Loading...
বিয়ের ৭দিন পর!! ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি বউ ঘরে নেই ৷ বেলকনিতে গিয়ে দেখি সে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ বুঝলাম না বউ কেন মন খারাপ করে আছে? কারণ খুঁজে পেলাম না ৷ বিয়ের দিন রাত্রে বউকে বলা হয়নি যে, “তোমার কারো সাথে রিলেশন ছিল কিনা বা রিলেশন আছে কিনা, কিংবা আমাকে নিজের পছন্দমত বিয়ে করতে রাজি হয়েছো কিনা?” এসব না বলে বলেছিলাম, “বিয়ের পর আমার কথার অমান্য না হলে তোমার সব কথা আমি মেনে নিবো ৷ আমার বাবা, মায়ের সাথে ভাল ব্যবহার করলে তোমাকে আজীবন ভালবেসে যাবো”! সে এসব শুনে সব মেনে চলার জন্য সম্মতি দিয়েছিল ৷ কিন্তু আজ সকালে তার কি হলো যে মন খারাপ? চিন্তা করতে লাগলাম তার কারো সাথে সম্পর্ক ছিল বা এখনো আছে কি না? সে কি তার বয়ফ্রেন্ডের কথা মনে করে মন খারাপ করে আছে? বউকে কিছু বললাম না ৷ তাকে তার মত থাকতে দিলাম! খাবার টেবিলে খেতে বসেছি ৷ আমার বউ নিশি আমার পাশেই বসে ছিল ৷ তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি এখনো সে গাল ফুলিয়েই রেখেছে! আমার মা নিশিকে বলে,
___বউমা, তোমর কি হয়েছে, মুখটা ছোট করে রাখছো কেন? বউ কোন উত্তর দিলনা ৷ খাবারের প্লেট রেখে চলে গেল রুমে! মা তখন বাবাকে বলে,
___আমি আগেই ভেবেছিলাম এই মেয়ের মধ্যে সমস্যা আছে ৷ তোমাকে বলেও ছিলাম যে এত সুন্দরী মেয়ে নিশ্চয় কারো সাথে সম্পর্ক আছে ৷ সে আমার ছেলের জন্য পারফেক্ট হবেনা ৷ তোমরা কেউ শুনলেনা আমার কথা ৷ এখন, ফলে গেল তো আমার কথা? বাবা গম্ভির স্বরে একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,
___চুপ থাকো তো তুমি! কি না কি কারণে বউমার মনটা খারাপ হয়েছে আর তুমি কিসব ভেবে নিয়েছো!
___তোমাদের যা খুশি করার করো ৷
ঐ বেয়াদব মেয়ের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ৷ আস্ত একটা বেয়াদব মেয়ে ধরে নিয়ে আসছো! আমি বউয়ের কাছে গেলাম ৷ এবারো সে বেলকনিতে ৷ লক্ষ্য করলাম সে কাঁদছে ৷ চোখের পানি মুছতেছিল আর নিঃশব্দে ফোঁফাতে ফোঁপাতে কান্না করছিল ৷ বুঝলাম না বউ কেন এমন করছে? তার পিছে দাঁড়িয়ে আলতো করে তাকে জড়িয়ে নিলাম এবং বললাম,
___নিশি কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ কেন? সে আমাকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কান্নার মাত্রা থামিয়ে বলে,
___হয়েছে এত দরদ দেখাতে হবেনা আপনার!
এটা বলেই সে চলে গেল রুমে ৷ এবং দরজাটা আটকিয়ে নিল ৷ আমার বেজায় রাগ হচ্ছিল বউয়ের উপর ৷ তার এমন পাগলামী সহ্য হচ্ছিলনা ৷ কি কারণে সে এমনটা করছে সেটা বললেও নাহয় সমাধান হতো! রাত্রে ঘুমানোর সময় দেখি নিশি খাটের শেষপ্রান্তে শুয়ে আছে ৷ আমি তার পাশে গিয়ে তার পিঠে হাত দিতে গেলে হাত সরিয়ে নেয় ৷ যখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম সে আর কিছু বললোনা!
পরেরদিন সকালে আবারো শাওয়ার নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি সে আয়নার সামনে বসে চুল আচড়াচ্ছিল আর কাঁদছিল ৷ কিছুই বুঝলাম না ৷ আজও কেন সে কাঁদছে? আমি আবারো বউয়ের পিছে গিয়ে তার চুলগুলো হাতে নিয়ে চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম ৷ সে তার চুলগুলো আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়! রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছিল ৷ শালার কপাল! শেষপর্যন্ত ফুলনদেবীকে বউ হিসেবে পেয়েছি ৷ অন্য সবার বউ গাল ফুলিয়ে রাখলে সেটার কারণ বলে দেয় তাদের স্বামীর নিকট ৷ কিন্তু আমার এই বউ তো দেখি মন খারাপ হবার কারণও বলছেনা! কিয়েক্টাবস্তা! আজ দুপুরে আম্মা নিশিকে বলে,
___বউমা, আমি চাই আজ তুমিই রান্না করো! নিশি মায়ের মুখের উপর বলে দেয়,
___আমি পারবোনা আম্মা, আপনার ছেলেকে রাঁধতে বলেন! মা নিশির কথা শুনে তব্দা খেয়ে যায়! হকচকিয়ে উঠে তাকে বলে,
___কি বলছো এসব? আমার ছেলে রান্না করবে? সে কি মেয়ে?
___এতকিছু জানিনা, আমি পারবোনা রান্না করতে!
এটা বলেই সে কাঁদতে কাঁদতে ড্রয়িং-রুম থেকে চলে যায় তার রুম ৷ ধপাস করে সে দরজাটা বন্ধ করে দেয় ৷ এই বউয়ের কিছুই বুঝতেছিনা ৷ কেন সে এমনটা করছে? রাত্রে নিশি টিভি দেখছিল ৷ রাত ১১টা বেজে যায় তার টিভি দেখা বন্ধ হয়না ৷ বাধ্য হয়ে আমি টিভিটা বন্ধ করলে কান্না শুরু করে দেয়! রাগ করে একটা থাপ্পর মারলে চুপ হয়ে যায় সে ৷ এরপর দেখি সে বালিশ আর কাথা নিয়ে বাইরে যাচ্ছে ৷ বউকে জোর করে আটকিয়ে বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলাম ৷ তারপর কয়েকটা গালে চুমু দেবার ফলে সে চুপ হয়ে যায়! পরেরদিন আবারো একই দৃশ্য সে কাঁদছে ৷ আমার সহ্য হলোনা ৷ শ্বশুর আব্বাকে ফোন দিলাম ৷ ফোন দিয়ে ওনাকে বললাম,
___আব্বা, এসে দেখে যান আপনার মেয়ে কেমন আচরণ করছে? উনি ঘাবড়ে যায় আমার কথা শুনে এবং বলে,
___কেন বাবা কি হয়েছে?
___এসেই দেখে যান!
শ্বশুর আর শ্বাশুরি আম্মা এলো আমাদের বাসায় ৷ নিশি তার মা, বাবাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিল ৷ মনে হচ্ছিল আমি তাকে মেরে কেটে ফেলেছি সেই শোকে এভাবে কাঁদছে ৷ রাগে কি যে করতে মন চাচ্ছিল ৷ নিশি তার মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
___ও মা, তুই কার সাথে আমার বিয়ে দিলি, ও আমারে একটুও ভালবাসেনা! বউয়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে ধপাস করে পড়লাম মনে হলো ৷ এ বউ এটা কি বলে? আমি তাকে ভালবাসিনা? এটা এত সহজে কেমনে বলতে পারলো সে? রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে নিশিকে বললাম,
___কি বলছো এসব? তোমার কি লজ্জা নাই? সে কথার জবাব না দিয়ে শুধু কাঁদে! রাগে অভিমানের স্বরে ফের বললাম,
___ভাল যেহেতু বাসিনা তাহলে বাড়িতে আছো কেন? চলে যাও! ওমা, সে একথা শুনে রুমে গেল ৷ ৫ মিনিট পর ব্যাগ নিয়ে চলে এলো এবং তার মা বাবাকে নিয়ে চলে যেতে লাগলো!শ্বশুর আব্বা নিশিকে থামিয়ে বলে,
___মা, কেন এমন পাগলামী করছিস? কি হয়েছে খুলে বল? তখন আমার মা আর আব্বা এসে হাজির আব্বা বলে উঠলো,
___হ্যাঁ, বউমা; কি সমস্যা সেটা খুলে বলো; যদি আমার ছেলে অন্যায় কিছু করে থাকে সেটার শাস্তি আমরা তাকে দেবো! নিশি তার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,
___ও প্রতিদিন সকালে একাএকা ঘুম থেকে ওঠে, আমাকে ডেকে তোলে না ৷ তারপর একাএকা শাওয়ার নিয়ে আসে! আমি তো চাই ও আমাকে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে তারপর আমরা একত্রে শাওয়ার নিবো! বউয়ের এমন কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম ৷ তব্দা খেয়ে স্তব্দ হয়ে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ কথাগুলো শুনে নিজেকে মানুষ মনে হচ্ছিলনা, মনে হচ্ছিল এলিয়েন ৷ ভাবলাম অজ্ঞান হয়ে গেছি ৷ জ্ঞান ফেরার আগে তার কথার কোন জবাব দিতে পারবোনা! শ্বশুর আব্বার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ৷ উনি রুম থেকে তরতর করে বের হয়ে যায় ৷ আমার আব্বাও! আমার শ্বাশুরি নিশিকে শুধু বলল,
___তুই কি এখনো ছোট আছিস? কথাবার্তা হুশ করে বলতে পারিস না? জামাইয়ের সামনে কিরকম লজ্জায় ফেললি, বলতো? বউয়ের দেখি সত্যিই হুশ জ্ঞান নেই ৷ সে তার মায়ের কথা তোয়াক্কা না করে বলে উঠলো,
___এতকিছু বুঝিনা ৷ তাকে বলো, সে যেনো আর ভুল না করে! শ্বাশুরি আম্মা আমার দিকে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বলল,
___বাবা, ওর কথায় কিছু মনে করোনা ৷ বড় হলে কি হবে আচরণ একদম বাচ্চাদের মত!
এটা বলেই উনি আমার আম্মাকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়! বউয়ের দিকে তাকাতে এখন খুব লজ্জা করছে! আমি দাঁড়িয়ে আছি থাম্বার মত হয়ে ৷ তার দিকে তাকাতে পারছিলাম না, চোখ পিটপিট করছিল! আমি তার দিকে এগিয়ে যাব সেই শক্তি নেই ৷ নিশিই আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে,
_কেমন দিলাম? নেক্সট টাইম আমাকে উল্টাপাল্টা কিছু বললে বা করলে এবং আমার কথা মেনে না নিলে এইযে এরকম ভাবেই লজ্জা দিবো ৷ বুঝলেন জামাই সাহেব? থ হয়ে গেলাম ৷ বুঝতে পারলাম বাসায় অভিনেত্রীকে বউ করে আনছি! সেদিন রাতে সে বলেছিল, “বাপের বাড়ি যাবো আগামীকাল, তেমাকেও যেতে হবে!” উত্তরে আমি বলেছিলাম, “৭দিন পর এর আগে না!” এটার প্রতিশোধ নিতেই সে এমন নাটক করে আমাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে! বুঝলাম, এই অভিনেত্রীর সাথে অভিনেতা না হয়ে পারা যাবেনা! আমি তো আবার অভিনয়ে কাঁচা! হার মানা ছাড়া উপায় নেই!
