বিয়ে

বিয়ে

–এই রানা তাড়াতাড়ি উঠ। তোর বউ আসছে (মা)
–আরে মা সকাল সকাল ঘুমটাও ভেঙে দিও নাতো (আমি)
–চোখ মেলেই দেখ না।
–মা তুমি জানো সকাল ১০টার আগে ঘুম থেকে উঠা নিষেধ আমার।
–কোন ডাক্তার বলছে? দেখ তোর বউ আসছে।

আমি চোখ খুলে সুরাইয়াকে দেখে ভুত বলে চিৎকার দিলাম। আমাকে বাঁচাও মা ভুত, ভুত। তখনই মা আমার কানটা টেনে ধরলো।

–চোখ ভালো করে মেলে দেখ (মা) আমি চোখ ভালো করে দেখলাম। না,এটা আসলেই সুরাইয়া।

–তুমি এখানে কি করে আসলে সুরাইয়া (আমি)
–কেনো?বড় ভূল করছে বুঝি ও (মা)
—আমাকে তোমার বাড়ি আনবে না? (সুরাইয়া)
–না,মানে,,,
–হইছে এবার চলে আয় নাস্তার টেবিলে। (মা)

তারপরই মা সুরাইয়াকে নিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখি মা আর সুরাইয়া বসে হেসে গল্প করছে। আমিতো মনে মনে কয়েক বার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কি জানি করে মা।আমি নাস্তা করতে গিয়ে বসলাম।

–আরে তুমি এতো ভয় পাও কেনো? মা কি তোমায় মারবে নাকি (সুরাইয়া)
–আমি ভয় পাই নাকি। তবে,,,,
–তো রানা আমাকে না জানিয়ে বউও ঠিক করে রাখছো। আর আমাকে বলো বিয়ে করবা না। (মা)
–না, মানে,,,
–দেখছেন মা কেমন বাদর ও (সুরাইয়া) এর মধ্যে মাও ডেকে ফেলছে আল্লাহ জানে আমার নামে কি সব বিচার দিছে ও মনে মনে ভাবছি।

—আচ্ছা, এই সব বাদ দাও নাস্তা করি সবাই। (মা)
—ঠিক আছে, নাস্তা করে ওকে দিয়ে আসি (আমি)
— আমি কালই সুরাইয়ার পরিবারের সাথে কথা বলবো (মা)

আমি চুপ করে নাস্তা করতেছি। সবার নাস্তা শেষ হলে সুরাইয়াকে নিয়ে রিক্সা করে তাকে বাসায় দিয়ে আসতে চললাম। আমি আর সুরাইয়া রিক্সায় বসে আছি।

–আচ্ছা মার সাথে কবে দেখা তোমার (আমি)
—আজই প্রথম কথা (সুরাইয়া)
–কি করেরে?
–সকালে দেখলামতো কি করেরে গাদার মতো ঘুমাও। আমি সকালে কয়েকবার কল দিছি তুমি কল ধরো না। তারপর তোমার মা ধরছে। তারপর,,,,,,

–হ্যালো।(আমি)
—কে তুমি (মা)
–আমি সুরাইয়া।
–সুরাইয়াকে?
—রানার সাথে,,,,,,,,,
–বুঝতে পারছি গাদাটা এখনো ঘুমায়। (মা)
—আচ্ছা তাহলে রাখি।
—একটা কাজ করো মা তুমি এখনোই চলে আসো আমাদের বাসায়। (মা)
—কথা শুনে বুঝলাম মা খুব ভালো তাই সোজা বাসায়।

—–এই সবব হলো সকালে (আমি)
—হ্যাঁ। দেখছো তুমি ভয়ে বলো না মাকে আর মা কত ভালো (সুরাইয়া)
—আচ্ছা, ঠিক আছে।

আমি সুরাইয়াকে বাসায় দিয়ে চলে আসলাম বাসায়। পরেরদিনই মা সুরাইয়ার বাসায় কথা বলে কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ের কাজটা শেষ করে দিলো। যাক এবার সুরাইয়াকে নিয়ে অনেক ঘুমাবো একসাথে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা বিয়ে করা আজ শেষ হলো সেই ইচ্ছা। সন্ধ্যা হতেই আমি আমার রুমে বসে আছি। সুরাইয়া মায়ের সাথে বসে কথা বলছে। একটু পর মা সুরাইয়াকে নিয়ে আসলো। আমিতো মহাখুশী।

—রানা একটা কথা মনে আছে (মা)
—-কি কথা মা?(আমি)
—তুমি যখন বললা বিয়ে করবা আরো ছয়মাস আগে তখনের কথা। আমার কলিজাটা ধুরধুর করতেছে। আমি ভাবছি মা হয়তো মনে নাই তাই বিয়ে করাই দিছে সুরাইয়াকে।

—-না মা, অন্যকথা বাদ দাও আমরা খেয়ে শুয়ে পরি।
—তা হবে তখন আমার শর্ত ছিলো বিয়ে করলে একজন থাকতে পারবে এই ঘরে।
— মা তুমিও না (আমি)
—তা হবে না। এখন থেকে সুরাইয়া থাকবে। বাসায় তুমি থাকতে পারবে না। আমি মনে মনে ভাবছি এইবার বুঝি ঘর ছাড়া হবো।

—আজকে রাতটা থাকতে দাও না। কাল থেকে শর্ত মানবো।(আমি)
–তা হচ্ছে না। আমি একজনের জ্বালা সহ্য করবো দুজনের। না

আমি মনে মনে ভাবছি সব দোষ ওর। কত আরামে ঘুমাতাম। এবার ঘুমাতে হবে রাস্তায়। আমি আর কি করবো শর্তের কারনে আগে বিয়ের কথা বলি নাই। আজ বাড়ি ছাড়া। আমাকে ঘর থেকে
বের করে দিচ্ছে ।

–তুমি বলো না সুরাইয়া।(আমি)
—দেখো আমি বাড়ি থেকে যেতে চাই না। আমি একাই থাকতে পারবো তুমি যাও লক্ষী (সুরাইয়া)

একটু পরই সুরাইয়া আমার রুমে আর আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে মা দরজা লাগিয়ে দিলো। নিজেকে নিজে দোষ দিলাম। সব দোষ আমার ঘুমের দেরি করে ঘুম থেকে উঠার কারণে মার এই শর্ত। মাঝ রাত হয়ে আসছে আমার ঘুম বলছে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরতে। এখন কি করি ঘুমাবো কোথায়। আমি চুপিচুপি এসে আমার রুমের জানালায় ঢুকা দিতেই সুরাইয়া জানালা খুলে দিলো।

–দরজাটা খুলো না ভিতরে আসি (আমি)
—-দেখো, আমি পারবো না। তুমি কোথাও শুয়ে পরোরো আমার ঘুম আর ভাঙতে এসো না (সুরাইয়া)

এই বলেই জানালা লাগিয়ে দিলো। কি করবো আর উঠানের পাশে খড়ের উপরই ঘুমিয়ে পরলাম। নিজের বউও বুঝলো না। সকালে চোখ মেলে দেখি চারদিকের হাসঁ মুরগীর ডাকছে। আরে এখন মাত্র ৫টা বাজে। উঠানে কি আর ঘুম হয়। আমি উঠে গিয়ে দরজায় নক করলে মা দরজা খুলে।

—এখনো সকাল হয় নি ১০টায় এসো নাস্তা করতেতে (মা) বলেই দরজা লাগিয়ে দিলো।

অনেকক্ষণ ঘুরে এসে সকালে নাস্তা করে বের হয়ে গেলাম। সারাদিন কেটে গেলো রাত হতে খেয়ে নিলাম ভাবলাম আজকে হয়তো আর এমন করবে না। আমি রুমে বসে আছি।

—ঘর থেকে বের হও (মা)
–আজকে থাকতে দাওও না মা। গতকাল একটু ঘুম হয়নি (আমি)
— যা বলছি তা করো।

আমি ঘর থেকে বের হলাম। ভাবছি আজকে মনে হয় সুরাইয়া দরজা খুলে দিবে। মাঝ হলেই মা গভীর ঘুমে থাকলে। মাঝ হতেই আমি রুমে পাশেশে এসে সুরাইয়াকে ডাক দিলাম। শুনতে পারছি পারছি সুরাইয়া নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কয়েকবার আস্তে আস্তে ডাক দিলে ও জানালা খুলে দেয়।

—- বউ না ভালো তুমি দরজা খুলে দাও একটু আদর করবো তোমায় (আমি)
—-প্রেম করার সময়তো একটুও মিষ্টি কথা বের হয় নাই আমার আদর করতে আসছো। যাও আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। (সুরাইয়া)

এই বলেই বউটা জানালা লাগিয়ে দিলো। ভাবলাম মিষ্টি করে বললে দরজা খুলে দিবে। বিয়ে করলাম মনে করছি বউকে নিয়ে আরামে ঘুমাবো। এখন দেখি ঘুমানো জায়গাও নাই। রাগে কষ্টে চললাম রেলস্টেশন। দরকার হলে ওখানেই শুয়ে থাকবো আর আসবো না। আমি চলছি আর বলছি,,,,, যা শালা জীবনে আর বিয়েই করবো না। বিয়েই ঘুমের বড় শত্রু ।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত