প্রকৃতি কারো জীবনে অতি কষ্টের আবার কারো জীবনে আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ প্রকৃতি দেখে দেখে সারাটা দিন রাত অতিক্রম করে দেয়। একটুও মনে হয় না সে কষ্টে আছে তবুও একটা টান থাকে। সে টান টা একটা নিষ্পাপ। একদম শরল মনের। এসব ভাবতে ভাবতে মা কল দিলেন ” কি রে খোকা বাসায় আসবি না? তাড়াতাড়ি আয়। তোর জন্য বউমা অপেক্ষা করতাছে। আমি কিছু বললাম না। শুধু বললাম ” মা আসতাছি। কল টা কেটে দিতেই রাতের আধারে একটা পাখি ডাক দিল। প্রতিদিন এ পাখি টা ডাক দেয়। আর আমিও আসি। হয়তো এই পাখিটার প্রতি আমার একটা টান আছে।
আমি হিমু। মা যার কথা বললেন তার নাম অতিথি। দেখতে শুনতে মেয়ে টা খুব ভালো। উদাস মনের না। তবে তার সাথে খুব অন্যায় হয়েছে। কি দোষ ছিল এই মেয়েটার। না । কোনো দোষ ছিল না। শুধু কপালের দোষ ছিল। মেয়েটা যখন বিয়ে নামক শব্দ টা করতে বসে ছিল তখন মেয়েটার কপাল টা ভেঙ্গে যায়। এক ভিন্নদেশ থেকে আসা ছেলে টা হঠাৎ করে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। সবশেষে জানা যায় ছেলেটা তার পছন্দের মানুষ কে নিয়ে পালিয়ে গেছে অথছ অতিথি নামক মেয়েটার আজ বিয়ে। সবাই এই কথা শুনার পর হৃদয় টা প্রায় ভেঙ্গে যায়। মেয়েটাও লজ্জায় কান্না করতে পারে না তবুও মনের চোখ দিয়ে কান্না করতে তাকল। মা – বাবাও বিয়ে বাড়িতে বসে যখন ভাবছিলেন মেয়েটার জন্য কি করা যায়। তখন মা – বাবার মনে একটা কথা মনে পড়ে যায়। আমার ছেলেটা কে ওত বিয়ে করাতে হবে তাইলে এই মেয়েটা আমার ছেলের জন্য সব দিক থেকে ভালো হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। হয়ে গেল। কিন্তু আমি যখন প্রথম রাতে অতিথির কাছে বসি তখন জোনাকিপোকা ডাকছিল।
হঠাৎ রুমের ভিতর চেয়ে দেখি একটা জোনাকিপোকা। খুব অবাক হলাম। এক সময় মনে হলো হয়তো আমাকে দেখাশুনা করতে এসেছে। আমি যখন অতিথি কে বলতে যাব একটা কথা বলব তখন অতিথি চুপ থাকা থেকে শান্তভদ্র ভাবে বলল ” আপনাকে বিয়ের করার ইচ্ছা ছিল না। এরপর আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম ” অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন। ” আমি একটা বালিশ নিয়ে সোফায় ঘুমাতে গেলাম। বালিশের নিচে রিমোট পড়তেই টিভি টা অন হয়ে গেল। যে টিভি অফ করতে এক সেকেন্ড সময় লাগত না সে টিভি অফ করতে ২ মিনিট ভাবতে হলো কোনটার মধ্যে টিপ দিলে টিভি বন্ধ হয়। বালিশের মধ্যে মাথা টা দিলাম। চোখ থেকে একটা ফোটা পানি পড়ল।
মেয়েটা কে আমি কোনো দিন দেখি নি। মা- বাবার কথায় বিয়ে করলাম। তবুও আজ আমাকে রাতের আধারে নিশ্চুপ করে ঘুমাতে হয়। রাত শেষ হয়ে ভোর সকাল হলো। আমাদের বাসায় একটা টিয়া পাখি আছে। খুব শখ করে আমি কিনে এনেছিলাম। তারপর থেকে আমার আপনজন এই পাখি টা। সব কথা শেয়ার করি। আমি যখন দাঁত ব্রাশ করতে বের হলাম তখন পাখি টা আমার মলিন চেহারা টা দেখে বুঝতে পারে রাত টা আমার ভালো যায় নি। আমার কাছে কথা বলতে এসেছিল কিন্তু আমি কথা বলি নি। এসব ভাবতে ভাবতে বাসার একদম কাছে চলে আসলাম। বাসার ভিতর কলিংবেল বাজতেই মা দরজা টা খুলে দিলেন। মা কে একটা মলিন হাসি দিতে যাব ঠিক তখনই মা বললেন ” খোকা তুই কই তাকছ কই যাস কিছু বলে যাস না কেন? তোর জন্য আমি বউমার কাছে মুখ দেখাতে পারব না। আমি মার কপালে একটা চুমু দিলাম। মাকে বললাম ” পুকুরপাড়ে গিয়েছিলাম। মা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ” খেতে আয় খোকা। তোর জন্য আজ বউমা রান্না করছে। ” আমিও একটা হাসি দিলাম। খাবার মুখে দিতেই খুব ভালো লাগল তা না। কিন্তু একটু তো খাবারের প্রশংসা করতে হয় তাইলে বললাম ” মা ভালো হয়েছে। ”
আসলে সমস্ত মৌলভীবাজার শহর টা আজ খুব ব্যস্ত কিন্তু আকাশে আজ চাঁদনী রাত। চাঁদনী রাতের প্রতি অনেক মায়া হয়। এই রাতে সব কিছু সুন্দর। সুন্দর না শুধু এক অপূর্ব সুন্দর। হঠাৎ করে বুকের ভিতর একটা চিন চিন ব্যথা অনুভব করলাম। আবেগ মানুষের মধ্যে থাকতে নেই। নইলে মানুষ কে ধ্বংস করে দেয়। অতিথির কথা মনে পড়ল। মেয়েটা কতই না নিষ্পাপ। তার কি দোষ ছিল? কোনো দোষ ছিল না। শুধু একটু সুখের ছায়া দেখতে চেয়েছিল। মেয়েটা পারে নি। হয়তো আবেগের কারণে ছেলে টা বিয়ের আসর থেকে উঠে গিয়ে এক চরম ভুল করেছে। মেয়েটার মায়ায় যখন পড়তে যাব ঠিক তখন এক অচেনা নাম্বার থেকে কল আসল। আমি কল ধরতেই ওইপাশ থেকে শব্দ আসল ” মা বলছেন আপনি বাসায় আসতে।
আমি বুঝে গেলাম মেয়েটা অতিথি। মেয়েটার কন্ঠ আমি চিনতে পারে নি। ” কিন্তু যখন মা বলল ” তখন বুঝে গেলাম সেই অসহায় দৃষ্টিতে চাওয়া অতিথি নামক মেয়েটা। আমিও চুপচাপ থাকা থেকে বললাম আসছি। বাসায় বসে বসে টিভি দেখতে ছিলাম। অতিথিও আছে। একটা নাটক দেখতেছিলাম। নাটকের দৃশ্য তে দেখতে পেলাম একটা ছেলে একটা মেয়ে কে বলছে ” কেমন তাবিজ করেছো সোনা ব্যথাও কমে না বিষও নামে না। তখন টিভির সেই মেয়েটা হাসছিল। অতিথির মুখেও এক বিন্দু পরিমাণ হাসি দেখতে পেয়েছিলাম। আমি কিছু টা লজ্জা পেয়ে অতিথির দিকে তাকিয়ে ছিলাম তারপর আমার নিজের মুখ টাই লাল হয়ে গিয়েছিলাম।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কিন্তু অতিথির একটা বাহানা ধরল তার নাকি বেলী ফুলের সুবাস লাগবে। তেল লাগবে। মেয়েরা ঘ্রাণ পছন্দ করে। তাই হয়তো একটু একটু ঘ্রাণের সুবাস নিতে চায়। আমিও চলে গেলাম ঘ্রাণ আনতে। ইশ! আমার মাথা টা একেবারে ভিজিয়ে দিয়ে গেল। বৃষ্টির দিনে ভিজতে আমার খুব ভালো লাগে। বৃষ্টিতে ভিজলে মনের সব কষ্ট একেবারে মুছে দিয়ে যায়। আমি অতিথি কে আমার প্রেমের কথা বলতে চাই। আমি অতিথির প্রেমে পড়ে গেছি। প্রেম জিনিষ টা অন্য রকম। হয়ে যায়। কল্পনা করা যায় না। ভাবা যায় না। কিন্তু যখন হয়ে যায় তখন মন থেকে সরানো যায় না। প্রেম নামক শব্দ টা। আমি সুবাস নিয়ে অতিথি কাছে গেলাম অতিথি খুব খুশি হলো। অতিথি আমার মাথায় পানি দেখে বলল ” ইশ! মাথায় অনেক পানি। এখানে এসো মুছে দেই। ” অতিথি উড়নো নিয়ে কাছে আসতেই বললাম ” আমার কাছে গামছা আছে মুছে নিতে পারব। ” অতিথি খুব চুপ করে তেল টা নিয়ে চলে গেল। মুখের মধ্যে কোনো মায়া নেই। কিন্তু গামছা বলার আগে অনেক মায়া ছিল।
আমি পিছন দিক থেকে ডাক দিলাম। বললাম ” ভালবাসি।” মেয়েটা কিছু বলল না। আমি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললাম ” সরি। ” পাহাড়ে আজ খুব রোদ। শ্রীমঙ্গল পাহাড় টা খুব পছন্দের। আমার ইচ্ছা হলো অতিথি কে নিয়ে যাব। ইশ! কতই না ভালো লাগবে। অতিথি পাশে। ভাবতেই ভালো লাগে। রাতে দু’জন শুয়ে আছি। আমি কিছু বলছি না। অতিথি বলল ” আজকে আমাকে কিছু বলতে দিবেন? ” আমি ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বললাম ” ঠিক আছে বলেন। ”
আপনি মানুষ টা খুব ভালো। আমি সুন্দর আমি জানি। তবুও ছেলে টা আমাকে পছন্দ করে নি। অথছ আপনি আমাকে দেখেন নি। আপনার মা-বাবার কথায় আপনি আমাকে বিয়ে করলেন। আসলে জানেন সেদিন সব কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি শুনতে চান নি। সব কথার এক কথা হলো আমিও আপনাকে ভালবাসি। তবে অনেক আগে থেকে ভালবাসি। বলতে পারি নি। ” এবার মেয়েটা চুপ করে রইল। আমি কি বলব বুঝতে পারি নি। কিছু বললাম না। শুধু বললাম কাল রেডি তাকবেন। এক জায়গায় যাব। পাহাড়ের মাঝখানে চা পাতা। আমাদের এই বাগানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে। ইশ! কত মানুষ। সবাই সবার আপনজন নিয়ে ঘুরতে এসেছে। অতিথি খুব অবাক হলো এখানে এতো মানুষ। আমাকে বলল ” আপনার মাথায় অনেক রোদ লাগছে ছাতার তলে আসেন। আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” ঠিক আছে আসছি। ”
পাখিরা ডাকাডাকি করতাছে। বাগানের এই দৃশ্য টা আপনি কোথায় খুঁজে পাবেন না। এক দুই পাখি না অনেক পাখি। তাও জোড়ায় জোড়ায়। ” খুব জানতে ইচ্ছা করে এরা কি কথা বলে? ” অতিথি বলল ” পাখি টা খুব সুন্দর। ” আমি বললাম ” অনেক সুন্দর। ” এক টা শাড়ি কিনলাম। কোনো মেয়ে কে শাড়ি দেই নি । আজ প্রথম তাও অতিথি কে দিতে যাব। জানি না অতিথি কেমন করে কথা বলবে। যদি খুশি হয় তাইলে আমি খুশি। যদি রাগ করে তাইলে আমার মন টা ভেঙ্গে যাবে। রাতে ঘুমাতে যাব ঠিক তখন শাড়ি টা দিলাম। অতিথি চোখ মোটা করে তাকিয়ে আছে। আমি অতিথির হাতে শাড়ি টা দিলাম। অতিথি কে বললাম ” যে কোনো একদিন পড়ে আমাকে দেখাবেন। ” অতিথি মুচকি হাসি দিল।
অতিথি শাড়ি পড়ল। খুব ভালো লাগছে। অতিথি চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না। আমি একটু একটু করে দেখছি। আজ প্রথম কেউ আমার জন্য শাড়ি পড়ল। অতিথি একবার মুখ তুলে তাকাল। আবার নিচের দিকে তাকিয়ে তাকল। মেয়েটা কোনো কথা বলছে না। আমি বললাম ” আপনাকে সুন্দর লাগছে। ” অতিথি খুব চুপ তাকা থেকে বলল ” ধন্যবাদ। ”
আমি বললাম ” চলেন না। নীল আকাশ টা দেখি। খুব ভালো লাগবে। ” অতিথি মাথা দিয়ে বলল ” চলেন। ” আকাশ টা আজ খুব পরিষ্কার। মেঘাচ্ছন্ন ছিল। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। অতিথিও তাকিয়ে আছে কিন্তু চাঁদের দিকে। ভালোবাসা এমনি এমনি সৃষ্টি হয়ে যায়। হয়তো দু’জন দু’ জন কে ভালবাসি। খুব বাতাস গায়ের মধ্যে এসে লাগছে। ইশ! একটু শীত শীত লাগছে। মনে হচ্ছে সমুদ্রজল আজ কে শান্তিতে নেই। খুব ঢেউ তাদের মধ্যে। অতিথি কে আবার বললাম ” ভালবাসি। অতিথি এবার চুপ করে আমার কাঁধে মাথা রাখল।