অপেক্ষার অবসান

অপেক্ষার অবসান

আভার কথায় আমি একটু অবাকই হলাম।একটু না,বেশ ভালই অবাক হলাম।বলে কি মেয়েটা! আমি আভার দিকে একটু চেপে বসে বললাম,

-তুমি ঠিক আছো তো?
-আমাকে দেখে কি তোমার অসুস্থ মনে হচ্ছে? হুম এটাও ঠিক।দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ ভালই আছে।আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আভা বললো,
-আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবো না।
-কিন্তু এখন কিভাবে বিয়ে।অন্তত চাকরীটা হোক। আমার কথায় আভা কি যেন ভাবলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

-তুমি এখন বিয়ে করো।চাকরী না পাওয়া পর্যন্ত আমি আমার বাসায় ই থাকবো।বাবাকে আমি ম্যানেজ করে নেবো।
আভার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।মেয়েটা একবার যেটা বলবে সেটাই করতে হবে।বাবা, মা মারা যাওয়ার পর আভাই আমার পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়েছে।আমার বলতে এখন শুধু আভাই আছে। আমি আভাকে বললাম,

-তোমার আব্বু যদি মেনে না নেয়?
-বললাম না সেটা আমি দেখবো।

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আভা আমাকে নিয়ে কাজী অফিসের দিকে রওনা দিল।মনে হচ্ছে বিয়েটা হয়েই যাবে। আফজাল সাহেবের ফোন পেয়ে আমি একটু ভয়ই পেলাম।আভা এতক্ষনে আমাদের বিয়ের কথা ওর বাসায় হয়তো বলে দিয়েছে।আর তার জন্যেই আভার বাবার ফোন এসে হাজির। আমি ফোনটা ধরতেই উনি বললেন,

-আমার মেয়েকে পটিয়ে বিয়ে করলেও তুমি কখনও আমাকে পটাতে পারবে না।ফাজিল ছেলে।

কথাটি বলেই আফজাল সাহেব ফোনটা কেটে দিলেন।যাক তবুও অল্পের উপর দিয়ে গেছে।উনি যে রাগী। ইন্টার্ভিউ দিয়ে বের হতেই আভার ফোন এসে হাজির।আমি ফোনটা ধরতেই আভা বললো,

-ইন্টার্ভিউ কেমন হলো?
-বরাবরের মতই ভাল।
-আম্মু বলছিল রাতে ডিনারটা আমাদের সাথেই করতে।আসবে? আভার কথায় আজ কেমন যেন কোমলতা বিরাজ করছে।অন্য সময় হলে বললো,
-আজ রাতের খাবার আমাদের সাথেই খাবে,আসতে যেন দেড়ি হয় না। কিন্তু আজ একটু ভিন্ন ভাবেই বললো।এত দ্রুত যে ওর মধ্যে বউ বউ ভাব চলে আসবে এটা কোনদিন ভাবিনি। আমি কিছু বলার আগেই আভা বললো,

-আমি অপেক্ষায় থাকবো।

কথাটি বলেই ফোনটা কেটে দিল।আভার সাথে দেখা হয়েছিল দু তিন দিন হবে।মেয়েটাকেও খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।আর যাই হোক আভার জন্যে আমাকে যেতেই হবে। কলিংবেল চাপ দিতেই দড়জাটা খুলে গেলো।মনে হচ্ছে কেও একজন দরজার পাশেই ছিল।দরজা খুলতেই দেখি আভা দাঁড়িয়ে।তারমানে মেয়েটা আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিল। আমি কিছু বলার আগেই আভা বললো,

-এত দেড়ি হলো যে?
-একটু কাজ ছিল।
-ও আচ্ছা।আসো ভেতরে আসো।

ভেতরে যেতেই দেখি খাবার টেবিলে আভার মা, বাবা বসে আছে। হয়তো আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিল।আমি ওনাদের সালাম দিতেই আভার মা বললো,

-এত দেড়ি হলো কেন বাবা?

আভার মায়ের মুখে বাবা ডাক শুনে কেমন যেন ভাললাগা কাজ করলো।আভা বলেছিলো ওর মা সব কিছু মেনে নিয়েছে। কিন্তু ওর বাবা বেশ রেগে আছে। আমি কিছু বলার আগেই আভার মা বললো,

-বসো বাবা।

এতক্ষনে আভাও আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে।শুধু ভয়টা ওর বাবাকে নিয়ে।এই ভদ্রলোক কখন কি বলে ফেলে কে জানে।মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে। আমি বসে চুপচাপ খাওয়া শুরু করলাম।মেসে এসব খাবার পাওয়া যায় না। চাকরী হলো নাকি শ্বশুরের টাকায় ঘরজামাই থাকার ইচ্ছে আছে? যখনি মাংসের পিসটা মুখে দিতে যাব তখনি আভার বাবা কথাটি বললেন। কি। আভার বাবার কথায় আমার রাগটা একটু বেড়েই গেলো।বলে কি, ঘরজামাই।আমি এবার আভার দিকে তাকালাম।ও ভিত চোখেইই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম,

-জ্বী চাকরীরর জন্যে চেষ্টা করছি।

আভার বাবা আর কিছু বললেন না।মুখে কেমন যেমন তাচ্ছিল্যের হাসি। বাবা আজ রাতটা থেকে যাও। আভার মায়ের কথায় আমি আভার দিকে তাকালাম। ও ও হয়তো চাইছে আজ রাতটা ওর সাথে কাটাতে।কিন্তু এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।কোন ভাবেই না।আমি আভার মা কে বললাম,

-আজ একটা কাজ আছে, অন্যদিন থাকবো।

কথাটি বলে আমি আর দাঁড়ালাম না।আভার দিকে তাকানোর সাহসও হলো না।আমি জানি ওর চোখে এখন পানি টলমল করছে।যেটা আমি কোনভাবেই সহ্য করতে পারবো না। বাসা থেকে বের হতেই আমি আভার রুমের দিকে তাকালাম।হুম যেটা ভাবছিলাম সেটাই।মেয়েটা বেলকুনিতে এসে দাড়িয়েছে আমার জন্যে।এত দূর থেকে ওর চোখের পানি না দেখা গেলেও ওর মনের অবস্থা আমি বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারি।বেশ ভালভাবেই। এরপর আভার সাথে কথা হলেও ওদের বাসায় যাওয়া হয়নি আর।তবে আজ যাব।আমার বউটাকে আনতে। চাকরীর জয়েনিং লেটারটা হাতে পেয়ে আমার প্রথম আভার কথাই মনে পড়েছিল।ও বলেছিল তুমি পারবে। আজ আমি পেড়েছি।বেশ ভাল একটা জব।মোটা অংকের বেতনও আমার জন্যে বরাদ্দ। কলিংবেল বাজাতেই আভার মা এসে দরজা খুলে দিল।আমি ওনাকে সালাম দিয়ে চাকরীর কথাটা বললাম। উনি বেশ খুশীই হয়েছেন।আমি বললাম,

-আভা কোই?
-তুমি যাও ওর রুমে আছে।

আভার রুমে গিয়ে দেখি মেয়েটা ফোনে কি যেন করছে।আমি পেছনে গিয়ে দাড়াতেই দেখি মেয়েটা আমার ছবি বের করে বেশ মনোযোগ দিয়েই দেখছে।আমি এবার আভাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই মেয়েটা চমকে উঠলো।তবে আমাকে দেখে ওর ভয়টা মনে হয় কমে গেলো।আভা কাপা গলায় বললো,

-কখন এলে,জানাবেনা আমাকে? আমি আভার কথার কোন উত্তর না দিয়ে ওর হাতে একটা চাবি ধরিয়ে দিলাম।আভা একটু অবাক হয়েই বললো,
-এটা কিসের চাবি?
-আমাদের ফ্লাটের চাবি।আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।

মেয়েটা এবার বাচ্চাদের মত কেঁদে দিয়ে আমাকে শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো।আমি আভার কান্না থামানোর কোন চেষ্টা করলাম না। কারণ এরকম সুখের কান্না থামাতে নেই….

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত