রাত ১২টার একটু বেশি বাজে।চারিদিকে চাঁদের আলো ঝলমল করছে।এই মধ্যরাতেও মনে হচ্ছে এখন সকাল ৮ টা বাজে।
এখন রাস্তায় কোন গাড়ি নেই।নেই কোন জনমানব। আমি একা একা হাঁটছি।আমি হুসাইন অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।
এর বেশি পরিচয় দিলে আপনারা আমার বাড়িতে দাওয়াত নিতে পারেন তাই আর বেশি পরিচয় দিলাম না।
রাতের আঁধারে হাঁটতে আমার খুব ভালো লাগে।মাঝে মাঝে মনে করি হিমু হয়ে যায় কিন্তু কী ভেবে যেনো আবার ব্যাপারটা
বাদ দিয়ে দিই।আমি কখন কী করি নিজেই জানিনা।এক কথায় আমার কোন পরিকল্পনা নেই।যেমন মাঝে মাঝে হঠাৎ
করেই মধ্যরাতে হাঁটতে বের হয়ে যায়। নীলা একদিন আমাকে বলেছিলো তোমার মত অগোছালো পরিকল্পনাহীন মানুষ
একটাও দেখেনি।নীলার কথা শুনে কেনো জানি অনেক হাসি পেয়েছিলো।আমাকে হাসতে দেখে নীলা রাগী লুক নিয়ে
আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিলো।রাগলে নীলাকে একদম পরীর মত লাগে।সত্যিকারের পরী কখনো দেখার ভাগ্য
হয়নি।তবে আমার মনে হয় নীলার দুটো পাখনা লাগিয়ে দিলে ঠিক পরীর মতই লাগবে।মেয়েটা অনেক গুছিয়ে কথা বলতে পারে।
নীলা অনেক ভালো গান বলতে পারে।নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ওর গান শুনেই প্রেমে পড়ে ছিলাম।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুর চলে এসেছি।আচ্ছা আরেকটু সামনে হাঁটলেইতো নীলাদের বাসা যাই মেয়েটাকে একটু চমকিয়ে
দিয়ে আসি।এত রাতে আমাকে দেখলে নিশ্চয় অনেক অবাক হবে।আবার অনেক খুশিও হবে।তবে কী কারনে খুশি হবে
সেটা আপাতত মাথায় আসছেনা।ওইতো নীলাদের বাসা দেখা যাচ্ছে।নীলার রুমের সামনে একটা বেলকনি আছে।নীলার
রুমের বেলকনি বরাবার রাস্তার অপর পাশে একটা দোকান আছে।রিলেশন হবার আগে ওই দোকানে বসে নীলাকে দেখতাম।
বেলকনিতে কয়েকটা ফুলের গাছ আছে সেগুলো পরিচর্যা করার জন্যই হয়তো নীলা প্রতিদিন বিকেলে বেলকনিতে আসতো।
এত রাতে নীলাদের বাসার পাশে আমাকে কেউ ঘুরতে দেখলে গন ধোলাই খাওয়ার সম্ভবনা আছে।কারণ এতরাতে চোরেরাই শুধু ঘোরাফেরা করে।
নীলার রুমের জানালা খোলা।রুমের লাইট এখনো জ্বলছে।নীলাকে ফোন দিলাম।একবার রিং হতেই রিচিভ হলো।
:-একটু নিচে আসবে?
আমার কথাটা ওপাশের মানুষের কানে যেতেই ফোন কল কেটে গেলো।আমি জানি মেয়েটা এখন আস্তে করে দরজা খুলে পা
টিপে টিপে বাইরে আসবে।এতরাতে নীলার বাইরে আসার উপস্থিতি যদি কেউ টের পায় তাহলে নীলাকে আস্ত রাখবেনা।
আমি ঠিক গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি।নীলা গেট খুলে বাইরে এলো।কমলা কালারের থ্রিপিস পরেছে নীলা।সাথে লাল ওড়না।
নতুন বউয়ের মত মাথায় ঘোমটা দিয়ে রেখেছে।চাঁদের আলোয় মেয়েটাকে অপুর্ব লাগছে।বাঙালি মেয়েরা মাথায় ঘোমটা
দিলে আসলেই অসাধারণ লাগে।
:-ওই তোমার কান্ড জ্ঞান বলতে কিছু নেই?তোমাকে কতবার বলেছি রাতে বাইরে বের হবেনা তার পরেও কেনো বের হয়েছো?
যদি কোন অঘটন ঘটে যায়?(নীলা)
:-হিমু হতে চাই।হি হি হি হি
:-ওই একদম হাসবেনা।এক ঘুসি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিবো।
:-দাওনা একটা ঘুসি।মেয়েদের নরম হাতে ঘুসি খেতে ভালোই লাগে।
:-ও খোদা। ওই আমি কী তোমার শালি লাগি যে এত ইয়ারর্কী করো আমার সাথে?হু
:-তোমার বড় বোন থাকলে তার সাথে প্রেম করতাম আর তোমাকে শালি বানাতাম।হি হি হি হি
:-আরেকবার হাসলে এবার সত্যি সত্যি তোমার নাক ফাটাবো।
আর রাগানো যাবেনা।বেশি রাগালে সমস্যা পরে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে।এর আগে একবার ওকে
অনেক বেশি রাগিয়েছিলাম বলে আমার সাথে ২ দিন কথা বলেছিলো না।
:-একটা কথা বলি?(আমি)
:-বলো।(নীলা)
:-তুমি সত্যিই নীলা নাকি পরী?
আমার কথা শেষ হওয়া মাএই নীলা আমার কলার ধরে ওর খুব কাছে টেনে নিলো।নীলার নিঃশাসের শব্দ আমি টের পাচ্ছি।
এই প্রথম নীলার এত কাছে এলাম আমি।হঠাৎ আমার কীযেনো হয়ে গেলো।নীলার ঠোটে কিস করতে গেলাম।নীলা
আমাকে দ্রুত দুরে সরিয়ে দিলো।আমি নিজেই অবাক এমন কাজ করতে গিয়ে।
:-ওই এতকাছে গিয়েছি বলে কিস করার অধিকার দিইনি।(নীলা)
:-সরি।(আমি)
:-ওকে।তবে এমন ভুল যেনো আর নাহয়।
:-হবেনা।
:-হু
:-আমার সাথে একটু হাঁটবে?
নীলা কীযেনো ভাবলো।তারপর বললো
:-চলো।
আমি আর নীলা পাশাপাশি হাঁটছি।আমি বারবার নীলার দিকে তাঁকাচ্ছি।হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম।
নীলা দ্রুত এসে আমাকে ওঠালো।কনুইতে কেটে গিয়েছে।
:-তুমি যে কী? একটু দেখে হাঁটতে পারোনা?
:-এমন একটা পরী পাশে থাকলে কোনদিকে খেয়াল থাকেনা।
:-ইচ্ছে করছে তোমাকে!
:-কী?
:-মেরে ফেলবো।
:-আমি মরে গেলে তোমার কষ্ট হবেনা?
:-ওই একদম মরার কথা বলবেনা।
:-তুমিইতো বললে।
নীলা আর কিছু না বলে ছবির নায়িকাদের মত নিজের ওড়না ছিড়ে আমার কেঁটে যাওয়া অংশে বেঁধে দিলো।
আজকের রাতটা আমার স্মৃতির পাতায় গেথে থাকবে।
:-চলো বাসার দিকে যায়?(নীলা)
:-চলো।(আমি)
নীলা আমার হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে হাঁটছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি।সারাজীবন এভাবে তাঁকিয়ে থাকলেও তৃপ্তি মিটবে না দেখার।
—সমাপ্ত—