রাতে ঘুমানোর সময় ভাবলাম কাল শুক্রবার সকালে দেড়ি করে ১০ টায় উঠবো। কিন্তু,সকালে ৮ না বাজতেই আমার বউ তার রেডিও চালু করে দিছে।
– এই অর্ণব উঠো অফিসে যাবে না? এই কি হলো? পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিবো কিন্তু।
– ইসস! আজকে শুক্রবার বিরক্ত করো নাতো। ঘুমাতে দেও প্লিজ।
– ঘুম বের করছি তোমার দাড়াও। এই বলে এক জগ ঠান্ডা পানি ডেলে দিলো
– ইয়াল্লাহ হাবিবি বলে চিতকার দিয়ে উঠলাম। এই চিতকার শুনে রিমির হাসি দেখে কে। হাসতে হাসতে সে মাটি তে লুটিয়ে পরছে এমন অবস্থা। খুব ভালোবাসি পাগলিটাকে। বিশেষ করে যখন তার ভুবন ভুলানো হাসি দেয়। সব কিছু ভুলে যাই। তার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলাম আর কিছু বললাম না।
– কি এখন ঘুমাও। উঠে পরলে কেনো? সে কখন থেকে ডাকছি তোমাকে। (একটু অভিমান করে)
– কেনো কি হয়েছে? আর ভালো করে ডাকলে কি আমি উঠতাম না?
– প্রথমে তো ভালো করেই ডাক দিলাম উঠলে না তো?
– (চোখ ডলতে ডলতে বললাম) আচ্ছা কি হইছে বলো?
– আগে ফ্রেস হয়ে আসো। পরে বলছি।
-ঠিক আছে।
আমি অর্ণব একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে মুটামুটি ভালো একটা পদে চাকরি করছি। আর এই হলো রিমি আমার ভালোবাসার জানের টুকরা। খুব চঞ্চল। যদিও আমরা সেম এইজ। তবে তার ছেলে মানুষি গুলো খুব ভালোলাগে। ২ বছর আগে ভালোবেসে দুই পরিবারের মত নিয়ে আমরা বিয়ে করি। তাকে আর মা কে নিয়ে আমি ঢাকায় থাকি। আর আমার মা তাকে নিজের মেয়ের মতো করেই ভালোবাসে। এই হলো আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
– কি হলো ঘুমিয়ে পরছো নাকি?
– এইতো প্রায় শেষ। আচ্ছি।
– হুম তাড়াতাড়ি। (৫মি পর)
– হুম বলো। কি বলবে?
– আগে চলো নিচে যাই।
– আরে টেনে নিয়ে যাওয়ার কি হলো যাচ্ছি তো। সোজা রান্না ঘরে নিয়ে এসে বলছে-
– আমি রান্না করবো আর তুমি আমার সাথে গল্প করবে। আমার একা একা রান্না করতে ভালো লাগে না। (মন টা খারাপ করে)
– কিহহ? এর জন্য সকালে ঘুম থেকে তুলে আনলে (একটু রাগ করে)
– আরে রাগ করছো কেনো? কথাই তো বলতে বলছি রান্না তো করতে বলি নাই।
– আমি এর প্রতিশোধ নিবোই।
– আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ো। এখন আমার সাথে গল্প করো।
– আরে বাবা সারাদিনই তো গল্প করি। এই রান্না ঘরে গল্প করার মানে কি।
– চুপ যা বলছি তা করো। (একটু হেসে উত্তর দিলো)
– আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
মাঝে মাঝে ভাবি এই পাগলি মেয়ে টা নিশ্চয় আমার দুর্বলতা টা জানে। বুঝতে পরে। সে তার মতো করে রান্না করছে। আর বক বক করছে। আর আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে উত্তর দিচ্ছি “ভালো, হুম, খুব ভালো”। হঠাৎ করে মাথায় কি যেনো দিয়ে ঢিল দিলো।
– এই এখানেও ঘুমাচ্ছো?
– তাই বলে আলু দিয়ে ঢিল দিবা?
– হুম দিবো। কোন সমস্যা? আমার হাজবেন্ট কে আমি মারবো। তোমার কি?
– প্রতিশোধ নিবো (রাগ দেখিয়ে বললাম)
– ওরে বাবালে বাবুটা রাগ করছে নাকি? আচ্ছা স্যরি প্লিজ।
– রান্না করো।
একটু পর আমি খেয়াল করলাম রিমি ঘেমে যাচ্ছে। আমি এই ফাকে একটা ছোট পাখা ধরলাম তার মুখে। তার চুল গুলো বার বার উরে যাচ্ছিলো আর চোখের উপর গিয়ে পরছে। আবার হাতে মশলা তাই সরাতে পারছে না। যার কারণে রাগে ফুলে যাচ্ছে। আমি এই সুযোগে আগের টার প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম। তার চুল গুলো নিয়ে খেলছিলাম ।
– আমার ফেন লাগবে না তুমি অফ করো।
– না। তুমি ঘেমে যাচ্ছো ।
– থাক লাগবে না। চুলের জন্য কাজ করতে পারছি না। তুমি অফ করো।
– ঠিক আছে। এবার তার গুজে রাখা শাড়ী টা খুলে দিলাম আর সে রেগে আগুন।
– আবার?
– হুম।
– প্লিজ ঝালিয়ে নাতো। রান্না করতে পারছি না। সব সময় ঝালাও তুমি। আজকে এমন করলে আর খাওয়া লাগবে না।
– তোমাকে ঝালাবো নাতো কাকে ঝালাবো সপ্তাহে এই দিনটা পাই তোমাকে ঝালানোর জন্য। আর আমাকে ডেকে আনছো কেনো?
– কাকে ঝালাবে জানি না আমাকে ঝালাবে না বাছ। (রাগ করে)
– ঠিক আছে, গেলাম তাহলে।
– এই এই কই যাও? (হাতে টান দিয়ে)
– ঝোলানোর মানুষ খুজতে যাই। তোমাকে তো ঝালাতে দিবে না।
– না। কোথাও যাবা না।
– তাহলে কাকে ঝালাবো?
২০ সেকেন্ডে ভেবে উত্তর দিলো
– আমি রান্না করবো আর তুমি আমাকে ঝালাবে (একটু অভিমান করে)
– খুশি হয়ে বললাম ঠিক আছে চলো তাহলে প্রথম থেকে শুরু করি।
– আমারো সময় আসবে ( একটু ঘুমরা মুখ করে বললো)।
– দেখা যাবে। (সকাল চলে গেলো এই ভাবেই) দুপুর খাবার পরে বিছানায় শুয়েছি মাত্র আবার রিমির আক্রমণ।
– এই এখন কি ঘুমাবে?
– হুম, ছুটির দিন একটু ঘুমাই।
– না। ঘুমানো চলবে না। চলো ঘুরতে যাবো।
– কি মসিবত। এই দুপুরে ঘুরার কোন ইচ্ছা আমার নাই। ভাগো এখান থেকে।
রিমি উঠে চলে গেলো। কি ব্যাপার এতো ভালো হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম নিশ্চয় বড় কোন আক্রমণ করবে। একটু পর মা কে নিয়ে হাজির।
– কিরে রিমি কে নয়ে ঘুরতে যাছ না কেনো। কি সমস্যা।
– এই দুপুরে কিভাবে যাবো। রোদ কমলে নিয়ে যাবো নি। (মা র কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
কথা শুনার ইচ্ছা নাই। না জানি কি কি বলে নিয়ে আচ্ছে) এই দিকে দেখি রিমি ৩২ পাটি বের করে মজা নিচ্ছে। ৪ টা বাজতে না বাজতেই তাড়া দেওয়া শুরু করলো। এই অর্ণব উঠো। রেডি হবে না। এতো সুন্দর করে মাথায় হাত রেখে বললো যে না করতে পারলাম না। হাসবেন্ড দের এই একটাই প্রোব্লেম। আমি আর ভিন্ন হই কিভাবে। খেলায় করলাম রিমি নীল রঙের একটা শাড়ী দুই হাতে কাচের চুড়ি আর কপালে ছোট একটা টিপ পরছে। একদম অসাধারণ সুন্দর যাকে বলে।আর আমাকে একটা পাঞ্জাবী পরালো জোর করে। তার কোন প্রসংশা করলাম না। তাই একটু মুখ গুমরা করে আছে। নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। আহসান মঞ্জিল, বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক ঘুরে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলাম। রিমি রিকশায় আমার বাম হাত জরিয়ে ধরে আমার কাধে তার মাথা দিয়ে রাখছে। আমার মনে হলো পৃথীবির সব থেকে সুখি মানুষ আমি। সুখি হতে গেলে আর কি লাগবে জানি না। আমি রিমি কে পেয়েই অনেক সুখি আছি। বাস্তবে কখনো রাজকন্যা দেখি নাই কিন্তু আমার জীবনে সত্যি কারে রাজকন্যা পেয়ে গেছি। রিমি কি যেনো মিট মিট করে বলছে একটু পর পর। আমার সেদিকে কোন খেয়াল নেই আমি তাকে নিয়ে চিন্তায় ব্যাস্ত।
– এই আজকে রাতে হরোর মুভি দেখবা।
– কিহহ!!! তুমি না ভুত ভয় পাও?
– না। আজকে পাবো না। আজকে দেখবো।
– ঠিক আছে। কান্না করতে পারবা না কিন্তু?
– ওকে।রাতে খেয়ে মা তার রোমে চলে গেলো। আমি আর রিমি মিলে ভুতের মুভি দেখছি। The Unborn. সে আমার বাম হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে। আর একটু পর পর চোখ বন্দ করে রাখছে।
– এই দেখো তো ভুত টা চলে গেছে কিনা।
– তুমি ভুত দেখবে না। তাহলে ভুতের মুভি দেখে লাভ কি।
– ইসসস!! এতো কথা বলো কেনো? দেখো না। এমন সময় একটা ভয়ংকর সাউন্ড হলো।
– আ আ আহ!!!!!
– বন্দ করো প্লিজ দেখবো না আমি। (কান্না করে করে)
– ইসস। পাগলি টা আবার ভয় পাইছে। বলছিলাম না কান্না করা যাবে না।
– চলো ঘুমাবো।
– এখন কেন? আমি মুভি শেষ না করে যাবো না৷
– না না প্লিজ।
– তুমি ঘুমাতে যাও রোমে।
– একা যেতে পারবো না। চলো না। আমি মনে মনে হাসসি তার কান্ড দেখে।
– চলো। টিভি অফ করে তাকে নিয়ে রোমে যাচ্ছি।
– প্লিজ আমাকে ধরে নিয়ে যাও। আবার ওই পিচ্চি টা চলে আসবে!(মুভি তে দেখা ভুত পিচ্চির কথা)
– আচ্ছা চলো।
ঘুমানোর সময় রিমি আমার বুকে এসে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আমি তার মাথার লম্বা চুল গুলো তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। নিজেকে আবারো সুখি মানুষ মনে হচ্ছে। কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। এই ভাবেই চলছে আমার আর রিমির সংসার।
অফিসে গেলে মেয়েটা এতো বার ফোন করবে। দুপুরে খেয়েছি কিনা। কি করছি। তার সব জানতে হবে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ছেলে মানুষি করবে আর আমাকে ভালো লাগার চিন্তায় ভরিয়ে তুলবে। মাঝে মাঝে তার মাথায় অদ্ভুত ইচ্ছা জাগে – রাত ১২ টার সময় রাস্তা ফাকা থাকলে হাত ধরে হাটবে। মন খারাপ করবে বলে আমিও বারন করি না। আর করলেও শুনবে না। অনেক গুলো ভালোবাসি তোমাকে রিমি। মা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। সে নিজেও মায়ের অনেক খেয়াল রাখে। আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া এতো সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য।