সন্দেহের অপর নাম ভালবাসা

সন্দেহের অপর নাম ভালবাসা

– ঠিক মত গাড়িতে উঠতে পারো না?এই দিক ওই দিক কী এতো, হু? (মিষ্টি)
– আমার না চোখে পোকা পড়ছে, ঠিক ভাবে দেখতে পারছি না।
– হু,, জানি সব জানি।
– কী জানো??
– তুমি ওই মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করছো? লুইচ্চা একটা!!!
– সত্ত্যি বলছি সোনা।
– হইছে থাক। তুমি যে কেমন! সেটা অামার থেকে কেউ ভাল জানে না।
– দেখো না,,মেয়েটা কী সুন্দর! টানা টানা চোখ! আহহহা…
– আজ তুই খালি আমার বাপের বাড়ি চল আজ তোর খবর আছে রে!

[ ঘটনা কী! বাপের বাড়ি নিয়ে গিয়ে পিটাবে নাকি! আল্লাহ্!!! ] এতোক্ষণে হয়তো বুঝেই গেছেন, মেয়েটা আমার কে হয়? মাস ক্ষানেক হয় বিয়ে করেছি। আগে রিলেশন ছিল পাক্কা দুই বছর। দুই বছরে জীবনটা শেষ করে দিছে। শুধু সন্দেহ ছাড়া আর কিছুই করতে শিখে নি মেয়েটা। অাসলে কথায় আছে না “সেই মানুষই তোমাকে সন্দেহ করে, যে তার জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসে তোমায় “। ব্যাপারটা সেই রকমই, হয়তো। সন্দেহ করার সময় সন্দেহ আর ভালবাসা দেবার সময় এক ফোঁটাও কম দিবে না পাগলীটা। বড্ড ভালবাসে আমায়। আচ্ছা, আরো বিস্তারিত পরে বলবো,, এবার একটু কাহীনি তে অাসা যাক….

– এই দিকে আসো তো? (মিষ্টি)
– কোন দিকে?
– তুমি জানালার পাশে আসো।
– তোমার নাকি জানালার পাশ ছাড়া ভাল লাগে না?
– আজ ভাল লাগবে।
– আমি আমার জায়গা থেকে বিন্দু পরিমাণ নড়বো না,হু।
– তুই এই পাশে আসবি কি না বল???[ একটু রেগে গেলেই তুই বলা শুরু করে মিষ্টি। এটা নতুন কিছু না ]
– কেনো? এই পাশে থাকলে কী সমস্যা?
– তুই ওই পাশে থাকলে আবারও ওই মেয়েটার দিকে চোখ দিবি।
– আল্লাহ্ মানুষকে চোখ দিছে দুনিয়ার সুন্দর জিনিস দেখার জন্য। তাতে সমস্যা কী??
– সমস্যা আছে। তুই অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাতে পারবি না। একদম চোখ তুলে ফেলবো।
– চোখ তুলে কী বিক্রি করবা?
– চুপ কর। শয়তান একটা!

কিচ্ছু, কররা নেই,, অবশেষে বাধ্য হয়ে নিজের জায়গা থেকে নড়তে হল। মানুষ বিয়ে করে কিসের জন্য?? ভালবাসার চাইতে যন্ত্রণা টাই বেশি। বিয়ে করা মানে নিজের স্বাধীনতাটা হাড়িয়ে ফেলা। মিষ্টির সাথে যাচ্ছিলাম ওর বাপের বাড়ি। বাপকে দেখতে না পেরে যেন, কাঁন্না কাঁটি করে চোখ দুইটা ফুলে তুলেছে। অথচ, এই বেচারী স্বামীর জন্য একবারও চোখের পানি বের হয় না। মিষ্টির সাথে কোথাও বের হলে, অাকাশে উড়া একটা পাখির দিকেও তাকাতে পারবো না।

সেটাতেও ওর সন্দেহ্,হুররররর! কিন্তু, মিষ্টির একটা ব্যাপার অনেক ভাল লাগে আমার। আমি যখন রেগে যায়, তখন মিষ্টি আমার দিকে না তাকিয়ে শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে, অঝর নয়ণে চোখের পানি ফেলতে থাকে। তারপর, আস্তে করে সরি বলে দেয়। কখনও অভিমান করে থাকে না। কারণ, সে আমাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে। আমিও সব সময় মিষ্টির উপর রাগ করি না। যখন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি না, তখন মিষ্টিকে রাগ দেখাই। নয়তো, সব সময় ওর রাগ গুলো মজায় মজায় পার করি, অন্য দিকে মহারাণী তো রেগে আগুনের থেকেও বড় কিছু হয়ে যায়। মিষ্টির রাগ করা মুখ খানা দেখতে যে আমার বড়ই ভাল লাগে! অবারও ঘটনায় অাসা যাক,, বাস থেকে নেমে কিছুদূর যাওয়ার পর…

– একটু দাঁড়াও তো! (মিষ্টি)
– কেনো?
– মেয়েটা আমাদের পিছু পিছু আসছে কেনো?
– কোন মেয়ের কথা বলছো??
– ঐ যে বাসে উঠার সময় তুমি যে মেয়েটাকে খুঁজলে?সারা রাস্তা বাসে যে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলে!
– আমি কী জানি,হু?
– সব বুঝি আমি। তোমার চোখ এতো খারাপ আগে জানতাম না।
– আগে জানতে না তো কী হইছে! এখন জানো…
– আমি সারাটা রাস্তা খেয়াল করছি, তুই ঐ মেয়েটার দিকে অনেক মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিলি…..

– কই না তো!
– মিথ্যা বলবা না। তোমার মত একটা ছেলেকে বিয়ে করে আমি সবচেয়ে বড় ভুল করছি।
– মিষ্টি চুপ করো। আশে পাশে মানুষ আছে তো!
– তাতে কী হইছে?যাও ঐ মেয়েটার কাছে যাও…
– চুপ করবে তুমি?
– না কেনো চুপ করবো?? তোমার স্বভাব চরিত্র একদমই ভাল না।
– মিষ্টি আবারও বলছি চুপ করো। পাশে মেয়েটাও সবকিছু শুনতেছে….
– শুনলে আমার তাতে কী???যাও গিয়ে মেয়েটার হাত ধরো। এইবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। সবার সামনে মিষ্টিকে জোরে একটা চড় মারলাম। চড়টা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি চোখ দিয়ে পানি বের করে ফেলছে। সে এখন একদম চুপ। শুধু চোখ দিয়ে পানি বের করছে। এমনকি, আমার দিকে তাকাচ্ছেও না।

– জানি আমি চড় না খাওয়া পর্যন্ত তুমি চুপ করবে না।এখন তাহলে শোনো কেন মেয়েটা আমাদের পিছু পিছু আসতেছিল মেয়েটাকে আমি আগে কখনও দেখি নি। তুমি যখন আগেই বাসে উঠে গেলে, তখন কে জানি হঠাৎ করেই আমার হাতটা টেনে ধরল…

– ভাইয়া আমাকে বাঁচান, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।(মেয়েটা)
– কে তুমি??? আর ওরাই বা কারা?
– আমি আপনার ছোট বোনের মত,,আমাকে একটু সাহায্য করেন প্লিজ…..
– হ্যাঁ ঠিক আছে। কিন্তু কী হইছে আগে সেটা বলবা তো?
– ভাইয়া ওরা আমাকে দেখে ফেললে, আমাকে আর বেঁচে রাখবে না।প্লিজ, পরে সব বলবো আপনাকে…
– আচ্ছা ঠিক আছে। চলো আমার সাথে mঅনেক বারই মনে হচ্ছিল,, নতুন কোন ঝামেলার মধ্যে পড়লাম না তো! এখন দুনিয়ার যে অবস্থা!

– ভাইয়া অাপনি কী একা?কোথাও যাচ্ছেন?
– হ্যাঁ, শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। সঙ্গে মিষ্টি আছে, মানে আমার বউ। সে আগেই বাসে উঠে গেছে….
– ওহ…ভাবী যদি আমাকে আপনার সাথে দেখে, তাইলে অন্য কিছু ভাববে না তো?
– আরেহ্ না। ও অনেক ভাল। বাহিরের থেকে যতটা কঠোর, ভিতরে একদম নরম। আচ্ছা, এবার তোমার ঘটনা বলো ওরা তোমাকে ধাওয়া করছে কেনো?

– ভাইয়া, আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম। কিন্তু,আগে বুঝি নাই যে, সে একটা চিটার…
– কেনো কী হইছে?

>> আমাদের পালিয়ে বিয়ে করার কথা ছিল। আর, সেই অনুসারে আমি বাবা- মা, ছোট্র একটা ভাইকে ছেড়ে ওর কাছে চলে আসি। আমাদের পরিবারটা অনেক বড়। অনেক সম্পত্তি আছে আমার বাবার। এই সব কিছুই ওই ছেলেটা জানতো আগে থেকেই। এখন বুঝতেছি,সে আমাকে ভালবাসতো না,শুধু সম্পত্তি গুলোকেই ভালবাসতো! আর যখন সবকিছু ছেড়ে আমি খালি হাতে ওর কাছে চলে এসেছি,তখন সে আর আমায় গ্রহন করবে না। এখন আমায় অত্যাচার করতেছে, আমার পিছনে লোক লাগিয়ে দিয়েছে। মেয়েটার কথা গুলো শুনতে শুনতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে, নিজেও টের পাই নি। মানুষ কত্তো নিষ্ঠুর হলে, নিজের ভালবাসাকে হত্যা করে, এইরকম কাজ করতে পারে! হায়রে আজিব দুনিয়া!!!

– আচ্ছা সেই লোক গুলো এখন কোথায়?
– ভাইয়া আমার পিছন পিছনেই আসতেছিল…
– আচ্ছা তুমি এক কাজ করো বাসে উঠে পড়ো আর সামনের দিকে বসো। আমি আসতেছি…….
– ঠিক আছে ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ….
– আরেহ্ ধন্যবাদ দিতে হবে না। উঠো তো…”

একটু ব্যাকডেটে গেছিলাম, এবার সামনের দিকে এগানো যাক আমি কথা গুলো শেষ না করতেই, মিষ্টি মেয়েটার হাত ধরল গিয়ে। তারপর, বলতেছে…

– সরি, আমি ঠিক না বুঝে অনেক কিছু বলে ফেলছি…
– ঠিক আছে আপু। কোন ব্যাপার না….
– তুমি এখন কোথায় যাবে?
– জানি না আপু।
– হুম, জানতে হবে না। আমাদের সাথে আমার বাবার বাড়ি চলো…
– কিন্তু আপু….??
– কোন কিন্তু না। তোমাকে যেতেই হবে! [ হায় রে মেয়ে মানুষ! তোদের মন বুঝা বড় দায়!! যেই মেয়ে অন্য একটা মেয়েকে সহ্য করতে পারছিল না আর এখন সে কি না, নিজের বাবার বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে সঙ্গে করে!! ]

– আপু ভাইয়াকে কখনোই কষ্ট দিয়েন না, উনি অনেক ভাল।
– ভাল না কচু।
– আপু কিছু বললেন?
– না তো!
– ভালবাসার মানুষকে সঙ্গে করে নিয়ে ঘোরা-ঘুরি করা সবার ভাগ্য থাকে না আপু।
– হুম। আরেহ্ কষ্ট পেও না। সব ঠিক হয়ে যাবে….
– এই, এইদিকে একটু আসবে? (আমি)

– তোমার আবার কী হল? মিষ্টির কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম, তখন চড়টা খুব জোরে লাগছে না? অনেক গুলো সরি,সোনা।
– হইছে আর ঢং করতে হবে না। আবারও মিষ্টির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম…
– লাভ ইউ লক্ষীটি।
– কী বললে শুনতে পাই নি?
– সত্ত্যি শুনতে পাও নি?
– হুম,,সত্ত্যি।
– লাভ ইউ।
– লাভ ইউ টু।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত