সকালে নাস্তার টেবিলে বসে মুখ গম্ভীর করে রেখেছি। রাত্রি আর মুহি মা মেয়ে দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে মুখ টিপে হাসছে। মুহির দিকে তাকিয়ে ধমক দিলাম, ‘খেতে বসে কেউ হাসে? চুপচাপ নাস্তা খা নাহলে তুলে আছাড় মারবো।’ মুহি হাসি থামিয়ে বলল, ‘আম্মুও তো হাসছে। তাহলে কি আম্মুকেও আছাড় মারবে?’ ‘চুপচাপ নাস্তা খেতে বলেছি।’ রাত্রি নাস্তা শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে যাবার সময় ছোঁ মেরে আমার মাথা থেকে ক্যাপ খুলে নিয়ে গেলো। মুহি আমার দিকে তাকিয়ে এবার শব্দ করে হাসতে শুরু করলো। আমি অসহায়ের মতো দু’হাত দিয়ে মাথা ঢেকে রাখলাম।
কাল রাতে দুটো অঘটন ঘটেছে। অফিস শেষ করে সেলুনে ঢুকেছিলাম চুল কাটাতে। বৃদ্ধ সেলিম নাপিতকে আমি বেশ পছন্দ করি। চুল কাটার পরে তিনি খুব সুন্দর করে মাথা বানিয়ে দেন। চুলের মধ্য দিয়ে আঙুল চালাচালি করার সময় মুঠোয় চুল ধরে আস্তে আস্তে টানেন আমি আরামে চোখ বুজে থাকি। সেখানে ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। সেলুনের চেয়ারে বসতেই সেলিম বললেন, ‘নতুন মেশিন কিনছি। চুল কাটতে সুবিধা হয়। মেশিন দিয়ে চুল কাটবো?’ চুল কি দিয়ে কাটবে তাতে আমার মাথা ব্যাথা নেই। আমি অপেক্ষায় থাকি কখন তিনি মাথা বানানো শুরু করবেন। আমি সাত পাঁচ না ভেবে বললাম, ‘জ্বি কাটুন।’সেলিম চাচা মেশিন অন করে চুলে লাগিয়েছেন মাত্র ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি মাথা ঘুরে পরে গেলেন। সবাই মিলে ধরাধরি করে তাকে তুলার চেষ্টা করছি। একজন পেছন থেকে বললেন, আরে তার তো মৃগী রোগ আছে। চামড়ার জুতা নাকের সামনে ধরেন। আমি পায়ের জুতা খুলে দিলাম। ততোক্ষনে মানুষের ভীড় জমে গেছে। একজন বলল, ‘ভাই জুতায় কাজ হবেনা মোজা খুলে দেন।’
আমি পায়ের মোজা খুলে দিলাম। কিন্তু সেলিম চাচার হুশ ফিরছেনা। লোকজন ধরাধরে করে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিএনজিতে তুললো। তাড়াহুড়ায় তারা যে আমার এক পাটি জুতা মোজা নিয়ে গেছে সেটা খেয়াল করিনি। একটু পর দেখলাম লোকজন আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কারন বুঝতে পারলাম আয়নার দিকে তাকিয়ে। সেলিম কাকু অজ্ঞান হবার সময় আমার চুলের মাঝ বরাবর ভারত বাংলাদেশের বর্ডার বানিয়ে দিয়েছে। মাথায় রুমাল বেঁধে এক পাটি জুতা পায়ে বাসা ফিরলাম। রাত্রি দরজা খুলে আমাকে দেখে বলল, ‘কি ব্যাপার সিনেমার সাইড গুন্ডাদের মতো মাথায় রুমাল বেঁধেছো কেন?’ রাত্রির কথার জবাব না দিয়ে সোজা ঘরে চলে গেলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি ন্যাড়া করবো কি না। রাত্রিকে পেছন পেছন ঘরে ঢুকতে দেখে মাথায় টুপি পরলাম। চুলের এমন অদ্ভুত স্টাইল দেখার পরে রাতে খেতে ইচ্ছা করলোনা। লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গলো রাত্রি আর মুহির অট্টহাসি শুনে। আমি তাদের হাসি দেখেই মাথায় হাত দিলাম। নাহ্ টুপিটা নেই। বরং টুপির পরিবর্তে আমার চুলের দুপাশে দুটো ঝুটি করা।
একজন মানুষের সাথে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। সেই সময় মানুষটাকে সান্তনা দেয়া উচিত। আমার স্ত্রী রাত্রি বা মেয়ে মুহি কারো মাঝে মানবতার ‘ম’ টাও নেই। তারা হাসছে। আমি রেগে পাশের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। বিছানায় শুয়ে ঘুমাতে পারলাম না। পাশের ঘর থেকে রাত্রি মুহির হাসি শুনতে পাচ্ছি। ফানটা বাঁজছে, সালাবাবু কল করেছে। ফোনটা রিসিভ করে কিছুক্ষন হাসি শুনলাম। তারপর বললাম, ‘কিরে সালা কিছু বলবি?’ ‘ভাইয়া আপনার হেয়ার স্টাইলটা সেই হইছে। পুরাই অস্থির।’ ‘তুই দেখলি কিভাবে?’ ‘আপু আপনার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করছে। প্রচুর লাইক, কমেন্ট, শেয়ার হচ্ছে। আপনি তো পুরাই ভাইরাল।’ ফোনটা কেটে সাথে সাথে লগ ইন করে দেখি রাত্রি সত্যি সত্যি ছবি পোস্ট করেছে। ছবিতে আমি ঘুমাচ্ছি। আমার চুলের দুপাশে লাল এবং নীল ফিতা দিয়ে ঝুটি করা। মাঝখানে তিন আঙুল সমান ফাঁকা লম্বা লাইন। মনে হচ্ছে চুলের বাগানের মাঝ বরাবর কেউ লাঙ্গল চালিয়ে দিয়েছে। তবে রাত্রি ছবি তুলে ভাইরাল করে অন্যায় করেছে। দরজা খুলতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম।
রাত্রি বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছে। দরজায় দুম দুম করে দুটো লাথি দিয়ে বললাম, ‘রাত্রি দরজা খুলো। নাহলে ‘নাহলে কি?’ ‘তুই তো খাচ্চর মহিলা। আবার জিজ্ঞাসা করছিস নাহলে কি। ছবি ডিলিট কর বলছি।’ ‘পারবোনা।’ অনেকক্ষন দরজায় ধাক্কালাম কোন লাভ হলোনা। অবশ্য ঘন্টাখানেক পরে সে ছবি ডিলিট করে দিয়েছে তবে ততোক্ষণে আমি ভাইরাল হয়ে গেছি। এতোকিছুর পরেও তার শান্তি হয়নি। আমার মাথা থেকে ক্যাপ খুলে নিয়ে পালিয়েছে। মুহি আমার শার্ট টেনে বলল, ‘আব্বু একটা প্রশ্ন।’ ‘বল’ ‘আচ্ছা আব্বু তোমার চুলের মাঝখানে যে বর্ডার হয়ে গেছে। এখন এপাশে উকুনগুলো যদি ওপাশে যেতে চায় তাহলে কি তাদের পাসপোর্ট ভিসা লাগবে?’ মেয়ের এমন প্রশ্ন শুনে আমি হতাশ। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মুহি বলল, ‘আব্বু তোমার মাথার উকুনগুলো তো এখন আলাদা আলাদা দল। তাদের যদি কোন খেলা হয় তাহলে মাঝখানের ফাঁকা জায়গা কি তাদের স্টেডিয়াম হবে?’
‘নাহ্ সেখানে হবে ক্যান। তোকে আর তোর মা কে ধরে ন্যাড়া করে দিবো। তোদের মাথায় খেলা হবে। একটা স্টেডিয়াম বাম পাশের উকুনদের অন্যটা ডান পাশের উকুনদের। আর ফায়নাল ম্যাচ হবে তোদের স্কুলের হেড স্যারের টাকে। খুশি?’ মুহি আমার কথায় খুশি হতে পারলোনা। রাত্রি ঘরে এসে বলল, ‘দুটো খবর আছে। একটা ভালো একটা খারাপ।কোনটা আগে শুনতে চাও বলো।’ ‘যেটা খুশি বলো।’ ‘ঠিক আছে প্রথমে খারাপ খবরটা দিচ্ছি। তোমার চাচাতো ভাইয়ের ফোন এসেছিলো। বাসায় কিসের যেন বিচার বসবে। তোমাকে ডেকেছে।’ ‘এখন ভালো খবরটা বলো।’ ‘তোমার ভাতিজা সাকিব বিয়ে করতে চায়।’ ‘কি বললা?’ ‘যেটা শুনেছো সেটাই বলেছি।’
‘হারামিটা তো এখনো হাইস্কুল পার করতে পারলোনা তাতেই বিয়ের শখ হইছে। জুতা দিয়ে পিটিয়ে শখ মিটাবো হারামির।’ ‘যা খুশি করো এখন ক্যাপ দিয়ে চুল ঢাকো। তোমাকে দেখলেই খুব হাসি পাচ্ছে। সকাল থেকে অনেক হেসেছি। এখন হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করছে। আর হাসতে ইচ্ছা করছেনা। যখন হাসতে ইচ্ছা করবে আবার ক্যাপ খুলে নিবো।’ আমি মাথায় ক্যাপ দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। দুটো কাজ আছে। প্রথম কাজ হলো সাকিবকে ধরে ইচ্ছা মতো এটা মার দিতে হবে। তারপর তাকে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় যেতে হবে। সাকিব ঘরের মেঝেতে শুয়ে স্যাড সং শুনছে। ভাবিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ঘটনা কি?’ ‘ভং ধরছে। কারিনা কাপুর নাকি তাকে ছ্যাকা দিছে।’ ‘মানে কি?’
‘আমাকে কি বলছিস। ওকেই জিজ্ঞাসা কর।’ ঘরে ঢুকে ভাতিজার একটা পা ধরে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসলাম। পা ছেড়ে দিতেই ভাতিজা উঠে বসলো। ‘কিরে ছাগল কি হইছে তোর?’ ‘ছ্যাকা খাইছি চাচা। কারিনা কাপুর ছ্যাকা দিছে।’ ভাতিজার মাথার সমস্যা মনে হয় দিন দিন বাড়ছে। লক্ষণ ভালো না। ভাতিজাকে বললাম, ‘তোর চাচি বললো তুই নাকি বিয়ে করতে চাচ্ছিস?’ ‘চাইছিলাম। তারপর আব্বা মাইর দিছে। মাইর খাইছি দুঃখ নাই। কথা হইলো কারিনা কাপুরের কাছে ছ্যাঁকা খাইছি।’ পাগলের প্রলেপে কান দিতে নেই। সব কথা শুনে বললাম, ‘চল একখানে যেতে হবে। তোর বাপের বাইকটা বের কর।’
‘চাচ্চু আমার স্টোরিটা শুনবানা?’ ‘পরে শুনবো এখন চল।’
ভাজিতাকে নিচে চাচাতো ভাইয়ের বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখি পরিস্থিতি তেমন ভালো না। বেশ লোকজন বাসায়। মুরব্বিরা বসে আছেন। তাদের মুখে কোন কথা নেই। মহিলারা ঝগড়া করছেন। ঝগড়ার স্টাইল দেখে বুঝতে পারছি দুটো দল একটা আমাদের দল অন্যটা ভাইয়ের শশুড়বাড়ির দল। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো তারা কি বলছে কথা বুঝতে পারছিনা। চাচি বলছেন, ‘আলেলেলেলে’ ভাইয়ের শাশুড়ি বলছেন, ‘হুরররর হুস হুস’। মহিলাদের এই বিষয়টা বিনোদন মূলক। ঝগড়ার সময় যখন তারা আর কোন কথা খুঁজে পাননা তখন মুখ দিয়ে তাচ্ছিল্য করার জন্য অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ করে একে অন্যকে ভ্যাংচায়।
মহিলাদের এমন মুখ ভ্যাংচানো দেখে একজন লোক মনে হয় বেশ মজা পাচ্ছেন। সবার মাঝে বসে তিনি হাসছেন। আমাকে দেখে চাচাতো ভাই এগিয়ে এসে বলল, ‘ভাইয়া আসেন ভেতরে আসেন।’ ‘ভেতরে যাবোনা। ঘটনা কি?’ ‘ঘটনা আবার কি? আনিকার সাথে ঝগড়া তো প্রতিনিয়ত হচ্ছে। আজ ওর বাসার লোকজন এসেছে।’ ‘মাঝখানের ওই লোকটা কে? যে মুচকি মুচকি হাসছে?’‘আনিকার বড় মামা।’ ‘ধুরো কি বলিস। লোকটাকে দেখে তো ইয়াং মনে হচ্ছে। যাই হোক নাম কি?’ ‘নাম জানিনা।’ ‘ঠিক আছে তাকে এদিকে ডাক দে। কথা বলি।’ লোকটা কাছে আসতেই সালাম দিলাম, ‘মেক্সি মামা আসসালামুআলাইকুম।’ ‘ওয়ালাইকুম। কিন্তু আমার নাম তো মেক্সি না।’ ‘কি বলেন। আপনার ছোট বোন মানে আমার ভায়ের শাশুড়ির নাম তো মিনি তাইনা?’ ‘হ্যাঁ।’
‘তিনি মিনি হলে আপনি মেক্সি। তিনি ছোট তিনি মিনি আপনি বড় আপনি মেক্সি। মিমিমাম মেক্সিমাম সূত্র ধরে নাম আবিষ্কার করলাম। যাই হোক শুনেন মেক্সি মামা সবার মধ্যে আপনাকেই জ্ঞানি, শিক্ষিত মানুষ মনে হচ্ছে…’
‘কি যে বলো। এসব বলে লজ্জা দিচ্ছো।’ ‘আমার নিজেরি লজ্জা নেই আপনাকে দিবো কোথা থেকে?’ ‘কি?’ ‘কিছুনা। শুনেন আপনি ঝগড়া মিটমাট করে দিন। ঝগড়া জিনিসটা ভালো না।’ ‘মিটমাটের কিছু নেই। ডিভোর্স ছাড়া সমাধান হবেনা।’ বাইরে দাঁড়িয়ে মেক্সি মামার সাথে কথা বলছিলাম। দেখি ঘর থেকে ভাতিজা বের হচ্ছে। সাকিবকে ডেকে বললাম, ‘কিরে তুই ওই ঘরে গেছিলি ক্যান? আর তাড়াহুড়া করে কই যাচ্ছিস?’ ‘অযু করতে যাচ্ছি চাচ্চু। অযু নষ্ট হয়ে গেছে?’ ‘কিভাবে অযু নষ্ট হলো?’ ‘গালি দিছি অযু নষ্ট হয়ে গেছে।’
‘হারামি করছিস কি? কাকে গালি দিলি?’ ‘কাকে যে গালি দিলাম। ঘরে তো অনেক লোক। সবাই ঝগড়া করতেছে তাই আমিও কয়টা গালি দিলাম।’ ‘খাইছেরে। কি গালি দিছিস?’ ‘বুলডুজার বুলডুজার, সালা বুলডুজার। যাই অযু করে আসি।’ ‘দাঁড়া অযু করার আগে ইনাকেও কয়েকটা গালি দিয়ে যা।’ মেক্সি মামা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। ভাতিজা মেক্সি মামাকে গালি দিচ্ছে। অদ্ভুত সব গালি। আগে কখনো শুননি। মহিলারা ঝগড়া করে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। পরিস্থিতি এখন বেশ ঠান্ডা। সবাই চুপচাপ। ঘরের এক কোনে চাচাতো ভাই আর তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঘরে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে বসলাম। মেক্সি মামাকে কোথাও পেলাম না। ভাতিজাও নেই। গলা পরিষ্কার করে খুব গম্ভীর ভাবে বললাম, ‘ডিভোর্স হয়ে যাওয়াই ভালো। আপনারা কি বলেন?’ ‘ডিভোর্স মানে?’
‘দেখুন সমস্যাটা হলো তাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে। আসল কথা তাদের নিজেদের মাঝে মিল মহব্বত ভালোবাসা নেই। যদি থাকতো ঝগড়াটা তাদের j সীমাবদ্ধ থাকতো।’ চাচি আমাকে থামিয়ে বললেন, ‘কি বলছিস এসব?’ ‘তো কি বলবো? আপনাদের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। তোমরা ছেলের বউকে কখনো মেয়ের জায়গা দিতে পারেন না। কোন কিছুতে ভুল হলে খোঁটা দেন। নিজের মেয়ের যে কোন দোষ ঢাকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ছেলের বউ হলে সবাইকে বলে বেড়ান। একটা মেয়ে নিজের ঘর সংসার ছেড়ে এসেছে তার ছোট ছোট ভুল দোষগুলো দেখেও দেখতে নেই। দুঃখের বিষয় কি জানেন চাচি আপনারা মেয়ে হয়ে মেয়ের কষ্টটা বুঝতে চান না।’
‘তাই বলে যেটা বলবে সেটাই মানতে হবে?’ ‘মানার মতো হলে মানতে হবে। মানার মতো না হলে তাকে বুঝাতে হবে।’ ‘সে তো বুঝতেই চায়না। তার এক কথা, স্বামী যেখানে থাকে সেখানে তাকে নিয়ে যেতে হবে।’ ‘অন্যায় তো কিছু বলেনি। স্বামীর সাথে থাকতে চাইতেই পারে। যদি স্ত্রীকে নিজের কাছে রাখতে না পারে তাহলে পরে বিয়ে করতো। যখন স্ত্রীকে সাথে রাখার মতো সামর্থ হতো তখন বিয়ে করতো। এখনি কেন বিয়ে করলো?’ ‘তুই দেখি ওদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস। মেয়ে কি বুঝেনা যে তার স্বামী মেসে থেকে চাকরি করে। বউকে কি মেসে নিয়ে তুলবে? তাছাড়া সারাদিন অফিসে থাকে। নাইট ডিউটি থাকে। বউকে পাহাড়া দিবে কে? একা একা সারাদিন মেয়েটা বাসায় থাকবে?’
‘এসব কথা আপনার আমার বলে তো হবেনা। তাদের দুজনের কথা বলতে হবে। স্ত্রীকে সবকিছু বুঝিয়ে বলতে হবে। সমস্যার কথাগুলো বলতে হবে। একটা বান্দরকেও বুঝানো হলে বুঝিয়ে নানা ধরনের খেলা দেখানো যায়। তার জন্য বুঝাতে হবে। আর বুঝানোর সবচেয়ে বড় উপায় হলো ভালোবাসা। যেটা হয়তো তাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি। দোষটা হয়তো একজনের অথবা তাদের দুজনের। স্বামী স্ত্রীর সমস্যা তৃতীয়পক্ষ সমাধান করছে মানে তাদের মাঝে ভালোবাসার কমতি আছে।’
আমি আমার কথা শেষ করে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। বের হওয়ার সময় দেখলাম ভাই আর তার স্ত্রী দুজনে দরজার দুপাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একে অন্যের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে ভাতিজাকে খুঁজছি, গেলো কোথায়। ভাতিজা দূর থেকে দৌঁড়ে আসছে আর বলছে, ‘চাচ্চু বাইক স্টার্ট দাও।’ লক্ষ্য করলাম মেক্সি মামা ভাতিজার পেছন পেছন দৌঁড়ে আসছে। মেক্সি মামার মাথার ঘন কালো চুলগুলো নেই। এতো জলদি চুল গেলো কোথায়। আরেকটু হলে তিনি আমাদের ধরে ফেলতেন। ভাতিজা বলল, ‘চাচ্চু তার মাথায় আলগা চুল। খুলে নিয়ে আসছি। ব্যাটা বদলোক।’ ‘তুই কিভাবে বুঝলি বদলোক?’
‘তুমি গালি দিতে বলে ঘরে গেলা না। আমি গালি দিতে দিতে মনে পড়লো এই লোক প্রতিদিন আমার স্বপ্নে আসতো। স্বপ্নে এসে বলতো, ব্যাটা সাকিব হিসু কর হিসু সিইইইই। তারপর ঘুম ভাঙ্গলে দেখতাম বিছানায় হিসু করছি। আব্বার কাছে এই ব্যাটার জন্য মাইর খাইছি। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য চুল ধরে টান দিছি দেখি চুল খুলে চলে আসছে।’
সাকিবকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসার সময় কারিনা কাপুরের কথা জিজ্ঞাসা করে যা জানতে পারলাম- পাশের বাসার দোতলায় নতুন ভাড়াটে আসছে। ভাড়াটের এক সুন্দরী মেয়ে সারাক্ষন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। ভাতিজা প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করে। তার বাবা মানে আমার ভাইকে আজ বলেছে ওই মেয়েকে বিয়ে করবে। ব্যাস স্কুল পড়ুয়া ছেলের মুখে এমন কথা শুনে ভাই ধরে ছেলেকে পিটুনি দিয়েছে। প্রেমিক কিশোর ভাতিজা বাবার কাছে মার খেয়ে মেয়ের বাসায় উপস্থিত। কিন্তু গিয়ে দেছে দোতলার বারান্দায় কারিনা কাপুরের বিশাল পোস্টার। এতোদিন এই পোস্টারকে ভাড়াটের মেয়ে ভেবে ভাতিজা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। চলে আসার আগে নাকি পোস্টার থেকে কারিনা কাপুরের হাত দুটো ছিড়ে নিয়ে এসেছে। তারপর ফ্লোরে শুয়ে স্যাড সং শুনতেছিলো।
বাইকশুদ্ধ ভাতিজাকে রেখে সেলিম চাচার দোকানে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করে বাসায় ফিরলাম সন্ধ্যায়। রাত্রি দরজা খুলে হাসতে হাসতে মুহিকে ডেকে আনলো। দুজনে আমার ন্যাড়া মাথার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি পকেট থেকে সেলুন থেকে নিয়ে আসা শেভ করার খুরটা বের করে বললাম, ‘আয় তোদের দুজনকে একটু ন্যাড়া করে দেই।’
মুহিকে ধরে ন্যাড়া করে দিয়েছি। রাত্রি ভয়ে দৌঁড়ে মুহির ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বাপ বেটি দুই ন্যাড়া মিলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসলাম। এখন আবার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। রাত্রি এখনো দরজা খুলছেনা।