বি‌য়ের প্যাঁচালী

বি‌য়ের প্যাঁচালী

“অাম্মু অামা‌কে বি‌য়ে করাবা না?” কথাটা ব‌লেই জি‌ভে কামড় দেয় রায়ান। মা অ‌গ্নি‌চো‌খে তা‌কি‌য়ে থা‌কেন কিছুক্ষণ,

: তোর মত ব‌দের কা‌ছে কে মে‌য়ে দি‌বে?
– উপরতালার মে‌য়ে‌রে ভাল লাগ‌ছে।
: সু‌রমা?
– হ, বিয়া করাই‌লে কও নাইলে ভাগাইয়া নিয়া য‌ামু।
: তুই কি চড় খা‌বি না‌কি ঝাড়ুর বা‌ড়ি?
– বি‌য়ের স্বাগরানা খামু।
: রা‌হেল দে‌খে যা তোর গুণধর ভাই রায়ান কি ব‌লে।
– অাম্মু সর‌তো, ঘর গোছা‌তে হ‌বে।
: বি‌য়ে করবা না বাছাধন?
– তোমার দামরা ছে‌লের বি‌য়ে দাও অা‌গে তারপর অা‌মার কথা ভে‌বো।

মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে রুম থে‌কে বে‌রি‌য়ে যান। রায়ান যত ফা‌জিল হোক এই বিষয়টায় ফাজলামী ক‌রেনা। কারণ কিছ‌ু অতীত অা‌ছে যা মুছ‌তে যুগ যুগ ‌পে‌রি‌য়ে যায়। ‌ঠিক দশ বছর অা‌গে এমন কিছুটা একটা ঘ‌টে গে‌ছে যার প্রায়‌শ্চিত্ত ক‌রে যা‌চ্ছে প‌রিবা‌রের সবাই। এক‌দিন রা‌হে‌লের জন্য পা‌ত্রী দেখ‌তে যায় সবাই। পাত্রীর বড় ভাই রায়া‌নের বন্ধু। একেই ব‌লে বন্ধুত্ব থে‌কে বেয়াইঅালা। পাত্রী, পাত্রীর বড়ভাই, পাত্রর ছোটভাই সবাই একই ক্লা‌সের। যথাসম‌য়ে পাত্রী দেখা শুরু হ‌লো। সবাই রাজী হ‌লেও রায়ান বাসায় এসে জানায় সে রাজী না। কারণ এই মে‌য়ে‌কে তার সংসারী ম‌নে হয়‌নি।

মা তেমন কোন গুরুত্ব দি‌লেন না ছোট ছে‌লের কথার। ধুমধাম ক‌রে বি‌য়ে করা‌নো হ‌লো। ক‌য়েকমাস হে‌সে‌খে‌লে চ‌লে গেল। হঠাৎ কি জন্য এক‌দিন রায়া‌নের ভা‌বি রায়া‌নের মা‌য়ের সা‌থে ত‌র্কে জ‌ড়ি‌য়ে যায়। একপর্যা‌য়ে অশ্লীল ভ‌ঙ্গিমায় কথা বল‌তে শুরু ক‌রে তার ভা‌বি। সেটা দে‌খে রায়ান এগি‌য়ে যায়, একদম চুপ ভা‌বি, অাম্মা‌কে নি‌য়ে অার একটা কথা বল‌লে ফুটব‌লের মত লা‌থি দি‌য়ে বের ক‌রে দিব। মা‌য়ের সা‌থে এভা‌বে বেয়াদ‌বি। ভা‌বি চুপচাপ রু‌মে চ‌লে যায়। রায়ান রা‌গে ফুফা‌তে থা‌কে। রা‌হেল বাসায় এসে ঘটনা জি‌জ্ঞেস কর‌লে রায়ান সব খু‌লে ব‌লে। রা‌হেল অার কিছ‌ু না ব‌লে রু‌মে গি‌য়ে শু‌য়ে থা‌কে। সে ঘটনার ছমাস চ‌লে গে‌ছে। হঠাৎ ভা‌বি এক‌দিন বা‌পের বা‌ড়ি চ‌লে যায়। সেই যে গি‌য়ে‌ছে অার ফে‌রে‌নি। অ‌নেকবার চেষ্টা কর‌লেও তারা জানায় তা‌দের মে‌য়ে‌কে না‌কি তারা অার দি‌বেনা। ভাইয়া‌কে বল‌লে সেও কিছু ব‌লেনা। এইভা‌বে চুপচাপ ১০টি বছর পার হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে। ত‌বে রায়ান সবসময় ঘরটাকে মা‌তি‌য়ে রা‌খে। তবুও যেন কিছু একটার কম‌তি। “মা তোমার কষ্ট হয়না?”

: কি‌সের কষ্ট?
– রান্নাবান্না কর‌তে?
: হয়‌তো, কিন্ত কি অার করার।
– ভাইয়া‌কে বুঝাও নয়‌তো অা‌মি ওপরতলার ওটা‌কে ঘ‌রে তু‌লে ফেল‌বো অামার বউ ক‌রে।
: ছি বাবা। ছোট ভাই প‌ড়ে বি‌য়ে ক‌রে।
– মা. . .
– সেই কপাল অামার নেই বাবা।

অাবার সব চুপচাপ, এই রা‌হে‌লের বি‌য়ের জন্য কত টালবাহানা যে কর‌তে হ‌চ্ছে রায়ান‌কে। এমন না যে রা‌হে‌লের জন্য রায়া‌নের বি‌য়ে অাট‌কে অা‌ছে। রায়া‌নের কোন প্রে‌মিকা নেই। ওপরতলার সুরমা ওর খুব ভা‌লো বন্ধু। দুজ‌নের বাসায়, ছা‌দে খুব ভাল সময় কাটায়। গ‌ল্পের ট‌পিক সবসময় ক্রি‌কেট অথবা মু‌ভির উপরই থা‌কে। ত‌বে সুরমার বান্ধবী র‌নিতা‌কে দেখ‌লে রায়া‌নের খুব ফা‌টে। কত্ত কিউট একটা মে‌য়ে এই বয়‌সে কেন বি‌য়ে ক‌রে ফে‌লে‌ছে ভে‌বে পায়না রায়ান। এক‌দিন বি‌কে‌লে মা ও রা‌হেল নাস্তা কর‌ছে। এমন সময় রায়া‌নের হাত ধ‌রে সুরমার প্র‌বেশ। রায়া‌নের পড়নে পান্জাবী অার সুরমার পড়‌নে শা‌ড়ি। মা অার রা‌হেল টাশ‌কি খে‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে গি‌য়ে‌ছে। “মা, ভাইয়া তো বি‌য়ে কর‌বে না তাই অা‌মিই ক‌রে নি‌য়ে‌ছি।”

: কি বল‌ছিস এসব?
– বাংলায় তো বল‌ছি।
: ঘ‌রে বড় ভাই রে‌খে তুই এটা কি ক‌র‌েছিস।
-ওকে দি‌য়ে হ‌বেনা মা, তু‌মি সুরমা‌কে বরণ ক‌রো।
: কুত্তার বাচ্চা তুই বের হ‌য়ে যা।
– হা‌নিমু‌নে তো কাল‌কে যা‌চ্ছি অাজ না।
: অামার ঝাড়ুটা অান‌তো রা‌হেল। এবার রা‌হেল উঠে এসে মা‌কে বসাল,
: মা মাথা ঠান্ডা ক‌রো।
– ভাইয়া বুঝাও তু‌মি মা‌কে।
: তুই ভিত‌রে যা।
– মা, যা হবার হ‌য়ে‌ছে, অা‌মি সুরমার মা বাবা‌কে ডা‌কি। ফোন পে‌য়ে সুরমার মা-বাবা ছু‌টে এলেন,
: ‌কোথায় অামার গুণধর মে‌য়ে, বাহি‌রে অায় হারামজা‌দি।

“অামার বউ‌কে কিছু বল‌লে ভাল হ‌বেনা শশুরমশাই” ভিতর থে‌কেই উত্তর দেয় রায়ান।  সুরমার বাবা অসহায় ভ‌ঙি‌তে তা‌কি‌য়ে থা‌কে রায়া‌নের মা‌য়ের দি‌কে।রাত ১টা পর্যন্ত বৈঠক চল‌লো। রায়ান দরজায় কান পে‌তে সব শুন‌লো। বৈঠ‌কের সার সং‌ক্ষেপ হ‌লো খুব শিগগীর রা‌হেল‌কে বি‌য়ে করা‌নো হ‌বে। তত‌দিন রায়ান-সুরমার বিষয়‌টি গোপন থাক‌বে। সুরমা ওর বাবা-মার কা‌ছে থাক‌বে। প‌রে সময় ক‌রে সুরমা‌কে ঘ‌রে তুলা হ‌বে। সব‌শে‌ষে সুরমার মা দরজায় টোকা দি‌লেন,

: বাবা রায়ান,
– জী অাম্মা।
: সুরমা তো ছোট, ক‌দিন অামার কা‌ছে থাক।
– কেন?
: অা‌মি ও‌কে কিছু শিখাই অা‌গে?
– অাপ‌নি নেহা‌য়েত অামার পছ‌ন্দের তাই অাপনার কথা মে‌নে নিলাম, নয়‌তে…।
: যাই অামরা তাহ‌লে, অ‌নেক রাত হ‌য়ে‌ছে।
– বাসর দিন কিন্ত হ‌য়ে গে‌ছে, না‌তিপু‌তি অাস‌তে দেরী নেই।

যা করার তাড়াতা‌ড়ি কর‌বেন, শুভরা‌ত্রি। রুমের সবাই হা হ‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে রই‌লো। সকা‌লে নাস্তার টে‌বি‌লে কোন কথা নেই। মা‌কে বারবার প্রশ্ন ক‌রেও উত্তর পা‌চ্ছেনা রায়ান। সবার জন্য যেন অদৃশ্য হ‌য়ে গে‌ছে রায়ান। এক পর্যা‌য়ে মা অ‌তিষ্ঠ হ‌য়ে যখন চোখ লাল ক‌রে তাকা‌লেন প‌রি‌স্থি‌তি সামলা‌তে রা‌হেল মুখ খুল‌লো,

: রায়ান খাবার সময় কথা বল‌তে নেই।
– কথা না বল‌লে অামার খাবার হজম হয়না জাননা!
: পড়া‌লেখা তো শেষ, অামার ব্যবসায় সাহায্য ক‌রো।
– কি‌যে বল, অামার কি সে বয়স অা‌ছে।
: বি‌য়েটা তো ঠিকই ক‌রে ফে‌লে‌ছো।
– তাই‌তো, অামার বউটা কি ক‌রে দে‌খে অা‌সি।

ব‌লে উঠে গেল রায়ান। মা ও রা‌হেল দুজ‌নেই গম্ভীর হ‌য়ে ব‌সে রই‌লেন। ম‌নে ম‌নে রায়ান‌কে দু‌য়ো দি‌তে থাক‌লো, হারা‌মি তোর জন্য এখন অামারও বি‌য়ে কর‌তে হ‌চ্ছে। রায়ান যথারী‌তি ছা‌দে ব‌সে অাড্ডা দি‌চ্ছে সুরমার সা‌থে,

: বউ একটা চুম্মা দাওনা।
– থাপড়াইয়া তোর সব দাঁত ফে‌লে দিব।
: ছিঃ জামাই‌কে এভা‌বে ব‌লেনা।
– তুই অামার জামাই?

রায়ান ফুটা বেলু‌নের মত চুপ‌সে যায়। অার কোন কথা বাড়ায় না। কারণ সুরমা য‌থেষ্ট নম্র ভদ্র হ‌লেও রায়ান‌কে চো‌খের দৃ‌ষ্টি দাড়াই ভস্ম ক‌রে দি‌তে পা‌রে। বাসার সবাই তৈরী হ‌চ্ছে পাত্রী দেখ‌তে যা‌বে। রা‌হেল, রা‌হে‌লের মা, সুরমা তার মা,বাবা সবাই,

: অাপ‌নে রে‌ডি ‌হোন নাই? মা‌য়ের প্র‌শ্নে টাশ‌কি খায় রায়ান।
– কোথায় যা‌চ্ছি অামরা?
: অাপ‌নি যে অপকর্ম কর‌ছেন সেটার প্রায়‌শ্চিত্ত কর‌তে।
– বিয়া করা ফরজ কাম।
: কুত্তার বাচ্চা। নামাজ পড়াও তো ফরজ। তুই তো জুম্মার নামা‌জেও যাসনা।
– দে‌খো অামার জন্য নি‌জের স্বামী‌কে গা‌লি দিবানা।
: রা‌হেল অামার ডালঘুট‌নি টা নি‌য়ে অায়‌তো।
– অা‌মি ব্ল্যাক কুর্তা প‌ড়ে যা‌বো, ইয়ো।

ব‌লেই রু‌মের উদ্দেশ্য ভো‌দৌড় দিল রায়ান। পাত্রী দেখা চল‌ছে। মে‌য়ে উজ্জল ফর্সা, প্রাইমারী স্কুু‌লের শি‌ক্ষিকা। হাস‌লে গা‌লে টোল প‌ড়ে, রায়ান নি‌জেই প্রে‌মে প‌ড়ে গে‌ছে। বড় ভাইর হবু স্ত্রী তাই প্রে‌মে পড়া বারণ কার‌ণে অকারণ। ক্রাশ খাই‌তে তো বারণ নাই। রায়ান ভাব‌ছে মে‌য়ে এতো সুন্দর মে‌য়ের ছোট‌বোন তো অা‌রো সুন্দর হ‌বে। ভাব‌তে ভাব‌তে সুরমার বাবা‌কে প্রশ্ন ক‌রে,

: অাং‌কেল কন্যার কোন ছোট‌বোন নেই?
– নাহ একটা ভাই অা‌ছে অা‌র্মি‌তে মেজর।
: অাইয়াম্মা, অভাগা যে‌দি‌কে তাকায় নদীর জল শুকাইয়া যায়।
– বাবা ভূ‌লে গে‌ছো তোমার ঘ‌রে বউ অা‌ছে?
: অামার ঘ‌রে কই দি‌লেন, নি‌জের ঘ‌রেই তো নি‌য়ে রাখ‌ছেন।

সুরমার বাবা অার কথা বাড়া‌লেন না মান ইজ্জ‌তের ভ‌য়ে। সবারই পাত্রী পছন্দ হ‌য়ে‌ছে। কিন্তু রাহে‌লের মা পাকা কথা দি‌লেন না। তা‌দের বাসায় অাসার দাওয়াত দি‌য়ে সে‌দি‌নের মত বিদায় নি‌লেন। রাত দুটা বা‌জে। রায়ান লু‌কি‌য়ে হবু ভা‌বির নাম্বার নি‌য়ে এসে‌ছ‌ে, ভাব‌লো একটু বা‌জি‌য়ে দে‌খি। ‌রিং হ‌চ্ছে,

: হ্যা‌লো অ‌দ্রিতা?
– হ্যা‌লো কে বল‌ছেন?
: অা‌মি তোমার জান গো।
– ওহ তু‌মি, কি ক‌রো জান? এরকম রেসপন্স পে‌য়ে ভ্যাবাচ্যাকা খে‌য়ে গে‌ছে রায়ান। কোনম‌তে সাম‌লে নি‌য়ে বল‌লো,
‌: কিছুনা জান, তোমার না‌কি বি‌য়ে ঠিক হ‌য়ে‌ছে?
– অা‌রে ওসব কিছু না,
: তু‌মি অামা‌কে ভূ‌লে যাবা বাবু?
– নাহ অা‌মি বি‌য়ের দিন পা‌লি‌য়ে অাস‌বো তোমার কা‌ছে।
: স‌ত্যি বল‌ছো? লাবু জানু এত্তগুলা।
– লাবু ঠু জানু, রা‌খি?
: ও‌কে গুড নাইট।
– গুড নাইট।
: উম্মাহ।
– উম্মাহ।

‌ফোন কে‌টে হতবাক হ‌য়ে ব‌সে থা‌কে রায়ান। এই মে‌য়ে তো চালু চিজ মাইরী। শেষ‌মেষ দেখা গেল স‌ত্যি পা‌লিয়ে গেল বি‌য়ের অাসর থে‌কে। অামার ভাই‌য়ের সে‌কেন্ড ইনিংসটা অার শুরুই হলনা। ২ মি‌নিট পর হবু ভা‌বি অ‌দ্রিতার নাম্বার থে‌কে মে‌সেজ, “কেমন দিলাম দেবর‌জি? অাপনার অাম্মু অা‌গেই ব‌লে‌ছি‌লেন অামার বড় ছে‌লে ফে‌রেস্তা অার ছোট ছে‌লে অাজরাইল। হাহা শুভরা‌ত্রী।” রায়ান অাজ শ‌কের উপর অা‌ছে। সারাজীবন সবাই‌কে গোল দি‌য়ে এসে‌ছে। অথচ অাজ তার হবু ভা‌বি তা‌কেই খে‌লে দি‌য়ে‌ছে। সুরমার ফোন,

: রায়ান!
– ব‌লো বউ।
: ফাজলামী রাখ, ভা‌বি কেমন লে‌গে‌ছে।
– সেইরাম SecC।
: অসভ্য পোলা ফোন রাখ।
– লাবু বউ, ঠাডা।

রাত দুটা, পাব‌জি চল‌ছে পুরোদ‌মে। নি‌জেই নি‌জে কথা বল‌ছে, ভাই ফ্রাইং প্যানটা অামা‌রে দেন, সবগুলা‌রে মাইরা তক্তা বানামু, ভাই অার দুইটা, অাজ‌কে রা‌ত্রে চি‌কেন ডিনার মিস নাই। হঠাৎ দরজায় নক,

: রায়ান।
– মা তু‌মি ঘুমাও‌নি?
: রায়ান অ‌দ্রিতা‌কে তোর কেমন লে‌গে‌ছে?
– ভালই মা, সবার খেয়াল রাখ‌বে।
: তাহ‌লে কাল‌কে অাস‌তে ব‌লি?
– হ্যা কাল‌কেই অাং‌টি বদল ক‌রে নাও।
: এই হান্ড‌ি-কড়াই মারামা‌রি রে‌খে ঘুমা।

মা এবার রায়া‌নের মতামতটা‌কেই প্রাধান্য দি‌লেন। কারণ ছে‌লেটা যতই ফাজলামী করুক এক দেখায় মানুষ পরখ কর‌তে পা‌রে। তি‌নি চান না অা‌গের মত ঘটনার পূনরাঃবৃ‌ত্তি ঘটুক। খুব সকা‌লে সবাই উঠে প‌রে‌ছে। রা‌হেল বাজার কর‌তে গে‌ছে। মা অার সুরমা ঘর‌দোর গোছা‌তে ব্যস্ত। সুরমা একসময় রায়া‌নের রু‌মে অাস‌লো,

: এই উঠ, ঘর গোছা‌বো মেহমান অাস‌বে।
– মা‌য়ের কন্ঠ চেন্জ হ‌য়ে গে‌লো কিভা‌বে?
: তা‌কি‌য়ে দেখ অাম‌ি তোর মা নাহ হারা‌মি।
– ওহ বউ তু‌মি, চা কোথায়?
: হা‌তে ঝাড়ু দেখ‌ছোস?
– হ্যা সুন্দর ক‌রে ঝাড়ু দাও।
: এক্ষু‌ণি গোস‌লে যা নাহ‌লে এটা দি‌য়ে তো‌রে সাইজ করমু।
– অা‌রে এন‌গেজম্যান্ট তো অামার নাহ, অা‌মি প‌ড়ে উঠ‌লেও চল‌বে।

‌কোম‌রে হাত দি‌য়ে অ‌গ্নিদৃ‌ষ্টি‌তে তাকায়। রায়ান চুপচাপ উঠে টাওয়ালটা নিয়ে শুড়শুড় ক‌রে বাথরু‌মে ঢু‌কে যায়। বের হ‌য়ে দে‌খে পু‌রো রুম সুন্দর ক‌রে সাজা‌নো। মে‌য়েটার হা‌তে জাদু অা‌ছে বল‌তে হ‌বে। ‘তুই দে‌খি পাক্কা বউ হ‌য়ে উঠে‌ছিস’ সুরমা একটা অলসদৃ‌ষ্টি দি‌য়ে রান্নাঘ‌রে চ‌লে যায়। দুপুর হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে মেহমান এসে প‌ড়ে‌ছে। ভা‌বি, ভা‌বির অাম্মা, অাব্বা ওরা কেবল তিনজন। অার এদি‌কে রা‌হেল, রা‌হে‌লের মা, সুরমা, সুরমার মা-বাবা। রা‌হেল বেগু‌নি কালা‌রের একটা পান্জাবী প‌ড়েছে, খুব মা‌নি‌য়ে‌ছে। ক‌ণের যে‌হেতু কোন বোন নেই সে‌হেতু রে‌ডি হওয়ার কোন তাড়া নেই রায়া‌নের। যা পড়‌নে ছিল তাই পড়া র‌য়ে‌ছে। সবাই মি‌লে অ‌নেক অাড্ডা দি‌য়ে খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ হ‌লো। অাং‌টি বদল ও হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে। অাগামী শুক্রবার বি‌য়ে ঠিক করা হ‌য়ে‌ছে। ঘ‌রোয়াভা‌বে বি‌য়েটা করা‌নো হ‌বে। ক‌য়েকজন অাত্মীয় স্বজন থাক‌বেন শুধু। দুই প‌ক্ষের চাওয়া‌তেই এমনটা সিদ্ধান্ত নেয়া হ‌য়ে‌ছে। অ‌দ্রিতার বাবা বল‌ছেন,

‌: কিছুই যখন নি‌চ্ছেন নাহ, রায়ান‌কে একটা বাইক কি‌নে দেই?
– অা‌রেকটা মে‌য়ে পয়দা কর‌তে পা‌রেন নাই, অাস‌ছেন বাইক দি‌তে (ম‌নে ম‌নে)
: রায়ান বাবা কিছু বল‌লে?
– নাহ অা‌মি বাইক চালা‌তে পা‌রিনা।
: তু‌মি, রা‌হেল বাবা, অ‌দ্রিতা, সুরমা মাম‌নি তোমরা ছাদ থে‌কে ঘ‌ু‌রে অা‌সো। অামরা একটু কথা ব‌লি।
রায়ান অার সুরমা দুজ‌নে দা‌ড়ি‌য়ে দেখ‌ছে অ‌দ্রিতা অার রা‌হেল‌কে। কেউ কোন কথা বল‌ছে নাহ।
রায়ান বিরক্ত হ‌য়ে উঠে,

: হাদারাম বি‌য়ে ঠিক হ‌য়ে‌ছে, এক কিস তো বানতা হ্যা।
– তোর মাথায় খা‌লি এসব ঘু‌রে।
: হ্যা, চি‌লে‌কোটায় চল। দেখাই তো‌কে।
– চুপ হারমী।

এভা‌বেই দিন কাট‌তে থা‌কে। খুব সাদামাটা ভা‌বেই বি‌য়েটা হ‌য়ে যায়। বি‌য়ের দু‌দিন পর অ‌দ্রিতার মা বাবা এসে‌ছে‌নে বেড়া‌তে। সুরমার মা,বাবা ও এসে‌ছেন। রা‌হেল ও উপ‌স্থিত। সব‌াই টুকটাক অাড্ডা দি‌চ্ছে ব‌সে। রায়ান সুরমা‌কে একটা চিম‌টি দি‌লো,

– কি হ‌য়ে‌ছে তোর?
: ফুসকা খা‌বি?
– হ্যা এখ‌নি চল।
: হিল এনে‌ছিস না‌কি ফ্ল্যাট? দৌড়া‌তে পার‌বি?
– বাপ এবার কি ঘটা‌বি?

রায়ান সবার এটেনশন নি‌য়ে ম‌ধ্যেখা‌নে দাড়া‌লো, তারপর সুরমার হাত ধ‌রে কা‌ছে নি‌য়ে দাড় করা‌লো। ‌ডিয়ার অাম্মু, রা‌হেল ভাইয়া, অাং‌কেল, অা‌ন্টি অা‌মি কিছু কথা বল‌তে চাই। ২০১৯ সা‌লে মানুষ এত সহজ সরল হয় কিভা‌বে? অা‌মি যে বললাম অা‌মি সুরমা‌কে বি‌য়ে ক‌রে‌ছি, তোমরা কেউ কাগজ বা কা‌বিন দেখ‌তে চাই‌লে না? অাস‌লে ভাইয়ার বি‌য়ের জন্য অা‌মি অার সুরমা এই নাটকটা ক‌রে‌ছি। সুরমা অামার বেস্ট ফ্রেন্ড ছি‌লো থাক‌বে। সুরমা এবার দৌড়া। ব‌লেই দৌড় লাগা‌লো, সুরমাও রায়া‌নের পিছন পিছন ছুট লাগ‌লো। সর্ব‌শেষ দৃ‌শ্যে দেখা গেল মা জুতা নি‌য়ে ছুট‌ছেন দরজার দি‌কে,

: হারামজাদা তোর ফাজলামীর স্বভাব গেলনা।
– ফাজলামী থে‌কে য‌দি ভা‌লে কিছু হয় তাহ‌লে ফাজলামীই ভা‌লো।

সন্ধ্যা হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে। ল্যাম্প‌পো‌স্টে সো‌ডিয়া‌মের বা‌তিগু‌লো জ্ব‌লে উঠে। দু‌টি চাতক পা‌খি ফুটপাত দি‌য়ে হাত ধ‌রে এলো‌মে‌লোভা‌বে হাট‌ছে। কা‌রো পা‌য়ে জুতা নেই। উদ্দেশ্য “ইম‌তিয়াজ মামার শাহী ফুচকা”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত