কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে সেই সাথে কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটছে রাফি, এদিকে বেশ কিছু দূর থেকে তিথি তাকে ডাকছে রাফি শুনতে পাচ্ছে না!! তিথি দ্রুত রাফির কাছে এসে ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে কখন থেকে তোরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না??
–রাফি কান থেকে হেডফোন সরিয়ে বলল, আমাকে কিছু বললি??
–তিথি একটু রেগে বলল সবসময় কানে এটা দিয়ে রাখতে হবে কেনো??
–গান শুনি তাই!!
–তাই বলে সবসময়??
–যা বলবি বলে কেটে পড়
–কি বলব তুই জানিস না??
–ঢং না করে বলে ফেল!
–রাফি, আই লাভ ইউ
–কি বললি??
–রাফি, আমি তোরে সত্যিই অনেক ভালবাসি!
–না, হবে না, এটা সম্ভব না!
–কেনো কি হয়েছে??
–কারণ আমি তোকে ভালবাসি না না না
–কেনো বাসিস না??
–ধ্যাত, তুই যা তো আমার সামনে থেকে!!
–আর কতবার? কত ভাষায় বললে তুই আমাকে ভালবাসবি??
–পৃথিবীতে যত ভাষা আছে +আরো ২০ টা ভাষা বানিয়ে বললেও ভালবাসব না!!
–আমাকে এতো ঘৃণা করার কারণ??
–কবে বলেছি আমি তোকে ঘৃণা করি?? আমিও তোকে ভালবাসি কিন্তু সেটা বন্ধু হিসেবে!!
–আমি তোর জন্য কতগুলো প্রপোজ এড়িয়ে গেছি আর তুই আমাকে একটু বুঝতে চাস না!!
–এড়িয়ে যেতে বলছে কে, কারো গলায় ঝুলে পড়!! আর আমি সমবয়সী কারো সাথে প্রেম করব না!
–কেনো সমবয়সী কেউ প্রেম করে না??
–যারা করে তাদের মত, গাঁধা পৃথিবীতে ২য় টি নেই, সমবয়সী মেয়ের সাথে প্রেম করা আর অন্যর বউকে পাহারা দেয়া একি কথা!
–কি বললি তুই??
–ভুল কি বলছি, আমার বড় ভাই আর লামিয়া আপু একসাথে পড়তো এখন লামিয়া আপুর ছেলে আমাকে, আমার ভাইকে মামা বলে, আর ভাই এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে কি বুঝলি??
–কচু বুঝছি, আমি তোর জন্য অপেক্ষা করব!! আমাকে বিয়ে তোর করতেই হবে, তুই আমাকেই ভালবাসবি, ভালো আমাকেই বাসতে হবে!!
–তোর মত বুড়ি কে আমি বিয়ে করতে যাব কেন??
–ঐ আমি বুড়ি?? কেবল মাত্র ১৭ বছর
–এখন বুড়ি না, আমি যখন বিয়ে করব তখন তুই ২৫-২৭ বছরের বুড়ি থাকবি!
–মানে কি??
–আমি বিয়ে করব ২৬-২৮ বছর বয়সে, তখন বিয়ে করব ২০-২১ বছররে এক মেয়েকে, তখন তোর মত বুড়িকে বিয়ে করব কেনো?
–তিথি তো রেগে আগুন, ২৫-২৬ বছরে একটা মেয়ে বুড়ি হয়?? ওকে তবে তাই শুনে রাখ এই বুড়িকেই তোর বিয়ে করতে হবে!!
–পাগলামী করিছ না, শোন সম্পর্কের মাঝে কম করে হলেও ৪-৬ বছরের ব্যবধান হতে হয়, তা না হলে বাস্তবতার কাছে এসব প্রেম-পিরিতি ভালবাসা হার মানে! এখন আমরা ইন্টার ২য় বর্ষে উঠছি, এরপর অনার্স মিনিমাম ৪-৫ বছর পড়ালেখা করতে হবে তারপর জব করব নিজে ঠিকঠাক হতে ৩-৪ বছর সময় লাগবে বয়স দাড়াবে কত হিসেব করি, ১৭+৫+৫=২৭ বছর দেখছিস?? এসব আবেগের পাগলামী বাদ দে, ভবিষত্য তুই অন্য কারো বউ হবি এটাই সত্যি!!
–তিথি মুখ কালো করে আছে
–রাফি ভাবল, একটু দুষ্টামি করি, তিথি দোস্ত এক কাজ কর তুই আমার ভাইয়ের সাথে লাইন মার!!
–কুত্তা কি বললি??
–পারফেক্ট জুটি হবে ভাই তোর ৫ বছরের বড়, এখন সে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে কিছুদিন পর জব করবে, ৪-৫ বছর পর তোরা বিয়ে করবি দারুণ হবে!! আর আমি তোর কাজিন ছোট বোনের সাথে লাইন মারব সে আমার ৪ বছররে ছোট, ভালোই হবে দু ভাই এক বাড়ির দু বোনকে বিয়ে করব উফপ হেব্বী হবে!!
–তিথি তো রেগে আগুন, বলল দাড়া আজ তোর একদিন আমার যেকদিন লাগে, এই বলে রাফিকে তাড়া করল, রাফি দৌড়াতে লাগল ক্যাম্পাসে একটা মেয়ের তাড়া খেয়ে একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে ব্যাপারটা কেমন দেখাই তাই না?? এটা আর নতুন কি? এমনটা ওদের অনেক আগে থেকেই হয়ে আচ্ছে, সেই ক্লাস ওয়ান থেকে ওরা দুজন একসাথে পড়ে, ছোট থেকেই বেশ খুঁনসুটি হত ওদের, রাফি ছোটবেলা বেশ দুষ্টু ছিল, যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ত তখন সুযোগ পেলেই তিথির ব্যাগ থেকে লুকিয়ে ওর টিফিন খেয়ে ফেলতো, যখন টিফিনের সময় হত তিথি টিফিন বক্স খুলে দেখতো খাবার নেই, তখন তিথি তো কান্না শুরু করে দিত, হু আমার টিফিন কে খেয়েছে হু হু, তখন রাফি এগিয়ে আসতো কিরে কাঁদিস কেন??
–আমার টিফিন কে যেনো খেয়ে ফেলছে…
–এই ব্যাপার?? তাহলে আমার টিফিন আজ দুজন ভাগ করে খাব খাবি??
–তিথি খুঁশি হয়ে বলতো হ্যাঁ অবশ্যই খাব!!
–রাফি মনে মনে বলত কি সাধু সাঁজলাম বাহ
–যখন ওরা ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা দেয় তখনই ওরা সিদ্ধান্ত নেই,
একই হাই স্কুলে ভর্তী হবে! হ্যাঁ ওরা একি হাই স্কুলে ভর্তী হয়! এই তো এভাবে পাড় করে হাই স্কুলটাও, ওরা দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড, কিন্তু রাফি তিথিকে বন্ধু ভাবলেও তিথি তাকে অন্যরকমভাবে দেখে! এসএসসি পরীক্ষার পর ওরা একি কলেজে ভর্তী হবে এ সিদ্ধান্ত নেই, আর কলেজে উঠার পর থেকে তিথি রাফিকে ঠিক অন্যভাবে চাই ওর কথা সে ক্লাস ওয়ান থেকে যার হাত ধরে ঘুরেছি যার সাথে হেঁসে খেলে বড় হয়েছি তার সাথে কবর পর্যন্ত যেতে সমস্যা কি?? তিথি বেশ কয়েকবার রাফিকে তার ভালবাসার কথা বলেছে কিন্তু রাফির একটাই কথা তুই শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এরবেশি আমি ভাবতে পারব না!!
তিথি ধনী ঘরের মেয়ে, মা-বাবার একমাত্র মেয়ে, ওর বন্ধুরা অনেকে ওরে বড় লোকের দুলালি বলেও ডাকে, ছোট থেকে ওর কোনো আবদার অপূর্ণ রাখে নাই ওর মা-বাবা, কিছু চাইতে দেড়ি কিন্তু পেতে দেড়ি নাই!! এদিকে রাফি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছোট থেকেই ওর মধ্য অন্যরকম জ্ঞান কাজ করে, যেখানে ১৮-১৯ বছরের ছেলেরা প্রেম করবে বলে মেয়েদের পিছু ছুটে, প্রেম করবে বলে মনের মধ্য বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন বুনে সেখানে রাফি এসব কিছুকে তুচ্ছ করে চলে, রাফির কথা একটা এই বাস্তবতার পৃথিবীতে প্রেম ভালবাসা দুদিনের আবেগ ছারা আর কিছু না, রাফি দেখতো ওর কিছু বন্ধুরা প্রেম করে, গার্লফ্রেন্ড এটা চাই ওটা চাই বন্ধুরা টাকা পাবে কয়? তখন গার্লফ্রেন্ডের আবদার রাখতে বাবার কাছে মিথ্যা বলে টাকা নেই।
অথবা প্রাইভেট স্যাঁরের টাকা মেরে খাই, বাজার করতে গিয়ে কিছু টাকা মেরে খাই এসব ইত্যাদি, রাফি দেখতে সুন্দর তাই বেশ কিছু প্রপোজাল পেয়েছে, কিন্তু রাফি এদিকে এক পা বাড়ায় নাই! রাফি বাস্তবতা সেদিনই বুঝেছে যেদিন ১০ টাকা ভাড়ার জন্য কোচিং যেতে পাড়ে নাই!! রাফি ভালভাবে বুঝতে পারে তিথি তাকে সত্যিই ভালবাসে, রাফিরও সেভাবে ভালবাসতে ইচ্ছে করে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, রাফির একটা কথা জীবন তো সিনেমা নয়, সিনেমা দেখে সিনেমা ফলো করে চললে তো হবে না সিনেমাতে তো কত কিছুই হয় কিন্তু বাস্তবতা তো পুরাই ভিন্ন!! এই তো ওদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা! ইদানিং তিথি একটু বেশিই করে ফেলছে রাফি বুঝায় কিন্তু তিথি বুঝার চেষ্টা করে না, তিথির কথা একটা আমি তোকে ভালবাসি আর তোর জন্য সারাটাজীবন অপেক্ষা করতে রাজি…..
–রাফি তিথির আচরণে রাগ হত না রাফি ভাবতো বুঝিয়ে বললে তিথি বুঝবে, কিন্তু যখন দেখলো বুঝিয়ে কাজ হচ্ছে না একদিন খুব বিরক্ত হয়ে বলে ফেলল তুই বড় লোকের দুলালি জীবনের কি বুঝিস?? জীবনটা কি ছেলে খেলা?? যে যে অবস্থানে থাকে সে ভাবে তার মত অন্য সবাই, তোর পৃথিবী আমার পৃথিবী এক নয়,, এই তোরেই দেখি, ভিক্ষুকদের দেখলে, ১০ টাকা, ২০ টাকা করে দিস, আমারও মন চাই এমনে তাদের টাকা দেয় কিন্তু পাড়ি না, বরং ঐ ১০ টাকার জন্য এমনও দিন আছে কলেজে আসতে পাড়ি না! জীবন এটাই!! তাই চাইব আজকের পর থেকে এই ব্যাপারে আমাকে আর কিছু না বলিস!!
–তিথি রাফির কথা শুনে কিছু বলে নাই, সোজা বাড়ি চলে আসে, তিথি নিজেও ভেবে দেখে রাফি যা বলে হয়তো ঠিকই বলে কিন্তু মন তো মানে না,
কিছুদিন পর ওদের HSC পরীক্ষা কলেজে কেউ আসে না, বাড়িতেই পড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করে, ওদের মধ্য কথাও আগের মত হচ্ছে না, তিথি লজ্জায় কল দিতে পারছে না, আর রাফি দিচ্ছে না রাগে!! আর HSC পরীক্ষার পর রাফি এখানে থাকবে না মনে মনে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেই!! কিছুদিন পর HSC পরীক্ষা শুরু হয়, ওদের মধ্য ঐ পরীক্ষা শেষে একটু একটু কথা হতো, রাফিই তিথির থেকে দূরে দূরে থাকে, আগের মত কথাও বলে না!! একদিন রাতে তিথিকে তার বাবা ডাকে, আর জিজ্ঞেস করে ‘মা’ আমরা তোমার কোনো আবদার অসম্পন্ন রাখছি??
–না বাবা!!
–মা, মেয়ে বড় হলে প্রতিটা মা-বাবার দ্বায়িত্ব থাকে তার মেয়েকে ভালো একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ার!! আমাদের কাছে এ পর্যন্ত অনেকগুলো ভালো ছেলের প্রস্তাব এসেছে!! আমরা নিষেধ করে দিছি, কিন্তু এবার আমার এক প্রিয় বন্ধু তার ছেলের হয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিছে ওর ছেলেকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি তাই এড়িয়ে যেতে পারছি না!!
–তোমরা আমার বিয়ে দিতে চাও??
–রাগ কর কেনো?? তোমাকে এখানে ডেকেছি যে তোমার পছন্দের কোনো ছেলে আছে কিনা?? যদি থাকে আর সে যদি তেমন যোগ্য ছেলে হয় তাহলে তো সমস্যায় নেই!!
–আছে সে আমার সাথে পড়ে!!
–শুনো এটা একটা পাগলামী, তোমার সাধে পড়ে তারমানে ছেলেটার বয়স কতই বা হবে?? এখন অনার্স পড়বে তারপর ভবিষ্যতে কি করবে তার কোনো ঠিক নেই, কোন নিশ্চয়তাই তার জন্য তোমাকে রেখে দিব???
–বাবা, আমি তাকে ভালবাসি
–আমরা তোমার ভুল কোনো আবদার শুনতে পারব না, তুমি আমাদের মেয়ে তবুও তোমার সাথে আমরা বন্ধুসূলভ আচরণ করি তার জন্য তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার পছন্দের কেউ আছে কিনা!! যেসব ছেলের বিয়ের প্রস্তাব এসেছে সবাই খুব ভালো পজিশনে, আর কি মনে হয়, আমার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে সে এমন তেমন কেউ হবে?? আর হ্যাঁ, ছেলেটা তোমাকে এখনি বিয়ে করবে না, এনগেজ করে রাখবে, ২ বছর পর বিয়ে করবে!!
–বাবা, আমাকে ভাবতে হবে, কিছুদিন সময় দাও
–আচ্ছা মা, একটু ভাবো বয়স একদম কম তাও না ভাল মন্দ, বাস্তব-অবাস্তব সব বুঝার ক্ষমতা যথেষ্ট আছে তোমার!!
তিথি ২-৩ দিন অনেক ভেবেছে আর এখন বুঝতে পারছে, রাফি ঠিকই বলে ও বাস্তব খুব ভালো বুঝে তাই হয়তো আমাকে এড়িয়ে গেছে, অন্য ১০ টা ছেলে-মেয়ের মত আমরাও যদি রিলেশনে যেতাম আমাদের দু প্রান্তে দুজনের মন ভাঙতো, কান্নাটা হত সঙ্গী!! রাফির কথাই সত্যি আমি অন্য কারো বউ হব!! তিথি ভেবে চিন্তে তার বাবার সিদ্ধান্তে মত দেয়!! কিছুদিন পর HSC রেজাল্ট দেয় রাফি খুব ভালো ফলাফল পায় (গোল্ডেন A+) আর তিথি (A+)!! রাফি আজ অনেক খুঁশি তিথিকে দেখা করতে বলল, হ্যাঁ বিকালে দেখাও করে, দুজন বসে আছে এক রেস্টুরেন্টে দুজন একখানে বসে থাকলেও কেউ একটা কথাও বলছিল না, তিথিই বলল কি ডেকেছিস চুপ করে থাকার জন্য??
–আমরা কত চেঞ্জ হয়ে গেছি, একসাথে থাকলে এ কথা সে কথা এমন দিন কেনো এলো আমাদের??
–দোষটা আমার আমি যদি তোরে সে সব কথা না বলতাম তাহলে এমন হত না, আমার সেসব কথার পর থেকে তুই আমাকে এড়িয়ে চলেছিস!!
–আজ সেসব পিছনের কথা না বলি??
–না রে আজ বলতেই হবে, ধন্যবাদ তোরে বাস্তবতা বুঝানোর জন্য, আমি একটা ঘোরের মধ্য ছিলাম, সেটা কেটে গেছে, তোর কথাই ঠিক হলো আমি অন্য কারো বউ হব, আর হ্যাঁ তাই হতে চলেছি আগামী শুক্রবার আমার এনগেজ, শুনেছি বিয়ে করবে ২ বছর পর!!
–কথাটা শুনে রাফি স্তব্ধ হয়ে পড়ে, তবু নিজেকে সামলে তিথিকে বলল এখনে থেকে অনার্স পড়ব না, ঢাকা যেয়ে পড়ব, ভালো থাকিছ, নিজের যত্ন করতে একদম ভুল করবি না!! এই বলে রাফি খাবারটাও না খেয়ে চলে গেলো!! তিথি ওর এমন আচরণে বেশ অবাক হলো!! রাফি এখানে বসে থাকবেই বা কি করে?? সত্যি তো এটাই রাফিও তিথিকে খুব ভালবাসে, কিন্তু সে জানে তার ভালবাসা বাস্তবের কাছে অসহায়!! বাড়ি ফিরে রাফি খুব কান্না করে, রাফি মূলত ঢাকা যেতে চাই এই একটা কারণেই এখানে থাকলে তিথির প্রতি দূর্বলতা বাড়বে, মায়ার জালে পড়ে যাবে!! তিন দিন পরই ঢাকা চলে যায় রাফি!!
দীর্ঘ ৭ বছর পর রাফি এখন বড় এক মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে ৩ বছর ধরে জব করে!! রাফির মা রাফির বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, এদিকে রাফি চাই আরো দুবছর পর বিয়ে করব, কিন্তু মায়ের জোরাজোরিতে শেষমেশ বিয়েতে রাজি হয়, পাত্রি তার মায়ের পছন্দ করা!! এই দীর্ঘ ৭ বছরে রাফি একবারও বাড়ি ফিরে নাই মাস গেলে টাকা পাঠিয়ে দিছে!! রাফি বাসে করে ঢাকা থেকে রওনা দেয় ৪ ঘন্টার যাত্রা বিরতির পর ফরিদপুর ফিরে, যখন বাড়ির দিক যাবার রাস্তায় আসে তার কিছুটা দূরে পথে তিথির সাথে দেখা হয়, রাফিই প্রথম তিথিকে দোখে রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলে,
–এই কেমন আছো??? (৭ বছর পর কথা, তাই তুই থেকে তুমি করে বলে ফেলল)
–ভালো আছি, তুমি কেমেন আছো?
–হুমম, ভালো আছি, তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো, নিজের যত্ন কর না তাই না??
–তুমি কি চেঞ্জ হউ নাই??
–বাদ দাও, তোমার হাসবেন্ড কেমন আছে??
–তিথি চুপ করে রইল!!
–বলতো চাও না? আচ্ছা মাত্রই ফিরলাম আমার বাড়িতে এসো বাই!! এরপর রাফি সোজা বাড়িতে গিয়ে উঠল, রাফির মা রাফিকে দেখে কাঁদছে আর বলল ৭ বছর পর এলি এর মাঝে আমাকে একবারও দেখতে এলি না?? ফোনে কথা আর চোখের দেখা কি এক রে বাবা?? যাই হোক এসেছো এখন ভালো লাগতেছে চল ঘরে যেয়ে রেস্ট নাও!!
–রাফি বাড়ি এসে প্রথম দুদিন ঘুরল এরপর জানতে পারল, তিথি এখনো বিয়ে করে নাই!! রাফি তার মায়ের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে ত্র মা বলে, ওর বিয়ের ৩ দিন আগে দূর্ঘটনা বসত ওর হবু স্বামী মারা যায়, এরপর তিথির বিয়ের প্রস্তাব আসলে তিথি নিষেধ করে দেয়!!
–ও আচ্ছা
–তিথি অন্য কাউকে কেনো বিয়ে করছে না তা কি জানিস??
–রাফি চুপ করে আছে!!
–চুপ কেনো?
শোন বাবা তিথি তোকে খুব ভালবাসে, তোরে ছারা অন্য কাউকে বিয়ে করবে না, জানি তুইও ওরে ভালবাসিস আর ওরে ভুলতেই ঢাকা যেয়ে পড়েছিস বাড়ি ফিরতে চাস না ওর কথা মনে পরে কষ্ট পাবি বলে, সত্যি করে বল তো বাবা তুই ওরে ভুলতে পারছিস??
–রাফি কিছু বলতে না পেরে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল!!
–মা বলল, কাঁদিস না বাবা, চল যাব তিথির বাবার কাছে তোর আর তিথির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, এখন তুই বড় একটা জব করিস বুকে সাহস নিয়ে তার সামনে দাঁড়তে পারবি!!
–হ্যাঁ, মা যাব!!
(রাফির মা, বড় ভাই, ভাবি) তিথির বাড়িতে যায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, বিয়ের প্রস্তাবটা সাদরে গ্রহণ করে চৌধুরী সাহেব, সহজে বলতে গেলে এসব চৌধুরী সাহেবের সাজানো সে যখন দেখছিল তার মেয়েটা অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করছে না, সারাখন মন মরা হয়ে থাকে, তখন সে তার মেয়ের কিছু ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সাথে কন্টাক্ট করে এবং তাদের থেকে জানতে পাড়ে সে রাফিকে খুব ভালবাসে আর জানতে পাড়ে বর্তমানে রাফি কোথায় থাকে, যখন শুনল ঢাকাতে থাকে আর যখন অনার্স শেষ করে, তখন তার ক্লোজ এক বন্ধুকে( রাফির বস) বলে তার অফিসে রাফিকে একটা জব দিতে, সে তার বন্ধু দেয়া অনুরোধ ফেলে দেয় নি!! এসব কথা কেউ অন্য কেউ জানে না, মাত্র তিন জন ব্যাক্তি জানে, তিথির বাবা ও তার বন্ধু এবং রাফির মা, রাফির মা কে চৌধুরী সাহেব। সব খুলে বলে এবং রাফিকে বিয়ের চাপ দিয়ে বাড়ি আনা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি শিখিয়ে দেয়)! বিয়ে ঠিক হবার খবরটা তিথি জেনে যায়, আজ তিথি অনেক খুঁশি, রাফিও অনেক খুঁশি, তারা দুজন দেখা করল,, যখন তারা সামনাসামনি হলো তখন রাফি চুপ করে ছিল,
–তিথি বলল এই যে হিরো চুপ কেনো??
–না মানে, আমাদের সাথে এমনটা হবে কখনো ভাবি নি!!
–হিহি, শেষমেশ ২৫ বছরের বুড়িকে তোর বিয়ে করতে হচ্ছে!!
–বাদ দে না, সেসব কথা, সম্পর্কের বয়স হয় না, সম্পর্ক হারিয়েও যায় না!!
–তাই নাকি?? আগে কেন তাহলে ভালবাসিস নাই??
–কে বলেছে ভালবাসি নি??
–তার মানে, আড়াল করে রাখছিলি??
–কি করব??
নিজের ভাই তার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ের দাওয়াত খেয়েছে আর আমাকে বলছিল, একটা ছেলে তার বাকি জীবন ধংস্ব করে সমবয়সী মেয়ের সাথে প্রেম করে, আবার একটা মেয়ে সমবয়সী ছেলের সাথে প্রেম করে ছেলেটার বাকি জীবন ধংস্ব করে এ কথা বলছি এজন্য, এভাবে অনেক রিলেশন শেষ হচ্ছে বাস্তবতার কাছে!! মেয়েরা বিয়ে করে দিব্বি আরেক জনের সাথে সংসার করে, এর মানে এই না মেয়েটি ছেলেটিকে ভুলে যায় কিছু মেয়েদের মন আকাশ সমান এরা কাউকে সত্যিকার ভালবাসলে তাকে পেলেও ভুলতে পাড়ে না এজন্য অন্য কাউকে বিয়ের পরও তার প্রেমিকের জন্য কাঁদে, কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই সিমাবদ্ধ, কিন্তু এসব ব্যাপারে অধিকাংশ ছেলে নিজেকে নেশার জগৎে হ্যাঁ এটাই বাস্তবতা!! আমাকে বলছিল প্রেম করলে মেয়েটি অন্তত ৪-৬ ছোট হতে হবে, প্রেম আর বিয়ে ভিন্ন জিনিস যদি প্রেম না করে সোজা কোনো মেয়েকে বিয়ে করিস তবে দেখবি মেয়েটি কেমন? তার আচরণ কেমন? বয়স ফ্যাক্ট না বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ে করলে একি বন্ধনে একবারেই বাঁধা পড়ে দুটি মন!! আর প্রেমের ব্যাপার ভিন্ন প্রেম করলেই বিয়ে করা যায় না,, শেষ একটা কথা জীবনের চরম ভুল সমবয়সী মেয়ের লগে প্রেম করা, তাদের সাথে প্রেম করা মানে অন্যর বউকে নিজের ভেবে তাকে পাহারা দেয়া!!
–হিহিহি
–ঐ হাঁসবি না, ভাইয়ার মত আমাদের গল্পটাও এমন হতে পারতো, ভাগ্যিস গল্পটা অন্য রকম হয়ে গেলো!!
–সত্যি তাই এমন হবে আমিও ভাবি নি!!
–একসময় ভাবতাম জীবনটা সিনেমা নয়, কথাটা কিন্তু ঠিক, তবে এটাও ঠিক জীবনের কাছে সিনেমা কিছুই না, জীবনটা সিনেমার থেকে অনেক বড়!!
–হুম ঠিকই বলছিস,
–হ্যাঁ, ভাই আরো কথা বলছিল
–কি বলছিল??
–বলছিল এই সমবয়সী প্রেম করেই এদেশে বহু ছেলেরা খারাপ হয়, প্রেমই করবে বিয়ে করতে পারবে না গার্লফ্রেন্ডের বিয়ের দাওয়াত খাবে, নিজে যাবে নেশার জগৎে এমন অনেক ছেলেই আছে!! ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না!
–এটা ঠিক সমবয়সী লাভ মেরেজ হাজারে ১০ টা পাওয়া কষ্টকর, সত্যি বলতে যখন বিয়ে ঠিক হয়েছিল আমার থেকে ৪ বছরের বড় ঐ ছেলের সাথে তখন নিজের কপালে নিজে থাপরায়ছি, কেনো যে সমবয়সী ছেলের প্রেমে পড়ছি, আজ যদি ৫-৬ বছরের বড় কোনো ছেলের সাথে রিলেশনে থাকতাম সে ঐ ছেলের মত পড়ালেখা শেষ করে কিছু একটা তো করতো বাবাকে বলতে পারতাম, সে বড় জব না করলেও ছোট জব তো করে নিজের পায়ে তো দাঁড়িয়ে আছে!!
–হুমম, এটাই বাস্তবতারে
–সে যাই হোক আমাকে পেয়ে, তুই খুঁশি তো??
–খুঁশি কিন্তু
–কিন্তু কি??
–(দুষ্টামি করে বলল রাফি) কিন্তু আফছোস, ভাবছিলাম ২০-২১ বছরের এক তরুণীকে বিয়ে করব তা আর হলো না, এক বুড়িই কপালে জুটলো!!
–শোন রাফি ছোটবেলা কিছু বলে পালায় যেতি, কিন্তু এখন সারাদিন যেখানেই থাকিছ দিন শেষে আমার পাশে এসেই ঘুমতে হবে, তাই কথা বার্তা ঠিক করে বলিস নইলে যখন আমার পাশে ঘুমতে আসবি তখন দেখাব মজা!!
–হাহা, না থাক কথা ঠিক ভাবেই বলল!!
–এখন আমাকে প্রপোজ কর!!
–আমি কেন করব?? তুই কর….
–এতকাল আমি প্রপোজ করেছি আজ তুই করবি!!
–এতকাল আমি প্রপোজ পায়ছি আজও পেতে চাই!!
–আজ আর হবে না এখন তোর করবে হবে!!
–আচ্ছা করছি!! দেখ সিনেমার হিরোদের মত এত ভাব নিতে পারব না, তোরে আমি ভালবাসি এটাই সোজা-সাপ্টা কথা! এখন চল বাড়ি চল!!
–হিহিহি বাদর একটা, শোন বিয়েটা হতে দে তোরে দেখাব মজা, প্রতি রাতে তোর প্রপোজ করতে হবে, নইলে রান্না করে তোরই খেতে।
(সমাপ্ত)