকে বিয়ের জন্য ওর বাসাতে আমি ওর আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য গেছিলাম।
– সত্যিই আম্মু..? তুমি আমার গুলুপুলু আম্মু, ছেলের কথা কত ভাবো, আমার জন্য মেয়ে দেখতে গেছিলে..
– ঐ চুপপ,,তোমার জন্য নাহ, অন্য একটি ছেলের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য তোমার আম্মু আমার আব্বুর সাথে কথা বলতে যায়।
তাই তো তোমাকে বিয়ে করেছি আজ। কিন্তু জানতাম না তুমি এনার ছেলে।
– হায় হায়,,বলে কি এসব..আম্মু তুমি এটা করতে পারলে..? নিজের বউমাকে এভাবে অন্যের হাতে তুলে দিতে ছেয়েছিলে..?
একবারো ভাবলে না আমার সিঙ্গেল বড় খাটটার কি হবে? হুহহহ…
– ঠাসসসস (আম্মু)এটা কি হল? কোনো নোটিশ ছাড়ায় থাপ্পড় খেলাম? ফারিয়ে মুচকি হাসছে, আর এদিকে আমার বারোটা বাজছে..
– যাই হোক ছেলেটা এখন করেই ফেলেছে সব তখন আর কি. (আব্বু) – যাক বাবা আব্বু এসে একটু সাপোর্ট করছে তাহলে।
– নিলীমা ভিতরে ঢুকতে দাও, আমি ফারিয়ার আব্বু আম্মুদের খবর দিচ্ছি।
(বেশ কিছুক্ষন পর)- আমার মেয়ে কোথায়? (ফারিয়ার আব্বু)- আব্বু আমি তো এখানে।
– ঠাসসসস..তুই এমন একটা কাজ করবি ভাবতেই পারিনি। বেয়াদপ মেয়ে কোথাকার, মান সম্মান সব শেষ করেছিস।
– আহহা,,কি করছেন ভাইসাব,, ওরা বাচ্চা মানুষ ভুলটা করেই ফেলেছে, এখন তো আর বলে কাজ নেই, বরং চলুন আমরা মেনে নেই। (আব্বু)
– সবাই চুপ, এর দিকে আমি একবার ফারিয়ার দিকে তাকাচ্ছি আর একবার আমার দিকে। ব্যাপারটা নোটিশ করেই ফারিয়া বললো..
– এই এমন করছো কেনো?
– দেখছি..
– কি?
– দেখছি আমরা কোনদিক দিয়ে বাচ্চা আছি এখনো।
– হিহিহিহ,,বাচ্চাই তো..
– বাচ্চা বলো না বউ, কদিন পর নিজের বাচ্চা দিয়ে ঘর ভরিয়ে দেবো।
– চুপপ ফাজিল…
– আচ্ছা ঠিক আছে, তবে এভাবে মেনে নিতে পারবো না। আমি ফারিয়াকে নিয়ে যাচ্ছি, অনুষ্টান করেই তবে তাকে আনতে হবে।
চল ফারিয়া..(ওর আব্বু)- আচ্ছা ঠিক আছে..আব্বু
– ফারিয়ে চলে গেল, আর আমি হাবার মত ঠাই দাড়িয়ে ভাবছি,,এটা কি হল..?
বউ আমার, আমার বাসাতে না রাইখে বাপের বাড়ি গেল?? আমার বিয়ের খরচের কি হবে??
শুধু প্রায় পাঁচ হাজার টাকা নষ্ট করলাম। মনডা চাইতেছে ওর বাপের বাসাতে ডাকাতি করি। ধুরর ভাল্লাগে না।
সিঙ্গেল খাটটার কথা মনে হতেই বুকের মাঝে হু হু করে উঠল, ধুরর সেই আবার কদিন ফোনে প্রেম আলাপ করতে হবে।
যত্তসব..ভাবলাম আজ বাসর হবে তা না,,,ধুরররর…..