বউ আমার

বউ আমার

–আজ থেকে তাহলে আমরা অফিসিয়ালি স্বামী-স্ত্রী!!
–অফিসিয়াল–অফিসিয়ালি!!
–তা নয়তো কী??
–হুম।
–আমি আফরান নিশোর খুব ভক্ত। উনার নাটক দেখে এই কথাটা শিখেছি।
–তা এপর্যন্ত আর ক’জনকে এই কথাটা শুনিয়েছেন??
–ছিঃ ছিঃ কী বলেন এসব!! আমার কী আগে আরও বউ ছিল নাকি যে তাদেরকে শুনাবো!!
–কী জানি!!
–আপনাকেই প্রথম শুনালাম।
–হুম বুঝেছি।

বউটাকে দেখতে একদম পেত্নীর মতো লাগছে।এমনিতেই সুন্দর,তার উপর আবার এত্ত এত্ত আটা,ময়দার প্রলেপ দিয়েছে মুখে। খাজনার চাইতে বাজনা বেশি!!

–একটা কথা বলি??
–বলুন।
–আয়নার সামনে গিয়েছিলেন??
–কবে??
–আজকে??
–পার্লারে দেখেছিলাম।
–ওহহ আচ্ছা।
–কেন বলুন তো??
–নাহ এমনি।
–এমনি এমনি তো আর না। কিছু একটা তো অবশ্যই আছে।
–আরে নাহ কিছুই নেই। সত্যি!!
–মিথ্যা বলা কিন্তু একদম পছন্দ করি না আমি।
–আরে মিথ্যে কেন বলবো!!
–তবে??
–তবে কী??
–এমন প্রশ্ন কেন??
–বললাম না এমনি!!
–মিথ্যা বললে কিন্তু কথা বলবো না এখন!!

ধুর!! কথাটা বলেও তো দেখছি বিপদে পড়ে গেলাম!! বাসর রাতে যদি বউয়ের সাথে একটু শান্তিমত মন খুলে কথা বলতে না পারি তাহলেকীভাবে হয়!! সারাজীবনে দ্বিতীয়বারেরমতো তো এমন রাত আর কখনও আসবে না।

–সত্যি বলতে কী,আপনি দেখতে অনেক সুন্দর।তার উপর আবার মুখে এত এত আটা,ময়দাদিয়েছেন এই স্যরি স্যরি!! যাহ!! কী বলতে কী বলে ফেললাম!! বউ আমার কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার কী বলি!!

–মানে বলতে চেয়েছিলাম কী,মুখে এত মেকাপ দিয়েছেন তাতে আপনাকে দেখতে খারাপ দেখাচ্ছে একটু!! বউ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখও সরাচ্ছে না আবার কিছু বলছেও না। বিপদে পড়ে গেলাম নাকি কথাটা বলে!!

–না মানে,আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে। দারুন,অপরূপা,অসাধারণ!!
–আমাকে কেমন খারাপ দেখাচ্ছে??
–মানে??
–আমাকে মেকাপে খারাপ দেখাচ্ছে। তো কিসের মতো দেখাচ্ছে শুনি??
–কিছুর মতো না তো।
–সত্যি বলেন। কিছু বলবো না।
–সত্যি কিছু বলবেন না তো??
–সত্যি কিছু বলবো না।

যাক কিছু বলবে না শুনে বুকে সাহসটা যেন হঠাৎকরেই বেড়ে গেলো। বুকটা টান টান করে বললামঃ

–একদম পেত্নীর মতো লাগছে। হাহাহা!!

বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে দিলাম। আমার হাসি আর কে দেখে!! কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি বউ আমার রাগে ফুলতে ফুলতেশেষ!! ভ্রুঁ-কুচকিয়ে আমার দিকে এক পলকেতাকিয়ে আছে। বউয়ের দিকে তাকিয়ে বুকেরভিতরটা কেমন করে যেন মোচড় দিয়ে উঠল। বাগানের একটা আছোলা বাঁশ বুঝি এই খেয়েই ফেললাম!!

–না মানে আমি বলতে চেয়েছিলাম আপনাকে পরীর মতো লাগছে। ভুলে পরীর জায়গায় পেত্নী বলে ফেলেছি।বউ আমার তখনও কিছু বলছে না। আমার দিকে যে তাকিয়ে আছে তো আছেই। মনে মনে ভাবতে লাগলাম,স্ট্রোক করে আবার হ্যাং খেয়ে গেলো নাকি!! একটু নাড়া দিয়ে দেখি তো!! আছে নাকি গেছে!! আমার ডান হাতটা ওর হাতের দিকে এগিয়েনিচ্ছিলাম,হঠাৎই সে জোরে এক চিল্লানী দিয়ে উঠল।

–খবরদার,আমার শরীরে একটুও হাত দিবেন না!! একদম ডিচকাউ ডিচকাউ করে গুলি করে দেবো আপনাকে!! চিল্লানী শুনে আমি এক লাফ দিয়ে বিছানাথেকে দুই-তিন হাত পিছনে সরে গেলাম। তারপর ঠাস করে মেঝেতে পড়ে গেলাম। বাবারে বাবা!! কোমড়টা বুঝি এই গেলো রে!!বাপরে বাপ!! মেয়ে মানুষের গলার আওয়াজ এতবেশি!! মাইকও যেন ফেইল!!

–আছেন নাকি গেছেন সেইটা দেখার জন্য একটু নাড়া দিতে চেয়েছিলাম।
–আছি নাকি গেছি মানে??
–না মানে,জেগে আছেন নাকি ঘুমিয়ে গেছেন সেইটা দেখতে চেয়েছিলাম!!
–আমার চোখ খোলা ছিল নাকি বন্ধ ছিল??
–খোলা ছিল।
–চোখ খোলা রেখে কেউ ঘুমায়??
–অবশ্যই ঘুমায়।
–কে ঘুমায়??
–ঘোড়া।
–আমি কী ঘোড়া??
–আমি কী তাই বলেছি??
–তা বলেননি তবে আপনার কথায় বুঝা যায়।
–আমি ভেবেছিলাম আপনি যদি একটু অন্যরকম হোন!! চোখ খোলা রেখেই যদি ঘুমান!!বউ আমার এবার কিছু বললো না।

–একটু চলেন।
–কোথায়??
–বেলকনিতে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১ঃ১৭ বাজে।
–এত রাতে বেলকনিতে কেন??
–আমার অনেক ইচ্ছে,বাসররাতে বেলকনিতে বসে জামাই এর কাঁধে মাথা রেখে কথা বলতেবলতে পুরো রাতটা কাটিয়ে দিব। বাহ বাহ!! বউ দেখি আমার দারুন রোমান্টিকটাইপের। একদম আমার মতোই। রোমান্টিকতায়ভরপুর!!

–আচ্ছা চলুন তাহলে। আমারও অনেক শখ।
–আচ্ছা চলেন।

বউ আমার বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়েবেলকনির দিকে হাঁটা শুরু করলো। আমি তারপিছু পিছু যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দরজার সামনে গিয়ে বউ আমার থেমে গেলো।

–কী ব্যপার থেমে গেলে কেন??
–আপনি আগে যান।
–উহু। লেডিস ফার্স্ট।
–ছিঃ ছিঃ কী বলছেন এসব!! আপনি আমার স্বামী।

আপনাকে পিছনে ফেলে আমি আগেযাব এইটা কীভাবে হয় বলেন!!স্বামীর কদর কতটুকু সেইটা তো আমার বউ বেশভালোই জানে দেখছি। বাহ বাহ!! বাপ,মাদারুন ভালো লেভেলের একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে তো দেখছি। সবকিছুতেই একশো’তে একশো। সকালে উঠেইবাপ,মার গালে একটা করে চুম্মা দিতে হবেই হবে। বউ এর কথা শুনে আমিই আগে বেলকনিতে ঢুকে গেলাম। বউ আমার পিছনে। বেলকনিতে গিয়েপিছনে ফিরতে না ফিরতেই ঠাস করে আমার বউ বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে দিলো। বন্দী করে ফেললো আমাকে। হায় হায় এইটা কী হলো!!

–বউ ও বউ দরজা খোলো!! দরজা বন্ধ করলা কেন?? বউ আমার জানালার পাশে এসে বললোঃ
–জীবনে এই প্রথম ভালো করে একটু সাজুগুজু করেছিলাম আপনার জন্য। ভেবেছিলাম কই বলবেন,খুব সুন্দর লাগছে আমাকে,অসাধারণ লাগছে!! তা না বলে আমাকে পেত্নীর মতো লাগছে,তাই না??বউ ভ্রুঁ-কুচকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

–ভুল হয়ে গেছে বউ। কান ধরছি আর বলবো না কখনও।
–আমি চোখ খোলা রেখে ঘোড়ার মতো ঘুমাই,না??
–আরে এইটা আবার কখন বললাম!!
–বলেছেন বলেছেন। আমি স্পষ্ট শুনেছি।

মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা। সবসময় একটু বেশি বুঝে। বলবো দশ,সেইটাকে বানিয়ে ছাড়বে পনেরো!!

–বউ,এই রাত জীবনে দ্বিতীয়বার আর কখনও আসবে না। প্লিজ ভিতরে ঢুকতে দাও বউ!!
–উহু,দিব না। আজকের রাতটা এখানেই কাটিয়ে দিন।
–বাসররাত আজকে!!
–তো??
–একটু আড্ডা দিব তোমার সাথে।
–বাইরে ভূতেদের সাথে আড্ডা দিন।
–ভূতে আমি খুব ভয় পাই। ছোটবেলায় ভূতের ভয়ে কত যে জানালা দিয়ে হিসু করেছি তার কোনো হিসেব নেই।কথা শুনে বউ আমার মুচকি মুচকি হাসছে। কিন্তু এমন একটা ভাব দেখাচ্ছে যেন আমি কিছুই বুঝতে না পারি।

–বউ,ভূত আমি খুব ভয় পাই। প্লিজ ভিতরে ঢুকার অনুমতি দাও।
–উহু,দিব না। এইটা আপনার শাস্তি।
–বাইরে ভূত আছে তো!! ধরবে তো আমাকে!!
–ভিতরে আসলে পেত্নীতে ধরবে যে!!
–এই পেত্নী সারাজীবন তো আমার সাথেই থাকবে। এই পেত্নী ধরলেও আমার কোনো ক্ষতি করবে না আমি জানি।
–কচু জানেন আপনি!!
–খুলে দাও না জানু প্লিজ!!
–আমি ঘুমাই।
–দরজাটা খুলে দিয়ে ঘুমাও।
–উহু,খুলবো না। ঘুমাতে গেলাম।
–এই বউ না না!!
–শুভরাত্রি জামাই বাবু!!

বলেই বউ আমার বিছানায় শুয়ে পড়লো। বাসররাতে এ কোন চিপায় পড়লাম রে বাবা!! এখন কী করা যায়?? কিছুই করার নেই। বসে বসে মশার কামড় খাই আর এই গানটা গাই ‘আমি ফাইসা গেছি,আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়!

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত