বিয়ে

বিয়ে

– আমাকে আজকেই বিয়ে করো নিলয়। (নিলা)
– আরে আজ কেনো? বিয়ে তো তোমাকেই করবো…তবে তার আগে তো বাসায় বলতে হবে নাকি?
– সে যা ইচ্ছে করো তুমি। আমাকে আজই বিয়ে করতে হবে তোমার।
– পাগল হলে নাকি?
– কেনো..চাকরি করো,তো বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়?
– কেন এখনি বিয়ে করতে হবে তোমায়?
– কারন, কাল নাকি আমাকে দেখতে আসবে।
– কিহহ..কিন্তু কাল কেনো?
– আরে আর বলোনো..আগের দিন বাসায় যেয়ে শুনি কোন মহিলা আমার জন্য ছেলে দেখেছে। তাই নাকি কাল তারা দেখতে আসবে।

– কোন মহিলা..
– জানিনা,,নামটা জেনো কি..
– কি নাম বলো,,আজই ঐ মহিলার সাথে কথা বলে দেখবো। সে কেনো আমাদের এভাবে বাঁশ দিতে চাচ্ছে? আমরা কি ওর পাকা ধানে গরু ছেড়ে এসেছি নাকি?
– ওহহ.. নামটা মনে পড়েছে.. নামটা হল নিলিমা..
– কিহহহহ..
– কি ব্যাপার নিলয় তুমি এভাবে দাড়িয়ে গেলে কেনো? বিয়ে করবে নাকি এখনি?
– আমি বাসায় যাচ্ছি রাতে সব জানাবো..

আমি আর কিছু না বলেই ঝটপট নিলার কাছ থেকে চলে এসেছি। অবশ্য সে পিছন থেকে বহুবার ডেকেছিলো। কিন্তু আমি আর না শুনেই চলে এসেছি। কারন, ও যার নাম বললো, সে হল আমার আম্মু। এখন পড়ে গেছি চিপায়। একদিকে আম্মুর পছন্দ করা ছেলে দেখতে আসবে..অন্য দিকে নিলা আমার গার্লফ্রেন্ড। কিযে করি? অফিস শেষ করে নিলার সাথে দেখা করে এখন বাড়িতে আসলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে খালি চিন্তা ঘুরছে। কিযে করি? কিভাবেই এসব প্যারা থেকে বের হবো বুঝতে পারছি না। (রাতের বেলা) খাবার টেবিলে বসে বসে এসব ভাবছি, তখনি আম্মু বললো..

– কাল একবার বাসায় থাকিস তো..
– কেনো?
– কাল আমার এক পরিচিতদের মেয়েকে দেখতে যাবো।
– আমাকে বিয়ে করাবা বুঝি? যাক এতদিনে সিঙ্গেল খাটটা একটু শান্তি পাবে।
– ঐ বেয়াদপ..কি বলছিস এসব?
– আরে তুমিই তো বললে..যে মেয়ে দেখতে যাবো কাল..
– দেখাচ্ছি তোর মেয়ে,,কাল আমার বান্ধবির ছেলের জনন্য মেয়ে দেখতে যাবো। সাথে তোকেও নিয়ে যাবো। একামানুষ তো তাই তুই থাকলে একটু ভালো হবে।
– মেয়ের নাম কি?
– কেনো..?
– নাহ মানে একটু খোজ খবর নিতাম আরকি। (যদিও জানি কে সে)
– নিলা…

হাইরে আল্লাহ আমার কি হবে? এ তো আমার পাকা ধানে গরু, ছাগল, সব লাগিয়ে দিলো রে। মনে মনে কেঁদে উঠলাম। আমি আর কিছু না বলেই খাওয়া ছেড়ে উঠে রুমে গেলাম। রুমে বসে বসে ভাবছি কি করবো এখন কাল তো সব বাঁশ যাবে। আর যদি আমি ওদের সাথে যায়, সেটা নিলা দেখে, তাহলে ধুরর আম্মুর উপর খুব রাগ হতে লাগলো..কি দরকার হুটট করে এসব আলগা পিরিত বাড়ানোর? নিজের ছেলের খাট এখনো হাহাকার করে ডাবল হওয়ার জন্য সেটা ওনার চোখে পড়ছে না। উলটো উনার বন্ধুর ছেলের জন্য মেয়ে দেখাতে যাবে। তবে মেয়েও আর খুজে পেলো না। যাকে ভালোবাসি তাকেই দেখানো লাগবে? এ কেমন বিচার? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারিনি।

– এই উঠ অফিসে যা..(আম্মু) চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আম্মু ডাকছে। কিন্তু সে অফিসে যাওয়ার কথা বলছে কেনো? আজ তো আমার বাঁশ খাওয়ার দিন। কিন্তু আম্মু এ বলছে কেনো?

– ঐ হাদারাম..উঠ।
– আম্মু অফিসে কেনো যাবো? আজ তো তোমার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।
– আর বলিস না, ছেলে নাকি আজ একটু ব্যস্ত তাই। আজ আর হবে না। দুইদিন পর যাবো।
– ইয়াহু…
– ঐ তোর কি হল?
– কিছু না আম্মু..

আর কিছু না বলেই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে অফিসে চলে গেলাম। নিলাকে ফোন দিয়ে বলতে হবে..আজ দেখা করার কথা। আর এরই মাঝে সব কিছু ঠিক করে নিতে হবে।

– নিলা..(আমি)
– হুমমম…
– মন খারাপ?
– জানিনা..
– আজ তো তোমাকে দেখতে আসছে না।
– আজ না কিন্তু দুইদিন পরে আসছে তো। আর ওয়েট, তুমি কি করে জানলে?
– মনে হল তাই..
– ওহহ
– হুমম আজ দেখা করবা, কথা আছে।
– ওকে..

কথাগুলো বলে লাইনটা কেটে দিলাম। কিন্তু কি যে করবো বুঝতে পারছি না। আম্মু টা না এমন হুট করে ঘটক হতে গেলো..তাও আবার নিলার বিয়ের জন্য।দেশে কি কোনো মেয়ে নাই নাকি? অফিস শেষ করে নিলার সাথে দেখা করতে গেলাম দুর থেকে দেখি নিলা মাথা নিচু করে বসে আছে। কাছে যেয়ে ডাক দিলাম.

– নিলা..
– হুমম..
– কিছু বলো না
– কি বলবো..
– আরে এই ঝামেলা থেকে কিভাবে বের হবো সেটা বলো একটু চুপ থেকে নিলা বললো…

– একটা উপায় আছে..
– কি উপায়?
– চলো আজই বিয়ে করে ফেলি।
– কিহহ..
– হুমমম তাহলে সব প্রবলেম শেষ..
– পাগল না পেট খারাপ..আমি আম্মুর সামনে কিভাবে নিয়ে যাবো তোমায়…কারন, আম্মু তোমাকে চেনে।
– আমাকে চেনে মানে?
– আরে আমার আম্মুই তো তোমার জন্য পাত্র ঠিক করেছে।
– কিহহহ…
– হুমমম
– তাহলে এখন কি হবে?
– তোমার আম্মুর নাম্বার দাও..
– কেনো??? (অবাক হয়ে)
– দিতে বলেছি দাও..
– নাও..

তখনি দেখলাম নিলা ওর..ফোন থেকে আম্মুকে কল দিলো..কয়েকবার রিং হওয়ার পর আম্মু ধরলো..ফোনের স্পীকার অন করাতে বুঝতেই পারছি সব।

– হেলো কে বলছেন? (আম্মু)
– আমি নিলা বলছি..
– ওহহ তুমি? বলো মা..
– আনটি আমি আজ পালিয়ে যাচ্ছি।
– মানে?
– মানে আমি এক হাদারামকে ভালোবাসি। তার সাথে আমি পালিয়ে যাচ্ছি। তাকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না।
– কি বেয়াদপ মেয়েরে..
– হুমম আমার বাসায় একটু জানাবেন প্লীজ..
– রাখ তুই ফোন..ফাজিল ফোনটা কেটে দিলো আম্মু। আর এ দিকে নিলা হো হো করে হাসছে..তখনি বললো..
– চলো..
– কোথায়..
– কাজী অফিস..বিয়ে করতে হবে।

আর আজ যদি না করো..তাহলে আমি এখনি সুইসাইড করবো। বিশ্বাস না হলে একবার না করে দেখো। আর পুলিশকে বলবো ফোন দিয়ে এখনি যে আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী। হায় হায় মেয়ে কই কি? আমারে তো ভয় দেখিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে তবে। একটা কথা ঠিক, আজ না করলে মনে হয় বাঁশ উলটো যেতে পারে। তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। বিয়ের কাজটা শেষ হল। কিন্তু কথা হল গিয়ে আম্মুকে কি বলবো আমি? নিলাকে যখন হাত ধরে বাসার সামনে নিয়ে আসলাম। তখনি বুকটা ধক করে উঠল। কারন, আম্মু তো একটু আগেই নিলাকে বেয়াদপ ফাজিল বললো,,আর তাকেই কিনা তার ছেলে সোজা বিয়ে করে আনলো.? কলিং বাজাতেই দরজা খুলে দিলো আম্মু..

– আম্মু..
– বল..ঐ তোর পিছনে কে রে ঘোমটা তিয়ে আছে? খাইছেরে..এখন কি বলবো…?
– মা আমি..(নিলা)
– একি তুমি? তুমি এখানে কি করছো..
– কি করছি মানে কি আম্মু..আমি তো আপনার ছেলের সাথেই পালিয়ে বিয়ে করেছি। ভাব খারাপ দেখে, আসতে আসতে সরে পড়ার ধান্ধায় আছি। তখনি আম্মুর ডাক..

– ঐ নিলয়ন্না..তুই এটা কি করলি??
– কেন আম্মু..আমি তো কিছু করিনি। যা করেছে তোমার ছেলে করেছে।
– ঐ তুই কি তাহলে আকাশ থেকে পড়েছিলি নাকি? হাদারাম তুই বিয়ে করে আনলি তাও আবার এই মেয়েকে? যাকে আমি অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিবো ভাবছিলাম.
– অন্য ছেলে কেনো আম্মু..নিজের ছেলে কে কি চোখে পড়েনি?
– দাড়া তুই..চোখে পড়াচ্ছি আমি।

আমি আর কিছু না বলেই দিলাম এক দৌড়..তবে বউকে রেখে আসলাম আম্মুর কাছে। কারন, আমি জানি আমার কতটা ভালো। সে যাই হোক, তিনি মেনেনে নিবেই। আর নিলা আম্মুকে ঠিকই মেনেজ করে নিবে।
আমি না হল বাসর করার সময় বাসায় যাবো। এখন দৌড়ে বাঁচি।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত