পিয়াস প্রতিবার অফিস থেকে ফেরার সময় তার বুক পকেটে করে শ্রাবণীর জন্য একটা বেলি ফুলের মালা কিনে নিয়ে যায়। আর শ্রাবণী প্রতিবার সেই বেলি ফুলের মালাটা পিয়াসের মুখে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
~তোমার এইসব ঢং আমার একদম সহ্য হয় না। পিয়াস মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য আর শ্রাবণী বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে,
~আজ কারেন্ট বিল দেওয়া শেষ দিন ছিলো,
ঘরে বাজার নেই ৩ দিন ধরে, বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে। রুম থেকে শ্রাবণীর বলা কথাগুলো ওয়াশরুম থেকে পিয়াস ঠিকিই শুনতে পায় কিন্তু তারপরও না শুনার অভিনয় করে পিয়াস ওয়াশরুমের আয়নায় তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয় আজ পিয়াস যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরে তখন শ্রাবণীর জন্য বুক পকেটে বেলি ফুলের মালা নেয় নি। শ্রাবণী যখন দরজা খুললো তখন পিয়াস শ্রাবণীর হাতে বুক পকেট থেকে বের করে একটা স্বর্ণের চেইন শ্রাবণীর হাতে দিয়ে বললো,
— এই বার তো তুমি এটা আমার মুখে ছুড়ে মারতে পারবে না মাঝ রাতে যখন পিয়াসের ঘুম ভাঙে তখন তাকিয়ে দেখে পাশে শ্রাবণী নেই।বেলকনিতে এসে দেখে শ্রাবণী বসে কাঁদছে। পিয়াস শ্রাবণীর মাথায় হাত রাখতেই শ্রাবণী পিয়াসকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
~ তুমি আজ কেন আমার জন্য বেলি ফুলের মালা আনো নি? আমি এইসব সোনার চেইন চাই না। আমার বেলিফুলের মালা চাই। তুমি এখনি আমাকে বেলি ফুলের মালা এনে দাও পিয়াস মাঝ রাতে হাটছে বেলিফুলের মালার খুঁজে। আর মনে মনে ভাবছে, শ্রাবণী মেয়েটা খুব অদ্ভুত। কখনো নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করে না। শ্রাবণী ঠিকিই ওর মুখে বেলি ফুলের মালা ছুড়ে মারে কিন্তু ও একটু আড়ালে চলে গেলেই শ্রাবণী সেই মালাটা তুলে নেয় আর মিটমিট করে হাসে ভার্সিটিতে পড়া ছেলেটার নাম মামুন। প্রেমে পড়ে যায় তার ছাত্রী মুন্নির। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়া মুন্নীর কাছে সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিলো। দুজনে প্রতিরাতে ভালোবাসার একটার পর একটা ইট বসিয়ে ভালোবাসার ঘর বানাচ্ছিলো। এখন শুধু ভালোবাসার ঘরের ছাদটা বাকি, মানে বিয়ে একসময় মামুন আর মুন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর মুন্নির কাছে মনে হতে লাগলো তার ভালোবাসার ঘরের একটা একটা ইট খুলে যাচ্ছে। বাস্তবতার ভূমিকম্পের কাছে তার ভালোবাসার ঘরটা খুব হালকা। একদিন মামুন অফিস থেকে এসে শুনতে পায় পাশের বাসার ভাবী মুন্নিকে বলছে,
~ভাবী দেখেন রোজ রোজ আপনাদের মাছ মাংস আমার ফ্রিজে রাখতে পারবো না। পারলে নিজেরা একটা কিনে নেন মুন্নি যখন অবেলায় শুয়ে আছে তখন মামুন মুন্নিকে বললো,
— রাত ৯ টা বাজে। শোরুম কি এখন খোলা পাবো? মুন্নি চমকে গিয়ে মামুনের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কিসের শোরুম? মামুন মুচকি হেসে বললো,
— তোমার জন্য একটা ফ্রিজ কিনতাম…
মুন্নি শোরুমের একদিক থেকে অন্যদিকে ঘুরে ঘুরে ফ্রিজ দেখছে। তার চোখে মুখে দুনিয়ার সব আনন্দ। আর মামুন বারবার মানিব্যাগটা দেখছে আর মনে মনে ভাবছে, মাসের শেষে আবার ঋণ করতে হবে ডাক্তার তানিয়াকে দেখে ওর স্বামী হাসানকে বললো,
– আপনার স্ত্রীর পেঠের বাচ্চা উল্টে গেছে। এই মুহূর্তে সিজার না করলে মা বাচ্চা দুজনকে বাচ্চানো কষ্টকর হবে হাসান ভয়ে ভয়ে ডাক্তার কে বললো,
— সিজার করতে কত খরচ হবে? ডাক্তার বললো,
– সবকিছু মিলিয়ে ৩০ হাজারের মত খরচ হবে। হাসান ডাক্তারের কথা শুনে বললো,
— আপনি অপারেশন শুরু করেন আমি টাকার ব্যবস্থা করছি।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হাসন তার মানিব্যাগটা খুলে দেখে মানিব্যাগে ৭২০ টাকার মত আছে। অথচ তার দরকার ৩০ হাজার টাকা হাসানের কোলে সদ্য জন্ম নেওয়া তার মেয়ে। আর পাশে শুয়ে আছে তার স্ত্রী তানিয়া। তানিয়া হাসানের হাতটা ধরে বললো,
– তুমি আমার জন্য তোমার মায়ের শেষ স্মৃতি গহনাগুলো বিক্রি করে দিয়েছো তাই না? হাসান মুচকি হেসে তানিয়ার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— কে বলেছে গহনা গুলো আমার মার শেষ স্মৃতি? এই তো আমার মা আমার কোলে শুয়ে আছে…
এই ঘটনা গুলো হলো মধ্যবিত্ত পরিবারের। মধ্যবিত্ত পারিবারের পুরুষের স্ত্রীগুলো খুব বদমেজাজি খিটখিটে হয়। কিন্তু এই বদমেজাজি স্ত্রীগুলোই সংসারটাকে মাসের ২০ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত কিভাবে টেনে নিয়ে যায় সেটা কেউ জানে না মধ্যবিত্ত পরিবারের পুরুষ গুলো হয়তো স্ত্রীকে দামী শাড়ি দামী গহনা উপহার দিতে পারে না। কিন্তু কেউ যদি তার স্ত্রীকে অপমান করে সেটা সহ্য করতে পারে না পকেটে ১০০ টাকাও নেই অথচ স্ত্রী আর সন্তানের জন্য নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ করার পরিবারটার নাম হলো মধ্যবিত্ত দিন শেষে বেঁচে থাকুক প্রতিটা মধ্যবিত্ত পরিবার। বেঁচে থাকুক ওদের লুকানো ভালোবাসা গুলো..