বিয়ের প্রথম রাতেই বউ আমাকে জিজ্ঞেস করলো।
__রান্না করতে পারেন? প্রথমে শুনেও না শুনার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। বউ আবার জিজ্ঞেস করলোঃ- কি হলো রান্নাবান্না করতে পারেন?
__একটুআধটু পারি। তবে মাঝেমধ্যে তরকারীর মধ্যে মরিচ,হলুদ এসব দিতে প্যাচ লাগে। কোনোদিন ঝাল বেশি হয় আবার কোনোদিন হলুদে আপনার হুলুদ শাড়ীর মত হয়ে যায়। কিন্তু ডিম ভাজি করতে পারি।
__সমস্যা নাই চলবে।
__কি চলবে..?
__আপনার রান্নাবান্না চলবে।
__আপনি তাহলে আমাকে দিয়ে এসব করাবেন।
__হুম,,, আর কি পারেন?
__খাইতে পারি।
__আরে এইটা তো সবাই পারে। কাপড়চোপড় ধুইতে পারেন..?
__পারি কিন্তু অন্যের কাপড় ধুইতে গেলে বমি আসে।
__নাকে কস লাগিয়ে কাজ করবেন। কি সাংঘাতিক কথা রে বাবা। শ্বাস বন্ধ করে কাজ করলে আমি কি বাচঁবো?
__বিয়ের আগে প্রেম করছিলেন..?
__হুম,, করছিলাম।
__ছাড়ছেন কেন?
__আমি ছাড়ি নাই মেয়েটা ছেড়ে দিছে।
__সিগারেট খান?
__দৈনিক এ প্যাকেট লাগে।
__মেয়েটে যেভাবে আপনাকে ছেড়ে দিছে আপনিও ঠিক সেইভাবে সিগারেট ছেড়ে দিবেন।
__মেয়েটার সাথে সিগারেট এর সম্পর্ক কি?
__আমি ভালো করেই জানি আপনাদের কাছে একটা মেয়ের চাইতে সিগারেট এর মূল্য কম না।
__হুম,, এই সিগারেট ছাড়া আমার দিন যায় না।
__আজ থেকে খাওয়া যাবে না।
__বললেই হলো..?
আমি বলছি খাবেন না। আজ থেকে যেনো সিগারেট খেতে না দেখি। মনে থাকবে তো.? আমি মাথা নাড়িয়ে হা সূচক বলে দিলাম। মনে থাকবে সকালবেলা বউ আমারে এক বালতি পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে। মনেমনে ভাবছি মা-বাবা এ কেমন বউ আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলো। না পারছি কিছু বলতে না পারছি ছাড়তে। ভাবছিলাম সকাল সকাল বউ এক কাপ চা নিয়ে কাছে এসে বলবেঃ ওগো শুনছো সকাল হয়ে গেছে উঠো। ফ্রেশ হয়ে এসো দুইজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো। কিন্তু এখন তো দেখছি তার বিপরীত হলো। বিছানা থেকে উঠে মনে হচ্ছে সব কাজ আমাকে করতে হবে। মোবাইলের স্কিনের দিকে চোখ যেতেই দেখি ৭ টা বাজে। চোখ আমার কপালে উঠে গেলো। স্বাবালক হওয়ার পর সকাল ৭ টায় উঠছি বলে মনে হয় না।
নাস্তা খেয়ে চাকরির জন্য বের হলাম। নতুন বউ আমার মাথাটা ধরে কি জানি মনেমনে বলে ঝাড়ফুঁক দিলো। যাবার সময় বলে দিলো এদিক ওদিক না গিয়ে যাতে সোজা বাসায় আসি। চাকরী ইন্টার্ভিউ দিয়ে বউয়ের কথামত সোজা বাসায় আসলাম। এ নিয়ে পাঁচটা ইন্টার্ভিউ দিলাম। পাঁচ নাম্বার ইন্টার্ভিউ সাকসেস। পরশুদিন জয়েন করতে বললো। বেতন একটু কম হলেও আপাতত আমাকে এই চাকরী করতেই হবে। রুমে ঢুকতেই দেখি বউ বটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলামঃ-
__আপনার হাতে বটি আসলো কেমনে..? রান্নাঘর থেকে এই ঘরে কিভাবে আসলো?
__এখানেই তো ছিলো। আপনি কি বটি দিয়ে মানুষ খুন করেন?
__ছিঃ কি যে বলেন. জীবনে একটা পিঁপড়া পর্যন্ত মারতে পারি নাই আর আপনি বলছেন মানুষ।
__আমার কিন্তু মানুষ মারার অভ্যাস আছে তবে এসব বটি দিয়ে না। আমতা আমতা করে বললামঃ-
__তা তাহলে কি দিয়ে মারেন..? ভয়ে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। গায়ে একটা শার্ট ছিলো সেটাও ঘামে ভিজে গেছে। এইটা কি বউ নাকি জল্লাদ। তারপর বউ বললোঃ-
__সময় হলে সব জানতে পারবেন।
একটুপর মায়ের ফোন আসলোঃ-
__বউমাকে নিয়ে আমাদের বাসায় কখন আসবি?
__মা আমি চাকরী পেয়ে গেছি। পরশুদিন জয়েন করবো তাই কালই তোমাদের বাসায় আসছি।
__আলহামদুলিল্লাহ’ আমি অনেক খুশি হয়েছি। এখন বউমাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।
__আচ্ছা মা এ কেমন মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিলে?
__কেন কি হইছে বাপ?
__জল্লাদ মেয়ের মত। আমার খুব ভয় করে।
__আরে পাগল ও তোরে পরিক্ষা করতেছে। ও খুব সরল সোজা একটা মেয়ে কিন্তু রাগলে একটু ভয়ানক লাগে। তবে রাগী মানুষের যত রাগ তত ভালোবাসা।
__আচ্ছা মা এখন তাহলে রাখি কাল নাস্তা খেয়েই আসছি।
__আচ্ছা।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমানোর সময় আমি আগে থেকেই খাটের এক পাশে শুয়ে আছি আর উনি আয়নার সামনে বসে চুলগুলো ঠিক করছেন। ভয় করে বলে মাঝেমধ্যে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখি। ভয় না করলে তার উপর থেকে চোখ ফিরাইতে পারতাম না। ভালো করে বউয়ের চোখের দিকে তাকাতেই পারি না। তারপর আয়নার সামনে থেকে উঠে বিছানায় এসে বসলো। ঘরে আলো থাকলে আমি আবার ঘুমাইতে পারি না। বিছানা থেকে উঠে লাইট বন্ধ করতে গেলাম। তখন বউ বললোঃ-
__এই এই কি করছেন..?
__ঘরে আলো জ্বললে আমি ঘুমাইতে পারি না।
__ঘর অন্ধকার থাকলে আমিও ঘুমাইতে পারি না।
মহাযন্ত্রনায় পড়লাম। আমার সাথে কিছুই মিলে না। যদি বলি আজকে মুরগির মাংস খাবো তাহলে উনি বলবে গরুর মাংস খাবে। এ কেমন বউ বুঝলাম না। তারপর আবার সেই খাটের এক পাশে শুয়ে পড়লাম।
__কি ব্যাপার আপনি এতদূরে শুয়ে আছেন কেন?? কাছে আসেন বলছি। এমা সাথে আবার এইডা কি..?
__শীত করে তাই কোলবালিশ নিয়ে শুয়ে আছি।
__আমি কে..?
__আমার বউ।
__তাহলে আমি থাকতে কোলবালিশ কেন? তারপর বউ আমার কাছ থেকে কোলবালিশ কেড়ে নিয়ে ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলো দিলো। আমি হা করে তার দিকে দিয়ে তার এক বেলার খাবার জুটবে।