একটি তারার গল্প

একটি তারার গল্প

আরুষ ডেনমার্ক থেকে MBA পাশ করে দেশে ফিরতেই ওর বাবা মা ওকে চাপ দিতে থাকে বিয়ে করার জন্য .

আরুষ ওর বাবা মাকে বলে যে আগে একটা ভালো চাকরি পেলে তবেই বিয়ে করবে.ওর বাবা মা তাতে রাজি হয়ে যায়.

আরুষ নিজের দক্ষতায় ও ভালো ছাএ হওয়ার দরুন খুব তাড়াতাড়িই বাংলাদেশে একটা বড় কোম্পানীতে MD

হিসাবে চাকরিও পেয়ে যায়.ওর বাবা মা আবার ওকে চাপ দিতে থাকে বিয়ে করার জন্য .ও ওর বাবা মাকে বলে যে ওরা

যাকে ইচ্ছা তাকে পছন্দ করুক ও বিয়ে করে নেবে.ওর বাবা মা আগে থেকেই মেয়ে পছন্দ করে রেখেছিল নিজেদের

একমাএ ছেলের জন্য .মেয়েটির নাম লিরা .সে বাংলাদেশের চিটাগাং থাকে.মেয়েটি দেখতে খুব একটা সুন্দরী না হলেও

আরুষ এর বাবা মার মেয়েটিকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল বেতারে ওর গান শুনে.তারপর বহু খোজ নিয়ে মেয়েটির খোজ পায়

আর তারপর মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে নিজের ছেলের সাথে লিরার বিয়ে পাকা করে আসে.আরুষের বাবা মা শুধু লিরার গান

শুনেই না ওর শান্ত ও মিষ্ট আচরনেও ওকে নিজের মেয়ের মত আপন করে নিয়েছিল.লিরার বাবা মা আরুষের মতামত জানার

কথা বারবার বললেও ওর বাবা মা বলেছে যে ওদের ছেলে ওরা যাকে পছন্দ করবে তাকে কোনোদিনও ফিরিয়ে দেবেনা.লিরা

নিজের খারাপ দেখতে হওয়ার দরুণ ছোটোবেলা থেকে বন্ধু এবং অন্যান্যদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এসেছে .এমনকি ওর জন্য

আসা এক সমন্ধতেও ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল শুধু কালো হওয়ার জন্য .আর সেই সময় ওর নিজের মা ও ওকে অনেক কটু কথা

শুনিয়েছিল এর জন্য .ও কষট পেলেও মুখ বুঝে সব সহ্যও করেছিল কারণ লিরা কখনও নিজের কষটোটা কারুর সাথে ভাগ

করে নিতে পারেনি কোনোদিনও.নিজের ভিতরেই গুমরে গুমরে কষটো পেয়েছে শুধু.

ওদিকে আরুষ ছিল লিরার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা জগতের মানুষ .লিরা অল্পতেই খুশি থাকত কিন্তু আরুষ নয়.আরুষ বিদেশে

থাকাকালীন সময়ে ওর সহপাঠী এমিলি নামে এক বিদেশীনীর প্রেমে পড়ে.আরুষের শারীরক সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব দেখে কলেজের

বহু বিদেশীনীই ওর প্রেমে পড়লেও এমিলি ছিল তাদের মধ্যে থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা নিম্নবিও পরিবার থেকে আসা সাদামাঠা

মেয়ে.এমিলিকে প্রথম দিন কলেজে ওর পাশের বেনচে বসতে দেখেই আরুষ প্রেমে পড়ে গেছিল.এমিলি বাকি মেয়েদের মত উগ্র

সাজ না দিলেও ওর বাদামী খোলা চুল আর ওর মায়াভরা চোখ দুটো দেখেই আরুষ ওকে ভালবেসে ফেলেছিল.কিন্তু ভয়ে বলতে

পারেনি.একবছর কেটে গেলেও আরুষ মনে মনে এমিলিকে দুর থেকেই ভালবেসে যায়.কলেজের পরীক্ষায় এমিলি আর আরুষ

যৌথভাবে প্রথম হওয়ায় কলেজ থেকে ওদের দুজনকে কলেজের স্টুডেন্ড হিসাবে রিপ্রেজন্ড করে ইংলান্ডের একটি বড় কোম্পানীতে

এক সপ্তাহ কাজ করে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য পাঠায়.এমিলির সাথে প্রথমবার একা টুরে যাবে বলে আরুষ প্রচণ্ড খুশি খুশি থাকে.আরুষ

এমিলিকে ওর হস্টেল থেকে পিক আপ করে নেয় গাড়িতে.আজ এমিলিকে যেন একটু বেশি সুন্দরী লাগছিল.আরুষ দেখল অন্যান্য

দিনের মত এমিলি কোনোরকমে একটা জামা পড়ে চুলটা বেধে নেয়.আজ যেন ও একটু বেশিরকম সেজেছে.আরুষের মোহের মত

লেগে যায় আজ সম্পূর্ণ অন্য রূপে এমিলিকে দেখে.প্রায় ৬ ঘণ্টা জারনির পর ওরা ইংলান্ডে পৌছায় .এই এতটা পথে আরুষ এমিলির

পরিবার আর ওর জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানে.এমিলির জন্মো ইংলান্ডেই.আর ওর বাবা একজন বাস চালক.এমিলিরা ৫ ভাই বোন.

এমিলি সবার থেকে ছোট.ওর আগে ৩ বোন ও এক দাদা আছে.৩ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আর ওর দাদা একটা কারখানায় কাজ করে.

ওর মা ছোটোবেলায়ই মারা যায়.ওর বাবা ও রোজ কাজে যেতে পারেনা শরীর অসুস্থ থাকার জন্য .দাদার সামান্য আয়ে কোনোরকমে

দিন কাটত.তাই ওর আগের দিদিদের পড়াশোনা বেশিদুর যায়নি.এমিলি ১২ বছর বয়স থেকে বারে কাজ করে নিজের পড়াশোনা চালিয়েছে.

আর ষ্কুল পাশ করে টপার হয় পুরো ইংলাণ্ডের মধ্যে .তাই ইংলাণ্ড সরকার ওর পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে ওকে বৃওি প্রদান করে.

মত এমিলিও আরুষের দেশ ওর মা বাবা সম্পর্কে জানতে চাইলে আরুষ জানায় যে ওর বাবা বাংলাদেশের একজন ডায়মণ্ড
মার্চেণ্ট আর ওর মা বা দুজনেই খুব ভালো মানুষ .একদম আরুষের বন্ধুর মত.এমিলি আরুষকে বলে যে ও বাংলাদেশ গেলে ওর মা

বাবার সাথে নিশ্চয় দেখা করবে.

****
আরুষ আর এমিলি প্রথম দিন কোম্পানীর সবার সাথে মিট করে ও ওদের যৌথভাবে তৈরি প্রেজেনটেশন দেখালে কোম্পানীর বস

ওদের কাজ দেখে খুব খুশি হয়.উনি ওদের জব অফার করেন ওদের ডিগ্রি শেষের পর.আরুষ আর এমিলি অফিস থেকে বেরিয়ে

হোটেলে নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে.এতটা জারনির পর তারপর অফিসের কাজের চাপে ওরা টায়ার্ড হয়ে গেছিল.

***

পরেরদিন রবিবার হওয়ায় অফিস ছুটি ছিল.আরুষ এমিলিকে তার মনের কথা বলার এটাই সঠিক সময় বলে মনে করে.ও পুরো ফিলমি

স্টাইলে সবকিছু এরেনজ করে এমিলির জন্য .সারাদিন আরুষ এমিলির সাথে ঘুরে বেড়ায় আর প্রচুর মজা করে .এমিলির বাড়ি গিয়ে ওর

দাদা ও বাবার সাথেও দেখা করে.কিন্তু হোটেল ঢোকার আগে আরুষ এমিলির চোখ বেধে ওকে সারপ্রাইজ দেবে বলে ওর হাত ধরে ওকে

নিয়ে যায়.হোটেলের লনে এসে আরুষ এমিলির চোখ খুলে দেয়.এমিলি সামনে তাকিয়ে দেখে পুরো লনটা গোলাপ আর হার্টসেপ বেলুন

দিয়ে সাজানো আর চারদিকে সুন্দর আলো দেওয়া.ও অবাক্‌ হয়ে আরুষের দিকে তাকায়.আরুষ নিল ডাউন হয়ে ওর হাত ধরে একটা

আংটি দিয়ে বলে

“i love u emili.will u be my life partner”

এমিলি অবাক্‌ হয়ে যায়.ও নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা.ঝরঝর করে কেদে দেয়.আরুষ ভয় পেয়ে যায়.ও উঠে এমিলির চোখ মুছিয়ে বলে

“i’m soory emili..if u dont wanna be ..then i’ll not force u but don’t cry please .i cant see tears on ur face”

এমিলিকে ওকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে কাপা কাপা গলায় বলে

“i love u too since the frst day i saw you in college but i never thought that my luck is sooo good that i”ll got u as my life partner”

এমিলির কথা শুনে আরুষের ভয় কেটে যায়.ও এমিলিকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে.পুরো সন্ধ্যাটা ওদের হাসি মজায় কেটে যায়.৭ দিন পর

এমিলি আর আরুষ ফিরে আসে.আর একমাসের মধ্যেই পুরো কলেজে ওরা বেসট কাপেলের তকমাও পেয়ে যায়.কিন্তু একদিন সকালে

একটা ফোন আরুষের জীবনটাকে শেষ করে দেয়.

 

প্রতেকদিনের মত আরুষ সেদিনও সকালে উঠে নিজের টিফিন করে নেয়.আজ ও একটু তাড়াতাড়ি উঠেছিল কারণ আজ একটা বিশেষ

দিন ওর জন্য .শুধু ওর জন্য না এমিলি আর আরুষ দুজেনের জন্যই.আজ ওদের প্রথম এনেভারসারি.আজ থেকে ঠিক একবছর আগে

আরুষ ইংলাণ্ডে এমিলিকে প্রোপোস করেছিল.আরুষ আজ ওর আর এমিলির এই বিশেষ দিনটাকে আরো বিশেষ করে তোলার জন্য

অনেক কিছু সারপ্রাইজ প্লান করেছিল.সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাই আরুষ এমিলিকে কল করে কলেজের পিছনে নদীর ধারে আসতে

বলে দেয়.সেইমত বেশ খুশি মনে আরুষ টিফিন খেয়ে যেইমাত্র বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে ওর ফোনে একটা আননোন নমবর থেকে

ফোন আসে.ও ফোনটা তোলে

আরুষ-“Hello”

ফোনের থেকে-“hello .are you mr.arush?”

আরুষ-“yes.but who r u?”

ফোন-“i’m john from Denmark police .actually here in Steven road a accident happened before a few minutes ago of a lady.

her name is emili watson nd we got ur no from her cell”

আরুষ চিতকার করে ওঠে
“what???…how’s she??”

জন-“i’m sorry sir..she is died before taking her to hospital .i also informed her brother nd he is coming soon”

আরুষের হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়.ও মাটিতে বসে পড়ে অনেটক্ষণ চুপ করে বসে থাকে.তারপর উঠে গিয়ে নিজের পড়ার টেবিলে

গিয়ে কলেজের নামে একটা চিঠি লেখে যে ও কলেজ পরিবর্তন করতে চায়.তারপর নিচে নেমে চিঠিটা পোস্ট করে ঘরে চলে আসে.এক

সপ্তাহ পর কলেজ থেকে ওকে ডেকে পাঠায়.ও কলেজে গিয়ে ট্রানসফার লেটার নিয়েই চলে আসে তাড়াতাড়ি .ও কলেজে বেশিক্ষণ থাকতে

চায়নি কারণ কলেজের প্রতেকটা কোনায় এমিলির সৃতি ছড়িয়ে ছিল.এমিলির দাদা ওকে অনেকবার ফোন করলেও ও ফোন তোলেনি.ও

ডেনমার্ক ছেড়ে নিউইয়র্ক চলে গেছিল.ও এমিলিকে শেষবারের মত দেখতেও যায়নি.নিজের সব কনটাক্ট বন্ধ করে দিয়েছিল পুরোনো .

ডিগ্রি শেষ হতেই আরুষ ফিরে আসে বাংলাদেশ.আর ফিরে আসতেই ওর মা বাবা ওকে বিয়ে করতে বলে.কিন্তু আরুষ এমিলির জায়গায়

অন্য কাউকে একসেপট করতে প্রস্তুত ছিল না কিন্তু আবার ও নিজের মা বাবার ইচ্ছাটাকেও না করে দুঃখ দিতে চায়নি.তাই মা বাবার পছন্দ

করা মেয়েকে না দেখেই বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়.বিয়ের প্রথম রাতেই আরুষ লিরার দিকে না তাকিয়েই ওকে বলে যে ও এই বিয়েটা

শুধুমাএ ওর বাবা মার মণ রাখার জন্য করেছে.তাই ওর দিক থেকে লিরা যাতে কিছু আশা না করে.এইবলে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়েছিল

আরুষ.লিরা বিছানায় বসে সারারাত কেদেছিল নিঃশব্দে .যেদিন থেকে আরুষের বাবা মা লিরার বাড়িতে গিয়ে আরুষ আর লিরার সম্পর্ক পাকা

করে এসেছিল সেই মু

হুরতো থেকেই নিজের মনে আরুষকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল ওকে না জেনেই.কিন্তু ওর সব সপনো ইচ্ছা ভালবাসা শেষ হয়ে যায় যখন

আরুষ ওকে বাকি সবার মতই প্রত্যাখ্যান করে.লিরা ভাবে হয়ত আরুষ ওর কুসসিত কালো চেহারা দেখে ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে

কিন্তু আরুষতো নিজের মনে শুধু এমিলিকে বসিয়েছিল.অন্য কারুকে ও ওর প্রথম ভালোবাসার মানুষটার জায়গাটা কি করে দিত.

এক সপ্তাহ কোনোরকমে কাটে.লিরা আরুষের বাবা মার সামনে হাসিমুখে থাকতে প্রত্যেক রাতে ও বিছানায় মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে

কাদত.ও আর পারছিল না এই নাটক করতে.ওর খুব কষটো হত যেমন হয়েছিল ওর প্রথম প্রেম রেহান যখন নিজের পরিবারের

কথায় ছেড়ে চলে গিয়েছিল.আরুষ বিয়ের দশ দিন পর ওর বাবা মাকে জানায় যে ও নিউইয়র্ক যাবে ওখানে ভালো জব অফার

পেয়েছে.ওর বাবা মা লিরাকে ওর সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে.কিন্তু আরুষ বলে যে আগে ও সেটেল হোক তারপর নিয়ে যাবে.লিরা

বুঝেছিল যে আরুষ কখনোই ওকে নিজের করবে না তাই ওর থেকে দুরে চলে যাচছে .আরুষ চলে যাওয়ার পর তিনটে বছর কেটে যায়.

আরুষ ওর মা বাবার সাথে ফোনে কথা বললেও লিরার সাথে কোনোদিনও কথা বলেনি.লিরাকে আরুষের বাবা ওদের মধ্যে কিছু সমস্যা

হয়েছে নাকি জিজ্ঞাসা করলে লিরা বলত যে সেরকম কিছু না.ও আমাকে আলাদা ফোন করে আর ওর কাজের চাপ খুব বেশি হওয়ায়

দেশে আসতে পারেনা.আর আমি অতদুরে একা যাব কি করে ও না আসলে.লিরা যতই হাসিখুসী থাকার চেষ্টা করুক আরুষের বাবা মা

বুঝতে পারে যে লিরা আর আরুষের মধ্যে সম্পর্ক ভাল নেঈ.লিরা দিন দিন দুর্বল হতে থাকে.একদিন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় ওকে

হাসপাতালে ভরতি করে আরুষের বাবা মা.ওখানে লিরার লিউকোমিয়া রোগ ধরা পড়ে আর তাও শেষ পর্যায়ে.ডাক্তাররা বলে দেয় আর

মাএ ১৫/২০ দিন বাচবে লিরা.লিরার বাবা মা সহ ওর শশুর শাশুরী কেদেছিল প্রচণ্ড .ওরা ওদের মেয়েকে হারাতে চায়নি.আরুষের

মা ওকে লিরার অবস্থা জানিয়ে ওকে আসতে বলে.আরুষ দেশে ফিরে এসে ওর মা বাবার কাছে লিরার অবস্থা শুনে ওর বুকটা কেপে ওঠে
যেমন কেপে উঠেছিল এমিলির মৃত্যুর খবর পেয়ে.আরুষ লিরাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে দেখে লিরার বাবা আগে থেকেই ওখানে

ছিল.আরুষকে দেখে লিরার বাবা মা আরও বেশি করে কেদে ওঠে.আরুষ ওদের কি বলে শান্তনা দেবে বুঝতে পারেনা.আরুষ লিরার

কেবিনে ঢোকে. আরুষ দেখে যে লিরার সারা শরীর জুরে বিভিন্ন তার লাগানো আর ওর মাথায় একটা হেলমেটের মত যন্ত্র লাগানো আর

মুখে অক্সিজেন মাকস.আর ওর চোখ দুটো বন্ধ .আরুষ লিরার বেডের পাশে রাখা একটা টুলে গিয়ে বসে.ও লিরার মুখের দিকে তাকিয়ে

নিজেকেই লিরার এই অবস্থার জন্য দায়ী করতে থাকে.ও এই তিনবছর মেয়েটাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে কিন্তু মেয়েটা কোনোদিনও ওর

কাছে বা অন্য কারুর কাছে কোনো অভিযোগ করেনি.মুখ বুঝে নিজের কষটো টা লুকিয়ে নিজের ভেতরেই কষটো পেয়েছে.তবুও

একবারও কাউকে কিছু বলেনি.আরুষ লিরার হাত ধরে বাচ্চাদের মতো কেদে ওঠে.ও জানে না ও কেন কাদছে.ও তো লিরাকে কোনোদিন

ও ভালই বাসেনি তবে আজ কেন ওর মণ লিরাকে আকড়ে ধরে বাচতে চাইছে.এই তিন বছর ওর মনটা ওকে খুরে খুরে খেয়েছে লিরার মত

একটা ভালো মেয়েকে ঠকানোর জন্য .প্রথমে আরুষ ভেবেছিল যে ও দেশ ছেড়ে চলে গেলে লিরা হয়ত ওকে তালাক দেবে.কিন্তু পরপর

তিনটে বছর পার হয়ে গেলেও লিরা ওর নামে কোনো অভিযোগ বা তালাক না চাইলে আরুষ বোঝে যে লিরা আজও ওর জন্য অপেক্ষা

করছে.আরুষের মনেও লিরার জন্য কিছুটা হলেও ভালবাসা জন্মে ছিল ওর থেকে দুরে থেকেও.তাই আরুষ ঠিক করে যে ও দেশে ফিরে

লিরাকে ওরকাছে নিয়ে আসবে.ওর প্রাপ্য সবটুকু ওকে ফিরিয়ে দেবে ওরকাছে ক্ষমা চেয়ে.কিন্তু তার আগেই লিরার অবস্থার খবর যায়

আরুষের কাছে.আরুষ তাড়াতাড়ি ফিরে আসে দেশে্…আর আজ ওর লিরার হাত ধরে আছে ওর মৃত্যুশয্যায়…
হঠাত্‌ আরুষের হাতে ধরে থাকা লিরার হাতের চাপ অনুভূতি পেয়ে আরুষ লিরার দিকে তাকায়.ও দেখে যে লিরা ওর দিকে তাকিয়ে আছে

আর ওর চোখে যেন একটা খুশির ছোয়া লেগে আছে.তাও লিরার চোখ দিয়ে বেয়ে যায় এক ফোটা জল.আরুষ লিরার চোখ মুছিয়ে ওর কাছে

ক্ষমা চেয়ে বলে যে ও লিরার সাথে খুব ভুল করেছে আর তার শাস্তি ও এই তিনবছরে প্রতেকটা মুহুরতে পেয়েছে অনুতপ্ত হয়ে.ও আরও

বলে যে ও ওর প্রথম ভালবাসা এমিলিকে হারিয়ে ওর জায়গা অন্য কোনো মেয়েকে দিতে চায়নি.তাই লিরার থেকে দুরে সরে গেছিল কিন্তু

আজ ও লিরাকে প্রচণ্ড ভালবাসে ফেলেছে.আজ ও লিরাকে কিছুতেই হারাতে চায়না এমিলির মত.লিরা ওর কথা শোনে কিন্তু কিছুই বলতে

পারেনা .শুধু আরুষের হাতটা ওর বুকের কাছে চেপে ধরে ওর সাথে থাকার ইশারা করে.আরুষ মাথা নেড়ে হুম বলে.লিরার শেষ কয়েকটা

দিন আরুষ দিনরাত লিরার হাত ধরে বসে থাকত.কিন্তু লিরা আর চোখ খোলেনি.হঠাত্‌ এমন এক সকালে করে আরুষের হাত ধরেই লিরার

আত্মা ওর
শরীর ছেড়ে চলে যায় বহুদুরে..যেখান থেকে কেউ আর কখনো ফিরে আসেনা.লিরার দেহটাকে কফিনে দেওয়ার আগের মুহুরতো পর্যন্ত

আরুষ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে.ওর মুখটা আজ অবিকল এমিলির মত লাগছিল আরুষের কাছে.হয়ত এমিলিকেও এইভাবেই কফিন

দেওয়া হয়েছিল…

****
আজ ৩০ টা বছর কেটে গেছে.আমি আজ একা দাড়িয়ে আছি এই নিস্তব্ধ সমুদ্রতটে.আর আমার মাথার উপরে অন্ধকার আকাশে জলজল

করছে দুটো তারা পাশাপাশি .একটা এমিলি আর একটা লিরা.মা বাবা লিরার মৃত্যুর পর আমায় অনেকবার বিয়ে করতে বলেছিল কিন্তু আমি

করিনি.আমি পারিনি এমিলি আর লিরাকে ভুলতে.আর বিদেশেও যাইনি.বাংলাদেশে থেকেই একটা কোম্পানীতে MD হিসেবে জয়েন করি.এখন

আমি অবসরপ্রাপ্ত একজন মৃত্যুপথযাএী এক বৃদ্ধ .মা বাবাও আজ নেই.আমি সবেমাত্র একটা অনাথাশ্রম খুলেছি নিজের বাড়িতে নিজের

সারাজীবনের অর্জিত অর্থ দিয়ে.নাম দিয়েছি “TWO STARS”.একটি লিরা এবং অন্যটি এমিলি..আমার জীবনে আসা দুটি তারার গল্প ….যারা

আজ মিলেমিশে আমার মাথার উপরে জলজল করে জলছে……

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত